‘ওর মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকত। আমাদের এমনভাবে জড়িয়ে ধরত, মনে হতো যেন আমরাই ওর সন্তান। মৃত্যুর কয়েক দিন আগেও ঢাকায় বড় ছেলের বাসায় ওর মাকে জড়িয়ে ধরেছিল ও। মুখে সেই অমলিন হাসি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ
‘আমাদের জন্য কান্না রেখে হাসিমুখে চলে গেল সাকিব’
এইচ এম আলাউদ্দিন, খুলনা

চোখের পানি মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাকিব রায়হানের বাবা শেখ আজিজুর রহমান। পাশে বাকরুদ্ধ মা মোছা. নূরনাহার সাকিবের ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে।
দুজনের বেশির ভাগ সময় এখন কাটে ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতি রোমন্থন করে আর চোখের পানি ফেলে। বাড়ির যেদিকেই তাকান, সাকিব যেন হাসিমুখে এসে দাঁড়ান। আজিজুর বললেন, ‘আমাদের জন্য কান্না রেখে হাসিমুখে চলে গেল সাকিব!’
সম্প্রতি এক সকালে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার নবপল্লীতে সাকিবদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সকালের নাশতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জুলাই শহীদ সাকিব রায়হানের মা-বাবা।
মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ও আদরের ছিলেন সাকিব। বড় মেয়ে আন্নী আক্তার বিবাহিত। বড় ছেলে সাব্বির ঢাকায় থাকেন। বাড়ির সামনের আকাবা মসজিদ সংলগ্ন একটি ছোট্ট মুদি দোকান রয়েছে আজিজুর রহমানের। নাম ‘আন্নী এন্টারপ্রাইজ’। এ দিয়েই চলে সংসার। পাশাপাশি ঢাকা থেকে পাইকারি কাপড় এনে ঘরে বসে বিক্রি করেন মা নূরনাহার।
শহীদ সাকিবের বাবা বলেন, ‘কিভাবে যে সময় পার হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। আমার সাকিবকে ছাড়া দেখতে দেখতে প্রায় একটি বছর হয়ে গেল! তাকে যারা হত্যা করেছে, তার বিচার চেয়ে মামলাও করেছি। এখন ওই মামলার আসামিরা হুমকি দিচ্ছে। জানি না এই জীবনে বিচার হবে কি না। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আল্লাহ পরকালে সঠিক বিচার করবেন।’
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিকেল ৩টায় ঢাকার মিরপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকেল ৫টায় শহীদ হন সাকিব রায়হান। শাহাদাতের আগে পাশে থাকা সঙ্গীদের তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আমার শাহাদাতের মাধ্যমে কি দেশে স্বাধীনতা আসবে?’ তাঁর সঙ্গীরা বলেছিলেন, ‘ইনশাল্লাহ!’
সাকিবের মা-বাবা জানালেন, সাকিব শহীদ হওয়ার পর অনেকেই আসছেন, সান্ত্বনা দিচ্ছেন, অর্থ দিচ্ছেন। সেই টাকায় বড় ছেলে তাঁদের দুজনকে দুটি অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোনসেট কিনে দিয়েছেন। বাবা বলেন, ‘সরকার, জুলাই ফাউন্ডেশন, জামায়াতে ইসলামী, বিএনপিসহ অনেক সংগঠন টাকা-পয়সা দিয়ে আমাদের চলার পথ করে দিচ্ছে। কিন্তু টাকায় কি আর সন্তানের অভাব পূরণ হয়?’
শহীদ সাকিব রায়হানের বাড়ি থেকে বসুপাড়া কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধানো হচ্ছে তাঁর কবর। সারা দেশের সব জুলাই যোদ্ধার কবর একই আদলে করা হচ্ছে, যেন দূর থেকে দেখেই বোঝা যায়, এটি জুলাই যোদ্ধার কবর। এ জন্য জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে একটি নকশাও পাঠানো হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের কাছে। কবর ও সংলগ্ন রাস্তার কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা কেসিসির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (কাউন্সিলর) এস কে এম তাছাদুজ্জামান বলেন, যেকোনো সময় যাতে যে কেউ কবর জিয়ারত করতে আসতে পারেন, সে জন্যই এ উদ্যোগ। রাতের জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও রয়েছে বসুপাড়া কবরস্থানে।
সম্পর্কিত খবর

বাধ্যতামূলক ই-রিটার্ন আজ থেকে, প্রস্তুতির ঘাটতি, ভোগান্তির শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানায়, আজ সোমবার থেকে ২০২৫-২৬ করবর্ষের রিটার্ন অনলাইনে জমা দেওয়া যাবে।
গত বছর কিছু শ্রেণির করদাতার জন্য ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। সে সময় বিভিন্ন জটিলতা ও ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যায়।
তবে গত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ই-রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে অনেক করদাতা নেটওয়ার্ক জটিলতা, সার্ভারের ধীরগতির মতো সমস্যায় পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) না পাওয়া, পেমেন্ট করার পরও তা সার্ভারে না দেখানো, আয়ের খাত ঠিকমতো দেখাতে না পারার মতো জটিলতা ছিল বিস্তর।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বর্তমানে দেশেএক কোটি ১২ লাখ টিআইএনধারী থাকলেও প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ৪০ লাখ করদাতা।
ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাসের মজুমদার (মেজবাহ) বলেন, ‘গতবার যখন ক্ষেত্রবিশেষে ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, তখন একেবারেই প্রস্তুতি ছিল না। আমি নিজেও চার দিন চেষ্টা করে রিটার্ন জমা দিতে পারিনি।
কর আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে কিছুটা সমস্যা হবেই। বিশেষ করে পেমেন্ট নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। টাকা জমা দেওয়ার পর তা সিস্টেমে না দেখালে করদাতা হতাশ হয়ে যাবেন। আবার কারো সাতটি খাতে আয় থাকলে সেগুলো সমন্বয়ের কাজটা অনেক জটিল হয়ে পড়ে। এসব মাথায় রেখে আরো কিছুটা সময় নেওয়া যেত।’
