ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭
অবৈধ বিপুল সম্পদ

আরেক ‘বেনজীর’ অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল

হাসিব বিন শহিদ
হাসিব বিন শহিদ
শেয়ার
আরেক ‘বেনজীর’ অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল
শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল

ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন ঢাকার সিটি এসবিতে (নগর স্পেশাল ব্রাঞ্চ) কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল। তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইককান্দী গ্রামে। তিনি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। বেনজীরের মতো ঠিক একই কায়দায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংখ্যালঘু ও দুর্বলদের ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে শত শত বিঘা জমি, শহরে-গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি, মাছের খামারসবই করেছেন।

চাকরির সুবাদে হয়ে উঠেছেন অন্যতম বিত্তশালী। এ যেন পুলিশ বাহিনীতে আরেক বেনজীর। এরই মধ্যে রফিকুল ইসলাম এবং তাঁর স্ত্রী ও আত্মীয়দের সম্পদ জব্দের প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের অনুসন্ধানকারী টিম এরই মধ্যে রফিকুল ইসলামের সম্পদ জব্দের অনুমতি চেয়ে কমিশনে আবেদন করেছে, যা পর্যালোচনাধীন।
কমিশনের অনুমতি পেলে অনুসন্ধানকারী টিম আদালতে রফিকুল ইসলামের সব সম্পদ জব্দের আবেদন করবে। দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অবৈধ উপার্জিত অর্থ দিয়ে রফিকুল ইসলাম নিজের ও স্ত্রীর পাশাপাশি ভাই-বোন, ভাই-বোনের ছেলেমেয়ে, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী, শ্যালিকা, শ্যালিকার স্বামীসহ বিভিন্নজনের নামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন। কালের কণ্ঠর নিজস্ব অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, রফিকুল ইসলাম নিজের ও স্ত্রীর পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের নামেও সম্পদ গড়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তিনি নিজেও বিপদে পড়েছেন, পাশাপাশি অবৈধ সম্পদের অংশীদার বানিয়ে আত্মীয়-স্বজনকেও বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। এরই মধ্যে দুদকের অনুসন্ধান টিম রফিকুল ইসলামের এসব অবৈধ সম্পদ জব্দের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে, যাতে তিনি এসব সম্পদ বিক্রি করতে না পারেন। চলতি মাসের শুরুতে অনুসন্ধান টিম কমিশনে রফিকুল ইসলামের সম্পদ জব্দের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। কমিশনের অনুমতি পেলেই অনুসন্ধানকারী টিম অদালতে সম্পদ জব্দের আবেদন করবে।

জানতে চাইলে দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন ও বিধি অনুসারে যা যা করণীয়, তার সবই করবে দুদক। কমিশনের অনুসন্ধান টিম স্বাধীনভাবে কাজ করছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে অনুসন্ধানকারী দল প্রয়োজন মনে করলে কমিশনের অনুমতিক্রমে আদালতে সম্পদ জব্দের আবেদনও করতে পারে। তবে নির্ধারিত সময়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিলের তাগিদ রয়েছে। অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করলে তার আলোকে কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

 

বিপুল সম্পদ জব্দের প্রস্তুতি দুদকের

চলতি বছরের শুরুর দিকে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক। এরপর অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়। এরই মধ্যে দুদকের অনুসন্ধান টিম রফিকুল ইসলাম এবং তাঁর স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনের নামে করা অবৈধ সম্পদ জব্দের জন্য অনুমতি চেয়ে কমিশনে আবেদন করেছে। গত ২ জুন অনুসন্ধান টিম সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন দাখিল করে, যা বর্তমানে কমিশনের পর্যালোচনাধীন। কমিশন অনুমতি দিলেই অনুসন্ধান টিম রফিকুল ইসলামের সম্পদ জব্দে আদালতে যাবে। রফিকুল ইসলামের যেসব সম্পদ জব্দের অনুমতি চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো : গোপালগঞ্জ সদরে রফিকুল ইসলামের নিজ নামে থাকা ৪৯ শতাংশ জমি, মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ১০ শতাংশ জমি, নিকুঞ্জে পাঁচ কাঠার প্লট, গোপালগঞ্জ সদরে আরো ৬৭ শতাংশ জমি, ফার্মগেটের চারতলা ভবন, শ্বশুরের নামে রাজধানীর নাখালপাড়ায় পাঁচতলা ও ছয়তলা দুটি ভবন, ভাইদের নামে প্রায় ১০ একর জমি, গোপালগঞ্জের কানাডা সুপার মার্কেট, রফিকুল ইসলামের ভাই আমিনুলের কাকরাইলের ফ্ল্যাট, আরেক ভাই দিদারুলের নামে মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট, ভাতিজি উর্মীর নামে ধানমণ্ডির ফ্ল্যাট, রফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত দলিল লেখক উজ্জ্বল মামুন চৌধুরীর নামে কয়েক একর জমি, ভাতিজির স্বামীর নামে একটি বাড়ি, রফিকুলের স্ত্রীর নামে একটি জাহাজ, রফিকুলের শ্বশুরের নামে তিনটি জাহাজ এবং আরেক ভাই মনিরুলের ব্যবহৃত একটি জিপ। রফিকুল ইসলাম তাঁর ও অন্যদের নামে গড়া এসব সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমাতে পারেন বলে দুদকের অনুসন্ধান টিম আশঙ্কা করছে। এ জন্য অনুসন্ধান টিম এসব সম্পদ জব্দে কমিশনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে।

