ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

আট মাসে ২২ দলের জন্ম

তৌফিক হাসান
তৌফিক হাসান
শেয়ার
আট মাসে ২২ দলের জন্ম

চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর গত আট মাসে ওই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ২২টি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। গত বছরের শেষ চার মাসে আত্মপ্রকাশ করে ১১টি দল। আর চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আত্মপ্রকাশ করেছে ১১টি দল। এর মধ্যে গত বছর আত্মপ্রকাশ করা বেশির ভাগ দল সাংগঠনিকভাবে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে।

আর চলতি বছর আত্মপ্রকাশ করা দলগুলোর মধ্যে এনসিপিসহ দু-তিনটির দল গঠনের কাজ এখনো প্রক্রিয়াধীন। নতুন আত্মপ্রকাশ করা কয়েকটি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন ও দলীয় অফিস স্থাপনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ উপলক্ষে রমজান ও ঈদে দলগুলোর নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ ও ইফতারের কর্মসূচি পালন করেন। তবে এনসিপিসহ চলতি বছর আত্মপ্রকাশ করা বেশির ভাগ দল এখনো জেলা ও উপজেলার কমিটি ঘোষণা করতে এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি।
এ জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছে এবং করতে যাচ্ছে দলগুলো।

এরই মধ্যে নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির জন্য গত ১৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে এনসিপি। চিঠিতে দলটির পক্ষ থেকে ৯০ দিনের মতো সময় বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়েছে।

এসব নতুন দলের বাইরেও বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০।

গত বছর আবেদন করে নিবন্ধন পায়নি এমন দলের সংখ্যা প্রায় ৮৭।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিল হলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যাও অতীতের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে। দেশের ১২টি সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৩৯টি দল অংশ নিয়েছিল ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আর সবচেয়ে কম তিনটি দল অংশ নিয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

দল নিবন্ধনের বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। আমরা এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে তিন মাসের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছি। আমরা আশা করি, দুই মাসের মধ্যে আমাদের সাংগঠনিক বিস্তার সম্পন্ন করতে পারব।

এনসিপি ছাড়াও গত আট মাসে আত্মপ্রকাশ করা আরো কয়েকটি দল নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি এবং নিবন্ধনের শর্ত শিথিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এই দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি ও সমতা পার্টি।

ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি নামের একটি দল আত্মপ্রকাশ করে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর। হাফেজ মাওলানা মাহমুদ আব্বাসকে আহবায়ক এবং হাফেজ মাওলানা ইলিয়াস হোসাইনকে সদস্যসচিব ঘোষণা করে দলটি। তবে সেই ঘোষণার সাত মাস পরও দলটি এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধন আবেদনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন দলটির আহবায়ক। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ২১ জেলায় ও ৬০ উপজেলায় কমিটি দিতে পেরেছি। কিন্তু আমরা ইসির সব শর্ত পূরণ করতে পারিনি। তাই আমরা ইসির কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময় বৃদ্ধি ও শর্ত কিছুটা হলেও শিথিল করার আবেদন করব।

একই পরিস্থিতির কথা জানান গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল সমতা পার্টির আহবায়ক হানিফ বাংলাদেশি। হানিফ বাংলাদেশি বলেন, আমি ১৩ জেলায় ও ৬২ উপজেলায় কমিটি দিয়েছি। কিন্তু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এখনো করতে পারিনি। আর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যে জটিলতা তাতে মনে হয় না যে এটি করা সম্ভব হবে। আমরা নিবন্ধনের শর্ত শিথিল এবং সময় বাড়াতে ইসিতে চিঠি দিয়েছি।

এসসিপি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি ও সমতা পার্টি নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির আবেদন জানালেও নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সময়ের মধ্যেই নিবন্ধনের আবেদন করেছে নতুন আত্মপ্রকাশ পাওয়া কয়েকটি দল। এই দলগুলোর মধ্যে রয়েছে আমজনতার দল, সার্বভৌমত্ব আন্দোলন ও জনতার বাংলাদেশ পার্টি।

