গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। সেই দিন জনতার রোষ থেকে রেহাই পাননি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বেশির ভাগ জেলায় তাঁদের পালিয়ে থাকতে হয়েছে। অনেকে বিদেশে পালিয়ে যান।
আওয়ামী লীগের কার্যালয়
কোথাও দখল, কোথাও পরিত্যক্ত
- অনেক জায়গায় কার্যালয়ে ফলের দোকান, কোথাও বিএনপি, কোথাও এনসিপির দখলে
- অনেক স্থানে কার্যালয়ে এখন গণশৌচাগার, মাদকসেবনকেন্দ্র
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জ : আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় এখন পরিত্যক্ত। বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গায় অবস্থিত এটি এখন ভাসমান মানুষ ও পথশিশুদের আশ্রয়ঘর। কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন ফলমূলের দোকান বসানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে কার্যালয়টি ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর ছিল।
কেরানীগঞ্জ : ঢাকার কেরানীগঞ্জে দুই আওয়ামী লীগের কার্যালয় পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন তারানগর ইউনিয়নের ঘাটার চরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। জিনজিরা বাসরোডে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ও পরিত্যক্ত।
ময়মনসিংহ : জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় নগরীর শিববাড়িতে অবস্থিত। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে কার্যালয়টি তালাবদ্ধ আছে। গতকাল দুপুরে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম : নগরের দারুল ফজল মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় চট্টগ্রাম মহানগর ও দোস্ত বিল্ডিংয়ের চতুর্থতলায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখন তালাবদ্ধ। নগরের ১২২ নম্বর আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। অস্থায়ী কার্যালয় ভেঙে চারদিকে টিনের বেড়া দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় নেই। চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ কার্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয়গুলোও বন্ধ। কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুল করিম গতকাল বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া কাউকে নামতে দেওয়া হবে না। আমাদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। দারুল ফজল মার্কেটস্থ মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় দরজা-জানালা ভাঙা, দরজা তালাবদ্ধ। ভাঙা জানালা দিয়ে দেখা যায়, ভেতরে চেয়ার-টেবিল তছনছ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে কাগজপত্রও মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
খুলনা : খুলনা মহানগরের ৬৪ নম্বর লোয়ার যশোর রোডের ভবনের দ্বিতীয়তলার আলীগ কার্যালয় এখন পরিত্যক্ত পোড়া ও কঙ্কালসার। শঙ্খ মার্কেটে প্রবেশমুখের দোতলা ভবনটির নিচতলায় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চললেও সেখানে দেখা মেলে না দলটির স্থানীয় কোনো নেতাকর্মীর। নিষিদ্ধ দলটির এই প্রধান কার্যালয়ই নয়, নগরীর দৌলতপুর, খালিশপুর, খানজাহান আলী, ফুলতলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা কার্যালয়ই বন্ধ। পুলিশ বলছে, নিষিদ্ধ দলটি যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য পুলিশ সজাগ রয়েছে। অফিসকেন্দ্রিক বা যেকোনোভাবে তারা যেন কোনো কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশ সর্তক রয়েছে।
কক্সবাজার : কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের অফিস পরিত্যক্ত রয়েছে। পরিত্যক্ত অফিস ভবনটি দিনেরবেলায় মানুষশূন্য থাকলেও রাতে মাদকসেবীদের জমজমাট আখড়ায় পরিণত হয়। শহরের লালদিঘির পারে বহু বছর আগে অফিসটি ছিল। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ২০২১ সালে লালদিঘি নামের পুকুরটি সংস্কার করার সময় আওয়ামী লীগের পুরনো অফিসটি ভেঙে দেয়। এরপর কউক নিজস্ব অর্থায়নে নতুন করে তিনতলাবিশিষ্ট একটি ভবন করে দেয়। সেই ভবনে জেলা জাসদ এবং জেলা জাতীয় পার্টিরও পৃথক অফিস রয়েছে। গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়ে ভবনটি। আগুনে ভবনের দরজা জানালা ও যাবতীয় চেয়ার-টেবিল পুড়ে গিয়ে পুরো অফিস ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সেই থেকে অফিসটি দেখভাল করতেও কাউকে দেখা যায়নি।
বরিশাল : নগরীর বিবির পুকুরপারের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ শহরের ১৯টি কার্যালয়ের সবটিতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। নেতাকর্মীবিহীন এসব পোড়া ভবন এখন পরিত্যক্ত। বরিশালনগরীর সদর রোডের বিবিরপুকুরপারে পাঁচতলাবিশিষ্ট সিটি করপোরেশনের এনেক্স ভবনের নিচতলার একটি অংশে ছিল আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর কার্যালয়। ২০১৩ সালে দলীয় কার্যালয়টি উদ্বোধন করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। সেই থেকে দৃষ্টিনন্দন ভবনটিই আওয়ামী লীগের অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভবনটির ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের মালপত্র খুলে নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভবনটির নিচতলায় দেখা যায় আগুনে পোড়া ছাই, ভাঙা কাচ, পোড়া কাঠ। হাতুড়ি দিয়ে খোলা হয়েছে জানালার লোহা, সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কার্যালয়টিতে থাকা স্টিলের আলমারি, দরজাসহ অন্যান্য মালপত্র লুট হয়েছে। দরজাবিহীন কার্যালয়টি পরিত্যক্ত হিসেবে রয়েছে।