এসএমএসি অ্যাডভাইজারি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, ‘ভবিষ্যতের জন্য এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এনবিআরের সার্ভারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যেন একসঙ্গে এক লাখ মানুষ লগ ইন করলেও সিস্টেম ব্লক না হয়। রিয়াল টাইমে সমস্যা সমাধানের জন্য দক্ষ টিম রাখতে হবে। পাশাপাশি করদাতাদের সচেতন করতেও ক্যাম্পেইন চালাতে হবে।’ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘অনলাইনে রিটার্ন দিলে ডেটা বিশ্লেষণ ও অডিট সহজ হয়, হয়রানিও কমে। তবে যাঁরা অনলাইন ব্যবস্থায় নতুন, তাঁদের সমস্যাও হতে পারে। আগে যেমন মেলা হতো, সে রকম উদ্যোগ এখনো দরকার। শেষ সময়ে যেন সার্ভারে চাপ পড়ে সিস্টেম বন্ধ হয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতা, শারীরিকভাবে অক্ষম বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা, বিদেশে অবস্থানরত করদাতা এবং মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধিরা প্রয়োজনীয় সনদপত্র দাখিল সাপেক্ষে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এ ছাড়া ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যা থাকলে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনার বরাবর সুনির্দিষ্ট যুক্তিসহ আবেদন করে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, গত বছর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের করদাতা, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কিছু বহুজাতিক কম্পানির কর্মীর জন্য ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।

১২ দিন পর খুলল মাইলস্টোন
‘ছোটদের মুখগুলো চোখে ভাসছে কান্না পাচ্ছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমান বিধ্বস্তের ১২ দিন পর গতকাল রবিবার খুলেছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এদিন প্রতিষ্ঠানটির নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসে। তবে তাদের চোখে-মুখে ছিল বিষণ্নতার ছায়া। শিক্ষার্থীরা শোকযাত্রার মতো ফিরে এসেছে পরিচিত শ্রেণিকক্ষে।
গতকাল নিহতদের আত্মার মাগফিরাত, আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় আয়োজিত দোয়া এবং শোক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। মোনাজাতে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা কান্না ধরে রাখতে পারেননি।
সকালে স্কুলটির দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। এ সময় ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের কাঁধে ব্যাগ দেখা যায়। নিহতদের ছবি দিয়ে টানানো ব্যানারের সামনে অনেককে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নওরোজ আফরিন বলেন, ‘কলেজে আসতে কেমন ভয় লাগছিল! তাও এলাম, আম্মু সঙ্গে এসেছেন। ছোটদের মুখগুলো চোখে ভাসছে, কান্না পাচ্ছে। এভাবে ওদের হারাতে হবে, তা কল্পনাও করিনি। হঠাত্ কী থেকে কী হয়ে গেল, ভাবতেই পারছি না।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাইলস্টোনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামালউদ্দীন মিলনায়তনে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় ধাপের শোক ও দোয়া অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। পুরো মিলনায়তন শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ। তাদের মধ্যে শোকের আবহ বিরাজ করছে।
অনুষ্ঠানে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল (অব.) নুরন নবী বলেন, ‘যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল, যে ২৭টি ছোট শিশু নিঃশেষ হয়ে গেল, কিভাবে এটা আমরা মেনে নিতে পারি? আমাদের দুজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। পাঁচজন শিক্ষক এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। সঙ্গে আছে আরো ৩৩ জন শিক্ষার্থী। কী সান্ত্বনা দেব আমি এদের বাবা-মায়েদের? মাইলস্টোনের এক শিক্ষক দম্পতি দুর্ঘটনায় তাঁদের সন্তান হারিয়েছেন। এই শোক কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নুরন নবী বলেন, ‘আমি অনেকের বাসায় গিয়েছি, যাঁরা তাঁদের সন্তানদের হারিয়েছেন। কী সান্ত্বনা দেব? মা নির্বাক হয়ে আছেন, কথা বলতে পারছেন না। বাবাও শোকে পাথর হয়ে আছেন। এই শোক কাটিয়ে ওঠার নয়।’
মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা গত ২১ জুলাই ফেস করেছি। আমি আমার কক্ষ ভবন-১-এ কাজ করছিলাম। হঠাত্ একটা শব্দ। জানালা দিয়ে দেখি আগুন। দৌড়ে যাই। তখনো বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি কেউ এটাতে চলে যেতে পারে। হঠাত্ যখন দেখি এক শিক্ষার্থী ও এক ম্যাডাম পড়ে আছে, আমি শকড হই। মুহূর্তের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলি।’
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে অধ্যক্ষ বলেন, ‘নিজেদের এই ট্রমা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যারা চলে গেছে, তাদের অনেকের বড় ভাই-বোন তোমাদের সহপাঠী। ওদেরও সময় দাও, ট্রমা থেকে বের করে আনো। নিহত ব্যক্তিদের অভিভাবকদেরও সময় দাও। কলেজের এই গুমোট পরিবেশ, অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই।’
