ঢাকা, বুধবার ১৩ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ১৩ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ সফর ১৪৪৭

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে এনসিপি নেতার বক্তব্যে উত্তাল কক্সবাজার

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও চকরিয়া প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও চকরিয়া প্রতিনিধি
শেয়ার
সালাহউদ্দিনকে নিয়ে এনসিপি নেতার বক্তব্যে উত্তাল কক্সবাজার
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর শহরে গতকাল এনসিপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ছবি : কালের কণ্ঠ

কক্সবাজার জেলা শহরের শহীদ দৌলত ময়দানে এনসিপির জুলাই পদযাত্রার পথসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং কক্সবাজারের সন্তান সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এক আপত্তিকর বক্তব্যে ফুঁসে উঠেছে কক্সবাজার। পাটওয়ারীর বক্তব্যের পরপরই শহরজুড়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। অবরোধ করা হয় সড়ক।

আকস্মিক এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজিত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কবল থেকে রেহাই পেতে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানের পাহারায় পর্যটন শহর ছেড়ে বান্দরবানের পথে চকরিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয় এনসিপির পদযাত্রা।

কক্সবাজার শহর থেকে চকরিয়া পর্যন্ত কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাহ উপজেলা বাসস্টেশনে এবং চকরিয়া উপজেলা বাসস্টেশনে এনসিপির পৃথক পথসভা নির্ধারিত থাকলেও কোনো সভা আর করতে পারেননি এনসিপির নেতারা। এমনকি সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানের পাহারায় এনসিপি নেতাদের দলটি চকরিয়ায় পৌঁছার আগেই বিএনপির ক্ষুব্ধ লোকজন পথসভার মঞ্চটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। চকরিয়ায় বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক অবরোধ করে রাখে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সড়ক অবরোধ ভেঙে দিয়ে ক্ষুব্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন আহত হন।

এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার জেলা শহরের শহীদ দৌলত ময়দানের মঞ্চে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত গডফাদার ছিল শামীম ওসমান। এখন শুনছি, কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে। ঘের দখল করছে, মানুষের জায়গাজমি দখল করছে। আবার সে নাকি সংস্কার বোঝে না।

নাম না বললাম। কক্সবাজারের জনতা এ ধরনের সংস্কারবিরোধী, যে পিআর বোঝে না, তাদের রাজপথে ঠেকিয়ে দেবে ইনশাআল্লাহ।

এমন বক্তব্য প্রদানের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। তখনই বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘর থেকে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। এনসিপির নেতারা সমাবেশস্থল ত্যাগ করার পরপরই ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।

এমনকি এনসিপির পদযাত্রার ব্যানার-ফেস্টুন সব কিছুই গুঁড়িয়ে দেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে ততক্ষণে কক্সবাজারের এনসিপি সমাবেশে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁরাসহ এনসিপির নেতাকর্মীরাও দ্রুত সরে পড়েন।

ওদিকে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ সব উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এনসিপি নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। কক্সবাজার জেলা শহরে বিকেল থেকে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস, মহিলা দলসহ প্রায় সব সংগঠন একের পর এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল চলছিল।

এনসিপি আগেই কক্সবাজার থেকে পাঁচ জেলার উদ্দেশে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এ ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কক্সবাজার শহরের দৌলত ময়দানমুখী পদযাত্রা শুরুর কথা থাকলেও তাদের কর্মসূচি শুরু হয় দুপুর ১টার পর। পথসভার মঞ্চে এনসিপি সভাপতি নাহিদ ইসলাম বলেন, পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিটি তৈরি করাসহ এই দুটি সংস্কারে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে জুলাই সনদ তৈরি সম্ভব।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

গণপিটুনির সংস্কৃতি আইনের শাসনের জন্য হুমকি : আসক

    সাত মাসে নিহত ১১১
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গণপিটুনির সংস্কৃতি আইনের শাসনের জন্য হুমকি : আসক

গণপিটুনির মতো অপরাধ প্রচলিত আইন, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য এবং বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের ঘটনা বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দীর্ঘায়িত করছে, যা সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য হুমকি।

গতকাল সোমবার আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে নাগরিকের জীবন ও আইনগত সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

