দরিদ্রতা ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিত্যদিনের সঙ্গী। খেয়ে না খেয়ে তিনি দ্বিন প্রচারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিলেন। কখনো দু-চারটি খেজুর খেয়ে দিনাতিপাত করেছেন। আবার কখনো কখনো একাধারে কয়েক দিন অভুক্ত থেকেছেন।
বিজ্ঞাপন
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবারবর্গ লাগাতার দুই দিন জবের রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হননি। আর এ অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ’ (বুখারি ও মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রা.) একবার এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সামনে বকরি ভুনা পেশ করা হয়েছিল। যা খাওয়ার জন্য আবু হুরায়রা (রা.)-কে আমন্ত্রণ জানানো হলো। কিন্তু তিনি তা খেতে অস্বীকার করে বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। অথচ জবের রুটি দ্বারাও পরিতৃপ্ত হতে পারেননি। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪১৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দীর্ঘ ১০ বছরের খাদেম আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবারের কাছে কোনো সন্ধ্যাকালেই এক সা গম বা এক সা অন্য কোনো খাদ্যদানা অবশিষ্ট থাকত না। অথচ তাঁর ৯ জন স্ত্রী ছিল। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৪৭)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবারবর্গ এক দিনে দুবেলা খানা খেয়ে একবেলা শুধু খুরমা খেয়েই কাটিয়ে দিতেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৫)
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ওপর দিয়ে মাস কেটে যেত, অথচ আমরা এর মধ্যে ঘরে (রান্নার) আগুন জ্বালাতাম না। আমরা শুধু খুরমা ও খেজুরের ওপর চলতাম। তবে যৎসামান্য গোশত আমাদের কাছে আসত। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৮)
অন্যত্র আবু সালামা আয়েশা (রা.)-এর বরাতে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবারবর্গের কোনো কোনো মাস এমনভাবে অতিবাহিত হতো যে তাদের কারো ঘরের চুলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যেত না। (আবু সালামা বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, তাদের খাবার কী ছিল? তিনি বলেন, দুটি কালো জিনিস। খেজুর ও পানি। তবে আমাদের আনসারি প্রতিবেশীরা ছিল সত্যপ্রিয়। তারা বকরি পালতেন এবং বকরির দুধ উপঢৌকনস্বরূপ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য পাঠাতেন। ’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৪১৪৫)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবার-পরিজন একাধারে কয়েক রাত ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাটিয়ে দিতেন। তাঁর পরিবারে রাতের খাবার জুটত না। আর বেশির ভাগ সময় জবের রুটিই ছিল তাদের খাদ্য। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৬০)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিছানা সম্পর্কে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরি এবং তার ভেতরে ছিল খেজুরের ছাল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৬)
আবু ওয়ায়েল (রহ.) বলেন, একবার আমরা খাব্বাব (রা.)-এর শুশ্রূষায় গেলাম। খাব্বাব তখন বলেন, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হিজরত করেছি। এর কর্মফল আল্লাহর কাছেই প্রাপ্য। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই কর্মফল দুনিয়াতে লাভ করার আগেই ইন্তিকাল করেছেন। তন্মধ্যে মুসআব বিন উমায়ের (রা.) অন্যতম। যিনি ওহুদের যুদ্ধে শহীদ হন। তিনি শুধু একখানা কাপড় রেখে যান। আমরা কাফনের জন্য এটা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলেন, এটা দিয়ে তার মাথা ঢেকে দাও এবং পায়ের ওপর ‘ইজখির’ ঘাস দিয়ে ঢেকে দাও। অথচ এখন আমাদের মধ্যে এমনো আছে, যাদের ফল পেকেছে এবং তারা তা সংগ্রহ করছে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৪৮)
সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, ‘আমিই প্রথম আরব, যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছে। যুদ্ধের সময় আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে দুবলা পাতা ও ঝাউগাছ ছাড়া খাবারের কিছুই ছিল না। এমনকি আমাদের মল বকরির মলের মতো হয়ে গিয়েছিল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৩)
ফাজালা বিন উবায়েদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন, তখন কিছু লোক অসহনীয় ক্ষুধার জ্বালায় সালাতে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যেত। তারা ছিল সুফফার সদস্য। তাদের অবস্থা দেখে বেদুঈনরা বলত, এরা পাগল নাকি? রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাত শেষে তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেন, ‘আল্লাহর কাছে তোমাদের যে কি মর্যাদা তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা আরো ক্ষুধার্ত, আরো অভাব অনটনে থাকতে পছন্দ করতে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৬৮)
নুমান বিন বাশির (রা.) বলেন, ‘তোমরা তো এখন ইচ্ছামতো পানাহার করতে পারছ, অথচ আমি তোমাদের নবী (সা.)-কে দেখেছি যে তিনি এই শুকনো খেজুরও পেতেন না, যা দ্বারা তাঁর পেট ভরাতে পারেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭২)