কুমিল্লা : দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে এখন ভুতুড়ে অবস্থা। জেলা আওয়ামী লীগের অফিস তালাবদ্ধ থাকলেও পাশের মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস ধ্বংসস্তূপ। আটতলা ভবনের দরজা-জানালার অবশিষ্ট কিছুই নেই। ভেঙে ফেলা হয়েছে মেঝে ও দেয়ালের টাইলস। প্রতিটি কক্ষ যেন একেকটি ভুতুড়ে কুঠুরিতে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা হলেই ভবনের নিচতলার কক্ষগুলোতে বসে মাদকাসক্তদের আড্ডা, শৌচাগার হিসেবেও ব্যবহার হয় কয়েকটি কক্ষ। দুর্গন্ধে এই ভবনের কাছাকাছি ঘেষাও দুঃসাধ্য। লিফটসহ প্রতি তলার আসবাবে আগুনে পোড়ার চিহ্ন রয়েছে। জানা গেছে, কুমিল্লানগরীর রামঘাটলা এলাকায় ১০ শতক জমির ওপর আটতলা ভবনটি ছিল মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়। কনফারেন্স হল, মিডিয়া রুম, গেস্ট হাউস, ক্যাফেটরিয়া, ইনডোর গেম স্পট, একাধিক লিফট, সিসি ক্যামেরা, ইন্টারকম, অগ্নি-প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ওয়াইফাইসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সব সুযোগসুবিধা ছিল এই কার্যালয়ে।
কুমিল্লা মহানগর এবি পার্টির সভাপতি মুহাম্মদ গোলাম সামদানী কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখন মানুষের গণশৌচাগারে পরিণত হয়েছে।
ভোলা জেলা আ. লীগের পরিত্যক্ত কার্যালয় এখন গণশৌচাগার
ভোলা : ভোলা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এখন গণশৌচাগার। গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এ কার্যালয় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বুলডোজার দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টির সামনের দেয়াল ও দোতলার ছাদ ভেঙে ফেলা হয়। গতকাল ভোলা বাংলা স্কুল মোড়ে অবস্থিত কার্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত কার্যালয়ের নিচতলায় দুটি মোটরসাইকেল রাখা আছে। প্রস্রাবের গন্ধে ভেতরে যাওয়া যাচ্ছে না।
ভোলার চরফ্যাশন : ভোলার চরফ্যাশনে আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত তিনতলা কার্যালয়ে জাতীর নাগরিক পার্টি (এনসিপির) সাইনবোর্ড লাগিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। গত শনিবার চরফ্যাশন পৌর সদরের কলেজ রোডে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় দখল করা হয়। পরের দিন রবিবার সেটিতে দরজা লাগিয়ে সংস্কার করা হয়। এনসিপির চরফ্যাশন উপজেলা শাখার নেতা দাবি করে অহিদ ফয়সাল জানান, এনসিপির দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চরফ্যাশন উপজেলা এনসিপির নেতা আমজাদ হাবিব, নুরে আলম নাসিম, শরিফ হোসাইন ও মো. শাহাবুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় দখলে নিয়েছেন। এখন থেকে চরফ্যাশনে এনসিপির দলীয় সব কার্যক্রম এই ভবন থেকেই পরিচালিত হবে। এই ভবনটি করা হয়েছে সরকারি জায়গা দখল করে এবং কিছু জমি মানুষের রেকর্ডীয় সম্পদ। তারা রেকর্ডীয় মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সরকারি জমি লিজে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বরগুনা পৌর শহরের শেরেবাংলা রোডের ফার্মেসিপট্টি এলাকায় সরকারি জমিতে নির্মিত বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কার্যালয়টিতে নেই কোনো দলীয় সাইনবোর্ড। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও আওয়ামী লীগ কার্যালয় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া আমতলি উপজেলা পরিষদ এলাকায় জেলা পরিষদের জমিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি ওঠানো হয়। পটপরিবর্তনের পর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি এখন আমতলি উপজেলা বিএনপির কার্যালয় হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় থাকা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়গুলো ব্যস্ততম এলাকার মধ্যেই। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই ওই সব কার্যালয়ে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অনতিদূরের ওই কার্যালয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ। জুলাই আন্দোলনের সময় কার্যালয়টি ভাঙচুর করা হয়। আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের নিচতলায়। এটি পুড়িয়ে দেওয়ার পর আর মেরামত করা হয়নি। বিজয়নগরে চম্পকনগরে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে থাকা কার্যালয়ও এখন খোলা হয় না। আশুগঞ্জ বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি সফিউল্লাহর বাসভবনের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলা হয়েছে আরো আগেই।
মেহেরপুর : গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেলের দিকে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। আগুনে কার্যালয়ে সব আসবাব পুড়ে ছাই হয়। তারপর থেকে সে অবস্থায় পড়ে রযেছে কার্যালয়টি। কার্যালয়ের বারান্দায় ভ্রাম্যমাণ একজন কাপড় ব্যবসায়ী ব্যবসা করছেন গত নভেম্বর থেকে।
যশোর শহরের গাড়িখানা রোডে আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয় তালাবদ্ধ। শহরের পুরনো কসবায় দলটির প্রভাবশালী দুই নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার ও কাজী নাবিল আহমেদের বাসভবনসংলগ্ন রাজনৈতিক কার্যালয় দুটিও বন্ধ। ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের নিজস্ব কার্যালয়টিও বন্ধ।
ঝিনাইদহ : ২০২২ সালে ঝিনাইদহ শহরের শিল্পকলা একাডেমির পেছনে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। বিশাল ভবনে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়াও প্রতিনিয়িত আড্ডা দিতেন। ভবনটি ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনরোষে ধ্বংস হয়ে গেছে কার্যালয়টি। সেখানে আস্তানা গেড়েছে মাদকসেবী ও ভবঘুরেরা। বিকেলের পর নিয়মিত আড্ডা বসে নেশাখোরদের।
এ ছাড়া জেলার মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, কালীগঞ্জ, হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গণবিক্ষোভে ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানেও জেলা কার্যালয়ের মতো একই ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে। শেলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ফটকও বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
