ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

গণ-অভ্যুত্থানের মাস জুলাইয়ের শুরু আজ

  • ৩৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গণ-অভ্যুত্থানের মাস জুলাইয়ের শুরু আজ

মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি, আব্বুজান, তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না।

আমাদের ভাইয়েরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। প্রতিবন্ধী কিশোর, সাত বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে তাহলে আমি কেন বসে থাকব?...আমি যদি বেঁচে না ফিরি তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো।

এই চিঠিটি গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদেরই একজন ঢাকার গেণ্ডারিয়ার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ১৬ বছর বয়সী শাহরিয়ার খান আনাসের।

সেই গণ-অভ্যুত্থানের মাস জুলাই আবার ফিরে এসেছে। আজ জুলাইয়ের প্রথম দিন। এ মাসেই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। রক্তস্রোতে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের।
আজ থেকে ৩৬ দিন নানা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আবু সাঈদ, ওয়াসীম আকরাম, মীর মুগ্ধ, নাফিজ, ফারহান ফায়েজসহ গণহত্যার শিকার হাজারো শহীদ এবং অসংখ্য আহত ছাত্র-জনতাকে দেশবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। অন্তর্বর্তী সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন জুলাই অভ্যুত্থানের এই বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সরকারের আয়োজন : অন্তর্বর্তী সরকার ১৬ জুলাই শহীদ দিবস এবং ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তথ্য ও সম্ক্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজ ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর বিশেষ ফিচার, নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। সেই সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে দেশব্যাপী বিলবোর্ড স্থাপন, পোস্টার, ফেস্টুন মুদ্রণ ও বিতরণ করা হবে।

তথ্য ভবনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর রচিত গ্রন্থগুলো প্রদর্শনের জন্য প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হবে। আগামী ৫ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শ্রাবণ বিদ্রোহর প্রিমিয়ার প্রদর্শনী হবে। জেলা তথ্য অফিসগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে শ্রাবণ বিদ্রোহ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি সারা দেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ধারাবাহিকভাবে প্রদর্শন করা হবে।

তথ্য ভবন, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ও ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ধারণ করা আলোকচিত্র ও গ্রাফিতি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবারকে সম্মাননা, বিশেষ অনুদান ও উপহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বর্ষপূর্তিতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর তথ্য ভবনে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান উপলক্ষে গ্রাফিতির বই, পোস্টার, চলচ্চিত্র শ্রাবণ বিদ্রোহ প্রদর্শন করা হবে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

