দেশে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া মানুষের আনুপাতিক হার বেড়ে যাওয়ার তথ্য মিলছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকেই। আইইডিসিআরের গবেষণাগারে পরীক্ষা করা সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, ৬৫৬টি নমুনার মধ্যে ৫২৬টিতেই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এসব নমুনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আইইডিসিআরের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
এ ছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের চলমান ফোনকল সার্ভেইল্যান্সের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, চার হাজার মানুষের মধ্যে ৩৫৭ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত বলে তথ্য পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
তবে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কালের কণ্ঠকে বলেন, আনুপাতিক হারে বা শতকরা এই হিসাব করা যুক্তিযুক্ত হবে না। কারণ এটা মোটেই সারা দেশের বা পুরো ঢাকার আনুষ্ঠানিক কোনো চিত্র নয়। এটা কেবলই আইইডিসিআরের কার্যালয়ের রুটিন কার্যক্রমের অংশ।
তবে আইইডিসিআরের আরেক সূত্র জানায়, সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ প্রটেকশন ইউনিটের সহায়তায় ২০১৩ সালের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর সূত্রাপুর, ধানমণ্ডি, মতিঝিল ও মহাখালী এলাকার প্রতি ১০ বাড়ি থেকে একজন করে মোট ৬২১ ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৬০১ জনের নমুনা পরীক্ষাযোগ্য ছিল। ওই সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে, ৬০১ জনের মধ্যে ৩৩ শতাংশ বা ২০৭ জনের রক্তেই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শনাক্ত হয়, যা মোট নমুনার ৩৩ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৬ জন একাধিকবার এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
আইইডিসিআরের গবেষকরা জানান, ২০০৫ সালে ভারতে চিকুনগুনিয়ার ব্যাপক প্রকোপ দেখা দিলে বাংলাদেশে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। তখন দেশে এর কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। দেশে চিকুনগুনিয়ার প্রথম রোগী ধরা পড়ে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। পরে ২০১১ সালে আবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঢাকার দোহারে এর প্রকোপ দেখা দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে ২৪৫ জনের রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৫২ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৩১ জনের রক্তে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস পাওয়া যায়। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে ১২ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ওই সময় তিনজন রোগীর দেহে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে চিকুনগুনিয়ার সঠিক পরীক্ষা করার মতো ব্যবস্থা কেবল সরকারের আইইডিসিআর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এর বাইরে আর কোথাও এমন প্রযুক্তি নেই।