ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭
ইসলামিক ফাউন্ডেশন

হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে

  • ১৫ বছরে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার
উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) গত ১৫ বছরে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই সময়ে অন্তত হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজালের ১১ বছরের সময়কালে বেশির ভাগ দুর্নীতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন।

২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ অডিট রিপোর্টে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার অপব্যয় এবং অবৈধ খরচের তথ্য উঠে এসেছে।

এর মধ্যে সরকারের সরাসরি ক্ষতি হয়েছে ৩৭২ কোটি ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৭ টাকা এবং বিধিবহির্ভূতভাবে খরচ করা হয়েছে ৫১৮ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার ৭৯৮ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ১৩৪ খাতে এসব অনিয়ম করা হয়েছে। আজও সেই অডিট আপত্তির নিষ্পত্তি হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও রাজনৈতিক প্রভাবই ছিল প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীরকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাখাওয়াত হোসেন এবং সদস্যসচিব প্রতিষ্ঠানটির সচিব মো. ইসমাইল হোসেন। কমিটিকে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামীম মোহাম্মদ আফজাল ২০০৯ সালের শুরুতে নিয়োগ পেয়ে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব খাতভুক্ত প্রথম শ্রেণির ১২টি পদে ৪৭ জনকে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগে কোনো বিধি-বিধান মানা হয়নি।

তদন্তের বিষয়ে ইফার ডিজি আ. ছালাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, কমিটির সদস্যসচিব হজ টিমে সৌদি আরবে আছেন। হজ শেষে ফেরার পর তদন্ত শুরু হবে।

তাঁদের সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালের ওই নিয়োগের সুপারিশপত্রে সই করেননি কমিটির সদস্যসচিব, জনপ্রশাসন, অর্থ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধি। লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তদের মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করানো এবং সর্বনিম্ন নম্বরপ্রাপ্তদের সর্বোচ্চ নম্বর দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের যোগ্যতা ছিল ছাত্রলীগের পরিচয়। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকেই আটজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ কমিটির প্রভাবশালী দুই সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও সামীম আফজালের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এই নিয়োগের সিলেকশন কমিটির কার্যবিবরণী ঘেঁটে পাওয়া গেছে নানা অনিয়ম, যা কালের কণ্ঠের কাছে সংরক্ষিত আছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিকে সভাপতি, সচিবকে সদস্যসচিব ও বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের পাঁচজন সদস্য এবং তৎকালীন ডিজির অনুগত ছয় পরিচালক নিয়ে গঠিত হয় নিয়োগ কমিটি। এই কমিটির সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী। বর্তমানে তিনি কারাবন্দি। গোলাম মওলা নকশেবন্দী ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। বর্তমানে তিনি পলাতক।

মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ছিলেন গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তিনিও পলাতক। সিরাজউদ্দিন আহমেদ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। আওয়ামী লীগপন্থী সচিব আজিজুর রহমান মারা গেছেন। ডিজিসহ এই পাঁচজন নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগের সুপারিশপত্রে সই করেন। আবার বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের সভায় উপস্থিত থেকে তাঁরাই ওই সুপারিশ অনুমোদন করেন।

এ ব্যাপারে নিয়োগের সুপারিশপত্রে স্বাক্ষরকারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তৎকালীন পরিচালক ডা. খিজির হায়াত খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই নিয়োগটি নিয়ম মেনে করা হয়নি। এ নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক ছিল।

