স্বল্পতা-সংকট থাকলেও দেশের ঐশ্বর্যশালী পর্যটননগরী হচ্ছে কক্সবাজার। কিন্তু সেই নগরীতেও দেখা মিলছে না কোনো বিদেশি পর্যটকের। উল্টো দেশি পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠছে মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ। কক্সবাজারের অপার সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে মহাপরিকল্পনা প্রণীত না হওয়ায় ধুঁকছে দেশের পর্যটনশিল্প।
বিদেশি পর্যটক নগণ্য, দেশিরাও বিদেশমুখী
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশি ভ্রমণপিপাসুদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে শীর্ষে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় অবস্থানে থাইল্যান্ড। পর্যটন ব্যবসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশীয় পর্যটন অঞ্চলে হোটেল-মোটেলে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া, নিরাপত্তা ঘাটতি, যাতায়াতে বাড়তি খরচ এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন অনেকে। পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা না থাকা, ব্র্যান্ডিংয়ে ঘাটতি ও পরিকল্পিত পর্যটন ব্যবস্থার অভাবে পর্যটকসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্য বিশ্লেষণ করেও দেখা গেছে, দেশে দিন দিন বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা নিম্নগামী। দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুলসংখ্যক বিদেশি কর্মী কাজ করছেন। এর ফলে বিদেশি আগমনের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। সে তুলনায় পর্যটনকেন্দ্র ঘিরে বিদেশি আগমনের সুনির্দিষ্ট তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি।
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে বিদেশি নাগরিক আগমনের বছরভিত্তিক একটি তালিকা পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, ২০১৭ সালে দেশে আসে পাঁচ লাখ ৬৬৫ জন বিদেশি নাগরিক। এর পরের দুই বছরে আসে যথাক্রমে পাঁচ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ ও ছয় লাখ ২১ হাজার ১৩১ জন। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে এই সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় এক লাখ ৮১ হাজার ৫১৮ জনে।
যদিও পর্যটকদের এই তথ্য মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, বিদেশ থেকে আসলেই পর্যটক হয় না। এদের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি বিভিন্ন প্রকল্পে নিযুক্ত। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসে, এই সংখ্যাটা সুস্পষ্ট না হলেও এটি যে অতি নগণ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর দেশে বিদেশিদের আগমন বাড়তে শুরু করে। মূলত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বিভিন্ন এনজিওকর্মী তখন দেশে আসেন। পাশাপাশি মাতারবাড়ী বন্দরের কাজের পরও দেশে অনেক বিদেশি প্রকৌশলী এসেছেন। এঁদের অনেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে থাকেন। তাঁরা পর্যটক না।’
তিনি আরো বলেন, ‘পর্যটকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে না পারায় দেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। এর মধ্যে নিরাপত্তাও একটি। পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের পর্যাপ্ত সুবিধা না দেওয়ায় পর্যটক সংকট রয়েছে। শীতপ্রধান দেশের বিদেশি পর্যটকরা মূলত সূর্যস্নান করতে চায়। আমরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সোনাদিয়ার একাংশকে ডে বিচ ঘোষণার দাবি জানিয়েছি।’
১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে বিদেশি হাতে গোনা কয়েকজন পর্যটক দেখা গেছে। এর মধ্যে কলাতলীসংলগ্ন বিচে এক বিদেশি নারী ও পুরুষকে দেখা যায়। এ ছাড়া পাথুরে টেক বিচে একটি পরিবারের চারজন সদস্যকে দেখা গেছে। তা ছাড়া বিছিন্নভাবে কয়েকজন বিদেশিকে দেখা গেছে।
পর্যটকরা বলছেন, বাংলাদেশের তুলনায় বিদেশে ভ্রমণ সাশ্রয়ী। জানা যায়, ফ্রেশ পাসপোর্টে কোনো ডকুমেন্ট ছাড়াই মাত্র ৭৫ হাজার টাকায় ছয় রাত সাত দিনের শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ ট্যুর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এই ট্যুরের আওতায় রিটার্নের এয়ার টিকিট, চারতারা হোটেল, সঙ্গে ব্রেকফাস্ট, পিক অ্যান্ড ড্রপ, সিটি ট্যুর, অল ট্যাক্স ও ট্যুর গাইড পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া ৪৫ হাজার ৫০০ টাকায় তিন রাত চার দিনের জন্য নেপাল ট্যুরের বিভিন্ন প্যাকেজ পাওয়া যায় বিভিন্ন ট্যুর এজেন্সিতে। সেখানে দেশের বিভিন্ন চারতারা মানের হোটেলে থাকা ও বিমানভাড়াসহ এই ব্যয় কাছাকাছি।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী আলী ইব্রাহিম বলেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনো স্পটে ভ্রমণের তুলনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশে কম খরচে ভ্রমণ করা যায়। থাইল্যান্ডে চারতারা হোটেলে সি ভিউ রুম পাওয়া যায় তিন থেকে চার হাজার টাকায়, যা বাংলাদেশে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ওখানে যাতায়াতব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আপনি সেখানে নিরাপদ।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে তারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে মোট ১২৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১১১ কোটি টাকা। এই হিসাবে এক মাসে ব্যয় বেড়েছে ১৮ কোটি টাকা বা প্রায় ১৬.২ শতাংশ। বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সবচেয়ে বড় অংশ নগদ অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে, যা অক্টোবরে মোট খরচের ৪৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে দেশের বাইরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে থাইল্যান্ড এখন দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। আগস্টের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে এই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। সেপ্টেম্বর মাসে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে ৪২ কোটি টাকা খরচ করলেও অক্টোবরে তা একলাফে বেড়ে ৫৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ১৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এর ফলে থাইল্যান্ড সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় অবস্থানধারী ভারতকে পেছনে ফেলেছে।
অক্টোবরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে মোট ৪৯৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৪২১ কোটি টাকা। এই খরচের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে অক্টোবরে ব্যয় হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৭৭ কোটি টাকা। এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে ব্যয় বেড়েছে সাত কোটি টাকা বা প্রায় ৮.৫ শতাংশ।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম ও বাংলাদেশ পরিবেশ অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি কনভারসন ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ এন এম হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশকে বাঁচিয়ে পর্যটনকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটক কমছে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য পৃথক পর্যটন এলাকা নির্ধারণ করা জরুরি।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রাম থেকে সপরিবারে কক্সবাজারে আসা অ্যাডভোকেট রাহিদ মির্জার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে পর্যটন খাত। কিন্তু আমি দুই দিনেও কোনো বিদেশি পর্যটক দেখিনি। শুধু দেশি পর্যটক দিয়ে পর্যটন খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’ তিনি আরো বলেন, বিদেশি পর্যটকদের জন্য বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। তাদের জন্য নির্ধারিত এলাকা থাকা উচিত। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।