পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়াল জলবায়ু তহবিলের টাকায় এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করেছেন মা-বাবার নামে। ঝালকাঠিতে এই তহবিলের টাকায় স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও গভীর নলকূপ পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা, কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, বিত্তশালী থেকে বীমা কম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের পৌর মেয়র ছালেক মিয়া ‘ওপর মহল’কে হাত করে আগের দুই কোটি টাকার সঙ্গে জলবায়ু তহবিল থেকে সম্প্রতি আরো সাত কোটি টাকা অনুমোদন বাগিয়ে নিয়েছেন। এই তহবিলেরই টাকায় গাজীপুরের সাফারি পার্কের জন্য দুটি মিনিবাস কেনা হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ টাকায়।
জলবায়ু তহবিলের টাকা অপাত্রে
- ঝুঁকিগ্রস্তরা ধরনা দিয়েও পায় না
আরিফুর রহমান

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম শীর্ষে থাকায় বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সরকার ২০১০ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) গঠন করে। এ তহবিলের টাকায় দেশে এখন ৪৫০টি প্রকল্প চলমান।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্যতম ঝুঁকিতে থাকা জেলা বরগুনার বেতাগী পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির জলবায়ু তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত এক পয়সাও পাননি। সচিবালয় থেকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, সেখান থেকে মহাখালীতে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড অফিস—ঘুরে ঘুরে জুতার তলা ক্ষয় করলেও লাভ হয়নি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পানির অভাবে বিস্তৃত জমি পড়ে আছে। বোরো চাষ করা যাচ্ছে না। সেখানেও জলবায়ু তহবিলের টাকা পৌঁছেনি। উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর, খুলনা জেলাও জলবায়ু তহবিলের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাটে এক থেকে দুটি করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্মের সময় ওই সব জেলায় পানির জন্য হাহাকার থাকে। অথচ যেসব জেলা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কোনো ঝুঁকিতে নেই, প্রভাব আর ক্ষমতার কারণে সেসব জেলায় প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মানুষ শেষ বন্যা দেখেছে ১৯৯১ সালে; তা-ও এক দিনের জন্য। পাহাড়ি বনাঞ্চলে আবৃত কমলগঞ্জ সমতল থেকে বেশ উঁচুতে আছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গত দুই দশকে কমলগঞ্জে বন্যার রেকর্ড নেই। এসব রেকর্ডকে আমলে না নিয়ে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপে গত বছর জুনে জলবায়ু তহবিল (বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড-বিসিসিটি) থেকে চার কোটি টাকা ব্যয়ে তিন হাজার ৬৯০ বর্গফুট আয়তনের আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টি বোর্ড। ওই একই ব্যক্তির প্রভাবে জলবায়ু তহবিলের টাকায় কমলগঞ্জ পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়নে আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। তেমন ঝুঁকিতে না থাকলে পাশের জেলা হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের পৌর মেয়র ছালেক মিয়া প্রথমে তহবিল থেকে দুই কোটি টাকা পান রাস্তা ও নালা নির্মাণের জন্য, তহবিল থেকে তিনি সম্প্রতি আরো সাত কোটি টাকা অনুমোদন পেয়েছেন।
এদিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে জহুরা একরাম কওমি মাদরাসায় তহবিলের টাকায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে এমপির মা-বাবার নামে। মাদরাসার প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘পুকুর ভরাট করে সাইক্লোন শেল্টার করায় শেল্টারের ভেতরে গোসলখানা করতে আমি বেশ কয়েকবার অনুরোধ করি। লাভ হয়নি।’ তবে যদিও এমপি এ কে এম আউয়াল কালের কণ্ঠকে দাবি করেন, ‘মাদরাসার জায়গার পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত জায়গায় সাইক্লোন শেল্টার করা হয়েছে। পুকুর থাকার প্রশ্নই ওঠে না। শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই খালে অজু-গোসল করে আসছে।’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, পিরোজপুরে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা আছে, যেখানে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ জরুরি; কিন্তু এমপি নিজ এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করেছেন।
