ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭
বিশেষ লেখা

দেশজুড়ে অশান্তি সান্ত্বনা শুধু ‘বিবৃতি’

  • দেশের এই স্থবির অবস্থা এবং সরকারের প্রতিক্রিয়াহীন মনোভাব দেশকে আরো সংকটের গভীরে নিয়ে যেতে পারে। আর সে জন্যই প্রয়োজন লন্ডনের যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী একটি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করা
অদিতি করিম
অদিতি করিম
শেয়ার
দেশজুড়ে অশান্তি সান্ত্বনা শুধু ‘বিবৃতি’
অদিতি করিম

দেশজুড়ে কেমন যেন একটা অস্থিরতা ও অশান্তি চলছে। কোথাও শান্তি নেই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের আবাসিক হলের দাবিতে আন্দোলন করছেন।

সেই আন্দোলনে কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি দিয়েই দায় এড়িয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে সচিবালয়ে আন্দোলন চলছে। উপদেষ্টারা আন্দোলন থামাতে কয়েক দিন পর পর বিবৃতি দিচ্ছেন। বড় ধরনের আন্দোলনের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে এনবিআরে।
সেখানেও সরকার দায় এড়িয়েছে শুধু একটি বিবৃতি দিয়ে। যেখানেই আন্দোলন, সেখানেই বিবৃতি। চারপাশে যা কিছু ঘটছে, সবকিছু সরকার যেন দেখছে, শুনছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। শুধু বিবৃতি দিচ্ছে।
অনেকে এই সরকারের নাম দিয়েছেন বিবৃতি সরকার

সম্প্রতি বাজেট নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, এই সরকার কুম্ভকর্ণ সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার শুনছে, দেখছে; কিন্তু কোনো কাজ করছে না। এটি শুধু হোসেন জিল্লুর রহমানেরই মতামত নয়, গোটা দেশের মানুষের মতামত।

প্রশ্ন উঠেছে, বিবৃতি দেওয়াই কি সরকারের একমাত্র কাজ? সম্প্রতি একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। কয়েক দিন আগেই মব ভায়োলেন্স নিয়ে হুলুস্থুল হলো। প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্য সফরে লন্ডনে একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সরকার এ ধরনের মব ভায়োলেন্স প্রতিহত করার জন্য সর্বত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের মব সন্ত্রাস কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলেও তিনি জানালেন। খুঁজে দেখলাম, গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত শুধু মব সন্ত্রাস নিয়ে সরকার ১৬টি বিবৃতি দিয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মব সন্ত্রাসীরাও সদর্পে বিবৃতি দিয়ে বলছে, এসব তারা করবেই। নুরুল হুদার ঘটনার পরদিন সরকার একটি বিবৃতি দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং ভিডিও চিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় ঘণ্টাব্যাপী নুরুল হুদার ওপর মব সন্ত্রাস হয়েছে। নুরুল হুদা যদি ঘৃণ্যতম অপরাধীও হন, তাঁর শাস্তি দেবে দেশের আদালত, প্রচলিত আইন। কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরবে, চড়-থাপ্পড় মারবে, গালে জুতা মারবে, জুতার মালা পরাবেএটা কোনো সভ্য সমাজের রীতি হতে পারে না। সব মহল এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে, উদ্বেগ জানিয়েছে। কিন্তু সরকারের কাছে সমাধান আছে একটাই, সেটি হলো বিবৃতি।

এই ঘটনার পর সরকারের বিবৃতিটিও দেখার মতো। সরকার বলেছে, এখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ভূমিকা ছিল, তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে কি না সেটি সরকার দেখবে এবং যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এরই মধ্যে গত ১০ মাসে পাঁচ শর বেশি পুলিশ নিগৃহীত হয়েছে। মব সন্ত্রাসীরা কথায় কথায় পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছে। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল পুরোপুরিভাবে ভেঙে গেছে। এখন পুলিশ বাহিনীর আর সেই সক্ষমতা নেইএকটি মব সন্ত্রাস থামানোর জন্য তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে। কারণ এখন মবরাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী।

