দশমিনা উপজেলার সইজ্জাপুর গ্রামের জেলে হেমায়েত মাছ শিকার করেন বাঁধাজাল দিয়ে। এটি বেহুন্দি জাল নামেও পরিচিত। তার জালে তিন-চার দিন বয়সের মাছের পোনাসহ আটকা পড়ে মাছের ডিমও। মাঘ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত তার ওই জালে যে মাছ ধরা পড়ে, তার ৮০ শতাংশই ইলিশের বাচ্চা।
জাল পাতে পুলিশও
পটুয়াখালী প্রতিনিধি

এভাবে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে দিনের পর দিন জেলেরা অবাধে মাছ শিকার করে যাচ্ছেন কিভাবে? হেমায়েতদের মতো শুধুই মাছ ধরে জীবন চালানো জেলেদের মুখ থেকে শোনা যায় ভয়ংকর জবাব। নিষিদ্ধ জাল শুধু জেলেরাই পাতেন না, পুলিশ প্রশাসনও অবৈধ আয়ের জাল বিছিয়ে রেখেছে নদী-সাগরে।
নিষিদ্ধ জালের ছড়াছড়ি : ইলিশ শিকারের জন্য সর্বনিম্ন ৬.৫ সেন্টিমিটার ফাঁসের সুতার জাল ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও জেলেরা অহরহ ব্যবহার করেন ৩ থেকে ৩.৫ সেন্টিমিটার ফাঁসের কারেন্ট জাল। মশারির মতো ফাঁসের আরেকটি জাল ব্যবহার করে মাছের সব ধরনের পোনা ধ্বংস করা হয়।
লালমোহন উপজেলার গাইমারা এলাকার জেলে আলমগীর হোসেন জানান, এই জাল নদীতে ফেলার এক ঘণ্টার মধ্যে পুরো জালের ফাঁস ভরে যায় চাপলিতে। এক খ্যাপে পাঁচ থেকে সাত মণ চাপলি ওঠে। এক জালের চাপলি খুলতে ১৫-২০ জন মানুষের তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
তিনি আরো জানান, কারেন্ট জাল ২৫ নম্বর থেকে শুরু করে ১০০ নম্বর পর্যন্ত আছে। সবই নিষিদ্ধ, অথচ অবাধে ব্যবহার করে চলেছেন নদী ও সাগরের জেলেরা।
এ ছাড়া রয়েছে ডুবোচরগুলোতে ব্যবহারের জন্য ব্যাড় বা মশারি জাল। ভাটার সময় এই জাল চরের মাটিতে পুঁতে রাখা হয় এবং জোয়ারে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। ভাটায় পানি নেমে গেলে জালের বেড়ে আটকা পড়ে ডুবোচরের ছোট-বড় সব মাছ। মাছের ডিমও বের হতে পারে না এই জাল থেকে।
জাল পাততে টাকা লাগে : উপকূল এলাকার বিভিন্ন নৌফাঁড়ি ও থানার পুলিশরা জেলেদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে নিষিদ্ধ জাল পাতার সুযোগ দেয়। জালের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন অঙ্কের ‘ফি’ পরিশোধ করতে হয় পুলিশকে।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার জেলে আফজাল খাঁ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাজীরহাট ফাঁড়ির পুলিশকে মাসে এক হাজার টাহা দেই আমি। ওই ফাঁড়ির পুলিশের খাতা আছে। ওই খাতায় আমার নাম আছে। সব জাইল্যার নাম হেগো খাতায় আছে। জালের ধরন অনুযায়ী সব জাইল্যারে মাসে টাহা দেতে অয়। টাহা না দেলে জাল ধইরগ্যা লইয়া যায়। ওই ফাঁড়িতে পুলিশের একজন দালাল আছে কবির নামে। সে ট্রলার লইয়া নদীতে আইয়া টাহা উডায় জাইল্যাগো তন। কেউ আবার সরাসরি ফাঁড়িতে যাইয়া টাহা দেয়। কোনো অভিযান অইলে আমাগোরে আগে ফোন দেয়; আমরা সাবধান অইয়া যাই। আবার হঠাৎ অভিযানে নামলে নাম জিগায়; খাতায় নাম থাকলে কোনো সমস্যা অয় না।’
কেন টাকা দেন? প্রশ্নের জবাবে আফজাল খাঁ বলেন, ‘ছয়জনের সংসারের খরচ। কিস্তিও আছে এনজিওর। জাল-নৌকার আয় ছাড়া আর কিছু নাই। দুই-চাইরডা ইলিশ পাওয়ার লাইগ্যা কারেন্ট জাল বাই। জালডা লইয়া গেলে খামু কী? এই লাইগ্যা পুলিশরে টাহা দেই।’
ওই এলাকার জেলে আবুল হোসেনও বলেন একই কথা। তিনিও তেঁতুলিয়া নদীতে কারেন্ট জাল ব্যবহার করেন। তাকেও মাসে এক হাজার টাকা দিতে হয় ওই ফাঁড়ির পুলিশকে। আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি একা না, সব জাইল্যাই এক হাজার করে পুলিশরে দেয়।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাজীরহাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফেরদৌস আহম্মেদ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এক মাস আগে এখানে আসার পর থেকে কোনো জেলের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে না। আশা করি, হবেও না।’
