কালের কণ্ঠ : বিএনপি কিছুদিন ধরে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। হামলার শিকার হচ্ছে। তবে মাঠ ছাড়ছে না।
এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার
আ. লীগের স্বার্থেই সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার
- দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে-বাইরে মেরুকরণ, আগামী জাতীয় নির্বাচন, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যৎ ও নেতৃত্ব—এসব বিষয় নিয়ে কালের কণ্ঠের কাছে নিজের বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৈমুর ফারুক তুষার
অন্যান্য

হারুন-অর-রশিদ : যুক্তরাজ্যে যেমন লেবার পার্টি ও কনজারভেটিভ পার্টি আছে, ভারতে যেমন বিজেপি ও কংগ্রেস আছে, তেমনি আমাদের এখানে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি হতে পারে। কিন্তু তার কিছু পূর্বশর্ত আছে। তাদের যেটা দরকার, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতের সঙ্গ সব সময়ের জন্য ত্যাগ করা। দুই. মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করা।
এই বিষয়গুলো পালন না করলে বিএনপির যে সংকট, সেখান থেকে উত্তরণের কোনো পথ দেখি না। তবে আমি মনে করি, এটা করা বিএনপির জন্য কঠিন। কারণ তারা যাদের নিয়ে রাজনীতি করে, যাদের ভিত্তির ওপর বিএনপি দাঁড়িয়ে আছে, তাদের মগজে রয়েছে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ।
কালের কণ্ঠ : বিএনপির সংকট তাহলে কোথায়?
হারুন-অর-রশিদ : বিএনপির দুই ধরনের সংকট—একটা রাজনৈতিক আদর্শের সংকট, আরেকটা নেতৃত্বের সংকট। তবে বিএনপি কিছু কিছু শিক্ষা নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
বিএনপির নেতৃত্বে যদি একসময় জিয়া পরিবার না থাকে, অন্যরা যদি নেতৃত্বে আসে এবং তারা যদি মনে করে যে আমরা সংসদীয় ধারায় রাজনীতি করব; বোমা হামলা, সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড করব না, তাহলে তাদের একটা পরীক্ষা দিতে হবে। কাজের মধ্য দিয়ে জনগণকে বোঝাতে হবে যে আমি পরিবর্তন হয়েছি, আমি এখন গণতন্ত্রমনা হয়েছি। জনগণ যদি আবার সন্ত্রাস দেখে, হাঙ্গামা দেখে তাহলে তারা বিএনপির প্রতি আবার মুখ ফেরাতে পারে।
জনগণের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ আছে। একটা সরকার তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলে কিছু অসন্তোষ এমনিতেই তৈরি হয়। কিন্তু তার পরও জনগণের সামনে বিকল্প বলে কিছু নেই। জামায়াত-বিএনপি তো বিকল্প হতে পারে না।
কালের কণ্ঠ : তাহলে বিএনপি কী করবে?
হারুন-অর-রশিদ : আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির জন্য কল্যাণকর হবে সন্ত্রাসকে বিদায় জানানো। গণতান্ত্রিকভাবে সভা-সমাবেশ করার চেষ্টা করা। সর্বশক্তি নিয়ে নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কাকে ভোট দেবে। সেই নির্বাচনে যদি কারচুপি হয় তাহলে তো সারা বিশ্ব, গণমাধ্যম—সবাই দেখবে। অন্যায় করে কেউ জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না।
কালের কণ্ঠ : আপনি জন-অসন্তোষের কথা বললেন। তাহলে আগামী নির্বাচন কি আওয়ামী লীগের জন্য সহজ হবে?
হারুন-অর-রশিদ : আমি মনে করি, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট গঠন হবে এবং তাকে সক্রিয় করা হবে। এবার তো আওয়ামী লীগের সরকার চলছে। পরবর্তী সময়ে হবে মহাজোটের।
জামায়াতের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া কোনো না কোনোভাবে থাকবে। কোনো কোনো আসনে জামায়াত দলীয় ব্যানার থেকে না দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখানে বিএনপির সঙ্গে একটা সমঝোতা থাকবে। বিএনপি নতুন কিছু দলকেও সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করবে। নাগরিক ঐক্য, অধিকার মঞ্চ, বাম জোট—এরা মিলে একটা জোট করতে পারে।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গতবার যে ঐক্যফ্রন্ট হয়েছিল, সে রকম এবার হবে না।
কালের কণ্ঠ : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলেও কিছুটা অসন্তোষ আছে। আগামী নির্বাচনে জোট গঠনে তার প্রভাব পড়তে পারে কি?