শুধু নুরুল হুদার বিষয় নয়। দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় মব সন্ত্রাস চলছে। মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো কর্মকৌশল নেই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছেন। কিন্তু মব সন্ত্রাস বন্ধ হচ্ছে না। শুধু মব সন্ত্রাস কেন, কোথাও কোনো ক্ষেত্রেই সরকারের অ্যাকশন নেই। প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্য সফরে গেলেন। যুক্তরাজ্য সফরের সময় তিনি ১৩ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করলেন। ওই বৈঠকের মধ্য দিয়েও একটা যৌথ বিবৃতি এলো। কিন্তু সেই বিবৃতির এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকারিতা নেই। ওই বিবৃতি পুরো জাতিকে আশ্বস্ত করেছিল। পুরো জাতি ভেবেছিল, এখন দেশ নির্বাচনের পথে হাঁটবে। অশান্তি, হানাহানি, আন্দোলন, অবরোধ ইত্যাদি থেকে মানুষ মুক্ত হবে। দেশজুড়ে শুরু হবে একটি নির্বাচনী উৎসব।

সত্যি বলতে কি, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর দেশজুড়ে একটা স্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই স্বস্তির আকাশ শঙ্কার কালো মেঘ ঢেকে দিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ফিরে আসার দুই সপ্তাহ পরও পদক্ষেপ নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বার্তা পাননি। সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতি বাস্তবে প্রতিপালন করবে কে? সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে চলছে ম্যারাথন আলোচনা। এভাবে আলোচনা করে বছরের পর বছর সময় পার করে দেওয়া যায়। কিন্তু সমাধান কী? জনগণেরই বা কী লাভ তাতে? সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত থাকুক, কারো কোনো আপত্তি নেই। পাশাপাশি নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করতে বাধা কোথায়? বিশেষ করে এখন সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ। যখন প্রধান উপদেষ্টা বা সরকার নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের ব্যাপারে একটি সম্ভাব্য সময় বলবে, তখন নির্বাচন কমিশনকে অনেকগুলো দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রথমত, তাকে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। সীমানা নির্ধারণ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৭৫টির মতো বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধগুলো নিষ্পত্তি করা সময়সাপেক্ষ। হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। যাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নন, তাঁদের সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ দিতে হবে। সীমানা নির্ধারণের পর নির্বাচন কমিশনকে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করতে হবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের বাছাইপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে হবে। এই কাজগুলো শেষ না করে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। নির্বাচন বিশ্লেষকরা হিসাব করে দেখেছেন, এই কাজগুলো শেষ করতে অন্তত সাত থেকে আট মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ এখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ।

প্রতিদিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হচ্ছে। সেখান থেকেও আসছে বিবৃতি। দেশে এখন একমাত্র কাজ হচ্ছে বিবৃতি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিচ্ছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিচ্ছে, এনবিআর বিবৃতি দিচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা বিবৃতি দিচ্ছেন। যৌথ বিবৃতিসহ নানা ধরনের বিবৃতি আসছে। কিন্তু এই বিবৃতিগুলো বাস্তবায়ন করবে কারা, কিভাবে? সেটি এখন এক বড় প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর কারো কাছে নেই।

দেশের এই স্থবির অবস্থা এবং সরকারের প্রতিক্রিয়াহীন মনোভাব দেশকে আরো সংকটের গভীরে নিয়ে যেতে পারে। আর সে জন্যই প্রয়োজন লন্ডনের যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী একটি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করা। কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়ার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয়? সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। জুলাই সনদ, গণহত্যার বিচারএটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। এর সঙ্গে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার বিরোধ কোথায়? যদি ঐকমত্য কমিশন আলোচনা করে জুলাই মাসে সনদ চূড়ান্ত করে এবং জুলাই সনদে যদি সবাই স্বাক্ষর করে, সেই সময়ের মধ্যে যদি নির্বাচন কমিশন তার অনেকগুলো কাজ এগিয়ে নেয়, তাহলে সমস্যাটা কোথায়? তাহলে কি জুলাই সনদের আগ পর্যন্ত বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে? একটির সঙ্গে আরেকটিকে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে কেন?