বিএনপির মাসব্যাপী কর্মসূচি : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির ব্যানারে এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনাসভা, রক্তদান, গ্রাফিতি, পথনাটক, ফুটবল টুর্নামেন্ট, শিশু অধিকার বিষয়ক অনুষ্ঠান, ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ ২২টি ভিন্নধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করবে বিএনপি।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৩০ জুন রাতে (গতকাল) শহীদ মিনারে  ছাত্রদলের উদ্যোগে আলোয় আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল; ১ জুলাই বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শীর্ষক আলোচনাসভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান-এই অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বার্তা দেবেন;  ৩ জুলাই ড্যাবের উদ্যোগে দেশব্যাপী রক্তদান কর্মসূচি; ৫ জুলাই ঢাকা ধানমণ্ডি ক্লাব মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট; ৯ জুলাই ঢাকা বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে সেমিনার; ১১ জুলাই জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; ১২ জুলাই ছাত্রদলের উদ্যোগে ছাত্রদলের সব শহীদ পরিবারের সঙ্গে তারেক রহমানের মতবিনিময়সভা; ১৪ জুলাই ঢাকা (শহীদ মিনার) বাস্তবায়ন কমিটির সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে অনুষ্ঠান; ১৫ জুলাই ছাত্রদলের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান গণ-অভ্যুত্থানের বাঁকবদলের দিন; ১৬ জুলাই ছাত্রদলের উদ্যোগে শহীদ ওয়াসিম ও শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রসমাবেশ; ১৭ জুলাই ছাত্রদলের উদ্যোগে ঢাবিতে স্মরণসভা; ১৮ জুলাই ওলামা দলের উদ্যোগে দেশব্যাপী দোয়া মাহফিল, মৌন মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ; ১৯ জুলাই বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের উদ্যোগে গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষক অনুষ্ঠান। বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে আরো রয়েছে কৃষক দল ও আমরা বিএনপি পরিবার-এর উদ্যোগে শহীদ জিয়া উদ্যান ও সারা দেশে বৃক্ষরোপণ, ঢাকায় গণ-অভ্যুত্থানে পেশাজীবীদের অবদান নিয়ে আলোচনা; ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদান; ২৩ জুলাই শাহবাগে মোমবাতি প্রজ্বালন বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভ : জুলাই-এ লাশের সারি শীর্ষক অনুষ্ঠান; দৃক গ্যালারিতে ফ্যাসিবাদের ছবি ও কার্টুন প্রদর্শনী; মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে গ্রাফিতি অঙ্কন ও গণসংগীত; ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান; ২৯ জুলাই আমরা বিএনপি পরিবার; ও মায়ের ডাকের অনুষ্ঠান গণতান্ত্রিক পথযাত্রায় শিশু; ৩০ জুলাই নারকীয় জুলাই শীর্ষক সাভার-আশুলিয়া থানায় লাশ পোড়ানোর স্থানে জনসভা; ৩১ জুলাই ঢাকাসহ সারা দেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে মার্চ ফর জাস্টিস; ১ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গণ-অভ্যুত্থান-২০২৪-এর বিশেষ স্থান যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, উত্তরা ও মিরপুরে জনসভা; ২ আগস্ট নয়াপল্টনে পথনাটক; ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্রদলের উদ্যোগে ছাত্রসমাবেশ; ৪ আগস্ট যুবদলের উদ্যোগে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও আমার না-বলা কথা শীর্ষক কর্মসূচি এবং ৬ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল।

জামায়াতের ৩৯ দিনের কর্মসূচি : জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ৩৯ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হবে। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের জন্য দেশব্যাপী শাখায় শাখায় দোয়া অনুষ্ঠান, ২ থেকে ৪ জুলাই দরিদ্র, অসহায়, দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ, ৮ থেকে ১৫ জুলাই শহীদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মতবিনিময় ও দোয়া অনুষ্ঠান, ১৬ জুলাই রংপুরে শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে আলোচনাসভা ও দোয়া অনুষ্ঠান, ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ, ২০ থেকে ২৪ জুলাই সেমিনার-সিম্কোজিয়াম, ২৫ থেকে ২৮ জুলাই ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এ ছাড়া ৬ থেকে ৮ আগস্ট সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী ও আলেম-ওলামাদের উদ্যোগে আলোচনাসভা করবে দলটি।

এনসিপির কর্মসূচি : এনসিপির উদ্যোগে ১ জুলাই পদযাত্রা শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলায় পদযাত্রা হবে। ৩০ জুলাই পর্যন্ত পদযাত্রা চলবে। ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস পালন করা হবে। ৩ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস উদযাপন করা হবে।

বাম দলগুলোর কর্মসূচি : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। আগামী ৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচির মধ্যে সরকার ঘোষিত আবু সাঈদ দিবস ও গণ-অভ্যুত্থান দিবস পালন করা হবে। ১৬ জুলাই রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবরে পুষ্কার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। ওই দিন গণ-অভ্যুত্থানে পার্টির শহীদ দুই নেতা বদিউজ্জামান ও হানিফের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। পরের দিন ১৭ জুলাই রংপুরে জনসভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গণসংহতি আন্দোলন আগামী ৪ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ২৫ জুলাই ঢাকায় জুলাই গণসমাবেশ, ১ আগস্ট শহীদ জুলফিকার শাকিলের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার মিরপুরে জুলাই সমাবেশ এবং ৪ আগস্ট শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে বলে জানিয়েছেন জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্কাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মোড়াপাড়া মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ বলেন, আমার বাবা রাতে মসজিদে এশার নামাজের পর বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে।

খবর পেয়ে আমরা ছুটে গিয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, কারো সঙ্গে বাবার শত্রুতা ছিল না।
আমার বাবার মাছের ঘেরসহ আরো অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে রাখা আছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের পর জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এখনো থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে আগামীকাল (শনিবার) থানায় মামলা হতে পারে। হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য

চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত
নূরুর রহমান

চাঁদপুর শহরে মসজিদের ভেতর দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমাম আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের প্রফেসরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে (৬৫) চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বিল্লাল হোসেন নামের একজনকে মুসল্লিরা পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন মুসল্লি জানান, দুপুরে জুমার নামাজের পর মসজিদের ভেতরই মাঝবয়সী এক ব্যক্তি ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। উপস্থিত মুসল্লিরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে পিটুনি দিয়ে মসজিদের ভেতর বেঁধে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মুসল্লিরা জানান, হামলাকারী নিজেও মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া জানান, আটক ব্যক্তির নাম বিল্লাল হোসেন (৫০)। কী কারণে তিনি ইমাম সাহেবের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। আটক ব্যক্তি একেক সময় একেক কথা বলছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ আহমেদ কাজল জানান, ওই ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে। আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত বলেও জানান তিনি।

মসজিদের ইমামের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব রাত সাড়ে ১১টায় এই প্রতিবেদককে জানান, আহত ইমামকে দেখতে রাত ১১টার দিকে তিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে যান এবং তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন।

ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের কানের পাশে যেখানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে, সেখানে বেশ কিছু সেলাই দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, ইমাম সাহেবের মাথার সিটি স্ক্যান করা হবে। আঘাত গুরুতর হলে প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

মন্তব্য

ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

নির্মম, নিষ্ঠুর ও নৃশংসভাবে পুরান ঢাকার এক সাধারণ ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। গত বুধবার সংঘটিত এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, এনসিপি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

তাঁরা রাত ১১টার পর পর্যন্ত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে তিন সদস্যের একটি কমিটি এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে নিহতের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যায়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা এ ঘটনাকে বর্বরোচিত, নিষ্ঠুর ও মর্মান্তিক অভিহিত করেছেন।
একই সঙ্গে এর পেছনে তৃতীয় কোনো শক্তি কাজ করছে কি না সেই প্রশ্নও তোলেন। ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য আসামিদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

এরপর মরদেহের ওপর চলে এই বর্বরতা। সিসিটিভিতে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে অনেক মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটছে। এ সময় উত্সুক লোকজন এই নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করেছে। কেউ এগিয়ে আসেনি। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের ক্যাম্প পাশে থাকলেও তারাও এগিয়ে আসেনি।
ভিডিওতে হত্যা ও বীভৎসতায় জড়িতদের হাত উঁচিয়ে চিৎকার করে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে কিছু বলতে শোনা যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়ার পর এই বর্বরতার বিষয়টি সামনে আসে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/07.july/12-07-2025/kalerkantho-lt-9a.jpgছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল : গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে একটি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে জড়িত সন্দেহে যাদের নাম এসেছে তাদের দ্রুত বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। এর পরই সংগঠনের পক্ষ থেকে চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ভিডিও ফুটেজে কোনো একজন সোহাগকে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা গেলেও তার বিরুদ্ধে মামলা কিংবা গ্রেপ্তার হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযোগ উঠেছে যে এ ঘটনার পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষও জড়িত থাকতে পারে।

আজীবন বহিষ্কৃত পাঁচ নেতা : এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুরান ঢাকার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে। তাঁরা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস, মাহমুদুল হাসান মহিন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।

জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যস্থা নেওয়ার আহবান জানান।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত নেতা অপু দাসের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : সোহাগকে পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বরে এসে সমাবেশ করে এবং রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেষ হয়।

বুয়েটে বিক্ষোভ : এদিকে রাত ১১টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন। এ সময় তাঁরা লিখিত বক্তব্যে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ দফা দাবি জানান। তাঁদের দাবিগুলো হলো : সোহাগ হত্যার ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অভিযুক্ত মহিন, রবিনসহ সব খুনিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধীদের রক্ষা করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিন্দা, প্রতিবাদ ও শোক বিবৃতি : বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে শোক জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই পৈশাচিক ঘটনা কেবল একটি জীবনহানিই নয়এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস ও বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই। অপরাধী যে-ই হোক, তার স্থান কখনোই আইন ও ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় সিরিয়াস ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দায় বিএনপির ওপর চাপানো অপরাজনীতি, এটা নোংরা রাজনীতির চর্চা। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন কোনো অপরাধীকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, কোনো দিন দেবেও না। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান জিরো টলারেন্স

