আর যদি আরেকটু সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ২০২৬-এর জুন নাগাদ ইলেকশন করা সম্ভব।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, “আমরা বলেছিলাম—আমাদেরকে ‘আর্লিয়েস্ট ডেটটা’ (নিকটতম তারিখ) ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত। আমরা ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ভিন্ন প্রস্তুতি নেই, একটিই প্রস্তুতি (জাতীয় নির্বাচন)।”
বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, একটি প্রশ্ন এসেছিল, দুটো নির্বাচন একসঙ্গে করা যায় কি না। এতে কেমন সময় লাগতে পারে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সব কটি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ধাপে ধাপে করতে গেলে এক বছর লেগে যায়। পুরোপুরি এভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করতে হলে জাতীয় নির্বাচনের সময় পিছিয়ে যাবে। জাতীয় নির্বাচন এখন নির্বাচন কমিশনের অগ্রাধিকার। নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচন নিয়েই এই মুহূর্তে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের, সেটা সেভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনে সরকারের অনুরোধ এলে, তখন ইসি বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে বলে মনে করেন কমিশনার সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়নি, কিছু হয়েছে। এই কন্ডিশনাল বিষয়গুলো নিয়ে স্পেসিফিক টাইমলাইন দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা ধারণা করি, সরকার তো আমাদের হাতের টাইমগুলো বিবেচনায় নেবে এবং তারা যদি মনে করে, জাতীয় নির্বাচনকে কোনো একটা টাইমফ্রেম করে তারপর কতটুকু অনুশীলন করা যায়, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন কতটুকু হবে, কোন কোন ইনস্টিটিউশনের হবে—সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তখন আমরা বলতে পারব, এটা জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে, কি করবে না।’
‘ইতিহাসের সেরা’ নির্বাচনের প্রত্যাশা
বৈঠক শেষে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গত ডিসেম্বরে সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া যায়, সে জন্য জানুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি মূল্যায়নকারী দল দুই সপ্তাহ সফর করে। তাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাথমিক কিছু আলোচনা করেছি।’
ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ইসিকে শক্তিশালীকরণ, ভোটার নিবন্ধন, ভোটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগীরা আলোচনা করেছে বলে জানান তিনি।
স্টেফান লিলার বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়তা করছি। আশা করছি, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা নির্বাচন হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন। আমাদের এ নিয়ে কিছু করার নেই।’
ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগা, কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার, অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ক্লিনটন পোবকে, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, নেদারল্যান্ডসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আন্দ্রে কার্স্টেনস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন আরল্ড গুলব্র্যান্ডসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক, ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন এবং তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন। বৈঠকে অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।