<p>পার পাচ্ছে না মাদক কারবারিরা। মাদক কারবারিদের এত দিন গ্রেপ্তার এবং শাস্তি দেওয়া হলেও এবার মাদকের টাকায় গড়ে তোলা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। এর জন্য নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে মাদক কারবারিদের তালিকা। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তিন ক্যাটাগরিতে থাকছে এই মাদক কারবারিদের নাম। ক্যাটাগরি অনুসারেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গত নভেম্বর থেকে এই তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। শুধু মাদক কারবারি নয়, যারা সেবন করে তাদেরও আনা হচ্ছে তালিকায়। এই তালিকা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও উপজেলা প্রশাসনকে। তালিকাভুক্ত মাদকাসক্তদের নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে আসক্তি থেকে মুক্ত করার বিষয়েও কাজ করছে সরকার। মাদক নিয়ন্ত্রণে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে সরকার। ওই প্ল্যানের অংশ হিসেবে দেশের আটটি বিভাগের ১১টি উপজেলাকে মাদকমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> <p>স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। সেই প্ল্যান অনুযায়ী বর্তমানে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন করে মাদক কারবারিদের তালিকা করা হচ্ছে। এই তালিকা প্রণয়নে গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও পুলিশ, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। যেসব মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ পক্রিয়ায় রয়েছে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে আদালত নির্দেশনা দেবেন।</p> <p>এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতিকুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদকের আগ্রাসন রোধে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।’ তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তালিকাও করা হচ্ছে।’</p> <p>স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অ্যাকশন প্ল্যানের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত পথে যাবতীয় মাদকদ্রব্যের অবৈধ প্রবেশ ও পাচার বন্ধ। দেশের অভ্যন্তরে যাবতীয় মাদকের অবৈধ উৎপাদন, সরবরাহ ও সহজলভ্য বিলোপ করা। মাদক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ, তাদের মদদদাতা, সাহায্যকারী ও অর্থলগ্নিকারীদের গ্রেপ্তার, যথাযথ তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা। মাদক কারবারিদের যাবতীয় অর্থ-সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা। মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ (২০১৫ সালে সংশোধিত) প্রয়োগ নিশ্চিত করা। ওষুধ উৎপাদন, চিকিৎসা ও শিল্প-কারখানা, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত কেমিক্যাল ও মাদক জাতীয় কাঁচামাল যাতে কালোবাজারে পাচার হয়ে মাদক উৎপাদনে অপব্যবহার না হয় সেটি নিশ্চিত করা। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।</p> <p>মাদক কারবারিদের সম্পদ কিভাবে বাজেয়াপ্ত করা হবে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব আতিকুল হক বলেন, ‘নতুন মাদক আইনে বিষয়টি রয়েছে। আইন অনুযায়ীই সেটি করা হবে।’</p> <p>নতুন আইনের ৩৪ এর ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধের জন্য দায়েরকৃত কোনো মামলা চলাকালীন অভিযোগকারী যদি এই মর্মে আবেদন করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির মাদকদ্রব্য অপরাধ প্রমাণিত হইলে তাহার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিবার প্রয়োজন হইবে এবং সেই কারণে তাহার সম্পত্তির বিক্রয়, বন্ধক, হস্তান্তর অথবা অন্য কোনো প্রকার লেনদেন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করিবার আদেশ প্রদান প্রয়োজন, তাহা হইলে ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষকে যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ দান করিয়া, প্রয়োজনবোধে, অনুরূপ আদেশ প্রদান করিবে।’</p> <p>যেভাবে তালিকা করা হচ্ছে : ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তরফ থেকে বছর দুয়েক আগে পাঁচটি সংস্থা কারবারিদের তালিকা তৈরি করেছিল। সেই তালিকায় যেসব মাদক কারবারির নাম ছিল তাদেরকে নিয়ে একটি আলাদা তালিকা করা হয়। সেই তালিকার অনেকেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। অনেকে আবার রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেউ কেউ পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। সব মিলিয়ে এসব মাদক কারবারির মধ্যে কে কোথায় আছে, নতুন কেউ এই কারবারে যোগ দিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে নতুন তালিকা শুরু হয়েছে।</p> <p>স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর একযোগে জেলা-উপজেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করবে। তালিকাভুক্ত সব মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযান পরিচালনার সময় কোনো কর্মকর্তার পারফরম্যান্স খারাপ হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নতুন তালিকার মধ্যে একই ব্যক্তির নাম প্রতিটি তালিকায় থাকলে তাকে ‘এ’ ক্যাটাগরি, দুটি তালিকায় থাকলে ‘বি’ ক্যাটাগরি আর অন্যদের ‘সি’ ক্যাটাগরির মাদক কারবারি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। মাদক কারবারিদের তালিকা তিন মাস অন্তর হালনাগাদ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>মাদকমুক্ত উপজেলা ঘোষণার উদ্যোগ : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের অ্যাকশন প্ল্যানে মাদকমুক্ত উপজেলা ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এর জন্য দেশের আটটি বিভাগের ১১টি উপজেলাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এই উপজেলাগুলো হলো ঢাকা বিভাগের নবাবগঞ্জ উপজেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা, রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও সদর, খুলনা বিভাগের নড়াইল সদর, কালিয়া, লোহাগড়া ও নড়াগাতি উপজেলা, সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলা, রাজশাহীর মোহনপুর, বরিশালের ঝালকাঠি সদর এবং ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুরের নকলা উপজেলা।</p> <p>এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতিকুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের প্রতিটি বিভাগের একটি করে উপজেলা ও খুলনা বিভাগের নড়াইল জেলাকে মাদকমুক্ত ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।</p> <p> </p> <p> </p>