এই সরকারের বেশির ভাগ সদস্যই এসেছেন বস্তুত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্রধান কাজ হলো যেকোনো বিষয়ে মতামত দেওয়া। তারা কাজ করে কম, কথা বলে বেশি। প্রকৃত উন্নয়নের চেয়ে সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপেই সময় ব্যয় করে বেশির ভাগ এনজিও। এখন সরকারও যেন চলছে এনজিও টাইপে।

মনে রাখতে হবে, এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত একটি সরকার। জনগণের বিপুল সমর্থন রয়েছে এই সরকারের প্রতি। কাজেই এই সরকারকে কাজ দেখাতে হবে। শুধু সব বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। প্রতিটি সমস্যার গভীরে যেতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হবে। এনবিআরের যে শাটডাউন কর্মসূচি, সেই কর্মসূচির কারণ কী, তার অনুসন্ধান করতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলে একটি যৌক্তিক সমাধানে যেতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমস্যা কত দিন ঝুলিয়ে রাখা হবে? সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিটি করপোরেশনের সমস্যার একটি ইতিবাচক ও বাস্তবভিত্তিক সমাধান করতে হবে। সমাধান করতে হবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের আবাসনের।

এই সরকারের এমন একটি অবস্থা দাঁড়িয়েছে, শুধু যমুনা ঘেরাও করে ব্যাপক আন্দোলন করলে সরকার সেই দাবি মেনে নেয়। তার আগ পর্যন্ত সরকার চুপচাপ বসে দেখে। এটি একটি সরকারের কাজ হতে পারে না। তাই অবিলম্বে প্রয়োজন সরকারের দুটি কাজ করা। প্রথমত, লন্ডনের বিবৃতির আলোকে একটি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা; দ্বিতীয়ত, যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলোর সমাধানে দ্রুত কার্যকর ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মানুষ আর নিতে পারছে না। বিবৃতি এখন জনগণের কাছে এক বিরক্তি।

 

লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক

ই-মেইল : auditekarim@gmail.com

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ

দ্বিকক্ষ সংসদ, পিআর ও নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য হয়নি দলগুলোর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দ্বিকক্ষ সংসদ, পিআর ও নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য হয়নি দলগুলোর

জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসনবণ্টন প্রস্তাবে অনড় রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল জানায়, কমিশনের প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষের আসনবণ্টন হতে হবে। তারা উভয় কক্ষের পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী আসনেও পিআর পদ্ধতি চায়। আবার পিআর পদ্ধতি চাইলেও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিরোধিতা করেছে সিপিবিসহ সমমনা কয়েকটি দল।

এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তিসহ সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে গণভোটের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি দলগুলো।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৪তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আগামী রবিবার আবারও সংলাপে বসবে কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে। যদি উচ্চকক্ষ গঠিত না হয় বা উচ্চকক্ষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের প্রয়োজন হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদ, যেমনপ্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি, অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিষয়ক ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ এবং ৫৮ঙ অনুচ্ছেদের দ্বারা সংবিধানে যুক্ত হলে তা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো রকম মতভিন্নতা নেই বলে এই ব্যবস্থা পরিবর্তনে গণভোটের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তির পর ভবিষ্যতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হবে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এই মত প্রকাশ করেছে। তবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আজও ঐকমত্য হয়নি।

এ ব্যাপারে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, ভোটের সংখ্যানুপাতে যেন উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে আসনের সংখ্যানুপাতেও উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আছে। যেহেতু রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো এ বিষয়ে একাধিক আলোচনার পরও ঐকমত্যের জায়গায় পৌঁছতে পারেনি, সেহেতু দল ও জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে, পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে একটি অবস্থানে আসবে।

ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাজের অংশীদার জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, যদি আমরা কোথাও ব্যর্থ হই, সেই ব্যর্থতা আমাদের সবার। কমিশনের ব্যর্থতা যদি হয়, তাহলে এটা সবার ব্যর্থতা হবে। তাই ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেই দায়িত্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের। আমরা আপনাদের প্রচেষ্টার অংশীদার হয়েছি, আলাদা সত্তা হিসেবে যুক্ত হইনি। রাজনৈতিক দলগুলোকে এক বছর আগের পরিস্থিতি অনুধাবন করার অনুরোধ জানান তিনি।