হারুন-অর-রশিদ : ১৪ দলের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ থাকলেও তা কমিয়ে ফেলা যাবে। যে কারণে ১৪ দল গঠন করা হয়েছিল, সে কারণগুলো শেষ হয়ে যায়নি। আগামী দিনে এ কারণগুলো আরো বেশি করে সামনে আসবে। আগামী নির্বাচনে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে বলেই আমার মনে হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য আওয়ামী লীগের জন্য বিশেষ দরকারি।
কালের কণ্ঠ : দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ এবং তাদের সামনের চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
হারুন-অর-রশিদ : আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল। অসাম্প্রদায়িক আদর্শে তাদের বিশ্বাস। তবে দলের অনেকের ব্যক্তিবিশেষে যে বিশ্বাস, সেটা আলাদা বিষয়। বঙ্গবন্ধুর দুটি লক্ষ্য ছিল—বাংলাদেশ স্বাধীন করা এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। এখন দলের মধ্যে অনেকে আছে, যাদের আদর্শের বিচ্যুতি ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল—ভোগ নয়, ত্যাগ। কিন্তু এরা ভোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এরা টাকা-পয়সার পেছনে ছুটছে। তবে আশার কথা হলো, সারা দেশে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সাধারণ কর্মী আছে, যারা কোনো দিন ক্ষমতার কাছে যাবে না, কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধরে রাখবে। এরাই হলো আওয়ামী লীগের শক্তি। ১৯৭৫ সালের পরে আওয়ামী লীগের ওপর যে ধকল বা আঘাত, সেটা যখন কাটিয়ে উঠেছে তখন আওয়ামী লীগকে নিয়ে কোনো সংশয় আর থাকে না।
কালের কণ্ঠ : সে ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী এই দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কে বা কেমন হবে?
হারুন-অর-রশিদ : শেখ হাসিনার পরে কে নেতৃত্বে আসবে, এই তো! এই মেয়াদে হয়তো সমস্যা দেখা দেবে না। কিন্তু এর পরের মেয়াদে এই প্রশ্ন সামনে আসবে। আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের এ পরিকল্পনা অবশ্যই আছে।
কালের কণ্ঠ : বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী?
হারুন-অর-রশিদ : একসময়ের মুসলিম লীগ ও জামায়াত, এই রাজনৈতিক ধারার একটি সংস্করণ হলো বিএনপি। বাংলাদেশ তো দুই ধারায় বিভক্ত। দেশের একটা অংশ সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী, ভারতবিদ্বেষী, কট্টর বামপন্থী, যারা মূলত চীনপন্থী। এই অংশটাকেই প্রধানত নেতৃত্ব দেয় বিএনপি। ফলে বিএনপি কমবেশি একটা ধারা হিসেবে টিকে থাকবে। এ কারণেই ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও বিএনপি টিকে আছে। তাদের আশার আলো তারেক রহমান।
বিএনপি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তাদের অবস্থান কী? তারা কি গণতন্ত্রের চর্চা চায়, নাকি ক্ষমতাসীন হতে চায়—এটা বড় প্রশ্ন। ২০১৪-১৫ সালে তারা যে সন্ত্রাস করেছে, তা কোনো ফ্যাসিস্ট দলের পক্ষেও সম্ভব নয়। তারা মহাপাপ করেছে। তারা এখন সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছে।
কালের কণ্ঠ : বিএনপি কিভাবে তাদের সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারে?
