প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন উপলক্ষে গতকাল সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
ক্ষুব্ধ ছাত্রদল ও বিএনপিকর্মীরা বিকেল ৩টার দিকে মিলনায়তনের মূল ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সাড়ে ৪টার দিকে সভাস্থলে আসেন খালেদা জিয়া। তখন নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকে। খালেদা জিয়া তাঁর গাড়িতে বসে প্রায় ৬০ মিনিট অপেক্ষা করেন। বিএনপির এক নেতা বিকেল সোয়া ৫টার দিকে মাইকে ঘোষণা করেন, কর্তৃপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্মানে মিলনায়তনের তালা খুলে দিয়েছে। এরপর খালেদা জিয়া আলোচনাসভার মঞ্চে যোগ দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তাদের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। আজকে পার্লামেন্ট বলে কিছুই নেই। হাসিনারা ক্ষমতায় থাকার জন্য পার্লামেন্ট রেখে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করেছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এঁরা কেউ ভোটই পাননি। এঁরা পার্লামেন্টের মেম্বার থাকার যোগ্য নন। কাজেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে।’
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন, আমাদের লোকজন ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর নির্বাচন ঘোষণা করবেন, সেটা আর হবে না। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন আর হবে না। এই দেশে নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। আজ দেশ এক ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী চলছে। আসলে কিছু চলছে না। দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। সব কিছু অচল হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এ জন্য দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছিল। যে অত্যাচার পাকিস্তানিরা করেছে, তার চেয়ে বেশি গুণ অত্যাচার করছে এই সরকার।’ সদ্য পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘অস্ত্রের মুখে’ পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মতলবটা তাদের ভালো নয়। মওদুদ সাহেব (মওদুদ আহমদ) বলেছেন এক দিনও নাকি ওই পদ খালি রাখা যায় না। কাজেই আমরা বলতে চাই, শেখ হাসিনা যা চাইবে সেটা না করলে তাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে, তার নামে মামলা হবে, তাকে জেলে যেতে হবে, অত্যাচারিত হতে হবে। এটি এ দেশে আর চলতে দেওয়া যায় না।’
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ঐক্য, ঈমান ও শৃঙ্খলা—এই তিনটি জিনিস তোমাদের মধ্যে থাকতে হবে। তোমাদের আরো সুশৃঙ্খল হতে হবে।’
দেশে ‘জঙ্গি উত্থানের’ জন্যও আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করেন খালেদা জিয়া। বলেন, ‘নিজেরা বোমা রাখে, অস্ত্র রাখে। তারপর যাকে ইচ্ছা তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। জঙ্গি সৃষ্টি আওয়ামী লীগ করেছিল। শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই সব তাদের জ্ঞাতি-গোষ্ঠী। কথায় কথায় কিছু হলে তারা জঙ্গির ভয় দেখায়।’
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখন তারা পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে এই সেতু হবে না। যদি জোড়াতালি দিয়ে বানায় সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না। অনেক রিস্ক আছে।’
ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, হাবিবুর রশীদ হাবিব, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, শিরিন সুলতানা, রেহানা আখতার রানু, শাম্মী আখতার প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের অনুষ্ঠানের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাত্রদলের অনুষ্ঠানের জন্য আগেই মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে তা ডাহা মিথ্যা। পার্শ্ববর্তী সুপ্রিম কোর্টে একই দিন রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান থাকায় আমরা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের অনুষ্ঠানের কোনো অনুমতি দিইনি। এখন বিএনপি তাদের স্বভাবসুলভ মিথ্যাচার করছে।’