দীর্ঘ আলোচনার পরও ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব না হওয়ায় কমিশন কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটির ওপর ভিত্তি করে বিএনপি প্রতিক্রিয়া দেবে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ব্যাপারে মোটামুটি বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত। কিন্তু তার গঠনপ্রক্রিয়া কী রকম হবে এবং পাওয়ার ফাংশন কিভাবে হবে সেটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে। নিম্নকক্ষে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। উচ্চকক্ষ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমরা সেই জায়গাতেই আছি। আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম, সেটি হলো, যাঁরা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, যাঁদের জাতি গঠনে অবদান আছে এবং যাঁরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতি গঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকেই আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম। সেখানে আমরা উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন রাখার জন্য বলেছিলাম। আমরা বলেছি, নারীদের বিদ্যমান সংরক্ষিত আসনে যেভাবে আসনের অনুপাতে নির্ধারণ করা হয়, সেভাবে উচ্চকক্ষেও হবে। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে। কেউ চান পিআর পদ্ধতিতে। এখানে আবার পাওয়ার ফাংশনের বিষয় আছে। সাধারণ বিল কিভাবে পাস হবে, সংবিধান সংশোধন হলে উচ্চকক্ষে কিভাবে পাস হবে ইত্যাদি। আবার এখন বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন আছে কি না সে প্রশ্নও অনেক দল তুলছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সব বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশনের একটা সিদ্ধান্তে আসার কথা। সেই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই আমাদের প্রতিক্রিয়া বা সম্মতি-অসম্মতির বিষয়ে জানাতে পারব। সে জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যেসব মৌলিক ধারা রয়েছে, যেমনপ্রস্তাবনা ৮, ৪৮, ৫৬ ও ১৪২ নম্বর ধারাএসব ক্ষেত্রে সংশোধন এলেই তা পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের আগে গণভোটে দিতে হবে। এই ধারা অনুসারে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ভবিষ্যতে কেউ যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে জন্য তা গণভোট ছাড়া পরিবর্তন করা যাবে নাএমন একটি বিধান সংযুক্ত করা হোক। কমিশন এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, মেজরিটি সংখ্যক দলই পিআর পদ্ধতিকেই সাপোর্ট দিচ্ছে। শুধু এক লাইনে ব্যাখ্যা দিতে চাই, জনসমর্থনের দিক থেকে পাঁচটা-ছয়টা দল হলো বিএনপি, এনসিপি, চরমোনাই পীর, সব ইসলামী দল, গণ অধিকার পরিষদ। আমরা পিআরের পক্ষে আছি। দু-একটি দল না চাইলে কোনো প্রস্তাব আটকে যাওয়াটা ইনজাস্টিস হবে, বৈষম্য হবে। কারণ মেজরিটি তো পক্ষেই আছে। কোনো এক জায়গায় একটা সলিউশন দিতে হবে।

ডা. তাহের বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নতুনভাবে ইন্ট্রোডিউস করার প্রস্তাব হচ্ছে। তবে পৃথিবীতে এটা নতুন নয়, বহু দেশে এই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট আছে। কিছুসংখ্যক দল ছাড়া সবাই আমরা একমত হয়েছি, দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট চাই। তবে কিছুটা ডিফারেন্স হচ্ছে, কিভাবে এটা ফর্ম করবে এবং এটার ফাংশন কী হবে, সে নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব আসছে। এগুলো কনক্লুড করা হয়েছে। কমিশন সব শুনেছে ও বক্তব্য রেখেছে এবং কমিশন বলেছে, আগামী রবিবার কমিশনই এ বিষয়টা চূড়ান্ত করবে। কমিশন এটি ফাইনাল সিদ্ধান্ত আকারে পেশ করবে।

তিনি আরো বলেন, সংবিধান সংশোধনটাকে একটু কঠিন করে দেওয়া হোক, যাতে কোনো একক দল একটু ইচ্ছামতো সংবিধান সংশোধন করতে না পারে।

নারীদের জন্য ১০০ আসনের পক্ষে একমত প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, এ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আমাদের ভিন্নমত আছে। নারী আসনে নারীদের ভোটেই নির্বাচিত হতে হবে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে এটা সহজ হবে।

তিনি আরো বলেন, উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে না হলে যদি সংসদীয় মেম্বারের আসনের সংখানুপাতিক হয়, তাহলে এটা তো আবার ডবলই হলো, সেম রিপ্রেজেন্টেশন, সেম সেন্টিমেন্ট, সেম ডিসিশন। যদি সব সেম সেম হয়, তাহলে দরকার কি?

