রাজধানীর মগবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেন, তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না ও প্রতিবন্ধী ছেলে নাইম হোসেন আরাফাতকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদের লোভ।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার নিহত মনির হোসেনের বড় ভাই নুরুল আমিন মানিক রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ ওই মামলায় নিহতের চাচাতো চাচা ও কেরানীগঞ্জের বাড়ির কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে।
পরে তাঁকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, খাবারে বিষ মিশিয়েই তাঁদের হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রবাসী মনির হোসেন ছিলেন কোটি টাকার মালিক। ঢাকায় তাঁর একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দেহলা গ্রামে রয়েছে পৈতৃক জমিজমা। কেরানীগঞ্জে রয়েছে দুটি বাড়ি, যেগুলো থেকে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা ভাড়া ওঠে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে তাঁর মালিকানায় রয়েছে অন্তত পাঁচটি যাত্রীবাহী বাস। ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
এই বিপুল সম্পদের দেখভাল করতেন রফিকুল ইসলাম, যিনি মনিরের দূর সম্পর্কের চাচা। কেরানীগঞ্জের বাড়ি কেনার জন্য মনির তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকা পাঠিয়েছিলেন। রফিকুল ছিলেন পরিবারের খুবই ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত। দেশের সম্পদের হিসাব জানতেন শুধু মনির ও তাঁর স্ত্রীই নয়, রফিকুল ও তাঁর মেয়ে ও মেয়ের জামাইও। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কিছুদিন আগে জমি ও সম্পত্তির হিসাব নিয়ে মনির ও রফিকুলের মধ্যে বিরোধ হয়।
এরপরই শুরু হয় এই হত্যার ছক। গত ২৮ জুন ছেলের চিকিৎসার জন্য মনির হোসেন স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। চাচা রফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা মগবাজারের এসপিআরসি হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানে সিরিয়াল না পেয়ে তাঁরা বিকেলে ‘সুইট স্লিপ’ হোটেলের ১০৩ নম্বর কক্ষে ওঠেন। সেদিন সন্ধ্যায় রফিকুলের সঙ্গে মগবাজার মোড়ের একটি রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পর মনির হোটেলে ফিরে আসেন। পরে স্ত্রী ও সন্তানের জন্য খাবার নিয়ে হোটেল কক্ষে যান রফিকুল। এরপর তিনি কেরানীগঞ্জে নিজ বাসায় ফিরে যান।
রাতে মনির, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে রফিকুলের আনা খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বমি করতে থাকেন। পরদিন ভোরে মনির বিষয়টি রফিকুলকে জানান। সকাল ৮টার দিকে রফিকুল হোটেলে এসে তাঁদের আদ-দ্বিন হাসপাতালে নিয়ে যান। সেদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে চিকিৎসকরা তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। মনিরের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন বলেন, ‘মনির ভাই প্রায় ৩০ বছর ধরে সৌদিপ্রবাসী। তাঁর তিন ভাইও বিদেশে থাকেন। মনির ভাই প্রবাসে থেকে অনেক টাকা আয় করেছিলেন। সেই টাকায় দেশে গড়েছিলেন বিপুল সম্পদ। তাঁর সম্পদের হিসাব জানতেন রফিকুল।’