এই ফাঁড়ির ট্রলারচালক কবিরকে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা কথা।’ এক জেলে আপনার টাকা নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ দেখাইছে—বলা হলে জবাবে কবির বলেন, ‘আমার বাবা মাছের ব্যবসা করে। আমি মাছ কিনি। টাকা-পয়সার লেনদেনের ভিডিও দেখাইতেই পারে। তবে নৌফাঁড়ির ট্রলারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমি কোনো জেলের কাছ থেকে টাকা নেই নাই। আর ওই চাকরি এখন আমার নাই।’
গত ১৬ নভেম্বর সকালে এসব কথা হওয়ার পর রাতেই আবার কবিরের ফোন। বলেন, ‘ভাই, আপনার বিকাশ নাম্বারডা দেন।’
কেন? প্রশ্ন করলে কবির বলন, ‘তহন ধারেকাছে লোকজন ছেল, তাই বলতে পারি নাই। আমনে নাম্বারডা দেন।’ তার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে একটা ধমক দিয়ে ফোন কেটে দিই।
ভোলার লালমোহন উপজেলার চরপাতা গ্রামের জেলে নিজাম ব্যাপারী বলেন, ‘আমার ঘর-সংসার, কিস্তি এই জালের কামাইয়ের উপর। আমি এক হাজার টেয়া (টাকা) দিয়া সব ঠিক রাহি। কারেন্ট জালে ছোড মাছের ক্ষতি অয় জানি; কিন্তু কী করমু? খামু কী?’
ইলিশ শিকারে কারেন্ট জাল ব্যবহার করতে বাউফলের কালাইয়া নৌফাঁড়ির পুলিশকে টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন বদরপুর গ্রামের কবির মোল্লা, নাজিরপুর গ্রামের ফারুক মাঝি, বদরপুর গ্রামের জান্টু মাঝি, চর কচুয়ার নীরব মাঝি, বাউফলের নিমদি গ্রামের আকবর ব্যাপারী, সোহেল হাওলাদার, রাসেল হাওলাদার ও রাসেল রাড়ি।
জানতে চাইলে কালাইয়া নৌফাঁড়ির ইনচার্জ গাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি নৌ পুলিশে এই প্রথম; এখানে আসছিও নতুন, অক্টোবরের শুরুতে। আমিও শুনেছি এমন অভিযোগ। তবে আমি চেষ্টা করছি নিষিদ্ধ জাল বন্ধের। অনেক জেলের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বুঝিয়েছি, এভাবে আপনারা ইলিশ শিকার করলে আমাদের ইলিশ হারিয়ে যাবে; তখন আপনারা না খেয়ে থাকবেন।’
ওদিকে বাঁধাজালের মাছ শিকারে ফি দিতে হয় বেশি। দশমিনার সইজ্জাপুর এলাকার মো. আকরাম জেলে বলেন, ‘আমার বাঁধাজাল ৮ গ্রাফির। হাজীরহাট ফাঁড়ির পুলিশকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। না দিলে জাল বাইতে দেয় না।’ লালমোহনের জেলে মকবুল বলেন, ‘ছোট বাঁধাজালে ৪ কিংবা ৬ গ্রাফির জালে দুই থেকে তিন হাজার টাকা মাসে পুলিশকে দিতে হয়। আমাগো আত-পাও (হাত-পা) বাঁধা পুলিশের ধারে।’
লালমোহন উপজেলার গাইমারা গ্রামের মো. আলী, মো. আলমগীর, মো. ইসলাম, মো. জামাল, শামসুদ্দিন—সবাই বাঁধাজাল দিয়ে চাপলি শিকার করেন। তাদের বাঁধাজাল ছোট হওয়ায় মাসে ওই ফাঁড়ির পুলিশকে দিতে হয় দুই হাজার টাকা করে।
তবে সব জেলের কাছ থেকে পুলিশ সরাসরি টাকা নেয় না। যেসব জেলে আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নেওয়া, তাদের মাছ বিক্রির পর কমিশনের সঙ্গে পুলিশের টাকাও আড়তদাররাই কেটে রাখেন; পরে পুলিশকে পরিশোধ করেন। বাউফলের বগি এলাকার দাদন নেওয়া জেলে মোতাহার, মিলন, শাকির ও মাইনুদ্দিন এসব কথা বলেন। তারা এলাকার আড়তদার জুয়েল মৃধাকে মাছ দিয়ে থাকেন।
জানতে চাইলে জুয়েল মৃধা বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করি। আমাকে অনেক সময় অনেক কিছুই ফেস করতে হয়। সরকার অনেক জাল, অনেক ব্যবসা অবৈধ ঘোষণা করছে। অনেক মাছ ধরা অবৈধ, নিষিদ্ধ। তার পরও জেলেরা চুরি করে ধরে; আমরা চুরি করে কিনি, চুরি করেই বাজারজাত করি। এটাই আমাদের বাস্তবতা।’
কলাপাড়ায় সিন্ডিকেট : এ উপজেলার জেলেরা বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। প্রথম সপ্তাহে সব ধরনের মাছ শিকারে বিরত থাকেন জেলেরা। এরপর সক্রিয় হয় সিন্ডিকেট। ওই নিষেধাজ্ঞার সময় কুয়াকাটার মেয়র বাজারের আড়তদার ও জেলেদের সিন্ডিকেট ম্যানেজ করেন নূর জামাল গাজী নামের এক ব্যক্তি। পুলিশ, সাংবাদিক আর কোস্ট গার্ডকে ম্যানেজ করার জন্য প্রত্যেক জেলের কাছ থেকে আদায় করা হয় মাসে পাঁচ হাজার টাকা। এই টাকা জেলেরা ক্যাশ দেন না; মাছ শিকার করে আড়তে ফিরে আসার পর বিক্রীত অর্থ থেকে এক মাসের জন্য পাঁচ হাজার টাকা কেটে রাখা হয়। এ কারণে তখন কুয়াকাটার মাছ বাজারগুলো থাকে সরগরম।