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, নিম্নকক্ষের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসনবণ্টন হলে ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহি আসবে না। এমন উচ্চকক্ষ চাই, যেখানে ১ শতাংশ ভোট পাওয়া দলেরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কার্যকর উচ্চকক্ষ থাকতে হবে। কিছু দলের মধ্যে উচ্চকক্ষকে দুর্বল করার প্রবণতা রয়েছে। আমরা সংবিধান সংশোধনে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং কিছু কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনে গণভোটের প্রস্তাব করেছি।

মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি বিরোধিতা করছে দাবি করে আখতার হোসেন বলেন, বেশির ভাগ দল উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে একমত হলেও বিএনপিসহ গুটিকয়েক দল আপত্তি জানিয়েছে। এখন উচ্চকক্ষের আলোচনা বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। সংস্কারকে এখন সংখ্যাতাত্ত্বিক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে; যেমন ২০টি সংস্কার প্রস্তাব, আমরা ১২টা মেনেছি, আটটা মানিনি। সবই কেন মানতে হবে, এমন কথা বলা হচ্ছে। যখন মৌলিক সংস্কারের কথা আসছে, তখন তারা বেঁকে বসছে। কিন্তু মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে এনসিপি কোনো ছাড় দেবে না। মৌলিক সংস্কার ছাড়া জুলাই সনদের দিকে নিয়ে যাওয়া হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সে ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়টি যদি মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়, আমরা সেটাই করব।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এ দেশের ভৌগোলিক বিবেচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন নেই। আমরা পিআর পদ্ধতি চাই। সংস্কার যা হয়েছে, তা নিয়ে জাতীয় সনদ হতে পারে। সময়ক্ষেপণ করলে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হবে।

বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, যদি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনয়ন না হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো উভয় কক্ষে পাস না হয়, তাহলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের যৌক্তিকতা থাকবে না। বরং এতে রাষ্ট্র ও দেশের সম্পদের অপচয় হবে। আমরা বলেছি, যত দিন পর্যন্ত উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা না হবে, তত দিন সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে নিম্নকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের মেজরিটি ও গণভোটের বিধান রাখতে হবে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, উচ্চকক্ষকে সাক্ষীগোপাল করা যাবে না। কিভাবে কার্যকর করা যায়, সেই পথ বের করতে হবে। দলের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। সংবিধান সংশোধন করতে নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটির প্রয়োজন হবে।

মন্তব্য

কক্সবাজারে বিএনপি নেতা খুন জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ

    ৬ জেলায় ৩ খুন, আরো ৩ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
কক্সবাজারে বিএনপি নেতা খুন জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কক্সবাজারে জমির বিরোধ নিয়ে হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। বিএনপি ও নিহতের পরিবারের অভিযোগ, এর জন্য দায়ী জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা। 

অন্যদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে পরকীয়া প্রেম দেখে ফেলায় প্রেমিকার স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন প্রেমিক। বরিশালে বাসায় ঢুকে সাবেক এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।

এ ছাড়া গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার হয়েছে আরো তিনজনের লাশ।

কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

কক্সবাজার : সদর উপজেলার ভারুয়াখালীতে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলায় গুরুতর আহত বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার (৫০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত রহিম উদ্দিন সিকদার ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি।

স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ, বিএনপির মিডিয়া সেল এবং নিহতের পরিবারের অভিযোগ, হামলায় নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার পৌরসভার ফাতেরঘোনা ইউনিট জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুল্লাহ আল নোমান। সেই সঙ্গে হামলায় অংশগ্রহণ করেন তাঁর জামাই মিজান, মুজিব, এনামসহ জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।

নিহতের বড় ভাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার জানান, গত রবিবার রাতে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাঁর ভাই রহিম উদ্দিনসহ পরিবারের সদস্যদের ওপর অতর্কিতভাবে লাঠি, রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরে অবস্থার অবনতি হলে রহিম উদ্দিনকে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াছ খান বলেন, আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় মামলা করা হয়নি।

বরিশাল : বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গতকাল দুপুরে বাসায় ঢুকে সাবেক এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত আব্দুস সাত্তার হাওলাদার (৬৫) ভরপাশা ইউনিয়নের দুধল মৌ গ্রামের গোলদারবাড়ির বাসিন্দা। তিনি অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক।

ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তদন্ত না করে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। নিহতের পরিবারও কিছু বলতে পারছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহিদ হাসান জানান, নিহতের শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাত করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান।

গাজীপুর (আঞ্চলিক) : টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকায় পরকীয়া প্রেম করার সময় দেখে ফেলায় স্বামীর হাতে পরকীয়া প্রেমিক খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল ভোররাতে পুলিশ প্রেমিকা সুলতানা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিহত প্রেমিক কামরুল ইসলাম (২৬) টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার ৩ নম্বর ব্লকের দুলাল মিয়ার ছেলে। প্রেমিকা সুলতানা বেগম (৩০) এরশাদনগর ১ নম্বর ব্লকের পাখি মিয়ার মেয়ে এবং সাব্বির আহমেদের স্ত্রী।

এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই কামাল হোসাইন বাদী হয়ে দুজনকে আসামি করে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলার ২ নম্বর আসামি সুলতানা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১ নম্বর আসামি সাব্বির পলাতক।

দেবীদ্বার (কুমিল্লা) : নিখোঁজের আট দিন পর উপজেলার নির্জন এলাকার এক জঙ্গল থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত হনুফা আক্তার (৪৫) দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের স্ত্রী।

ঘটনাটি ঘটে উপজেলার ৭ নম্বর এলাহাবাদ ইউনিয়নের গৌরসার গ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন সুজাত আলীর পরিত্যক্ত বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে।

হনুফা বেগমের আত্মীয় স্কুল শিক্ষক লিপি আক্তার বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাশের ছবি এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের অনলাইনে নিউজটি দেখতে পাই। লাশের পরনের শাড়ি দেখে চিনতে পারি। পরে নিহতের ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হই যে এটা হনুফা বেগমের লাশ।

কাউখালী (রাঙামাটি) : উপজেলার সুগারমিল আদর্শগ্রাম থেকে অপহরণের ৯ দিন পর পোলট্রি খামারি মামুনের (৩৫) বস্তাবন্দি দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে কাউখালী থানা পুলিশ। গতকাল সকালে কাউখালীর মাঝেরপাড়া এলাকা থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মামুন সুগারমিল আদর্শগ্রাম এলাকার আলী আহম্মেদের একমাত্র ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত মামুনের সাবেক কর্মচারী মূল ঘাতক কামরুল ইসলাম (৩০), তাঁর স্ত্রী ও আনোয়ার (২০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কামরুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাঁর দেখানো স্থান থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মাটিতে পুঁতে রাখা মামুনের লাশ উদ্ধার করে কাউখালী থানা পুলিশ।

ময়মনসিংহ : গফরগাঁও উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নে শনিবার সকালে চর শাঁখচূড়া গ্রামের জনৈক আব্দুর রশিদের মজা পুকুর থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশু সিফাতের (১১) লাশ উদ্ধার হয়েছিল। নিখোঁজ অন্য শিশু আয়মান সাদাবের (৫) লাশ গতকাল সকালে দীঘিরপার গ্রামের প্রতিবেশী আত্মীয় গোলাম হোসেনের মজা পুকুরপার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুই শিশুই গত শুক্রবার নিজ নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিল।

মন্তব্য
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

ফটো সাংবাদিকের চোখে সেই দিন

আদর রহমান, রংপুর
আদর রহমান, রংপুর
শেয়ার
ফটো সাংবাদিকের চোখে সেই দিন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখছিলাম। কারণ ওই সময় রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফলে যোগাযোগ রক্ষা করছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়টির কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে। কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় সব কটি বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধের ছবি তোলার পাশাপাশি নিউজ কাভার করেছি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ৬ জুলাই ২০২৪ প্রথম কাভার করেছিলাম শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলের ছবি ও নিউজ।

এর দুই দিন পর ৮ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবারও কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসে পদযাত্রা ও সমাবেশ করে সেখান থেকে বেরিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে।

১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ওই দিন পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধার মুখে পণ্ড হতে বসেছিল অবস্থান কর্মসূচি।

তবে শেষ পর্যন্ত সব বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে মডার্ন মোড়ের দিকে যেতে চাইলে ছাত্রলীগ ও প্রক্টরের বাধার কারণে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে পারেনি। ওই দিন বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হন শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।

