<p>শীতে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসাকরা। কেননা শীতকালে শিশুদের সর্দি, কাশি, নিউমনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ইসলাম শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেয়। কেননা একটা শক্ত মজবুত ইমারত গড়তে হলে শক্ত মজবুত ভিত্তির প্রয়োজন। মানবজীবনের ভিত্তি হলো শৈশবকাল। শৈশবকালে দেহ ও মনকে যদি রোগমুক্ত রাখা যায়, তাহলে পরিণত বয়সে সে একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করতে পারবে বলে আশা করা যায়। এ জন্য সন্তান জন্মলাভের পর থেকেই শিশুর প্রতি যত্ন নেওয়র ব্যাপারে ইসলামের বিশেষ তাকিদ আছে।</p> <p>শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের তাগিদ : ইসলাম নানাভাবে শিশুর স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষায় ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। যেহেতু শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে জীবনের নিরাপত্তা গুরুতরভাবে জড়িত তাই ইসলাম শিশুর সার্বিক সুরক্ষাকে জীবন দিয়েই ব্যক্ত করেছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদের সন্তানদের হত্যা কোরো না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৫১)</p> <p>অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের সন্তানদের হত্যা করেছে, অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৪০)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) সেসব মা-বাবাকে সতর্ক করেছেন, যারা সন্তানের প্রতি সচেতন ও যত্ন নেয় না। তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার পোষ্যদের ক্ষতি সাধন করে।’ (রিয়াজুস সালিহিন, পৃষ্ঠা ১৪৮)</p> <p>শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিশেষ দুই নির্দেশনা : ইসলাম শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। তাহলো—</p> <p>১.         মায়ের দুধ নিশ্চিত করা : শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য গঠনের প্রথম সোপান হলো মায়ের বুকের দুধ নিশ্চিত করা। ইসলাম যেকোনো পরিস্থিতিতে শিশুর জন্য মায়ের দুধ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে স্তন্য পানকাল পূর্ণ করতে চায় তার জন্য মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর স্তন্য পান করাবে। পিতার দায়িত্ব যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৩)</p> <p>২.         সুষম খাবার নিশ্চিত করা : শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও শিশুর উপযোগী খাবার নিশ্চিত করা আবশ্যক এবং শিশুর জন্য ক্ষতিকর খাবার থেকে বিরত থাকা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, জমিনে যা আছে তা থেকে হালাল ও উত্তম (স্বাস্থ্যকর ও পবিত্র) বস্তু আহার কোরো। তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৮)</p> <p>শিশুর সুরক্ষায় মা-বাবার দায়িত্ব : শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ তার জন্য কল্যাণকর সব কিছু নিশ্চিত করা মা-বাবার দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল এবং এ সম্পর্কে সে জিজ্ঞাসিত হবে। আর স্ত্রী স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তানদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল এবং সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, পৃষ্ঠা ৩২০)। উল্লিখিত হাদিসের আলোকে প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, সন্তানের ভরণ-পোষণ ও চিকিত্সার ব্যয়ভার প্রধানত বাবার দায়িত্বে এবং সন্তানের সুস্থতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকা প্রধানত মায়ের দায়িত্বে।</p> <p>শিশুর পরিচর্যায় চিকিত্সকের পরামর্শ গ্রহণ : আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, অভিভাবকরা শিশুর জন্য চিকিত্সকের যেকোনো বৈধ পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ করবে। যেমন শীতকালে শিশুদের উষ্ণ গরম পানি ব্যবহার করা। ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার না করা। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে যায়। সুতরাং তারা সতর্ক থাকবে শিশুর ক্ষুধা, পিপাসা, ঘুম, খাবার, পানীয়, পেশাব, বমি ইত্যাদির প্রতি। এটা শিশু অধিকারের সবচেয়ে বড় অধিকার। (তুহফাতুল মাওদুদ ফি আহকামিল মাওলুদ, পৃষ্ঠা ২৩০-২৪০)</p> <p>সুতরাং শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও পরিচর্যায় চিকিত্সকের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা অপরিহার্য। যদি না তিনি ইসলামী শরিয়তের পরিপন্থী কোনো বিষয়ের নির্দেশ দেন।</p>