পৃথিবীর ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ আছে। যেমন—গেটিসবার্গে দেওয়া লিংকনের বক্তৃতা। কিন্তু আমি জানি না পৃথিবীর আর কোনো ভাষণে একটি জাতিকে একই সঙ্গে অহিংস প্রতিরোধ এবং সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের ডাক দেওয়া হয়েছে। এবং একই সঙ্গে প্রচ্ছন্নভাবে একটি দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশেষ লেখা
আরো উজ্জ্বল সেই আলো
- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
notdefined

এক ব্রিটিশ সাংবাদিক সিরিল ডান তাঁকে আখ্যা দিয়েছেন—‘পোয়েট অব পলিটিকস বা রাজনীতির কবি।’ এই প্রথম রঙে-বর্ণে-ভাষায় এবং নৃতাত্ত্বিকভাবে একজন খাঁটি বাঙালি বাঙালিদের নেতা হয়েছিলেন। বাঙালিদের স্বার্থের ব্যাপারে তিনি কোনো আপস করেননি। ফাঁসির আসামি হয়েও ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি বাঙালিদের অধিকার একবিন্দু ছাড়তে রাজি নই।’ এ কথা সত্য শেরেবাংলা ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো নেতাও বাঙালিদের স্বার্থ-অধিকারের প্রশ্নে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে ক্রমাগত আপস করে নিজেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তেমনি বাঙালিদেরও ক্ষতি করেছিলেন।
পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো যদি এই সময় একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গঠনমূলক ভূমিকা গ্রহণ করতেন, তাহলে হয়তো একটা আপসরফা হতো। ভুট্টো এই গঠনমূলক ভূমিকার বদলে বাঙালিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান আর্মিকে উসকে দেন। শুরু হয় ১৯৭১ সালের নির্মম গণহত্যা। তারপরই শুরু হয় বাঙালিদের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার সনদপত্র হলো ৭ই মার্চের ঘোষণা। এই ঘোষণা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ হতো না। তেমনি একটি অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলাদেশও তৈরি হতো না। প্রায় হাজার বছর আগে ব্রিটিশ রাজাদের কাছ থেকে স্বৈরাচারী ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয় ম্যাগনাকার্টার মাধ্যমে। কিন্তু ম্যাগনাকার্টারেও জনগণের হাতে ক্ষমতা যায়নি। গিয়েছিল তখনকার ব্যারনদের হাতে। এই ব্যারনদের পার্টি টোরিদের হাত থেকে জনগণের হাতে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য লেবার পার্টি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে নেতৃত্বের অভাবে এই লেবার পার্টিও টোরিদের পথে চলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক আমলের আমলাতন্ত্র এবং গ্রাম্য মহাজনদের কায়েমি স্বার্থ ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা ছিল তাঁর ৭ই মার্চের ঘোষণা অনুযায়ী ক্ষমতা যাবে তৃণমূল পর্যায়ে। এই লক্ষ্যে তিনি বাকশাল সরকার গঠন করেন, যার ভিত্তি ছিল শোষিতের গণতন্ত্র। ৭ই মার্চের ঘোষণা এবং বাকশাল সৃষ্টির মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা ছিল। এই ধারাবাহিকতার লক্ষ্য ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গঠন। দেশের ও বিদেশের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বঙ্গবন্ধুকে এই লক্ষ্যে পৌঁছতে দেয়নি। তাঁকে ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে বাংলাদেশে আবার ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলের পুরনো ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয় সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা। আগে বাংলাদেশের রাজনীতির ভিত্তি ছিল ডেমোক্রেটিক কালচার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি’ কালচার। এই কালচারের প্রবর্তন প্রথম পাকিস্তানে। পাকিস্তানি মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এটা বাংলাদেশে রপ্তানি করে এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এটা লুফে নেয়। এখন এই কালচারের একাধিপত্যে গোটা বাংলাদেশ জর্জরিত। আওয়ামী লীগ শাসনক্ষমতায় এসেও এই কালচারের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারেনি এখনো।
এ জন্যই ৭ই মার্চের গুরুত্ব এখনো আমাদের জাতীয় জীবনে শেষ হয়ে যায়নি। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যেখানে বিদেশি শোষকদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, সেখানে বিদেশি হানাদারের বদলে দেশের শোষকশ্রেণির নামটা বসিয়ে দিন। তাহলে এই ভাষণের আধুনিক তাৎপর্য এবং তার বহমান ঐতিহাসিকতা ধরা পড়বে। ৭ই মার্চ এখনো আমাদের রাজনৈতিক জীবনের ধ্রুবতারা। এই ধ্রুবতারাকে হারালে চলবে না। শুধু ৭ই মার্চ দিবস উদযাপন নয়, এই ভাষণের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য অনুধাবন করে তা আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা দরকার। ৭ই মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। কখনো হারাবে না। ব্রিটিশ রাজনীতিতে ম্যাগনাকার্টা এখনো প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। ওই সনদ মেনেই ব্রিটিশ রাজতন্ত্র টিকে আছে। বর্তমান ওয়েস্টমিনস্টার গণতন্ত্রের ভিত্তিও বলতে গেলে এই ম্যাগনাকার্টা। কিন্তু ম্যাগনাকার্টার চেয়ে বিষয়ের গভীরতা ও রাজনৈতিক তাৎপর্যের দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। আমাদের জাতীয় জীবনে এই ভাষণ কখনো তার গুরুত্ব ও তাৎপর্য হারাতে পারে না।
একটি আধাসামন্তবাদী ও ধর্মান্ধ জাতিগোষ্ঠীকে আধুনিক যুগের আলোকে টেনে আনা সহজ নয়। এই দুরূহ কাজটি শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৭ই মার্চ ছিল তাঁর আদর্শের আলোকবর্তিকা। তিনি শতাব্দী-প্রাচীন আমলাতান্ত্রিক শাসন ও সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন। এই ভাঙার কাজটা বিপ্লব ছাড়া করা যায় না। তিনি এই বিপ্লব সাধনের পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন স্বাধীনতা লাভের পর বাকশাল শাসনতন্ত্র ঘোষণা করে। তিনি ভেবেছিলেন শান্তিপূর্ণ পথে তিনি তাঁর শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপ্লব সফল করতে পারবেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া এই সামাজিক গড্ডলিকা ভেঙে জাতিকে উদ্ধার করা যাবে কি না, তা বলা কঠিন। কিন্তু ৭ই মার্চের ঘোষণা যদি জাতির নবপ্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা যায় এবং তার রাজনৈতিক এবং তা আর্থ-সামাজিক ব্যাখ্যা তরুণ প্রজন্মকে ভালোভাবে বোঝানো যায়, তাহলে বঙ্গবন্ধু এখন জীবিত না থাকলেও এই ভাষণ দেশে আরেক বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবে।
লন্ডন, শনিবার, ৬ মার্চ ২০২১
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।