 

বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে চাকরি

দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়, রফিকুল ইসলাম তাঁর বাবার মৃত্যুর পর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে চাকরিতে যোগদান করেন এবং সরকারি জমিও গ্রহণ করেন। এদিকে তাঁর বাবা কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি বলে গোপালগঞ্জের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন। দুদক এসংক্রান্ত তথ্য চেয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে চিঠি দিয়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুদক থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়। দুদকের অনুসন্ধানকারী টিমের প্রধান উপপরিচালক মোহা. নুরুল হুদা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে রফিকুল ইসলামের চাকরিতে যোগদানের তারিখ, পদের নাম, বিপি উল্লেখ করে এ পর্যন্ত অর্থবছরভিত্তিক বেতন-ভাতার পরিমাণ এবং এসংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে কততম বিসিএসের মাধ্যমে যোগদান করেন এবং কোনো বিশেষ কোটায় চাকরি পেয়েছেন কি না সেসংক্রান্ত তথ্যাদিও পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

 

রাজধানীতে একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট

রফিকুল ইসলাম ১০ বছরের বেশি সময় ফার্মগেটের (৮২/২ ইন্দিরা রোড) বাসায় বসবাস করছেন। বহুতল ফাউন্ডেশনের চারতলা ভবন এবং এর বিলাসবহুল আসবাব, যার আনুমানিক মূল্য ৫৬ কোটি টাকার বেশি। এই বাড়ির সব ফ্ল্যাটের ভাড়া রফিকুলের স্ত্রী ফারজানা রহমান সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশে ১২ কোটি ১৯ লাখ টাকায় প্রায় দুই বিঘা জমি কেনেন রফিকুল ইসলাম। সেখানে টিনশেড বিল্ডিং করে ৬৩টি রুম ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, মিরপুর চিড়িয়াখানা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এলাকার ৫ নম্বর রোডের ৪৫ নম্বর প্লটের প্রকৃত মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী। তাঁকে ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূলে জমিটি কিনে নেন রফিকুল ইসলাম শিমুল ও তাঁর সহকর্মীরা।

জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাকে ধরে নিয়ে জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। আমি তাঁদের কাছে অত্যন্ত নিরুপায় ছিলাম। জমি না দিলে আমাকে ক্রসফায়ারে দেবেন বলে ভয় দেখিয়েছেন। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে আমি ওই স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করি।

 

সরকারি জায়গায় বিলাসবহুল বাংলো বাড়ি

দুদকের অনুসন্ধান ও কালের কণ্ঠর নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম পুলিশে যোগ দেওয়ার আগে ৬ নম্বর পাইককান্দী ইউনিয়নের ২৯ নম্বর পাইককান্দী মৌজায় বিআরএস দাগ নম্বর ৪৭-এর ওপর ছোট একটি টিনের ঘর ছিল, যা এখনো বিদ্যমান। তিনি পুলিশে যোগ দেওয়ার পর একই ইউনিয়নের ২৭ নম্বর বিজয়পাশা মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানে ইজারা নেন বিআরএস দাগ নম্বর ৫৬৯, যে জমির পরিমাণ ১.০৭ একর, যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তিন বছরের জন্য শিডিউলের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়। রফিকুল ইসলাম তাঁর ভাইদের এবং ভাগ্নিজামাই সেলিম মীরের নামে তিন বছরের জন্য ওই জমি ইজারা নেন। বিআরএস দাগ নম্বর ৫৬৯ পুকুরটি খাসপুকুর হওয়ার পরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু ভরাট করে দখল করেন। এ ছাড়া এই বাড়ির সীমানার মধ্যে পাশের মালিক আসমা বেগমের প্রায় তিন কাঠা জমি জবরদখল করে নিজের বাড়ির সীমানাভুক্ত করে নেন। এভাবে মোট প্রায় ১.৫৬ একর জমির ওপর বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়িসহ বাংলো বাড়ি নির্মাণ করেন।