ঝালকাঠি জেলা সদরের দুস্থ জনগণের জন্য ৩৯০টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও ২৯৫টি গভীর নলকূপ বিতরণের কথা থাকলেও বেশির ভাগই বসেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাড়ির উঠোনে। তাঁদের মধ্যে আছেন, ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিঠু, ভাণ্ডারিয়া সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরীফ মোহাম্মদ কাইয়ুম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোবারক হোসেন মল্লিক, বিত্তশালী জাহানারা বেগমসহ অন্যরা। জেলা পরিষদের নথিতে তাঁদের নাম রয়েছে, প্রতিবেদক ছাত্রলীগ নেতা মিঠুর বাড়িতে গিয়েও প্রকল্পের নলকূপ দেখতে পেয়েছেন। নলকূপ বসানোর নামে ‘বাণিজ্য করার’ অভিযোগ উঠেছে মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের বরিশাল ও ঝালকাঠি এরিয়া ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। হীরা আক্তার নামের একজন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নলকূপ বসানোর কথা বলে আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন আনোয়ার। পরে দেখি সে নলকূপ সরকারিভাবে দেওয়া। নলকূপ থেকে পানিও ওঠে না।’ তবে আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টাকা নেওয়া হয়েছে সংযোগের পাইপ কেনার জন্য। সে টাকা আমি নিইনি’। ঝালকাঠির ভৈরবপাশা ইউনিয়নের দাপঢ় গ্রামে গিয়ে প্রতিবেদক দেখেন, ময়লা-আবর্জনায় দুটি ল্যাট্রিন অব্যবহৃত পড়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম ও নূর আলী বলেন, কাছে পানি আছে এমন জায়গায় না বসানোয় এ অবস্থা হয়েছে।
জলবায়ু তহবিলের টাকায় গাজীপুরের সাফারি পার্কের জন্য এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছে দুটি মিনিবাস। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মিনিবাসের সম্পর্ক না থাকলেও প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। যদিও মিনিবাস না কিনতে আপত্তি ছিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটির একাধিক সদস্যের, তারা বলেছিলেন বন বিভাগের অর্থে এই বাস কিনতে। আরো অনেক জেলায় তহবিলের টাকায় চলছে ‘ঠিকাদার বাণিজ্য’।
সিলেট শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে সুরমা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চর খনন করতে নেওয়া একটি প্রকল্পের কাজ পান ঠিকাদার মহিউদ্দিন আহমেদ। তাঁর কাছ থেকে কাজটি টাকার বিনিময়ে বাগিয়ে নেন বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার হাসান মুরাদ রুমি। তিনি নদীর মাঝখান থেকে মাটি তুলে নদীর আরেক পাশেই রাখছেন। ফলে আসন্ন বর্ষায় সব মাটি আবার নদীতে মিশে ফের চর জাগতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলামসহ অন্যদের আশঙ্কা। তবে হাসান মুরাদ রুমি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আপনি যখন ভাত খান, দু-একটা ভাত কিন্তু বাইরেও পড়ে। এখানেও সে রকম অবস্থা। কিছু মাটি নদীতে পড়ে যাচ্ছে। তবে আসছে বর্ষার আগেই নদী খনন করে মাটি অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হবে।’
সিলেট সদর উপজেলার লামাকাজী, শেখপাড়া ও আকিলপুর স্থানে সুরমা নদী ভাঙনরোধে এ তহবিলের টাকায় ব্লক দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে ছয় মাস আগে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্লক এখনই ভেঙে পড়েছে। নদীর তলদেশে পাথর দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। কিছু পাথর নদীর পাড়ে পড়ে আছে। অথচ বিল ঠিকই তুলে নেওয়া হয়েছে। নদীর তীরে ভাঙনকবলিত স্থানে থাকা ১০টি পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দা খেসমালা, সুজন আহমেদ, মোজাম্মেল আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁরা ঠিকাদারকে বলেছিলেন মাটি ও পাথর ভালোভাবে দেওয়ার জন্য। না দেওয়ায় অল্প কিছুদিনে সব ব্লক ভেঙে পড়ছে। জানা যায়, ব্লক ও পাথর দেওয়ার কাজটি পান ঠিকাদার তৈমুর আলম, তাঁর কাছ থেকে কাজটি বাগিয়ে নেন স্থানীয় চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন।
