বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও প্রায় অর্ধশত বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয়েছে রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কমিটি। নামসর্বস্ব এসব কমিটির ক্যাম্পাসে কোনো কার্যক্রম নেই। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় বা স্বার্থ রক্ষায়ও তাদের কোনো ভূমিকা নেই। এর পরও বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
ক্যাম্পাসে কার্যক্রম নেই লক্ষ্য শুধু পদ-পদবি
শরীফ শাওন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব কমিটির নেতাকর্মীরা জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে থাকেন, যাতে পরবর্তী জীবনে রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে কাঙ্ক্ষিত পদ-পদবি নেওয়া যায়।
সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৪৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয়েছে রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কমিটি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অনুমোদিত ‘সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ’ থেকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোথাও পূর্ণাঙ্গ, কোথাওবা আংশিক কমিটি দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এসব কমিটি থাকলেও ক্যাম্পাস ও তার বাইরে দৃশ্যত তাদের কোনো কার্যক্রম নেই।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ওয়ালি উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০২২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। ভেবেছিলাম এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো অথবা মন্দ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। অথচ এখনো তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। কমিটিতে নেতা কারা আছেন, তাও জানা নেই।
ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির একাধিক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে কোনো ধরনের ছাত্রসংগঠন আছে বলে জানা নেই। ক্যাম্পাসে রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই। এখনো কোনো ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।’
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় প্রতিদিন অ্যাসাইনমেন্ট ও হাজিরার ওপর নম্বরসহ পড়াশোনার এত চাপ থাকে যে সংগঠন করার সময় থাকে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফি পাবলিকের তুলনায় বেশি হওয়ায় পরিবার থেকেও শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ থাকে। ফলে এখানে শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ কম।
সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম সজিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিয়েই ছাত্ররাজনীতি। অধিকার আদায়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো ছাত্রসংগঠনগুলোর কাজ। ছাত্ররাজনীতি গণতান্ত্রিক চর্চা এবং নাগরিক অধিকার। তবে যেকোনো কার্যক্রম নতুন করে শুরু হলে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি চর্চার সুযোগ না থাকলেও তাঁরা জাতীয় কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ করেন। এখান থেকে অনেকেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন, কেউবা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। ছাত্ররাজনীতির চর্চা থাকার কারণে এটা হয়েছে। আশা করি, আগামী দিনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্ররাজনীতি জোরালো হবে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির নামে যেসব কর্মকাণ্ড চলছে, তা আমরা সবাই দেখতে পাই। ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকলেই মারামারি-কাটাকাটি লাগবে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে আমরা রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছি। এ ছাড়া ছাত্রসংসদ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য। সেখানে সরকারি অর্থায়নে ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে। ফলে সেশনজট থেকে শুরু করে নানা জটিলতাও থাকে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের অনেক চাহিদাও থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব সমস্যা নেই।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অতীতের মতো বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির জন্য শিক্ষার্থীদের পছন্দের স্থান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতির চর্চা করার সুযোগ কম থাকায় অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পছন্দ করেন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকে পরিবারের বিপক্ষে গিয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান।
ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির অপেক্ষায় আছেন গোলাম মোরশেদ (ছদ্ম নাম)। সম্প্রতি বি-ইউনিট থেকে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি।
গোলাম মোরশেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ছোটবেলা থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রবল ইচ্ছা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাস্টের অধীনে থাকায় সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার সুযোগ কম। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনাও নেই। ঢাবি শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় না, আমি মনে করি, শিক্ষায় নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজনীতি ও সমাজনীতিতেও এই বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে।
ছাত্রনেতাদের দাবি, রাজনীতি করতে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কখনো একটি সেমিস্টার ড্রপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেমিস্টার ফি ব্যয়বহুল। এ ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যক্তি ক্ষমতা প্রাধান্য পায়। এসব কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ নেয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের সংগঠন না করার বিষয়ে লিখিত নিয়ে থাকে। এমন প্রতিকূলতার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতিতে পিছিয়ে থাকেন।
রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে আমাদের ছাত্ররাজনীতির যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ছিল, কালের বিবর্তনে তা ধুলায় মিশেছে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই। শিক্ষার্থীদের প্রথম কাজ পড়াশোনা করা। এরপর তারা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে সোচ্চার হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর সমালোচনা করবে। তা না করে তারা টেন্ডারবাজি, চাঁদা আদায়, ক্যাম্পাস দখল ও প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ কম। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে কোনো বৈষম্য নেই। রাজনৈতিক পরিচয়ে টেন্ডারবাজি বা চাঁদাবাজি হয় না, এ কথা বলা যাবে না। দু-একজন এমন কাজ করলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। ছাত্রলীগ এমন রাজনীতি চায় না। ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলি। জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আন্দোলন করি।’
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।