 

কানাডা সুপার মার্কেট

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ২৭ নম্বর বিজয়পাশা মৌজা বিআরএস দাগ নম্বর ৩২৬, বিজয়পাশা বাসস্ট্যান্ডের জমি রফিকুল ইসলাম তাঁর পাঁচ নম্বর ভাই মাহফুজুর রহমানের নামে মাহাতাব চৌধুরীর কাছ থেকে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকায় কেনেন। মাহাতাব চৌধুরীর কাগজপত্র ভুল থাকায় পুনরায় এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে ২০২২ সালে সোহেল চৌধুরী এবং ২০২৩ সালে নিজাম চৌধুরীর কাছ থেকে কেনেন। ক্রয় করা বিআরএস ৩২৬ নম্বর দাগের পূর্ব দিকে বিশ্বরোডসংলগ্ন সরকারি জায়গা দখল করে সেখানে বহুতল ফাউন্ডেশনে একটি মার্কেট নির্মাণ করেছেন। মার্কেটের নাম কানাডা সুপার মার্কেট। মার্কেটের জায়গা তিনটি দলিলের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ সদর সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করা হয়। দাতাদের কাছ থেকে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হেবা বিল এওয়াজ দলিলে ক্রয় করেন। দাতারা তাঁর আত্মীয় না হওয়ার পরও হেবা দলিলমূলে ক্রয় করেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

 

রফিকুলের স্ত্রী ও আত্মীয়দের নামে অগাধ সম্পদ

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, রফিকুলের স্ত্রী ফারজানা রহমানের নামে ৪৯ শতাংশ জমি রয়েছে পাইককান্দী ইউনিয়নের আমুড়িয়া মৌজায়, যার বিআরএস দাগ নম্বর ৩৫৫। জমিটি ২০১৫-১৬ সালে গোপালগঞ্জ সদর রেজিস্ট্রার অফিসে দুটি দলিলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করা হয়। জমিটির মূল্য ৯৮ লাখ টাকা। গোপালগঞ্জ সদর সাবরেজিস্ট্রার অফিস দলিল নম্বর ১৪৩/২০ মূলে রফিকুল ইসলাম তাঁর পাঁচ নম্বর ভাই মাহফুজুর রহমানের নামে জমি এক কোটি ৫০ লাখ টাকায় কেনেন। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে এখানেও হেবা বিল এওয়াজ দলিলে ক্রয় করা হয়। দাতারা তাঁর আত্মীয় না হওয়ার পরও হেবা দলিলমূলে ক্রয় করেছেন।

