<p>মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে এই মর্মে দোয়া করেন, ‘(হে আল্লাহ,) আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ২৭-২৮)</p> <p> </p> <p>তাফসির : মহান আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউন ও তাঁর পারিষদবর্গের কাছে দ্বিনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ফেরাউনের কাছে যাওয়ার আগে মুসা (আ.) মহান আল্লাহর দরবারে পাঁচটি দোয়া করেন। আগের আয়াতগুলোতে দুটি দোয়া বর্ণনা করা হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতে তৃতীয় দোয়া বর্ণনা করা হয়েছে। মুসা (আ.) জিহ্বার জড়তা দূর হওয়ার জন্য দোয়া করেছেন। যেন তাঁর উম্মত বিশেষত ফেরাউন ও তাঁর পারিষদবর্গ মুসা (আ.)-এর হেদায়েতের বাণী যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে। মুসা (আ.)-এর এই দোয়া থেকে প্রমাণিত হয়, নবুয়ত ও দাওয়াতের কাজ পরিচালনার জন্য স্পষ্টভাষী ও বিশুদ্ধভাষী হওয় জরুরি।</p> <p>বেশির ভাগ তাফসিরবিদের মতে, তাঁর মুখের জড়তা কৃত্রিম এবং এটি জন্মগত নয়; বরং এই জড়তা তৈরি নিয়ে একটি ঘটনা তাফসিরের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটি হলো, মুসা (আ.) দুগ্ধ পান করার সময় তাঁর মায়ের কাছেই ছিলেন। তাঁর মা ফেরাউনের দরবার থেকে দুধ পান করানোর বিনিময়ে ভাতা পেতেন। শিশু মুসা দুধ ছেড়ে দিলে ফেরাউন ও তাঁর স্ত্রী আসিয়া (আ.) তাঁকে পালক পুত্ররূপে নিজেদের কাছে নিয়ে যায়। একদিন শিশু মুসা ফেরাউনের দাড়ি ধরে তার গালে একটি চপেটাঘাত করেন। কোনো কোনো বর্ণনামতে আছে, তিনি একটি ছড়ি হাতে নিয়ে খেলা করছিলেন। একসময় ছড়ি দ্বারা তিনি ফেরাউনের মাথায় আঘাত করে বসেন। ফেরাউন রাগান্বিত হয়ে তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করে। স্ত্রী আসিয়া (আ.) বলেন, রাজাধিরাজ, আপনি অবুঝ শিশুর এমন কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হবেন না। তার কাজ অপরাধ হিসেবে ধরবেন না। সে তো এখনো ভালো-মন্দের পার্থক্যও বোঝে না। আপনি ইচ্ছা করলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ফেরাউনকে পরীক্ষা করানোর জন্য আসিয়া (আ.) একটি পাত্রে জলন্ত অঙ্গার ও অন্য পাত্রে মণিমুক্তা এনে শিশু মুসার সামনে রেখে দিলেন। এর মাধ্যমে শিশু মুসার পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়। শিশু মুসা আগুনের পরিবর্তে মণিমুক্তাকে ধরার জন্য হাত বাড়াতে চাইলেন, কিন্তু জিবরাঈল (আ.) তাঁর হাত অগ্নস্ফুিলিঙ্গের পাত্রে রেখে দিলেন। শিশু মুসা তত্ক্ষণাৎ আগুনের স্ফুলিঙ্গ তুলে মুখে দিলেন। ফলে তাঁর জিব্বা পুড়ে যায়। এতে ফেরাউন বিশ্বাস করল যে শিশু মুসার আঘাত করার বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়; এটা ছিল নিতান্তই বালকসুলভ আচরণ! এই ঘটনা থেকেই মুসা (আ.)-এর জিহ্বায় এক ধরনের জড়তা সৃষ্টি হয়। এটা দূর করার জন্যই মুসা (আ.) মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। (তাফসিরে কুরতুবি ও মাজহারি)</p> <p>গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ।</p>