গণপিটুনির ঘটনায় যা গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ১১১ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চোর সন্দেহে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই নাগরিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আসক। একই সঙ্গে সংস্থাটি দাবি করেছে, এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চানখাঁরপুলে হত্যা মামলার সাক্ষ্যে আসামিদের ফাঁসি চান শহীদ আনাসের বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চানখাঁরপুলে হত্যা মামলার সাক্ষ্যে আসামিদের ফাঁসি চান শহীদ আনাসের বাবা

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস। সেদিন পুলিশের গুলিতে আরো শহীদ হন শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া।

গতকাল সোমবার এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য দিয়েছেন শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান (পলাশ)। তাঁর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ মামলার সূচনা বক্তব্য তুলে ধরেন চিফ প্রোসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের সাবেক আট সদস্য এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে চারজন পলাতক। তাঁরা হলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক (অপারেশন) আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলাম। বিচারকাজের সময় তাঁরা ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রোসিকিউটর জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও মামলার আদ্যোপান্ত তুলে ধরে বলেন, এই বিচার কার্যক্রম পুরনো রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নয়, বরং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া। এটি প্রমাণ করে যে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান বাক্তিদেরও আইনসম্মত জবাবদিহির আওতায় আনা যেতে পারে।

আনাসের সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারী রাব্বী হোসেন, সৌরভ আহম্মেদের বরাত দিয়ে গত বছর ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকার পরিস্থিতির বর্ণনা দেন সাক্ষী সাহরিয়ার খান (পলাশ)। তিনি বলেন, তারা (আনাস, রাব্বি, সৌরভসহ আন্দোলনকারীরা) চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, শটগান ও চায়নিজ রাইফেল দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে। নিমতলীর নবাব কাটরা গলির ভেতর আনাসকে টার্গেট করে গুলি করে পুলিশ। একটা গুলি আমার ছেলের বুকের বাঁ পাশে বিদ্ধ হয়ে পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়।

গুলি করা লোকটি এপিবিএনের পোশাক পরা ছিল। রাব্বিসহ অনেকেই ঘটনাটির ভিডিও করে। পরে ভিডিওগুলো আমাকে দেওয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে তা জব্দ করেছেন।

আনাসসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যার জন্য সাক্ষী সাহরিয়ার খান (পলাশ) আসামিদের দায়ী করে তাঁদের বিচার ও ফাঁসি দাবি করেন ট্রাইব্যুনালের কাছে।

আজ মঙ্গলবার এই মামলায় ফের সাক্ষ্যগ্রহণ।

 

মন্তব্য
মন্তব্য প্রতিবেদন

জরিপের আড়ালে নির্বাচন-বিমুখতার কৌশলী ন্যারেটিভ

    সাঈদ খান
শেয়ার
জরিপের আড়ালে নির্বাচন-বিমুখতার কৌশলী ন্যারেটিভ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক মনস্তাত্ত্বিক খেলা শুরু হয়েছে যার মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জরিপ। নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের আস্থা নষ্ট করা এবং বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছেএমন অভিযোগ তুলেছেন রাজনীতিসচেতন মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে প্রকাশিত পালস সার্ভে ৩ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন নাগরিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। 

এই জরিপে দেখা গেছে, আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেনএই প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীন মানুষের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮.৫০ শতাংশে।

মাত্র আট মাস আগে (২০২৪ সালের অক্টোবর) এই ছিল ৩৮ শতাংশ। কাকে ভোট দেবেন, তা বলতে চান না ১৪.৪০ শতাংশ, আর সরাসরি ভোট দেবেন না বলেছেন ১.৭০ শতাংশ।

দলভিত্তিক সমর্থনের চিত্রেও এসেছে বড় পরিবর্তন। বিএনপির ভোট ১৬.৩০ শতাংশ থেকে নেমে ১২ শতাংশ, জামায়াতের ১১.৩০ থেকে ১০.৪০ শতাংশ, আর এনসিপির ভোট ২ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ২.৮০ শতাংশ হয়েছে।

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভোটও ৮.৯০ থেকে নেমে ৭.৩০ শতাংশ। অন্যান্য ইসলামী দলের ভোট নেমে এসেছে ০.৭০ শতাংশে।

তবে প্রশ্নটি উল্টো করে—‘আপনার এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে বলে মনে হয়?’—জিজ্ঞেস করলে ৩৮ শতাংশ বিএনপির, ১৩ শতাংশ জামায়াতের, ১ শতাংশ এনসিপির এবং ৭ শতাংশ আওয়ামী লীগের নাম বলেছে। এর মাধ্যমে বর্তমান প্রেক্ষাপটেও আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করা হয়েছে।