২০২২ সালে গুলশানের ঢাকা ইউনাইডেট হাসপাতালের পাশে ছয় হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ফ্লোর ১৪ কোটি ৫৫ টাকায় স্ত্রী ফারজানা রহমানের নামে কেনেন রফিকুল। ২০১৯ সালে ঢাকায় রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে দুটি প্লট ১০ কোটি টাকায় স্ত্রী ফারজানা রহমানের নামে কেনা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলামের মেজো বোনের স্বামী শাখায়েত হোসেন মোল্লার নামে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকায় জায়গাসহ একটি বাড়ি কেনেন। ভাগ্নিজামাই সেলিম মীরকে ২৭ নম্বর বিজয়পাশা মৌজায় বিআরএস নম্বর ১১১৫ জমিটিতে তিনতলা ফাউন্ডেশন করে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে একতলা ভবন করে দিয়েছেন। ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে রফিকুল ইসলাম তাঁর পাঁচ ভাইএস এম নুরুল ইসলাম, এস এম দিদারুল ইসলাম, এস এম আমিনুল ইসলাম, এস এম মনিরুল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমানের নামে গোপালগঞ্জ রেলস্টেশনের আশপাশে ৪২ কোটি টাকার জমি কেনেন। ভাইদের নামে পূর্বাচলে প্লট বুকিং দিয়ে তার কিস্তি দিচ্ছেন। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পূর্বাচল, ঢাকা প্রকল্পে পাঁচটি প্লট বুকিং দিয়ে কিস্তি দিচ্ছেন। প্রতিটি প্লটের কিস্তি মূল্য এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া রফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত দলিল লেখক উজ্জ্বল মামুন চৌধুরী ও ভাই মাহফুজুর রহমানের নামে গোপালগঞ্জ সদরের সুকতাইল ইউনিয়নের সুকতাইল গ্রামে ১৬ কোটি টাকা মূল্যে ৪০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। এই জমির ওপর বিশাল মৎস্য খামার গড়ে তোলা হয়েছে। রফিকুল ইসলামের ভাই আমিনুল ইসলাম একজন বেকার। অথচ তিনি বাসা নম্বর ১০৯, ফ্ল্যাট নম্বর ১৮ ডি, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, কাকরাইলে এক কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন। রফিকুল ইসলামের বড় ভাই এস এম নুরুল ইসলামের নামে ঢাকায় তিনটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন, যার মূল্য প্রায় দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিনি নাটরের চিনিকলের একজন কর্মচারী ছিলেন। রফিকুল ইসলাম গোপালগঞ্জ সদর উপজেলাধীন গোপীনাথপুর হিন্দুপাড়ায়ও আট বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তাঁর মেজো বোনের তিন মেয়ের নামে (মৌসুমী, নিশা ও রেশমি) সভারের নবীনগরে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এলাকাবাসী জানায়, পুলিশের এই বিত্তশালী কর্মকর্তা প্রতিবছর সর্বনিম্ন ১৫ থেকে ২০টি গরু এবং ৮ থেকে ১০টি ছাগল কোরবানি দেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে রফিকুল ইসলামের ঢাকার ঠিকানায় যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

আরেক ‘বেনজীর’ অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল

গোপালগঞ্জে রফিকুল ইসলামের বাংলো ও কানাডা সুপার মার্কেট।    ছবি : সংগৃহীত

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্থায়ী কমিটির বৈঠক

ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে নয় বিএনপি। এটিকে রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়ে মত দিয়েছে দলটি। গত বুধবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এরই আলোকে ঘোষণাপত্রের ওপর বিএনপির মতামতে এই দলিলকে আর্কাইভে (সংরক্ষণ) রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে বিএনপির কাছে পাঠানো জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে দলীয় মতামত চূড়ান্ত করতে বুধবার রাতে স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক হয়। ওই রাতেই খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন এনে তাতে চূড়ান্ত মতামত দিয়েছে বিএনপি। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান সংবিধানে স্থান দেওয়া হলে তাতে ভবিষ্যতে জটিলতা বাড়তে পারে।

কেউ কেউ নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানকেও সংবিধানে রাখার দাবি তুলতে পারে। এ জন্য তাঁরা রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রীয় আর্কাইভে ২০২৪ সালের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার দাবি তোলে।

স্থায়ী কমিটি বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, খসড়া ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলা হলেও বিএনপি তাতে দ্বিমত জানিয়েছে।

গণ-অভ্যুথানের ১১ মাস পর এসে এই ধরনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। বৈঠক সূত্র জানায়, খসড়ার শুরুতে উল্লিখিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এ ভুখণ্ডের মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রাম করেছিল এবং এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সাল থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল’—এই অংশ অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা করে তা বিএনপি বাদ দিয়েছে।

দলটির নেতারা বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই স্বাধীনতাযুদ্ধকেই প্রধান অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে ঘোষণাপত্র শুরু হওয়া উচিত।

খসড়া ঘোষণাপত্রে আছে, যেহেতু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শাসনামলের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনির্মাণের ব্যর্থতা ও অপর্যাপ্ত ছিল এবং এ কারণে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও শাসকগোষ্ঠীর জবাদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি’—বিএনপি এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাসনামলের জায়গায় আওয়ামী শাসনামলের কথা উল্লেখ করেছে।

  খসড়ায় এক-এগারোসংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে ক্ষমতার সুষ্ঠু রদবদলের রাজনৈতিক ব্যর্থতার সুযোগে কথাগুলো পরিবর্তন করে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের সুযোগে লেখার মতামত দিয়েছে  বিএনপি।

