<p>সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এর প্রভাবে নদী ও সাগরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে গেছে অনেক অঞ্চল। দেশব্যাপী দমকা হাওয়া, বৃষ্টিপাত আর বজ্রপাত তো আছেই। ঝড়ের তাণ্ডবে এর মধ্যে আমাদের দেশে সম্পদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৮ থেকে ২০ জন মারা গেছে। ঘরহারা হয়ে গেছে হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে। তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা, তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।</p> <p>চলে যাওয়া এবং বিপন্ন হওয়া এসব মানুষ আমাদের সমাজের অংশ। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানো মানবিকতার দাবি। এ ক্ষেত্রে রয়েছে ধর্মীয় নির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুমিন মুমিনের জন্য প্রাসাদসদৃশ, যার একাংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি (হাতের) আঙুলগুলো (অন্য হাতের) আঙুলে (এই ফাঁকে) প্রবেশ করালেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০২৬)</p> <p>তাই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা আমাদের সবার ঈমানি দায়িত্ব। তা ছাড়া মানুষের বিপদে এগিয়ে এলে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। যারা মানুষকে সাহায্য করে, আল্লাহও তাদের সাহায্য করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২)</p> <p>হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যকার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিনের বিপদসমূহের কোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরিব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন করে রাখবে, আল্লাহও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৬)</p> <p>তাই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসা উচিত। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যাঁরা তাদের উদ্ধার কাজসহ ত্রাণ বিতরণে জড়িত রয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত পুণ্যময় দায়িত্ব পালন করছেন। এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁদের অবশ্যই উত্তম প্রতিদান দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)</p> <p>আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি মানবিক কাজে আত্মনিয়োগ করা এবং ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। আর্থিক সহযোগিতা করতে সামর্থ্য না হলে কমপক্ষে শারীরিক শ্রমের মাধ্যমে হলেও তাদের সহায়তা করা। কেননা আল্লাহর দয়া পেতে চাইলে মানুষের ওপর দয়া করার বিকল্প নেই। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আল্লাহ তার ওপর দয়া করেন না, যে মানুষের ওপর দয়া করে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৮৬) তাই আসুন, আমরা প্রত্যেকেই ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই।</p> <p><strong>লেখক : </strong>আলেম ও সাংবাদিক</p>