গণ অধিকার পরিষদ ভেঙে আসা একাংশের সদস্যরা চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি আমজনতার দল নামের একটি নতুন দলের নাম প্রকাশ করে। দলটি নির্বাচন কমিশনের সব শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে বলে জানিয়েছেন দলের সদস্যসচিব মো. তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমরা ৩৬টি জেলা ও ৬০টি উপজেলায় কমিটি দিয়েছি। এর পাশাপাশি ২৬ জায়গায় আমরা অফিস নিয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা সারা দেশে জেলা কমিটির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি, দু-তিন দিনের মধ্যে ১০০ উপজেলায় কমিটি গঠন হয়ে যাবে।

আর আজ রবিবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ পাওয়া নতুন দল সার্বভৌমত্ব আন্দোলন। দলটিতে ১০ জনকে সংগঠক ও ৮৩ জনকে সহসংগঠক করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে জানিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় সংগঠক শ্মশান ঠাকুর কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা নিবন্ধনের কাগজপত্র গুছিয়ে ফেলেছি। আমরা ২৩টি জেলায় এবং ১৩৫টি উপজেলায় কমিটি করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা শেষ দিনেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেব।

চলতি বছরের ১৩ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আইনজীবীদের নেতৃত্বে জনতার বাংলাদেশ পার্টি নামের নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। দলটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. সফিকুল ইসলাম সবুজ খান এবং মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।

দলটি আত্মপ্রকাশ করার এক মাসের মধ্যে ইসির সব শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা ২৫টি জেলা এবং ২০০টি উপজেলায় কমিটি দিয়েছি। আমরা রবিবার (আজ) নির্বাচন কমিশনে আবেদন করব।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১৮ দিন পর ২৩ আগস্ট প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি)। দলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আত্মপ্রকাশ করে। সেদিন দলটির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আহবায়ক হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সিদ্দিক হোসাইন।

নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশের ১৬ দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হোটেলে এস এম শাহাদাতের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি। দলটির মহাসচিব সাইফুল আলম।

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি)। দলটির আহবায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম এবং যুগ্ম আহবায়ক মো. বকুল হোসেন হৃদয়।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি) নামের আরো একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। লন্ডনপ্রবাসী মো. সোহেল রানাকে দলটির আহবায়ক করা হয়।

২৮ নভেম্বর আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ইকরামুল খান এবং মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি)। এই নতুন দলে গোপালগঞ্জ জেলার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ চৌধুরীকে আহবায়ক করা হয়।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে আত্মপ্রকাশ করে মুসলিম জাতীয়তাবাদী নতুন ধারার রাজনৈতিক দল জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। খোমেনী এহসানকে আহবায়ক এবং হাসান আরিফকে দলটির সদস্যসচিব ঘোষণা করা হয়।

চলতি বছর যে আটটি দলের আত্মপ্রকাশ : গত ৪ জানুয়ারি দেশ জনতা পার্টি নামের একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। মো. নূর হাকিমকে দলটির চেয়ারম্যান এবং ইদ্রিস আলী নান্টুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

গত ২৮ জানুয়ারি মেজর জেনারেল (অব.) মো. এহতেশাম উল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি নামের একটি দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নতুন সমাজ সমৃদ্ধ দেশ, হোক জনগণের বাংলাদেশ স্লোগান সামনে রেখে বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি নামের একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। ওই দিন সংবাদ সম্মেলন করে দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রার ঘোষণা করেন দলটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. বিভূতি রায়।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি। দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ইসমাইল সম্রাট।

গত ২০ মার্চ রাজধানী ঢাকায় ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে জনতার দল। প্রাথমিকভাবে দলটিতে তিন সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি কাজ করছে। দলের প্রধান সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্বে রয়েছেন জাতিসংঘে কাজ করে আসা ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিরাপত্তাবিষয়ক লেখক ডেল এইচ খান। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল। আর সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন আজম খান।

গত ১১ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি নামের নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। নতুন এই দলের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মালেক ফরাজী।