এ ছাড়া দলটি ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় বাদ দিয়ে সংবিধানের বিদ্যমান সংস্কার উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন করার পক্ষে মত দিয়েছে। জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের খসড়া থেকে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রসঙ্গটি বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত জানুয়ারি মাসে প্রস্তুত করা ঘোষণাপত্রের খসড়ার শেষ অংশে সেকেন্ড রিপাবলিক কথাটি উল্লেখ ছিল। জানা গেছে, এর বাইরেও খসড়ায় আরো কিছু শব্দগত সংযোজন-বিয়োজন করেছে বিএনপি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল। অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তখন ওই খসড়ার ওপর তাদের মতামত দেয়। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিন গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে। এনসিপি সম্প্রতি সরকারকে আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় তাদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়।

সরকার ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। আর এটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমরা তার ওপর মতামত গতকাল (বুধবার) দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকার একটা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সব কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু ৭২-এর সংবিধানে তা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ২৪-এর মহত্ত্ব ও গুরুত্বের প্রতি বিএনপি যথাযথ মর্যাদা দেয়। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই।

 

মন্তব্য
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনের খসড়া অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনের খসড়া অনুমোদন

ঢাকায় তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের একটি মিশন স্থাপনের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ৩৩তম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়-এর মিশন স্থাপনসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জুন ওই খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

ওই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক যে অফিস ওএইচসিএইচআর, সে অফিসের একটা মিশন শাখা বাংলাদেশে ওনারা খুলতে চাইছিলেন। এ লক্ষ্যে ওনারা আলোচনা করছিলেন। এ আলোচনার একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর সমঝোতা স্মারক, সেটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিষয়টি নিয়ে হেফাজতে ইসলামসহ একাধিক সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এদিকে অতিবৃষ্টির কারণে সম্প্রতি ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা বন্যা ও তদ-পরবর্তী গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের মতামত ও করণীয় তুলে ধরেন।

বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মুসাপুর রেগুলেটর ও বামনি ক্লোজারের নকশা চূড়ান্তকরণ, ফেনীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্তকরণ এবং নোয়াখালীর খাল ও ড্রেনেজ অবমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা হয়।

এর পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত, তীর প্রতিরক্ষা ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে বলেও উপদেষ্টামণ্ডলীকে জানানো হয়। সভায় দুই জেলায় চলমান বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও মহেশখালী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পাস হয়।

বৈঠকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়, যা লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিংয়ের পর কার্যকর হবে।

আন্তর্জাতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অপশনাল প্রোটোকল টু দ্য কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারে (ওপি-ক্যাট) পক্ষভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রটোকলটি ২০০২ সালে গৃহীত হয়, যার লক্ষ্য হলো নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদা হানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে সুরক্ষা জোরদার করা। বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালেই মূল কনভেনশনের পক্ষভুক্ত হয়েছিল। এবার প্রোটোকলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতি আরো শক্তিশালী করা হলো।

মালয়েশিয়ার জোহর বাহরুতে বাংলাদেশের একটি নতুন কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

বৈঠকে মহেশখালীকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের আওতায় আনতে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

 

মন্তব্য
মির্জা ফখরুল

দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, তাহলে কেন হবে না?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, তাহলে কেন হবে না?

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে কেন নির্বাচন হবে না? দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। নির্বাচিত প্রতিনিধি চায়। এ জন্য তারা জীবন দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনাসভাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

অনুষ্ঠানে গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক। বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছয় সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

আলোচনাসভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন নির্বাচন হবে না।

তাঁর এই বক্তব্যের জবাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। অনেকে বলেছেন যে, হবে না। কেন হবে না? নির্বাচন তো এ দেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য তো এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে।

