<p>হাসি তাকওয়া ও আল্লাহভীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। মহান আল্লাহই মানুষের সুখ-দুঃখ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে হাসি-কান্না সৃষ্টি করেছেন। তিনিই মানুষকে হাসান ও কাঁদান। তিনিই এগুলোকে মানবপ্রকৃতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনিই হাসান ও কাঁদান।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৪৩)</p> <p>তাফসিরে ইবনে কাসিরে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মহান আল্লাহই হাসি-কান্না সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন হাসি-কান্নার ভিন্ন ভিন্ন কারণ।</p> <p>তাফসিরে তাবারির মতে, মহান আল্লাহ জান্নাতবাসীদের জান্নাত প্রদানের মাধ্যমে হাসাবেন এবং জাহান্নামবাসীদের জাহান্নামে নিক্ষেপের মাধ্যমে কাঁদাবেন। দুনিয়াতেও তিনি যাকে ইচ্ছা হাসাবেন, যাকে ইচ্ছা কাঁদাবেন।</p> <p>হাসি হচ্ছে এক প্রকার মুখমণ্ডলীয় বহিঃপ্রকাশ, যা সচরাচর মুখের নমনীয় পেশিকে দুই পাশে প্রসারিত করার মাধ্যমে অর্জিত হয়। মুখমণ্ডল ছাড়াও চোখের মধ্যেও হাসির বহিঃপ্রকাশ ফুটে উঠতে পারে। মানুষের হাসি-আনন্দ, সুখ বা মজা পাওয়ার উপলক্ষ হিসেবে হাসির চল আছে।</p> <p>হাসির বিভিন্ন স্তর আছে, যেমন—মুচকি হাসি। এতে মানুষের মুখমণ্ডলে আনন্দের ছাপ ভেসে উঠলেও দাঁত দেখা যায় না। আরবিতে এই হাসিকে বলা হয় ‘তাবাসসুম’। এটিকে হাসির প্রথম স্তরও বলা হয়। দ্বিতীয় স্তর হলো এমন হাসি, যাতে মানুষের মুখমণ্ডলে আনন্দের ছাপ প্রকাশের পাশাপাশি দাঁতও দেখা যেতে পারে। তবে কোনো আওয়াজ হয় না। আরবিতে এই হাসিকে বলা হয় ‘দিহক’। তৃতীয় স্তর হলো, উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ করে হাসা। আরবিতে এই হাসিকে বলা হয় ‘কহকহা’। ইসলাম ধর্মে এভাবে হাসা নিষেধ।</p> <p>নবী-রাসুলরা বেশির ভাগ সময় মুচকি হাসতেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তার কথা শুনে সোলায়মান মুচকি হাসল এবং বলল, হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন, যাতে আমি আপনার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা আপনি আমাকে ও আমার মাতা-পিতাকে দান করেছেন এবং যাতে আমি আপনার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (সুরা : নামল, আয়াত : ১৯)</p> <p>উক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, হজরত সোলায়মান (আ.) মুচকি হাসতেন।</p> <p>আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বেশির ভাগ সময় মুচকি হাসতেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) সাধারণত মুচকি হাসি দিতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪২)। অর্থাৎ রাসুল (সা.) বেশির ভাগ সময় মুচকি হাসতেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় কথা বলতেন।</p> <p>হজরত জারির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে তাঁর কাছে প্রবেশ করতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩০৩৫)</p> <p>মুচকি হাসা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। কখনো এই হাসিতে (আওয়াজ ছাড়া) দাঁত প্রকাশ পেলেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অট্টহাসি কোনো মুসলমানের মুখে শোভা পায় না। কোনো ব্যক্তি নামাজ অবস্থায় অট্টহাসি দিলে তার অজুও নষ্ট হয়ে যায়।</p> <p>কেউ কেউ প্রশ্ন তোলে, ‘আমি প্রাণ খুলে হাসলে ইসলাম বাধা দেওয়ার কে?’ এর জবাব হলো, শুধু ইসলাম নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানও তা বর্জন করার তাগিদ দেয়। আর ‘অট্টহাসি’ হচ্ছে হাসির চূড়ান্ত মাত্রা। আর এটি মানুষের বিপদ ডেকে আনতে পারে। হুট করে অতিরিক্ত হাসির কারণে মানুষের হৃদ্যন্ত্র বিকল হতে পারে। মস্তিষ্কের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন https://www.healthline.com/ health/can-you-die-from-laughing</p>