জলবায়ু তহবিলের টাকা দিয়ে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌরসভায় একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয় মাত্র ছয় মাস আগে। দুই কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রথী ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু কাজটি নিয়ে নেন সেলিম ও লুবন নামের দুই ঠিকাদার। সেলিম ও লুবন লাভের ১০ শতাংশ টাকা মূল ঠািকাদারকে পরিশোধ করে নিজেরা কাজটি করছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ছয় মাস না যেতেই সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিমেন্ট উঠে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসিন আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনভিজ্ঞ ঠিকাদার দিয়ে কাজ করালে ও সিমেন্ট কম দিলে যা হয়।’
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার মকবুল আলী সড়ক, গোপাল নগর সড়ক ও চণ্ডীপুর সড়কের কাজ চলছে জলবায়ু তহবিলের টাকায়, তাও যেনতেনভাবে। ঠিকাদার জাকির হোসেন এন্টারপ্রাইজ। পৌর মেয়র জুয়েল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগে দুইবার কাজ বন্ধ করেছি। পরে ঠিকাদারের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে কাজ শুরু করিয়েছি।’
জলবায়ু তহবিলের টাকায় বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বদলপাড়া ও বলইকাঠি বাজার এবং তত্সংলগ্ন এলাকা রাঙামাটি নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় নেওয়া একটি প্রকল্পের আওতায় ব্লক তৈরির কাজে ব্যবহৃত পাথরের সাইজ ২৫ এমএমের পরিবর্তে গুঁড়া পাথর দেওয়া হয়েছে। এতে করে ব্লকের দৃঢ়তা, কার্যকারিতা দ্রুত হারানোর আশঙ্কা স্থানীয়দের। তাদের মতে, প্রকল্পটি টেকসই হবে না। স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাথর দেওয়ার কথা থাকলেও, তা দেওয়া হয়নি। এতে আবার নদীভাঙন শুরু হবে।
তহবিলের টাকায় ঝালকাঠি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ পায় প্রিন্স অ্যান্ড কম্পানি, সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ এবং আরাফাত ট্রেডার্স। কিন্তু কাজ জোর করে নিয়ে মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদারের ঘনিষ্ঠরা বাস্তবায়ন করছে এবং তা যাচ্ছেতাইভাবে। অনেক স্থানে ড্রেনে স্ল্যাব দেওয়া হয়নি বলে ফের ভরে যাচ্ছে। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, কাজের মান নিয়ে তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব দীপক কান্তি পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জলবায়ু তহবিলের টাকায় অনেক ভালো কাজ হয়। সেগুলোর তেমন প্রচার-প্রচারণা হয় না। তবে জনবল বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনাধীন।’
অপ্রয়োজনীয় স্থানে তহবিলের টাকা যাচ্ছে স্বীকার করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তহবিলের টাকা নেওয়া উচিত গবেষণার কাজে, সোলার প্যানেল বসাতে, বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে। কিন্তু এখন নেওয়া হচ্ছে রাস্তাঘাট ও ড্রেন নির্মাণে। এসব কাজের জন্য তো এলজিইডি আছে। আমি চেষ্টা করছি এসব পরিবর্তনের।’ মন্ত্রী বলেন, ‘তহবিলের টাকায় মাঠপর্যায়ে অনিয়মের কথা আমিও শুনেছি। এটা আমাদের সামাজিক সমস্যা।’ অভিযুক্তরা পার পাবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আই ডোন্ট কেয়ার। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জলবায়ু তহবিল নিয়ে যেভাবে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, তাতে উন্নত দেশগুলো আমাদের ওপর আস্থা হারাবে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবির স্থানটি দুর্বল হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে এবং ঝুঁকিতে থাকা মানুষের বদলে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
জার্মান ওয়াচের সব শেষ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ষষ্ঠ। ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার ২০১০ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) গঠন করে। জাতীয় বাজেট থেকে গত আট অর্থবছরে এই তহবিলে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।