গত ১৪ এপ্রিল ভাসানী অনুসারী পরিষদ থেকে ভাসানী জনশক্তি পার্টি নামের একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটরিয়ামে এক প্রতিনিধি সম্মেলনে এই দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

নতুন এই দলে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ড. আবু ইউসুফ সেলিম।

সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত শেরাটন হোটেলে মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিতসহ ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি)। আত্মপ্রকাশকালে ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির আহবায়ক ডেসটিনি গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। দলের সদস্যসচিবের দায়িত্বে আছেন ফাতিমা তাসনিম।

২০২৪ সালের ১৬ নভেম্বর গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১ নামের একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ছাত্রলীগের মতোই লোগো নিয়ে গোপনীয়তার সঙ্গে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। 

ইসিতে নিবন্ধিত দল ৫০টি : নির্বাচন কমিশনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়। গত বছর ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আদালতের নির্দেশে এবি পার্টি নিবন্ধন পায়। এ ছাড়া নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) ও বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি ( বিএমজিপি)। এ অবস্থায় এখন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পেতে নতুন ৯৩টি দল আবেদন করে। এর মধ্যে ভুঁইফোড় দল হিসেবে পরিচিত দুটি দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে নিবন্ধন দেয় তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। তার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে আবেদন করা ৭৬টি দলের কোনোটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজের দল এনডিএম আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায়।

ইসিতে নিবন্ধিত এই দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটের শরিকসহ ২৭টি দল গত বছরের ৭ জানুয়ারি বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এসব দলের বেশির ভাগের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। 

ইসির তালিকায় অনিবন্ধিত ৮৭টি দল : নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব দল আবেদন করে নিবন্ধন পায়নি, সেসব দলের তালিকাও সংরক্ষণ করে রেখেছে। এ ধরনের অনিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৮৭। এ দলগুলোর মধ্যে রয়েছে নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, মুসকিল লীগ, নতুন বাংলা, বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বৈরাবরী পার্টি, বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও নন-প্রবাসী কল্যাণ দল, গণরাজনৈতিক জোট (গর্জো), বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), নাকফুল বাংলাদেশ, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি), জনতার অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, গণ অধিকার পার্টি (পিআরপি) ও বাংলাদেশ গরিব পার্টির মতো প্রায় অপরিচিত ও বিচিত্র নামের দলগুলোও। 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ

    আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এনসিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ
খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি : কালের কণ্ঠ

গোপালগঞ্জে মুজিববাদীরা হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও মুজিববাদীরা অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে তিনি সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। 

গতকাল বুধবার রাতে তিনি খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

তিনি দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি।

অন্যদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।

খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, গোপালগঞ্জের হামলা আওয়ামী ও মুজিববাদীদের পুরনো চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির এটি ছিল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনকে জানিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কথা জেনেই গোপালগঞ্জ সফরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে ।

এর পরও গোপালগঞ্জে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আওয়ামী লীগের বাইরেও যে অন্য কোনো দল কর্মসূচি করতে পারে সেটি এনসিপি প্রমাণ করে দিয়েছে।

সমাবেশের আগে ও পরে দফায় দফায় হামলার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, এ হামলা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটি প্রমাণিত। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আরো সতর্ক থাকতে পারত উল্লেখ করে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেভাবে সহায়তা দিয়েছে সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

নাহিদ জানান, আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরসহ সারা দেশের পূর্বঘোষিত পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে। শুধু মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে বুধবারের যে কর্মসূচি ছিল সেটি স্থগিত করা হয়েছে, পরে ওই দুই জেলার কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা এসে পৌঁছেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে রশিদুল ইসলাম রিফাত বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে। তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।

এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এই ঘোষণা দেন।

শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।

বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।

রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।

তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এনসিপির মশাল মিছিল : গোপালগঞ্জের ঘটনায় এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ আয়োজনে গতকাল মশাল মিছিল হয়। রাত ৯টার দিকে বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে আজ রাজধানীর সব থানার সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও থানায় স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া) এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

 