হারুন-অর-রশিদ : বিএনপির সংকটমুক্তির পথ আমি দেখি না। তারেক রহমানের স্ত্রীকে যদি সামনে নিয়ে আসে তবে এক ধরনের শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব। তারেক রহমান লন্ডনে গিয়ে বসে আছেন। তাঁকে তো বাংলাদেশে আসতে কেউ নিষেধ করেনি। তাহলে আসছেন না কেন? রাজনীতি করতে গেলে এটুকু সাহস থাকবে না! রাজনীতি করলে সাহস থাকতে হবে। আমি আরাম-আয়েশে থাকব, নিরাপদে থাকব, নেতাও থাকব—এটা তো হয় না। তারেক রহমানের খোমেনি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইরানে বিপ্লব হয়েছে, এরপর খোমেনি গিয়ে নেতৃত্বে বসেছেন। এটা তারেক জিয়ার ক্ষেত্রে হবে না। তারেকের মতাদর্শগত ভাবনায় হয়তো খোমেনি থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তবতায় এটা সম্ভব নয় যে তিনি বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে আসবেন।
কালের কণ্ঠ : জাতীয় পার্টিতে আবার একটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে দলটি কী ধরনের অবয়ব পাবে?
হারুন-অর-রশিদ : জাতীয় পার্টির দুই ধারায় বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে একটি ধারা সরকারবিরোধী ভূমিকায় থাকবে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বের অংশের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কালের কণ্ঠ : জামায়াত ও জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ আপনি কিভাবে দেখেন?
হারুন-অর-রশিদ : বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তারা একা ভোট করে তিনটি আসন পেয়েছিল। তাদের মোট ভোট ৬-৭ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খায়। পাকিস্তান আমলে যা, এখনো তা-ই।
জাতীয় পার্টি বহুধাবিভক্ত হবে। বিগত দিনের চেয়ে তারা আরো বেশি শক্তিহীন হয়ে যাবে। একসময়ে ভাসানী ন্যাপ যেমন ছিল, ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টি তেমন হয়ে যাবে। জাতীয় পার্টির অনেকে আওয়ামী লীগে চলে আসবে।
কালের কণ্ঠ : আগামী নির্বাচন তাহলে কেমন হবে? দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন না করতে অনড় বিএনপি। আওয়ামী লীগ বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচন করতে চায়।
হারুন-অর-রশিদ : ২০১৪ সালে নির্বাচন অনেকটা একতরফা হয়েছে। বিএনপি ওই নির্বাচন প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল। ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এটা আইন অনুযায়ী ঠিক আছে, কিন্তু এটাকে কোনো অর্থেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যায় না।
কিন্তু এই নির্বাচনের পরে সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেছে। তার মানে হলো, মানুষ এটাকে মেনে নিয়েছে। মানুষ যদি বীতশ্রদ্ধ হতো তাহলে কিন্তু সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারত না। মানুষ বিএনপি-জামায়াতের অপকর্মের কারণে এতই বেশি ক্ষুব্ধ যে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের বিপক্ষে যায়নি। তবে মানুষ ভোট দিতেও যেতে চায় না।
আগে নির্বাচন একটা উৎসব ছিল। এই পরিবেশ নষ্ট করেছে এককথায় বললে বিএনপি-জামায়াত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাসের সংস্কৃতির জনক জিয়াউর রহমান। বিএনপি-জামায়াত একে স্থায়ী রূপ দিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ ও তার বিরোধীদের যে দুটি ধারা এ দেশে চলছে, তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান শিগগিরই ঘটবে না।
এখন এটাকে কিভাবে কমিয়ে আনা যায়, ন্যূনতম একটা কাছাকাছি অবস্থানে এসে নির্বাচন আয়োজন করা যায়, সেটা নিয়ে কথা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। আমিও মনে করি, ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন যে নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচন আর বাংলাদেশে হবে না, হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
২০২৪ সালের শুরুতে যে নির্বাচন, সেই নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, সেটা আমাদের করতে হবে। বারবার যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয় তার একটা প্রভাব সমাজের ওপর পড়বে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমাদের বিপুল উন্নতি হয়েছে। এখন আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা গুরুত্বপূর্ণ, যেন ব্যক্তি না থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।
পরবর্তী নির্বাচন জাতীয় স্বার্থে, এমনকি আওয়ামী লীগের স্বার্থেও অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়া দরকার। সেটা নির্ভর করবে বিরোধী দলের ওপরও। তারা যদি বলে, আমরা নির্বাচনে যাব না, তাহলে জোর করে তো কেউ তাদের নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারবে না। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তারপর আমরা বুঝতে পারব যে নির্বাচন সুষ্ঠু হলো কি না। যখন দলীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে, তখন আমরা বলতে পারব যে আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা শক্তি সঞ্চয় করেছে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
হারুন-অর-রশিদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।