কারণ মানুষ একটি নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায় পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে। এ জিনিসগুলো নিয়ে আমি মনে করি কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো, যত দ্রুত সম্ভব আমরা সংস্কারের কাজগুলো শেষ করে নির্বাচিত সরকারের দিকে যাওয়া, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যাওয়া। আমরা সোজা কথায় বিশ্বাস করি লিবারেল ডেমোক্রেসিতে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।
সেই নির্বাচিত সরকারই দেশ চালাবে ও সমস্যাগুলোর সমাধান করবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে ফেলতে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নির্দেশ দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন এই কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা দাবি করছি, যেন এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনাদের কি মনে হয় দেশে নির্বাচন হবে? অনেক মানুষ জিজ্ঞেস করে, নির্বাচন কি হবে? গতকাল প্রেস সেক্রেটারি যে বক্তব্য রাখলেন, তাতে কি মনে হয় নির্বাচন হবে? বেশির ভাগ মানুষ মনে করে নির্বাচন হবে না। তাহলে কী হবে? আমাদের ভাবনার দরকার আছে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ তো নেই, দুঃশাসন কি বিদায় নিয়েছে? না। আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। আমাদের সামনে এখনো ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিরাজমান। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা, দিল্লির আধিপত্যের কালো থাবা চতুর্দিকে ছেয়ে বসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতি-আন্তর্জাতিক নীতি-কূটনীতি ইভেন সামনের নির্বাচনে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কিভাবে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া যায় তার চক্রান্ত এখনো বিদ্যমান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, স্বৈরাচার পালিয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারী মানসিকতা বিরাজমান। আজকেও যদি দেখেন, এটা যদি না হতে পারে, ওটা হতে পারবে না। এ রকম বক্তব্য দিচ্ছেন আমাদের তরুণ নেতৃত্বের কতিপয় নেতা। আপনি আপনার চাহিদা বলতেই পারেন, এটা আপনার স্বাধীনতা। কিন্তু আপনি এটা বলতে পারেন না যে, এটা না হলে, ওইটাও হবে না। এই অধিকার আপনার নেই। এই মানসিকতা আর স্বৈরাচারের মানসিকতা একই।

তিনি বলেন, ৬৪ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা নিগৃহীত হয়েছেন। সংগ্রামের সম্পাদক আসাদ ভাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু লেখনীর কারণে। এখনো তো আপনাদের কণ্ঠে একই ধরনের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এটি কি ঠিক?

বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, গত ১৭ বছরে সাংবাদিকদের ভূমিকা বর্তমান সরকার স্বীকার করতে চায় না। এই সরকারের যারা সুবিধাভোগী, তারা এক-দেড় মাস লড়াই করেছেন। আমরা সাংবাদিকরা ১৭টি বছর ঢাকার রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, অনেকে খুন হয়েছেন। তারপর স্বৈরাচারী সরকারের চূড়ান্ত পতনের জুলাই বিপ্লব এসেছে। সেখানে শুধু পেশাজীবী নয়, সাংবাদিকদেরও অবদান রয়েছে। আজকে মাঝে মাঝে কিছু শিশুকে দেখি সাংবাদিকদের হুমকি দিতে। তোমরা দেড় মাসের নেতা। আমরা ১৭ বছর লড়াই করে ফ্যাসিবাদের তক্ততাউস কাঁপিয়ে তুলেছিলাম। দেড় মাস নেতৃত্ব দিয়ে, ১৭ বছরের সংগ্রামকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তোমরা সাংবাদিকদের হুমকি দাও, এটা মেনে নেব না।

অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, একটা ফ্যাসিবাদের ভাষা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটার নিন্দা করছি। মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ, হুমকি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করছি, সেটা খুবই অমঙ্গলসূচক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। কোনোভাবে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, হুমকি দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা যায় না।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, এ কে এম মহসিন, ইরফানুল হক জাহিদ, সাঈদ খান, দিদারুল আলম, খন্দকার আলমগীর হোসেন ও প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী প্রমুখ।

মন্তব্য

‘ক্ষমা’ পেতে পারেন সাবেক আইজিপি

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
‘ক্ষমা’ পেতে পারেন সাবেক আইজিপি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিচার শুরু হয়েছে। এ মামলায় অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হতে আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

গতকাল বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আবেদনটি মঞ্জুর করে তাঁকে সাক্ষী হিসেবে গণ্য করে সাক্ষ্য উপস্থাপনের অনুমতি দেন। এর পরই প্রশ্ন উঠেছে, মামুন কি রাজসাক্ষী হয়েছেন? হয়ে থাকলে তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে কী প্রতিকার পাবেন বা পেতে পারেন?