মন্তব্য
ফিরে দেখা ১৭ জুলাই

শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৭তম দিন ১৭ জুলাই ছিল পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তবে ছুটির দিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ঢাকাসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অন্তত ১০ স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই স্থানে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

আগের দিন সংঘর্ষে আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কফিল মিছিল ও গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

১৭ জুলাই দিনভর রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

পরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। রাতে হানিফ ফ্লাইওভারের (বর্তমানে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার) টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। সংঘর্ষের সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত দুই বছরের শিশুসহ ছয়জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ-সংঘর্ষের চিত্র

১৭ জুলাই সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কফিন মিছিল শুরু করলে বাধা দেয় তারা। এ সময় আহত হন নারীসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী ও ১০ জন সাংবাদিক।

এদিন আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। দুপুরের পর তাদের টানা দুই ঘণ্টার অভিযানে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি থাকলেও পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কফিন মিছিল শুরু হলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর আবার সূর্য সেন হলের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে ঘণ্টাখানেক। পরে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে পুলিশ নির্বিচার হামলা চালায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যান। তবে অনেক শিক্ষার্থী হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতে হলে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারীদের বিচার না হলে হল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান তাঁরা।

এদিন দুপুর ১টার দিকে শিক্ষকদের একটি দল মৌন মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ করেন শিক্ষকরা।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

 

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি

শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলা, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে পরদিন ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।

 

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাবি ও চবি

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রীদের এবং রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

রংপুরে আবু সাঈদের দাফন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগের দিন নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের নালিপাড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত জানাজা ও দাফনের তাগিদ দেওয়া হলে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুই দফা জানাজা শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে আবু সাঈদের লাশ দাফন করা হয়।

 

জাতির উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।

 

মন্তব্য
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির ব্লকেড

সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাঁড়াশি অভিযানে যৌথ বাহিনী ব্যর্থ হলে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এ সময় ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিফাত বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে।

তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।

তিনি বলেন, ইসি একটি নাটকবাজি করেছে। ইসি বলেছে, নৌকা প্রতীক নাকি এখনো থাকবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলতে চাই, এত বড় একটি গণহত্যার পরেও বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তাদের আওয়ামী লীগ এবং তাদের মার্কা থাকতে পারবে না।

রিফাত বলেন, অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার গোপালি পুলিশ এখনো ছাত্র-জনতার দিকে বন্দুক তাক করে।

এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এ ঘোষণা করেন।

এ সময় তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সারা দেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব ইউনিটকে স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।

 

সারা দেশে বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা বলে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশি সহায়তায় হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে উত্তরা অঞ্চলে তারা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে।

বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।

রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।

এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু জানান, সাইনবোর্ডে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। 

গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, সারা দেশে রাজপথের ব্লকেড সরিয়ে নিন। রাস্তার এক পাশে অবস্থান করুন। লড়াই চলবে।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া), গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

 

 

মন্তব্য
জামায়াত আমির

সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে

    প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন, গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে? তিনি লেখেন, গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যত দূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন, যা তাঁদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার।

কিন্তু মাঠে কার্যকর কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

জামায়াতের আমির সরকারের উদ্দেশে লেখেন, সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় ইতিহাসের দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।

ডা. শফিকুর রহমান সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সংঘাত ও উচ্ছৃঙ্খলতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শান্তিপ্রিয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর সাহায্য প্রেরণ করুন।

আমিন।

অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী শাসনব্যবস্থার সহযোগী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, কর্মসূচির আগে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ কোনো বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশের অংশ।

সেখানে সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নভাবে চলার নিশ্চয়তা দিতে সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব অপরিহার্য।

পরওয়ার দাবি করেন, ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনগণের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে, তবে দেশ এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী দেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

সেক্রেটারি জেনারেল জানান, এনসিপির কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তিনি তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, গতকাল বুধবার এনসিপির পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়, এমনকি পুলিশের এসপি অফিসেও হামলা করা হয়। তিনি দাবি করেন, এতে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বাত্মকভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

গোপালগঞ্জে এই হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে খুলনা নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়েছে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