নোয়াখালী : এক সময়ে দিনভর নেতাকর্মীদের কোলাহলে প্রাণচাঞ্চল্য নোয়াখালী জেলা আওয়ামী কার্যালয় এখন তালাবদ্ধ হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ভবনটিতে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। পরে নেতাকর্মীরা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ পোড়া ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সেই থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওযামী লীগের নোয়াখালী জেলা কার্যালয় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
এ ছাড়া নওগাঁ শহরের সরিষাহাটির মোড়ে দলীয় কার্যালয় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এভাবে বেশির ভাগ জেলায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় পরিত্যক্ত, গণশৌচাগার ও মাদকসেবনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
সম্পর্কিত খবর

মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মোড়াপাড়া মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ বলেন, ‘আমার বাবা রাতে মসজিদে এশার নামাজের পর বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে রাখা আছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের পর জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত
চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুর শহরে মসজিদের ভেতর দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমাম আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের প্রফেসরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে (৬৫) চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বিল্লাল হোসেন নামের একজনকে মুসল্লিরা পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন মুসল্লি জানান, দুপুরে জুমার নামাজের পর মসজিদের ভেতরই মাঝবয়সী এক ব্যক্তি ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। উপস্থিত মুসল্লিরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে পিটুনি দিয়ে মসজিদের ভেতর বেঁধে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মুসল্লিরা জানান, হামলাকারী নিজেও মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া জানান, আটক ব্যক্তির নাম বিল্লাল হোসেন (৫০)। কী কারণে তিনি ইমাম সাহেবের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। আটক ব্যক্তি একেক সময় একেক কথা বলছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ আহমেদ কাজল জানান, ওই ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে। আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত বলেও জানান তিনি।
মসজিদের ইমামের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব রাত সাড়ে ১১টায় এই প্রতিবেদককে জানান, আহত ইমামকে দেখতে রাত ১১টার দিকে তিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে যান এবং তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন।
পুলিশ সুপার জানান, ইমাম সাহেবের মাথার সিটি স্ক্যান করা হবে। আঘাত গুরুতর হলে প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস
নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্মম, নিষ্ঠুর ও নৃশংসভাবে পুরান ঢাকার এক সাধারণ ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। গত বুধবার সংঘটিত এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, এনসিপি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল : গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে একটি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে জড়িত সন্দেহে যাদের নাম এসেছে তাদের দ্রুত বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। এর পরই সংগঠনের পক্ষ থেকে চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ভিডিও ফুটেজে কোনো একজন সোহাগকে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা গেলেও তার বিরুদ্ধে মামলা কিংবা গ্রেপ্তার হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযোগ উঠেছে যে এ ঘটনার পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষও জড়িত থাকতে পারে।
আজীবন বহিষ্কৃত পাঁচ নেতা : এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুরান ঢাকার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে। তাঁরা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস, মাহমুদুল হাসান মহিন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।
জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যস্থা নেওয়ার আহবান জানান।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত নেতা অপু দাসের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : সোহাগকে পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বরে এসে সমাবেশ করে এবং রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেষ হয়।
বুয়েটে বিক্ষোভ : এদিকে রাত ১১টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন। এ সময় তাঁরা লিখিত বক্তব্যে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ দফা দাবি জানান। তাঁদের দাবিগুলো হলো : সোহাগ হত্যার ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অভিযুক্ত মহিন, রবিনসহ সব খুনিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধীদের রক্ষা করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিন্দা, প্রতিবাদ ও শোক বিবৃতি : বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে শোক জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই পৈশাচিক ঘটনা কেবল একটি জীবনহানিই নয়—এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস ও বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই। অপরাধী যে-ই হোক, তার স্থান কখনোই আইন ও ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় ‘সিরিয়াস’ ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দায় বিএনপির ওপর চাপানো অপরাজনীতি, এটা নোংরা রাজনীতির চর্চা। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন কোনো অপরাধীকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, কোনো দিন দেবেও না। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
