ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

হুমকি-হামলায় বাড়ছে শঙ্কা

রেজোয়ান বিশ্বাস
রেজোয়ান বিশ্বাস
শেয়ার
হুমকি-হামলায় বাড়ছে শঙ্কা

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে প্রতিপক্ষ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের হুমকি দেওয়ার ঘটনা। এরই মধ্যে কয়েকজন প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগকারী প্রার্থীরা বলছেন, ভোটের দিন তাঁদের কর্মী ও সমর্থকদের কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে তাঁরা শঙ্কায় আছেন।

ঢাকার দুই সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে অন্তত ১২০ জন প্রার্থী কালের কণ্ঠকে বলেছেন, তাঁরা প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীদের হুমকির মধ্যে আছেন।

অভিযোগকারীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, বিএনপি সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও তাঁদের লোকজন নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

অভিযোগকারী প্রার্থীরা বলছেন, তাঁদের ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এমনকি প্রচারে বের হলে ঘিরে ধরে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কর্মীদের মারধর করে প্রচারে না যেতেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এরই মধ্যে বিভিন্ন থানায় এবং নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ পাওয়ার পর শতাধিক প্রার্থীকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে।

তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীই বেশি।

নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচন সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।’

ঢাকার দুই সিটির ভোট হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৪ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ৫৭৪ জন। এর মধ্যে ডিএনসিসিতে ৪১টি এবং ডিএসসিসিতে ২৯টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন।

অন্যদিকে ডিএনসিসিতে ১৭ এবং ডিএসসিসিতে ১২ জন বিদ্রোহী আছেন বিএনপির।

গত শনিবার একটি সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ১০৩টি অভিযোগ পেয়েছেন রিটার্নিং অফিসাররা। এসব অভিযোগের বেশির ভাগই এসেছে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের কাছ থেকে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারে বাধা, অতিরিক্ত নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, মাইক ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় এসব অভিযোগ এসেছে। মেয়র পদপ্রার্থীদের অভিযোগ এসেছে শুধু বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের দাবি, বেশির ভাগ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। শুধু ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগগুলো পুলিশের কাছে পাঠানো হয়।

গত ১২ জানুয়ারি ওয়ারীতে ডিএসসিসির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মেহেরুন নেছার বাসা ও কার্যালয়ে হামলা হয়। মেহেরুন নেছা গত শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভোটের মাঠে নীরব সন্ত্রাস চলছে। প্রতিপক্ষ আমাকে ঠিকমতো প্রচার চালাতে দিচ্ছে না। আমার লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশকে হুমকির বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। ইসিতে দিয়েছি লিখিত অভিযোগ। তবে সন্ত্রাসী তৎপরতা চলছেই। এভাবে চলতে থাকলে ভোটের দিনও ব্যাপক হট্টগোল হতে পারে।’ তাঁর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ারী থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’

মেহেরুন নেছা বলেন, পুলিশ আশ্বাস দিলেও সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া। প্রতিপক্ষ প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষ কে, জানতে চাইলে মেহেরুন নেছা বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ মান্নাফী। তবে তাঁর অভিযোগ অস্বীকার করে মান্নাফী বলেছেন, ‘মেহেরুন নেছার অভিযোগ সত্য নয়। আমি বা আমার লোক কাউকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে না।’

মেহেরুন নেছার অভিযোগ এবং এলাকার সার্বিক পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মোবাইল ফোনে ও ভোটের মাঠে হুমকি পেয়ে মেহেরুন নেছা সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ মান্নাফীকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে।’

ডিএসসিসির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁকে প্রতিনিয়ত ফোনে হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ স ম ফেরদৌস আলমের লোকজন। এ বিষয়ে থানায় মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। তবে ফেরদৌস আলম বলেন, তিনি কাউকে কোনো হুমকি দেননি।

ডিএনসিসির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর মোল্লার বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আলী হোসেন। একই সিটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমান রাব্বীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে দলের বিদ্রোহী সৈয়দ একরাম হোসেনের বিরুদ্ধে। একই সিটির ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনির চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মুক্তার সরদারের লোকজন তাঁকে হুমকি দিয়ে প্রচার চালাতে দিচ্ছে না। তিনি অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে আছেন। ভোটের দিন তাঁর কর্মী-সমর্থকরা কেন্দ্রে যেতে পারবে কি না, এ শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। মনির চৌধুরী বলেন, তিনি পুলিশ ও ইসির কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল রবিবার ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করলেও মুক্তারের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

উত্তর সিটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পীর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এসেছে দলের সমর্থন পাওয়া প্রার্থী সালাউদ্দিন রবিনের লোকজনের বিরুদ্ধে।

ডিএনসিসির ২২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তারিকুল হক সজীব, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আলাউদ্দিন, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে বিল্লাল শাহ এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে দেলোয়ার হোসেন খান দলের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ করেছেন।