এরপর আবার ১৪ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন শেষে রংপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির ১ নম্বর গেটে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন। কিন্তু ওই দিন শিক্ষার্থীদের দাঁড়াতে দেননি বেরোবি শাখা ছাত্রলীগ, রংপুর মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। তাঁদের ধাওয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে না পেরে ফের ১৬ জুলাই বেরোবির ১ নম্বর গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন।

সিদ্ধান্ত হয় ১৬ জুলাই রংপুর নগরীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টায় রংপুর জিলা স্কুলের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে বেরোবির ১ নম্বর গেটের সামনে যাবেন।

ওই দিন দুপুর ১টার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে রওনা করি বেরোবির দিকে।

সঙ্গে ছিলেন দৈনিক যুগান্তরের রংপুর অফিসের ফটো সাংবাদিক উদয় চন্দ্র বর্মন। সেখানে পৌঁছে আমরা অবস্থান করছিলাম বেরোবির ১ নম্বর গেটে। কিছুক্ষণ পর শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে বেরোবির শিক্ষার্থীরা ১ নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভ করতে করতে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু আগে থেকেই ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল।

তখন দুপুর ২টা ৯ মিনিট। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একটি ইটের টুকরা এসে আমার বাঁ হাতে লাগলে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হই। এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা শুরু করে। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

দুপুর ২টা ১৬ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে বেধড়ক পেটাতে থাকে পুলিশ। চারজন পুলিশ তাতে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে আবু সাঈদের মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। বেরোবির ১ নম্বর গেট পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমাতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে আবু সাঈদ পুলিশের সামনে বুক পেতে দেন। খুব কাছ থেকে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। ছররা গুলি বুকে লাগার পর আবু সাঈদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহপাঠীরা সঙ্গে সঙ্গে আবু সাঈদকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে আন্দোলনরত বেরোবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ পার্কের মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বেরোবির ১ নম্বর গেট ভেঙে ঢুকে পড়ে ক্যাম্পাসে। বিকেল ৪টা ৩৬ মিনিটে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একটি কার এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেরোবির ভিসির বাড়ি অবরুদ্ধ করে নিচে রাখা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বাড়িটিও ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ ও র্যাব এসে ভিসির বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন শিক্ষকসহ ভিসিকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। 

মন্তব্য

প্রথমবারের মতো আজ ‘জুলাই শহীদ দিবস’

    পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
প্রথমবারের মতো আজ ‘জুলাই শহীদ দিবস’

আজ বুধবার প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে পালিত হবে জুলাই শহীদ দিবস। গত বছরের এই দিনে (১৬ জুলাই) সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। একই দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শহীদ হন আরো পাঁচজন।

দিবসটি উপলক্ষে আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দেশের সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। শহীদদের মাগফিরাত কামনায় মসজিদে বিশেষ দোয়া ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জুলাই শহীদ দিবস। এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী সব শহীদকে।

জুলাই শহীদরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করে নতুন বাংলাদেশের পথে দৃপ্ত পদভারে একযোগে সবাই এগিয়ে যাবআজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

 

কর্মসূচি

জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে জুলাই শহীদ দিবসে আজ থাকছে নানা আয়োজন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে স্থানগুলোতে শহীদরা প্রাণ হারান, সেসব স্থানে শহীদদের নামে স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এই কাজ চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

আয়োজনের মধ্যে থাকছে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে জুলাইয়ের গান ও ড্রোন শো। জুলাইয়ের গান ও ড্রোন শো থাকছে চট্টগ্রামেও।

শিল্পকলার মঞ্চে থাকছে জুলাইয়ের গল্প বলা অনুষ্ঠান।

কর্মসূচিতে আরো রয়েছে ১৬ জুলাই স্মরণে মিউজিক্যাল ভিডিও শেয়ার। এর থিম মিউজিক হবে কথা ক। সেই সঙ্গে আজ একটি শহীদ পরিবারের সাক্ষ্য প্রামাণ্যচিত্রের তৃতীয় খণ্ড প্রচার এবং একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণার ভিডিও শেয়ার করা হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। পাশাপাশি সব মোবাইল গ্রাহকের কাছে ভিডিওর ইউআরএল পাঠানো হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