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের অধ্যক্ষ জিয়াউল আলম বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী ট্রমার মধ্যে আছে, আতঙ্কিত, তাদের কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে। অভিভাবকদেরও কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে। আগামী তিন মাস কাউন্সেলিং চালানো হবে।’
বেশির ভাগ অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দেওয়ার পক্ষে বলে জানান অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘অভিভাবকরা চাচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসুক। একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা হলে, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে, তাদের ভেতরে যে আতঙ্ক, গুমোট অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তাই আগামী বুধবার থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।’
মাইলস্টোন কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল জানান, শিক্ষার্থীরা যেন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, এ জন্যই সীমিত পরিসরে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এসে শিক্ষকদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ের সুযোগ পাবে, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবে। মানসিক প্রশান্তি ফিরে পেতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
তিনি আরো জানান, কলেজে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর সহায়তায় একটি চিকিত্সা ক্যাম্প চালু আছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে কাউন্সেলিং চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবে একান্ত আলাপের সুযোগও পাচ্ছেন। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক সমাজের পারস্পরিক সহানুভূতি ও মানবিকতা এ সংকটময় সময়ে কলেজের বড় শক্তি হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।

পরমাণুবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ড. এম শমশের আলী আর নেই। গত শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শমশের আলীর বড় ছেলে জেহান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, শমশের আলী ১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারায় জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৬১ সালে তিনি আণবিক শক্তি কেন্দ্রে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭০ সালে আণবিক শক্তি কমিশনের পরিচালকের দায়িত্ব পান তিনি। শমশের আলী ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। পরে ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন শমশের আলী।
অধ্যাপক শমশের আলী ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নিয়োগে জামায়াত নেতার সুপারিশ, উপ-উপাচার্যের ফেসবুকে ভাইরাল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক নিয়োগের ভাইভার প্রবেশপত্রে জামায়াতে ইসলামীর এক সাবেক এমপি সুপারিশ করেছেন। গত শনিবার রাতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের ফেসবুক স্টোরিতে প্রবেশপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। এর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমসহ সবখানে সমালোচনার ঝড় বইছে। পরে স্টোরিটি সরিয়ে নিয়ে প্রবেশপত্রটি ‘ভুলবশত’ প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করেন উপ-উপাচার্য।
ভাইরাল হওয়া প্রবেশপত্রে দেখা যায়, আজমীরা আফরিন নামের একজনের প্রবেশপত্রে সুপারিশ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি এবং রাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের জীবন সদস্য লতিফুর রহমান। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক পদে আবেদনকারী আজমীরা আফরিনের আজ ৪ আগস্ট ভাইভা দেওয়ার কথা।
গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপ-উপাচার্যের ব্যক্তিগত ফেসবুক স্টোরিতে প্রবেশপত্র ভাইরাল হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই মুছে ফেলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এমপি মো. লতিফুর রহমান বলেন, “চাকরিপ্রার্থীর প্রবেশপত্রে সুপারিশ করার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে এটা সত্য যে, ওই প্রার্থীর বিষয়ে উপ-উপাচার্যকে ফোনে সুপারিশ করা হয়েছিল। আমি তাঁকে বলেছিলাম, ‘বিগত দিনে ভাইভাগুলোতে অনেক বাজে চর্চা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে আমরা এটা চাই না। আপনি এই প্রার্থীর আবেদনপত্রটা দেখবেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে একটা পরিবর্তন এলেও আমাদের চিন্তাগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। সত্য কথা হচ্ছে, বিভিন্ন দপ্তরে সুপারিশ, তদবির—এগুলো কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি। এখনো দপ্তরগুলোতে শত শত তদবির জমা পড়ছে। এই ধরনের খারাপ প্র্যাকটিস আসলে কোনোটাই পাল্টায়নি। এগুলো মানুষ এখনো করছে, যা খুবই দুঃখজনক। তবে আমরা চেষ্টা করছি কোনো ধরনের অন্যায় আবদার, তদবির এবং আর্থিক দুর্নীতিকে কোনো প্রশ্রয় দেব না। মানুষের কাজ মানুষ করবে, আমরা আমাদের মতো করে আমাদের কাজ করার চেষ্টা করছি।’