<p>আরবি ‘সাহাবি’ শব্দটি ‘সুহবতে’র রূপান্তর। অর্থ—সঙ্গী, সাথি, বন্ধু, অনুসারী, সহচর, সাহচর্য লাভকারী। ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)-এর মতে, সাহাবি সেই ব্যক্তি যিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ঈমানসহকারে তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং ইসলামের ওপরই মৃত্যুবরণ করেছেন।</p> <p>সাহাবিদের কয়েকজন আবদুল্লাহ নামে সুখ্যাত। নিম্নে তাঁদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—</p> <p>আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)</p> <p>তিনি কোরাইশ হাশেমি শাখার সন্তান। তিনি সুবিজ্ঞ ফকিহ ও শীর্ষস্থানীয় তাফসিরকারক। তাঁকে বলা হয় ‘রইসুল মুফাসসিরিন’ বা ‘সাইয়্যিদুল মুফাসসিরিন’ (তাফসিরবিদদের শিরোমণি)। তাঁকে ‘হিবরুল উম্মাহ’ অর্থাৎ মহাজ্ঞানী বা ‘আল-বাহর’ অর্থাৎ জ্ঞানের সাগর বলা হতো।</p> <p>নবী করিম (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর জন্য দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে দ্বিনের প্রজ্ঞা দান করুন এবং তাকে তাফসিরের অগাধ জ্ঞান দান করুন।</p> <p>ইবনে আব্বাস (রা.) সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারীদের অন্যতম। আল্লামা আইনির মতে, তাঁর বর্ণিত হাদিস এক হাজার ৬৬০টি।</p> <p>খলিফা উমর (রা.) ইবনে আব্বাস (রা.) সম্পর্কে বলেন, ‘ইবনে আব্বাস (রা.) তোমাদের সবার অপেক্ষা বড় বিদ্বান।’</p> <p>ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘ইনি কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার।’</p> <p>আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)</p> <p>তিনি আবু আবদুল্লাহ নামেও পরিচিত। পবিত্র কোরআন পাঠে তিনি সবচেয়ে মর্যাদাবান। এ সম্পর্কে একটি ঘটনা তুলে ধরছি—</p> <p>উমর (রা.) এক সফরে রাত্রিবেলা এক অপরিচিত কাফেলার সাক্ষাৎ পান। ঘোর অন্ধকারে কাফেলার কোনো লোকজনকে দেখা যাচ্ছিল না। ঘটনাক্রমে সেই কাফেলায় ইবন মাসউদও (রা.) ছিলেন, উমর (রা.) জানতেন না। উমর (রা.) একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, কাফেলা কোথা থেকে আসছে? কাফেলা থেকে ইবনে মাসউদ (রা.) (কোরআনের ভাষায়) জবাব দিলেন—</p> <p>ক. ‘আমিক উপত্যকা থেকে।’</p> <p>খ. ‘কোথায় যাচ্ছে?’</p> <p>গ. ‘বাইতুল আতিকে, অর্থাৎ কাবা শরিফে।’ জবাব শুনে উমর (রা.) বললেন, ‘নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে  আলিম ব্যক্তি আছেন।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত কোনটি?’</p> <p>►  ‘সেই চিরন্তন চিরঞ্জীব সত্তা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না এবং নিদ্রাও তাঁকে পায় না।’</p> <p>     প্রশ্ন হলো—‘সর্বাধিক ন্যায়-নীতি প্রকাশক আয়াত কোনটি?’</p> <p>►  ‘আল্লাহ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, পরোপকার এবং নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদের দান করার নির্দেশ দিচ্ছেন।’</p> <p>     প্রশ্ন হলো—‘সর্বাধিক ব্যাপক অর্থবোধক আয়াত কোনটি?’</p> <p>►  ‘যে ব্যক্তি এক বিন্দু পরিমাণ সৎকাজ করবে সে তার বিনিময় লাভ করবে, তেমনিভাবে যে ব্যক্তি এক বিন্দু পরিমাণ অসৎ কাজ করবে তার বিনিময়ও সে লাভ করবে।’</p> <p>     প্রশ্ন হলো—‘সর্বাধিক ভীতিপ্রদ আয়াত কোনটি?’</p> <p>►  ‘না তোমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, আর না আহলি কিতাবদের কামনা-বাসনা অনুযায়ী সব কিছু হবে। যে ব্যক্তি খারাপ কাজ করবে তাকে তার প্রতিফল ভোগ করতে হবে। আর আল্লাহ ছাড়া তার জন্য কোনো অভিভাবকও পাবে না এবং কোনো সাহায্যকারীও না।’</p> <p>     প্রশ্ন হলো—‘সর্বাধিক আশার সঞ্চারকারী আয়াত কোনটি?’</p> <p>►  ‘হে নবী আপনি বলুন। হে আমার বান্দারা, যারা নিজের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপই ক্ষমা করে দেবেন। তিনিই তো গাফুরুর রাহিম।’</p> <p>     প্রশ্ন হলো—‘আচ্ছা আপনাদের মাঝে কি আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ আছেন?’</p> <p>     জবাব এলো—হ্যাঁ।’</p> <p>     রোগশয্যায় উসমান (রা.) একদিন ইবন মাসউদ (রা.)-কে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন—</p> <p>     ‘আপনার অভিযোগ কিসের বিরুদ্ধে?’</p> <p>     ‘আমার পাপের বিরুদ্ধে।’</p> <p>     ‘আপনার চাওয়ার কিছু আছে কি?’</p> <p>     ‘আমার রবের রহমত।’</p> <p>     ‘বহু বছর আপনার ভাতা নিচ্ছেন না, তা কি দেওয়ার নির্দেশ দেব?’</p> <p>     ‘আমার কোনো প্রয়োজন নেই।’</p> <p>আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)</p> <p>তিনি একজন সাহাবি এবং খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর পুত্র। তিনি হাদিস ও ফিকহের অনন্য বিশেষজ্ঞ। তিনি খুব অল্প বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।</p> <p>আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)</p> <p>তাঁর বাবা ছিলেন সাহাবি জুবায়ের ইবনুল আওয়াম এবং মা ছিলেন খলিফা আবু বকর (রা.)-এর কন্যা আসমা বিনতে আবি বকর। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়েশা (রা.) তাঁর খালা। ইবনে জুবায়ের (রা.) ছিলেন হিজরতের পর মদিনায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলিম। মুসলিম অভিজাতদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বিশিষ্ট প্রতিনিধি। বস্তুত আবদুল্লাহ (রা.) নামের বিশিষ্টজনসহ সাহাবিদের মর্যাদা অসাধারণ।</p> <p>লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর</p> <p> </p> <p> </p>