 

মামুনের দোষ স্বীকার

রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে অপরাধ করায় শেখ হাসিনাকে এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের দাবি, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড। ফলে অপরাধের সর্বোচ্চ দায় শেখ হাসিনারই। এ মামলায় সহ-আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। অপরাধ সংঘটনের সময় তিনি রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশের সর্বোচ্চ পদে ছিলেন।
তিন আসামির মধ্যে মামুনই একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি। গতকাল মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশের আগে তাঁকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর বিচারিক কাজ শুরু হলে ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী আমলে নেওয়া পাঁচ অভিযোগ পড়ে শোনান। অভিযোগ পড়া শেষ হলে বিচারক মোহিতুল আসামি মামুনকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি নিজেকে দোষী না নির্দোষ মনে করেন।
তখন সাবেক আইজিপি মামুন দাঁড়িয়ে বলেন, আমি দোষ স্বীকার করছি। এই মামলাসংশ্লিষ্ট প্রকৃত সত্য ও সমস্ত পরিস্থিতি স্বেচ্ছায় সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে চাই। এরপর এই আসামিকে মামলার সাক্ষী এবং তাঁর বক্তব্য সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। একই সঙ্গে আরজি জানান, আবেদনটি মঞ্জুর করা হলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল যেন তাঁকে কারাগারে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল তখন আবেদনটি মঞ্জুর করে সাবেক আইজিপি মামুনকে সাক্ষী হিসেবে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি দেন।

 

রাজসাক্ষী নিয়ে যা বলা আছে ট্রাইব্যুনাল আইনে? 

এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ব্যাপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এসব অপরাধের বিচার হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে। আইনটির ১৫ ধারায় একজন রাজসাক্ষীর ক্ষমা বিষয়ে বলা আছে। ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, বিচারের যেকোনো পর্যায়ে, ধারা ৩-এ উল্লিখিত যেকোনো অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা গোপনে জড়িত বলে মনে করা হয় এমন যেকোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল, অপরাধের সাথে সম্পর্কিত তার জ্ঞানের মধ্যে থাকা সম্পূর্ণ পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সকল ব্যক্তির কাছে, প্রধান বা সহায়তাকারী হিসেবে সম্পূর্ণ এবং সত্য প্রকাশ করার শর্তে, এই ক্ষমা প্রদান করতে পারে।

২ উপধারায় বলা আছে, এই ধারার অধীনে অভিযোগ গ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিচারে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর ৩ উপধারায় বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যক্তিকে হেফাজতে আটক রাখা হবে বলা আছে।

 

রাজসাক্ষী হলে আইনের শর্ত পূরণ করতে হবে : রাজসাক্ষী হতে চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মামলায় আদালত তাঁকে সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সাক্ষ্য-জেরার পর আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে তিনি সব সত্যি বলেছেন, কোনো কিছু গোপন করেননি বা তাঁর সাক্ষ্যের পর প্রকৃত সত্য উদঘাটন হয়েছে, তখন আদালত তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৫ ধারায় যেসব শর্তের কথা বলা আছে, সেই সব শর্ত তাঁকে পূরণ করতে হবে। শর্ত পূরণ করতে পারলে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করবেন। রাজসাক্ষী হতে পারলে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার আছে তাঁর অপরাধ ক্ষমা করার।

প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দোষ স্বীকার করেছেন ট্রাইব্যুনালের কাছে। তিনি বলেছেন, এই মামলার সম্পূর্ণ সত্যি এবং সব পরিস্থিতি তুলে ধরতে চান। এই মর্মে একটি আবেদনও দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন এবং মামলার সাক্ষী হিসেবে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন।

 

ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হওয়ার এটিই প্রথম নজির : প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, ফৌজদারি অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার অসংখ্য উদাহরণ থাকলেও আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে আর কোনো আসামি রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেননি। মামুনকে কারাগারে আলাদা সেলে রাখা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে রাজসাক্ষী হতে চেয়েছেন এবং যেসব আসামির বিরুদ্ধে তিনি বলতে পারেন বা তাঁর বক্তব্যে যেসব আসামির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, সেসব আসামি তাঁকে বায়াস (পক্ষে আনার) করার চেষ্টা করতে পারেন, তাঁর নিরাপত্তার ঘাটতি হতে পারে, এই জন্য কারাগারে তিনি যেন আইসোলেটেড (বিচ্ছিন্ন) থাকেন অর্থাৎ আলাদা সেলে রাখা হয়, সেই আবেদন করেছেন। আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছে। কারাগারে আলাদা সেলে থাকলেও সাবেক আইজিপি হিসেবে মামুন যে ডিভিশন সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, তার বাইরে বাড়তি কোনো সুবিধা তিনি পাবেন না বলেও জানান প্রসিকিউটর তামিম।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