অভিযোগের বিষয়ে নূর জামাল গাজী বলেন, ‘সবাইরে ম্যানেজ করি না। চুরি কইরগ্যা মাছ ধরি। সবার সাথে আমাগো একটা সমন্বয় থাকে।’
করণীয় কী : এই প্রশ্নে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের প্রফেসর ড. মো. লোকমান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইলিশ রক্ষায় সর্বপ্রথম অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। জাতীয়ভাবে দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিকল্পনা নিতে হবে; তাতে সব জেলেকে তালিকাভুক্ত করে প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে দীর্ঘমেয়াদি মোটিভেশন করাতে হবে। জেলেদের দেওয়া সরকারি প্রণোদনা অপর্যাপ্ত। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি সঠিক মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে।’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মাইগ্রেশন বা স্থানান্তর স্বভাবের মাছ হলো ইলিশ। ইলিশের মায়ের বাড়ি হলো নদী; সেখানে ডিম ছেড়ে বাচ্চা ফুটিয়ে ফিরে যায় সাগরে। বাচ্চারাও বড় হলে সাগরে চলে যায়। আবার বড় হয়ে ডিম ছাড়তে ফিরে আসে মায়ের বাড়ি নদীতে। এই মায়ের বাড়িতেই ইলিশের যত বিপত্তি। নদীতে অবৈধ জালের ছড়াছড়ি। ফলে একমুহূর্ত ইলিশ নদীতে এসে শান্তিতে থাকতে পারে না। যখন সাগর থেকে নদীতে বা নদী থেকে সাগরে ফিরতে যায়, তখন মোহনায় চরগড়া, বেহুন্দি আর কারেন্ট জালে শেষ হয়ে যায় ইলিশ। আবার জেগে ওঠা অসংখ্য ডুবোচরও বড় বাধা। নদীতে দূষণ বাড়ছে; সেই পানিতে ঠিকমতো ডিম ফুটতে না পারার কারণেও ইলিশ কমছে দ্রুত। একটা ইলিশ তিন লাখ থেকে ৩০ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয়। এরা যদি ঠিকমতো ডিম ছাড়তে পারত, তাহলে ইলিশের আকাল দেখা যেত না।’
এই গবেষক আরো বলেন, ‘জেলেদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে হবে সবার আগে। ঋণগ্রস্ত জেলেদের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা থাকতে হবে। সিভিল প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন, কোস্ট গার্ড—এদের আন্তরিক হতে হবে শতভাগ। জিরো টলার্যান্স নীতিতে আসতে হবে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কেউ কোনো ধরনের দুর্নীতি করলে তাকে ওএসডি না করে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে। কোনো জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতা এ ক্ষেত্রে সামান্যতম দোষী প্রমাণিত হলে তাকে জামিন অযোগ্য সাজা দিতে হবে। এরপর অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে দেশের সম্পদ ইলিশ।’
সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।
এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।
যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।
ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ভারতীয় জেনারেলের দাবি
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।
জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।
চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।
জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।
অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।
ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।
গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি
- দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।
সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।’
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।
সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ।
সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে।
এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ‘ব্যর্থতা’ এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।
খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।