এই নিয়োগ ছিল পুরোপুরি দলীয়। নিয়োগ পাওয়া সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। মশিউর রহমান ভূঁইয়া, তহমিনা ইয়াসমিন ও মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। রিজাউল করিম, সাখাওয়াত হোসেন, সাহাবুদ্দিন ও মহিউদ্দিন পাটোয়ারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা, মোস্তাফিজুর রহমান কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা এবং মশিউর রহমান (সমাজবিজ্ঞান প্রশিক্ষক) হাজী দানেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জামান, জাকের হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও জামাল উদ্দিনকে দলীয় পরিচয় ও সুপারিশে নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে কমপক্ষে আটজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সহকারী পরিচালক সুজন আহমেদ চৌধুরী, ফারুক আহমেদ, মনিরুজ্জামান, আশেকুর রহমান, সৈয়দ সাবিহা ইসলাম, তহমিনা ইয়াসমিন (মৌলভীবাজার জেলা কোটায় নিয়োগকৃত), ফাহমিদা বেগম (কক্সবাজার জেলা কোটায় নিয়োগকৃত) এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগকৃত শাহ আলম। এ ছাড়া সহকারী পরিচালক চাঁদপুরের আবদুল্লাহ আল মামুনকে গাজীপুর জেলা কোটায় চাকরি দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এম এ বারী বলেন, এই নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষায় পেন্সিল দিয়ে নম্বর দেওয়া হয়, নম্বরপত্র ঘষামাজা করা হয়। অনেকের শিক্ষা সনদ ও অভিজ্ঞতার সনদ জাল। অনেককে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে এই নিয়োগ বাতিল করা উচিত।

জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ১৫ বছরে যাঁরা প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মানুষকে হতাশ করবে। ইফার দুর্নীতি নিয়ে বহু প্রতিবেদনও হয়েছে, কিন্তু কার্যকর তদন্ত হয়নি। যাঁদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে এবং অডিটে ধরা পড়েছে, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

নিষ্পত্তি হয়নি অডিট আপত্তি : সাবেক ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের সময়ে বিধিবহির্ভূত নিয়োগ ও পদোন্নতি, প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ ফেরত না দিয়ে বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন, কেনাকাটায় অনিয়ম, অনুমোদন ছাড়া পেনশন ফান্ডে টাকা স্থানান্তরসহ ইফার বিভিন্ন কার্যক্রমে নানা অপকর্মের অভিযোগ ওঠে। ২০১৯ সালের ৮ জুলাই পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ নিরীক্ষা দল গঠন করে সিভিল অডিট অধিদপ্তর। ৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই নিরীক্ষা চলে। অডিট অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম নিয়ামুল পারভেজের নেতৃত্বে এই টিমের অন্য সদস্যরা হলেন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শফিকুল ইসলাম, অডিটর মো. মফিজুল ইসলাম ও মো. ইমাম হোসেন।

এই টিম কর্তৃক এক মাসের নিরীক্ষায় ইফার বিভিন্ন প্রকল্পসহ ব্যয়ের অনেক খাতেই অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়ে। ১৮৬ পৃষ্ঠার প্রাথমিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ১৩৪টি খাতে ২০০৯-২০১৮ অর্থবছরের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মেলে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ সময় তড়িঘড়ি করে মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের অব্যয়িত ৭৪ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়।

বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের সরাসরি আর্থিক ক্ষতি হয়েছেএমন খাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আর্থিক বছরের শেষ দিনে প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে ৬৪ জেলায় অর্থ ছাড় করা হয় ৩১ কোটি ৯৯ লাখ ১৫ হাজার ২২০ টাকা, যা অনিয়ম। আর্থিক বছর শেষে প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে না দেওয়ায় ক্ষতি ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭৩ টাকা। গণশিক্ষা কেন্দ্রের জন্য পাঠ্যবই মুদ্রণে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ২০ কোটি ৯৮ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৭ টাকা এবং কোরআনুল কারিম মুদ্রণে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে অতিরিক্ত মূল্যে কার্যাদেশ দেওয়ায় ১২ কোটি ৩৫ লাখ ৮১ হাজার ৪১৭ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কার্যাদেশের পরিমাণের চেয়ে কম কোরআন শরিফ নেওয়ায় ক্ষতি হয়েছে তিন কোটি ৩২ লাখ ৮২ হাজার ৬০০ টাকা। বোগদাদিয়া কায়দায় ক্ষতি এক কোটি টাকা। জিওবির বরাদ্দের অব্যয়িত টাকা জমা না দেওয়ায় ২২ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার ৫০৯ টাকা এবং সিপিটিইউয়ের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন ছাড়াই বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানকে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ১০০ টাকা দেওয়া হয়।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন খাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৫১৮ কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে। এসব খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ১৩৭ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার ৮৫৭ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ইফার পেনশন ফান্ডে ১৪১ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আজ রাজপথে নামছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আজ রাজপথে নামছে বিএনপি

