<p>কবরের আজাব সত্য। এ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। কবরের জীবন মূলত বরজখি জীবন। আর বরজখ হচ্ছে দুই জীবন—অর্থাৎ দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টিকারী। বরজখ হচ্ছে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সময়। চাই মৃতদেহ দাফন করা হোক, জ্বালানো হোক, পানিতে ডুবে যাক, কোনো প্রাণী মৃতদেহ খেয়ে ফেলুক অথবা অন্য কিছু হোক—এর সবই কবরের জীবনের অংশ।</p> <p>কোনো ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন সে বরজখে প্রবেশ করে এবং পুনরুত্থান পর্যন্ত সেখানে থাকবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এর পর যখন তাদের কারো মৃত্যু আসবে, তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে ফিরিয়ে দাও। যাতে আমি যেগুলো রেখে এসেছি, সেগুলোর ব্যাপারে নেক আমল করতে পারি। কখনো নয়। এটি একটি কথার কথা, সে তা বলবে। আর মানুষের পশ্চাতে রয়েছে বরজখ—পুনরুত্থান পর্যন্ত।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৯৯-১০০)</p> <p><strong>কবরের আজাব অনিবার্য সত্য</strong></p> <p>আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন—‘তাদের সকাল-সন্ধ্যা জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করা হয়। যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন বলা হবে, তোমরা ফেরাউনের সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তির মধ্যে ঢুকিয়ে দাও।’ (সুরা : মুমিন (গাফির), আয়াত : ৪৬)</p> <p>অর্থাৎ কবরে থাকাকালীন প্রতিদিনই সকাল-বিকাল তাদের জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করা হয়। এরপর যখন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, তখন তাদের জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।</p> <p>অন্য আয়াতে এসেছে, ‘অচিরেই আমি (আল্লাহ) তাদের দুইবার আজাব দেব। তারপর তাদের নিয়ে যাওয়া হবে ভয়াবহ আজাবের দিকে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০১)</p> <p>এক হাদিস থেকে কবরের আজাব সম্পর্কে জানা যায়, হাদিস শরিফে এসেছে, ‘কাফের ও মুনাফেককে যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে বলা হবে যে এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী জানো? সে বলবে, আমি জানি না। লোকজন যা বলে থাকে, আমিও তা-ই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি উপলব্ধি করোনি, পাঠও করোনি। এরপর তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। তখন সে বিকট শব্দে চিৎকার করবে, যা মানব-দানব ছাড়া আশপাশের সব কিছু শুনতে পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৩৮)</p> <p>মহানবী (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, ‘যদি এই ভয় না থাকত যে তোমরা মৃতকে দাফন করবে না, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, যাতে তিনি কবরের যে আজাব আমি শুনতে পাই, তা যেন তোমাদের শুনিয়ে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯২)</p> <p>মহানবী (সা.) প্রায়ই এ দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮২২)</p> <p>এসব হাদিস থেকে কবরের আজাবের সত্যতা প্রমাণিত হয়।</p> <p>ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, কবরের আজাব ও সেখানকার সুখ সম্পর্কে হাদিসগুলো মুতাওয়াতির। আমার কাছে এ বিষয়ে ৫০-এর অধিক হাদিস রয়েছে। এক হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, এই কবর দুটিতে আজাব হচ্ছে। বড় কোনো পাপের কারণে তাদের শাস্তি হচ্ছে না। একজন তো প্রস্রাব থেকে নিজেকে বাঁচাত না। আর অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াত।’ (বুখারি ও মুসলিম)</p> <p>তাই কোরআন ও হাদিসের আলোকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছা খুবই সহজ যে পাপীদের জন্য কবর তথা বরজখি জীবন থেকে আজাব শুরু হয়ে যায়, যেভাবে নেককারদের জন্য কবর তথা বরজখি জীবন থেকে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত প্রদান করা হয়।</p> <p>প্রশ্ন হলো, কিয়ামতের দিন চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে শাস্তি দেওয়া কি ইনসাফবিরোধী নয়?</p> <p>এ ধরনের প্রশ্ন আধুনিক শিক্ষিত ভাইয়েরা করে থাকেন। এর জবাব হলো, এটি ইনসাফবিরোধী নয়। বিষয়টি এমন—দুনিয়ার জীবনে দেখা যায়, কোনো ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হলে আদালত কর্তৃক তার চূড়ান্ত রায় হওয়ার আগে তাকে কারাগারে থাকতে হয়। সেখানে জেলখানার কষ্ট তাকেও ভোগ করতে হয়। এটাকে ন্যায়বিচার পরিপন্থী ধরা হয় না। ঠিক তেমনি যে ব্যক্তি পাপী ও অবিশ্বাসী হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, সে পাপী ও অবিশ্বাসী অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছে। কিয়ামতের চূড়ান্ত বিচারের আগে তাকেও ‘বরজখি জেলখানা’য় থাকতে হবে। এটা ন্যায়বিচার পরিপন্থী নয়; বরং ন্যায়বিচারের সহায়ক।</p> <p><strong>লেখক :</strong> শিক্ষক, মাদরাসাতুল মদিনা, নবাবপুর, ঢাকা।</p>