এমন অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ যাঁদের সতর্ক করেছে তাঁদের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও তাঁদের লোকজনই বেশি। মতিঝিল বিভাগের আটটি থানা এলাকার ১৭ জন, ওয়ারীর সাতটি থানা এলাকার ১৫ জন, রমনার ছয়টি থানা এলাকার ১৩ জন, মিরপুরের ছয়টি থানা এলাকার ১৪ জন, উত্তরার সাতটি থানা এলাকার ১৭ জন, লালবাগ এলাকার ১৪ জন এবং গুলশান এলাকার আটজনকে সতর্ক করা হয়েছে।

ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘প্রার্থীদের কোনো অভিযোগ থাকলে ইসিতে জানাচ্ছেন। পরে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর প্রচার ও নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটছে। গত শুক্রবার ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মো. সাইদুর রহমান রতনের নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর অভিযোগ, প্রচার চালাতে গেলে তাঁর কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেনের লোকজন ওই ঘটনায় জড়িত বলে রতন কালের কণ্ঠকে জানান।

একই সিটির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিল্লাল সরদারের ওপর এরই মধ্যে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেনের ক্যাডার হানিফ, জাহাঙ্গীরসহ আরো কয়েকজন তাঁর ওপর হামলা চালায়। তবে তাঁর অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিল্লালের লোকজন আমার লোকজনকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিচ্ছে। প্রচারে বের হলে আশপাশ থেকে হুমকি দিচ্ছে।’

গত বুধবার ডিএনসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বেরাইদে দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের ৯ জন আহত হয়েছে।

সম্প্রতি গাবতলীতে প্রচার চালাতে গেলে ডিএনসিসিতে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা হয়। ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়নি।

এরই মধ্যে ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসা মোমিনুল হক সাঈদের সমর্থনে তাঁর ক্যাডার বাহিনী এলাকায় মহড়া দিতে শুরু করেছে। ডিএসসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহাদত হোসেন সাধুর পক্ষেও অপরাধীদের তৎপরতা আছে। সাধু সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি ক্যাসিনোকাণ্ডের অন্যতম হোতা খালেদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী; যদিও সাধু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিঝিল, শাহজাহানপুর ও খিলগাঁওয়ের ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছেন ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত নাম সোহেল। তিনি কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন। সোহেল ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এ ছাড়া আরো শতাধিক স্থানীয় সন্ত্রাসী ভোটের মাঠে আছে। দেশে থাকা সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি বিদেশে এবং কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগীরাও তৎপর। তাদের মধ্যে আলোচিত বিদেশে থাকা জিসান এবং কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসসহ কয়েকজনের সহযোগীরা নির্বাচনের মাঠে রয়েছে।

ডিএমপির আটটি ক্রাইম জোনের ডিসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যত দিন যাচ্ছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনের মাঠ।

র‌্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, যেসব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী কাউন্সিলর পদপ্রার্থী রয়েছেন, সেখানে মূল প্রার্থীদের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে বড় রকমের দ্বন্দ্ব চলছে। এ কারণে এরই মধ্যে কোথাও কোথাও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই সব ওয়ার্ডে ভোটের দিন পর্যন্ত হামলা-সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে তারা। সে কারণে তারা নজরদারি বাড়িয়েছে।

ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সন্ত্রাসীচক্রের হাতে কী পরিমাণ অস্ত্র আছে তার খোঁজ চলছে। আগে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়নি সেগুলো উদ্ধার এবং যারা গ্রেপ্তার হয়নি তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল

সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।

সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।

এতে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এতে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে, যা জনগণ মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।

গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।

তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।

তিনি বলেন, বিষয়টি জাতীয় সমাবেশে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।

তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।

ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবেএলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।

সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।

সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।

এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলোঅবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন; জুলাই শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

মন্তব্য

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার  প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং সিনিয়র সহকারী  প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং  ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।

তাঁদের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।

তার মানে নভেম্বর পর্যন্ত যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁরা ভোটার হওয়ার সুযোগ পান না। বরং আগের বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে, তাঁরাই ভোটাধিকার পান।

ফয়েজ আহম্মদ বলেন, আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম  বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।

 

তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমনভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে। 

অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

প্রেস সচিব আরো বলেন, এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন। 

একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে দুজনকে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহত আরো তিনজন পুলিশ সদস্যকেও রাজারবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

যারা অন্যায় করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং হবে। কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

 

মন্তব্য

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।

তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা  বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।

২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়।  এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।

নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম যোগ্যতাগণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতাও অনেক সংস্থার ছিল না।

একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা,  প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল।  সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।

সে সময় নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা বাড়াতে দ্বিতীয়বার আবেদন আহবান করে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন  নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল  সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও  ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।

এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। নতুন নীতিমালায়  নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও এর সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক সংস্থার  নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। ওই সময় প্রথমবারের মতো ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