<p>যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল আলমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। তাঁর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে চলার অভিযোগ উঠেছে। শফিকুল আলমের ঔদ্ধত্য হাইকোর্টের নজরে আনা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। তাই আগামী ২৯ জানুয়ারি তাঁকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করার ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের  পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত ব্যানার্জি ও এ আর এম কামরুজ্জামান কাকন।</p> <p>আদালতের আদেশের পর ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন জানান, ব্যাংকের সব নিয়ম অনুসরণ করে আবেদন করা হলেও টাকা দিচ্ছে না যমুনা ব্যাংক। এরপর গ্রাহক হাইকোর্টে মামলা করলে আদালত টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের এই আদেশের পর তারা (যমুনা ব্যাংক) আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগ তাদের আবেদন খারিজ করে দেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের পরও তারা টাকা দিচ্ছে না। এটা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়েছে।</p> <p>ঘটনার বিবরণী থেকে জানা যায়, তালেবুন নূর নামের একজন ব্যবসায়ী ২০০৫ সালের ৫ মার্চ যমুনা ব্যাংকে ৫১ লাখ টাকার একটি এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) অ্যাকাউন্ট করেন। পরে তালেবুন নূর ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, তাঁর ব্যাবসায়িক বন্ধু এ আই এম হাসানুল মুজিব ওই অ্যাকাউন্টের টাকা পাবেন। যমুনা ব্যাংক তালেবুন নূরের স্বাক্ষরের সত্যতা শনাক্ত করে ২০১১ সালে। এরপর এফডিআরের টাকা উত্তোলনের জন্য হাসানুল মুজিব আবেদন জানালেও যমুনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি। একই বছরের ৩ জুলাই হাসানুল মুজিব বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেও প্রতিকার না পেয়ে ২০১৬ সালে টাকা উত্তোলনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। শুনানির পর ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ৩০ দিনের মধ্যে টাকা দিতে যমুনা ব্যাংককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর এ আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন ও যমুনা ব্যাংক আপিল করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। এর পরও টাকা না দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। এ মামলায় যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলব করলেন হাইকোর্ট।</p> <p>ব্যাংক খাতে বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণে জালিয়াতিতেও উঠে এসেছে যমুনা ব্যাংকের নাম। ব্যাংকিং খাতে আলোচিত কয়েকটি বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির মধ্যে রয়েছে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি। বিসমিল্লাহ গ্রুপ যে পাঁচটি ব্যাংকে জালিয়াতি করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যমুনা ব্যাংক। তারা এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এর মধ্যে যমুনা ব্যাংক থেকে নিয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার মধ্যেই শফিকুল আলম যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন। দেশি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে অস্বাভাবিক অঙ্কের বেতনধারীদের মধ্যেও তাঁর নাম রয়েছে। বছরে তিনি এক কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকারও বেশি বেতন-ভাতা পান বলে জানা যায়। তিনি ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যমুনা ব্যাংকে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ইউসিবিএলের অতিরিক্ত এমডি ছিলেন।</p>