জরিপে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ কমেছে। অক্টোবরের তুলনায় রাজনৈতিকভাবে দেশ সঠিক পথে আছে বলে মনে করা মানুষের হার ৫৬ শতাংশ থেকে নেমে ৪২ শতাংশে এসেছে। তবে অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে বলে মনে করা মানুষের হার ৪৩ থেকে বেড়ে ৪৫ শতাংশ হয়েছে।

সংস্কারনির্ভর ভোটের দাবি এখানে প্রাধান্য পেয়েছে৫১ শতাংশ বলেছে ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন, ১৭ শতাংশ চায় কিছু জরুরি সংস্কারের পর নির্বাচন, আর মাত্র ১৪ শতাংশ চায় সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন

প্রয়োজনীয় সংস্কারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন (৩০%), দুর্নীতি দমন (১৭%), আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্নতি (১৬%), অর্থনীতি চাঙ্গা করা (১৬%), নিত্যপণ্যের দাম কমানো (১৩%), রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহনশীলতা কমানো (১৯%) এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার (১৯%)।

যদিও ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে১৫ শতাংশ এর বিপক্ষে মত দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জরিপ শুধু তথ্য দেয়নি, বরং এক কৌশলী ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছে, যাতে একদিকে ভোটের আগ্রহ কমিয়ে দেখানো হচ্ছে, অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াতের মতো রাজনৈতিক শক্তির জনপ্রিয়তাকে খাটো করে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো, বিগত শাসনামলে সংঘটিত সীমাহীন দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডএসবের বিচার নিয়ে জনগণের অবস্থান জরিপে একেবারেই অনুপস্থিত।

বিআইজিডির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দৈনিক বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সিআরআইয়ের সঙ্গে আসিফ সালেহ যুক্ত ছিলেন। সিআরআই শুধু নীতি-পরামর্শই দেয়নি, বরং বিরোধী মত দমনে অপপ্রচার ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে।

যদিও আসিফ সালেহ পরে ফেসবুকে স্পষ্ট করেন তিনি রাদওয়ানের পরামর্শক পরিষদের সদস্য নন, তবে স্বীকার করেন ২০২০ সালে সিআরআই সংশ্লিষ্ট হোয়াইট বোর্ড পলিসি ম্যাগাজিনে তিনি সামাজিক সেক্টরের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত ছিলেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি লেখা দেন। তাঁর দাবি, এটি ছিল সম্পূর্ণ নির্দলীয় ভূমিকা।

তবু প্রশ্ন রয়ে যায়, যে প্রতিষ্ঠান সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করে, তার সঙ্গে যুক্ত থেকে কতটা নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব? আর সেই প্রভাব কি এই জরিপের ফলাফল ব্যাখ্যায় ভূমিকা রাখেনি?

এ ধরনের তথ্যবহুল কিন্তু অসম্পূর্ণ জরিপ জনগণের মধ্যে ভোট ও গণতন্ত্রের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই চালানো হতে পারে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার পরিকল্পিত কৌশল এটা।

গণতন্ত্রের শক্তি হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ ও ভোটের মর্যাদা। এ ধরনের প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হতে হবে।

সব মিলিয়ে এই জরিপ কেবল ভোটের হার বা দলের জনপ্রিয়তার তথ্য দেয়নি, বরং এক সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি করেছে, যা আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও জনগণের মনোভাব প্রভাবিত করার সরাসরি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা কি না, সেই প্রশ্ন এখন জনমনে। সচেতন নাগরিকদের ভাষায়, গবেষণার ছদ্মবেশে গণতন্ত্রবিরোধী প্রোপাগান্ডা

 

লেখক : যুগ্ম সম্পাদক, দৈনিক কালের কণ্ঠ

মন্তব্য

জনসমর্থনে এগিয়ে বিএনপি : জরিপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জনসমর্থনে এগিয়ে বিএনপি : জরিপ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেনএমন প্রশ্নে ৪৮.৫ শতাংশ মানুষই জানিয়েছেন, তাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে যাঁরা ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা বিএনপিকেই ভোট দেবেন। অর্থাৎ ভোটের বিচারে এখনো সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন বিএনপির দিকেই। নির্বাচনে কোন দলের প্রার্থী জিতবেএমন প্রশ্নেও সবচেয়ে বেশি, ৩৮ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, বিএনপি জিতবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) করা এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বিআইজিডি ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম।