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আজ থেকে রাজপথে থাকবে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজপথ দখল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য রাজপথে বিএনপিও শক্তি ও জনসমর্থন দেখাবে।

এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি।

এমনকি এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা। দলের নেতারা বলছেন, হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুজনকে চিহ্নিত করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। কিন্তু বিরোধী পক্ষ একতরফাভাবে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করছে।
এর জবাব দিতে রাজপথে শক্তি দেখাবে দলটি। এরই অংশ হিসেবে আজ সোমবার ছাত্রদল ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং অন্য অঙ্গসংগঠন পৃথক শোডাউন করবে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে। জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে।
জনগণকে নিয়ে দেশবিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে।

মাঠে নামছে ছাত্রদল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে। গুপ্ত সংগঠন বলতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সহযোগী সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

ছাত্রদলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

কর্মসূচির বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, গুপ্ত সংগঠন হিসেবে সেসব সংগঠনকেই বোঝানো হয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বদলে গোপনে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। গত ৫ আগস্টের পর একটি মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের এহেন গুপ্ত কার্যক্রম এ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অসহনশীল করে তুলছে এবং রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তুলছে। এ রকম কুচক্রী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেন দেশবাসীকে এসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে সচেতন করে তোলা যায়।

গুপ্ত সংগঠন বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ছত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা ক্যাম্পাসগুলোতে মব সৃষ্টি করে সাধারণ শিক্ষার্থী নামে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে, তারাই গুপ্ত সংগঠন। ছাত্রশিবির এবং গুপ্তভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে ছাত্রশিবিরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তারা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০ দিন) বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ মে থেকে তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গতকাল শেষ হয় ।

মেয়াদ বাড়ানোর আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের (কোস্ট গার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তারাসহ) ‌‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এর মেয়াদ হবে ১৪ মার্চ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সারা দেশে তাঁরা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।

প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা) এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। তখন ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

সেই মেয়াদ নভেম্বরের মাঝামাঝি শেষ হয়েছিল। পরে সেই ক্ষমতার মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়।

মন্তব্য

শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি)  বেনজীর আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।

গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান।

অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে।

তাঁরা হলেনঝালকাঠির নলছিটির মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক যুবদল নেতা মো. জিল্লুর রহমান, আকিদুল আলী, খোরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট আশরাফ আলী, মো. বাবুল, এনামুল, এরশাদ আলী, মো. গিয়াস উদ্দিন খান, মো. কবির উদ্দিন খান ও নজরুল ইসলাম।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর মোহাম্মদ আলীকে হাত ও চোখ বেঁধে পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে আসা হয়। পাঁচ বছর তিন মাস ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান।

এ ঘটনায় মোহাম্মদ আলী খান বিএনপি মহাসচিবের মাধ্যমে ন্যায়বিচার চেয়ে আবেদন করেন।

তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয় বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।

সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগীরা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আশায় আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু বিএনপি করার অপরাধে বিগত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

মন্তব্য

সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনা প্রতিনিধি
শেয়ার
সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরান ঢাকায় নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সোহাগের গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি স্থানীয় কাকচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

সোহাগের পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকারও আশ্বাস দেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। স্বামীর হত্যার বিচার চেয়ে তখন সোহাগের স্ত্রী লাকি আক্তার বলেন, আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি বলেন, এই এলাকার সন্তান ঢাকার মিটফোর্ডের ব্যবসায়ী সোহাগকে তাঁর ব্যাবসায়িক পার্টনার ও তাদের ভাড়াটেরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বিএনপি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। সম্পৃক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপি কোনো অপকর্মকে প্রশ্রয় দেয় না। পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক চৌধুরী মো. ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফজলুল হক মাস্টার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম সফিকুজ্জামান মাহফুজ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল ইসলাম জুয়েল, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম নাভিল প্রমুখ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