জামায়াতের গভীর উদ্বেগ ও শোক : সোহাগ হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক এবং নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শত শত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।

তিনি বলেন, নিহত সোহাগের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি এনসিপির : সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।

জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চকবাজারের (মিটফোর্ডের সামনে) নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে শোকাহত। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে জাতীয় যুবশক্তি।

অন্যদিকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শুক্রবার রাতে টিএসসি চত্বরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা এবং সম্প্রতি ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

এদিকে সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় আসামি তারেক রহমান রবিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন। গতকাল আদালতের কোতোয়ালি থানার প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য জানান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নাসির উদ্দিন। আর অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন একই থানার উপপরিদর্শক মো. মনির। আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) ও হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তায় একদল লোক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম।  আর পুলিশ অস্ত্র মামলা করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার সব আসামিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে পুরান ঢাকার কয়েক যুবক সোহাগকে বুধবার দুপুরে ডেকে নেন। সন্ধ্যায় তাঁকে হত্যা করা হয়। সোহাগ পুরনো তামার তার, অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ ভাঙ্গারি জিনিসের ব্যবসা করতেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোহাগকে হত্যা করে তাঁর পূর্বপরিচিতরা। নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় মহিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আশপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।

নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন সোহাগ। তিনি অনেক বছর ধরে ভাঙ্গারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আগে তিনি পলাশ নামের একজনের অধীনে কাজ করতেন। তিনি ভাঙ্গারি এনে ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। চার-পাঁচ বছর আগে সোহাগ আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন তাঁর গুদামে গুলি চালানো হয়। বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেন মহিন। মিটফোর্ড এলাকার রজনী বোস লেনে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সোহানা মেটাল।

আসামিদের মধ্যে মহিন ও রবিন ছাড়াও রয়েছে সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

মন্তব্য

খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা
মাহবুবুর রহমান

খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ী খুন হন। গতকাল আরো তিন জেলায় তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

খুলনা অফিস জানায়, খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মাহবুবুর রহমানকে খুব কাছ থেকে প্রথমে গুলি করা হয়। পরে পায়ের রগ কেটে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক মাহবুবুরকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাঁর লাশ খুমেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। আজ শনিবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। নিহত মাহবুবুর রহমান মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার মো. আব্দুল করিম মোল্লার ছেলে।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, দুপুরে বাসার সামনে নিজের প্রাইভেট কার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুবুর। ওই সময় হেলমেট পরা তিনজন একটি মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পরে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য দুর্বৃত্তরা তাঁর দুই পায়ের রগ কেটে দেয়।

তিনি আরো জানান, মাদক বিক্রি নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে মাহাবুবুুরের দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে এ ঘটনা ঘটল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।

ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত মাহবুবুরের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।

এদিকে মাহবুবুরের হত্যার খবর পেয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাসহ বিএনপি, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায়। উপজেলার মোড়াপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ জানান, আমার বাবা রাতে এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। পরে আমরা খবর পেয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়ায় একটি করে তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জামালপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে জামালপুর শহরের দাপুনিয়ার ধানক্ষেতে কচুরিপানার ভেতর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জামালপুর সদর থানার ওসি আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গতকাল রোজা মনি (৬) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়ির পেছনে একটি পাটক্ষেত থেকে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রোজা মনি সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের চরমারিয়া গ্রামের মোহাম্মদ সুমন মিয়ার মেয়ে। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান,  গত বৃহস্পতিবার রাতে নিখোঁজ রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের ইজি বাইকচালকের ঝুলন্ত লাশ গতকাল শুক্রবার সকালে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়ার একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। রফিকুল ইসলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার  মোল্লাতেঘরিয়ার আদর্শপাড়ার মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