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন বিআইজিডির গবেষক সৈয়দা সেলিনা আজিজ।

তিনি জানান, দেশের ৬৪ জেলায় চলতি বছরের ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত মোট ২০ দিন ধরে টেলিফোনে প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে জরিপটি চালানো হয়। জরিপে মোট ৯ হাজার ২০৩ জনকে টেলিফোন করা হয়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ, অর্থাৎ পাঁচ হাজার ৪৮৯ জন উত্তর দিতে রাজি হন। এর আগে গত বছরও বিআইজিডি একই ধরনের জরিপ করেছিল।

ভোট দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় প্রায় অর্ধেক মানুষ : দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ, ৪৮.৫ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁরা আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন পক্ষকে ভোট দেবেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। গত অক্টোবরে এই সংখ্যা ছিল ৩৭.৬ শতাংশ। অর্থাৎ আট মাসে ভোট দেওয়ার প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। অন্যদিকে ভোটের বিচারে বিএনপির পরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ

জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতকে ১০.৪ শতাংশ, আওয়ামী লীগকে ৭.৩ শতাংশ এবং এনসিপিকে ২.৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

অবশ্য চলতি বছরের জুলাইয়ের সঙ্গে গত বছরের অক্টোবরে হওয়া জরিপের তুলনা করে দেখা গেছে, জনসমর্থন কমেছে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগের। তবে সামান্য বেড়েছে এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি)। গত অক্টোবরে ১৬.৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপি, ১১.৩০ শতাংশ জামায়াত এবং ২ শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া আট মাসে জাতীয় পার্টির ভোট ০.৭০ শতাংশ থেকে কমে ০.৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য ইসলামী দলের ভোট ২.৬০ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ০.৭০ শতাংশ।

তবে আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে বলে মনে হয়এমন প্রশ্নে ৩৮ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, বিএনপি জিতবে। একই প্রশ্নের উত্তরে ১৩ শতাংশ মানুষ জামায়াত, ৭ শতাংশ আওয়ামী লীগ এবং ১ শতাংশ মানুষ এনসিপির কথা বলেছেন।

জাতীয় নির্বাচন কখন চানএমন প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি, ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন চান। অন্যদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা আগামী বছরের ডিসেম্বর অথবা এর পরে নির্বাচন চান। ৭০ শতাংশ মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী হলেও ১৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

নির্বাচনের আগেই প্রয়োজনীয় সংস্কার চান বেশির ভাগ মানুষ : জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই সংস্কার সম্পর্কে সচেতন। জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশই মনে করেন, ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন করা উচিত। কিছু জরুরি সংস্কার করেই নির্বাচনে চলে যাওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন ১৭ শতাংশ। ১৪ শতাংশ জানিয়েছেন, সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন দেওয়াই ভালো। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতা কমানো এবং নির্বাচনী সংস্কার মানুষের প্রধান দাবি।

৮০ শতাংশ মানুষ মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন : জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁরা মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে ৬২ শতাংশ, রাতে চলাফেরায় নিরাপত্তা নিয়ে ৬১ শতাংশ এবং পোশাকের জন্য রাস্তাঘাটে হয়রানি নিয়ে ৬৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।

রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ কমেছে, কিছুটা আস্থা বেড়েছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে : বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে কি নাএমন প্রশ্নের উত্তরে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। অন্যদিকে ৪৫ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, দেশ অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে।

গত বছরের অক্টোবরে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তবে চলতি বছর জুলাইয়ে এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৯ শতাংশে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের মূল্যায়ন নম্বরও আগের চেয়ে কমেছে। জরিপে উত্তরদাতাদের এ বিষয়ে ০ থেকে ১০০-র মধ্যে নম্বর দিতে বলা হয়। উত্তরদাতাদের মূল্যায়নে চলতি বছরের জুলাইয়ে সরকার ৬৩ নম্বর পেয়েছে। গত বছরের আগস্ট ও অক্টোবরে সরকারের স্কোর ছিল যথাক্রমে ৭৫ ও ৬৮।

জরিপের ফলাফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান, গবেষক সৈয়দা সেলিনা আজিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