জামায়াতের গভীর উদ্বেগ ও শোক : সোহাগ হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক এবং নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শত শত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।’
তিনি বলেন, ‘নিহত সোহাগের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’
জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি এনসিপির : সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।
জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চকবাজারের (মিটফোর্ডের সামনে) নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে শোকাহত।’ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে জাতীয় যুবশক্তি।
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শুক্রবার রাতে টিএসসি চত্বরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা এবং সম্প্রতি ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
এদিকে সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় আসামি তারেক রহমান রবিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন। গতকাল আদালতের কোতোয়ালি থানার প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য জানান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নাসির উদ্দিন। আর অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন একই থানার উপপরিদর্শক মো. মনির। আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) ও হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তায় একদল লোক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম। আর পুলিশ অস্ত্র মামলা করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনার সব আসামিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে পুরান ঢাকার কয়েক যুবক সোহাগকে বুধবার দুপুরে ডেকে নেন। সন্ধ্যায় তাঁকে হত্যা করা হয়। সোহাগ পুরনো তামার তার, অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ ভাঙ্গারি জিনিসের ব্যবসা করতেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোহাগকে হত্যা করে তাঁর পূর্বপরিচিতরা। নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্থানীয় মহিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আশপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।’
নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন সোহাগ। তিনি অনেক বছর ধরে ভাঙ্গারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আগে তিনি পলাশ নামের একজনের অধীনে কাজ করতেন। তিনি ভাঙ্গারি এনে ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। চার-পাঁচ বছর আগে সোহাগ আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন তাঁর গুদামে গুলি চালানো হয়। বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেন মহিন। মিটফোর্ড এলাকার রজনী বোস লেনে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সোহানা মেটাল।
আসামিদের মধ্যে মহিন ও রবিন ছাড়াও রয়েছে সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ী খুন হন। গতকাল আরো তিন জেলায় তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
খুলনা অফিস জানায়, খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মাহবুবুর রহমানকে খুব কাছ থেকে প্রথমে গুলি করা হয়। পরে পায়ের রগ কেটে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।
খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, দুপুরে বাসার সামনে নিজের প্রাইভেট কার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুবুর। ওই সময় হেলমেট পরা তিনজন একটি মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পরে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য দুর্বৃত্তরা তাঁর দুই পায়ের রগ কেটে দেয়।
তিনি আরো জানান, মাদক বিক্রি নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে মাহাবুবুুরের দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে এ ঘটনা ঘটল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত মাহবুবুরের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।
এদিকে মাহবুবুরের হত্যার খবর পেয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাসহ বিএনপি, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায়। উপজেলার মোড়াপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ জানান, ‘আমার বাবা রাতে এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। পরে আমরা খবর পেয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এদিকে জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়ায় একটি করে তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জামালপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে জামালপুর শহরের দাপুনিয়ার ধানক্ষেতে কচুরিপানার ভেতর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জামালপুর সদর থানার ওসি আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, ‘লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গতকাল রোজা মনি (৬) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়ির পেছনে একটি পাটক্ষেত থেকে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রোজা মনি সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের চরমারিয়া গ্রামের মোহাম্মদ সুমন মিয়ার মেয়ে। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে নিখোঁজ রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের ইজি বাইকচালকের ঝুলন্ত লাশ গতকাল শুক্রবার সকালে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়ার একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। রফিকুল ইসলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার মোল্লাতেঘরিয়ার আদর্শপাড়ার মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে।