জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সহকারী পরিচালক শাহ আলম ২০১২ সালে এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। অন্যান্য আরো কাজের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধানের (স্বীকৃতি দেওয়া, তথ্য যাচাই-বাছাই) জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেওয়ার এক বছরের মধ্যেই তিনি তাঁর বাবা মোসলেহ উদ্দিন ও শ্বশুর বজলে কাদিরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করে ফেলেন। এরপর নিজের শ্যালিকা খালেদা খাতুনকে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় ওই দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। শাহ আলম নিজে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরি নেননি।
জাল সনদের হাজার হাজার ‘মুক্তিযোদ্ধা’
আজিজুল পারভেজ

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বড়ধুশিয়া গ্রামের মো. আবদুল মজিদ সরকারের ছেলে মো. আবু ছাঈদ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিবার্তার লাল বই তালিকায় তাঁর নামটি অন্তর্ভুক্ত হলেও একটি মুদ্রণত্রুটি ঘটে। ছাঈদের বানানে ‘ঈ’-এর পরিবর্তে ‘মা’ বসে যাওয়ার কারণে নামটি হয়ে যায় মো. আবু ছামাদ সরকার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের কলা অনুষদের বিভাগভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় মানবিক শাখায় পরীক্ষা দিয়ে ২০তম স্থান লাভ করে এক শিক্ষার্থী। কিন্তু ওই শাখায় আসন কম থাকায় ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হয় সে।
মুক্তিযুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি, সনদ পাওয়া, গেজেটভুক্ত হওয়া এবং এ বিষয়ক কাগজপত্র সংগ্রহ করে ফেলা কোনো কষ্টসাধ্য ব্যাপার না। লোক ধরে টাকা ব্যয় করলেই তা মিলছে। এই সুযোগে কেবল মুক্তিযুদ্ধ না করা ব্যক্তিরাই যে মুক্তিযোদ্ধা বনে যাচ্ছেন তা-ই নয়, রাজাকার যুদ্ধাপরাধীরাও মুক্তিযোদ্ধা বনে যাচ্ছেন। এভাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জাল সনদে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। জাল সনদের জন্য সারা দেশেই গড়ে উঠেছে একটি জালিয়াতচক্র। জাল সনদ নিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লেও জালিয়াতচক্রকে শনাক্তের কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানো এবং জাল সনদের জন্য বেশ কিছু চক্র গড়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিভিন্ন ইউনিটের কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মূলত এসব চক্র গড়ে উঠেছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স দুই বছর বাড়ানো, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনির জন্য নির্ধারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির প্রবণতা বেড়ে গেছে।
শিক্ষক গবেষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনের মতে, সুযোগ-সুবিধার লোভেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হচ্ছে। এটা বন্ধ করা উচিত। পৃথিবীর কোনো দেশেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান থেকে নাতি-নাতনি পর্যন্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অংশ যুদ্ধ শেষে যার যার অবস্থানে ফিরে গেছে। অনেকে সনদ পর্যন্ত নেননি। কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও সনদ সংগ্রহ করে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি এখন আর স্পর্শকাতর নয়, মুক্তিযোদ্ধারা এখন বয়সে বৃদ্ধ, অবসরে আছেন, অনেকে মারাও গেছেন। সুযোগ-সুবিধাটা তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। তা ছাড়া, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকারের বিনিময়ে কিছু চাইতে পারেন না।
দেশে বর্তমানে দুই লাখের ওপর সনদ ও গেজেটধারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এঁদের মধ্যে কম করে হলেও ৫০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান জানিয়েছেন, বিএনপি সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধার যে সনদ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৪০ হাজারের ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে।
ভুয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা : স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও সব মুক্তিযোদ্ধার হাতে পৌঁছায়নি সনদ। এখনো দেওয়া শেষ হয়নি সাময়িক সনদ। আট ধরনের নিরাপত্তাবিশিষ্ট স্থায়ী সনদ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত না করে এই সনদ বিতরণ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ না করেও সনদ সংগ্রহের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সাজার প্রবণতা স্বাধীনতার পরপরই শুরু হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। গোড়াতেই দেখা দেয় গলদ। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর রাবার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে দেওয়া স্বাক্ষরে দেশরক্ষা বিভাগের ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র’ বানানো হয়। সেসব তৎকালীন জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সনদ বিতরণের সময় ওই সনদে শুধু নাম-ঠিকানা বসিয়ে দেওয়া হতো। ওই তালিকায় কোনো স্মারক নম্বর ছিল না। কাকে দেওয়া হচ্ছে তাও লিপিবদ্ধ করা হতো না। যাচাই-বাছাইয়েরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে বা প্রভাব খাটিয়ে অনেক অমুক্তিযোদ্ধাও সে সময় সনদ বগলদাবা করে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের ধারণা, ওই সময় প্রায় তিন লাখের বেশি সনদ বিতরণ করা হয়। কিন্তু তখনো মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো তালিকা করা হয়নি। এ ছাড়া যুদ্ধকালীন কমান্ডাররাও তখন মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ দিয়েছেন। আবার অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সে সময় কোনো সনদই গ্রহণ করেননি।
ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদ দিয়ে চাকরিক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার ৩০ ভাগ কোটায় চাকরি মিলেছে। কিন্তু এই সনদ ফটোকপি ও কম্পিউটার প্রযুক্তিতে জাল ও নকল হওয়ার মাধ্যমে এতই ছড়িয়ে পড়েছে যে বর্তমানে এই সনদটির কোনোই গুরুত্ব নেই। কারণ এ সনদ আর কোথাও কাজে লাগছে না।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এক লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশের পর ‘লাল বই’ তালিকা অনুসারে সনদ প্রদান করে। চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এবং উপদেষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিস্বাক্ষরিত এই সনদটি বামুস (বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ) সনদ হিসেবে পরিচিত। আহাদ চৌধুরী জানান, এই লাল বইয়ের তালিকার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে বিদেশ থেকে ‘সিকিউরিটি পেপার’ এনে মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ প্রদান করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দখল করে নিলে এই সনদ বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় পর্যন্ত ৭০ হাজারের মতো সনদ বিতরণ হয় বলে তিনি জানান। আহাদ চৌধুরী জানান, ‘লাল বই’তে নেই এমন ব্যক্তিও এই বামুস সনদ পেয়েছেন। কারণ লাল বই প্রকাশের পরও সেখানে নাম নেই এমন অনেকে আপিল করে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন।
২০০১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর থেকে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের স্বাক্ষরে দেওয়া হচ্ছে ‘সাময়িক সনদপত্র’। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২০০১-২০০৬ সময়কালে তৎকালীন জাতীয় কমিটি অনুমোদিত দুই লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জনের অধিকাংশ সাময়িক সনদ নিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা, নমুনাচিত্র কুমিল্লার মুরাদনগর : ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে দেশের ৪৯০টি উপজেলার মধ্যে একটি কুমিল্লার মুরাদনগরে খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে ভয়াবহ চিত্র। জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকায় এই উপজেলার ২৫০ জনের নাম থাকলেও বর্তমানে গেজেট ও সনদভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬৬ জন। এর মধ্যে সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন ৯১৩ জন। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন আরো প্রায় ৪০০ জন।
জানা যায়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হিসেবে ১৯৭২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী কমান্ডার মো. খোরশেদ আলম (প্রয়াত) সামান্য অর্থের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ না করা ব্যক্তিদের, এমনকি দালাল আইনে গ্রেপ্তার হওয়া রাজাকারকেও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন।
কমান্ডার মো. খোরশেদ আলম নিজের দুই ভগ্নিপতিকেও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। এর মধ্যে একজন বর্তমান উপজেলা কমান্ডার হারুনুর রশীদ। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন বলে জানা গেছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান ডেপুটি কমান্ডার খলিলুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি নিজে সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করলেও তাঁর নাম সেনা গেজেটে নেই বলে জানা গেছে। তদন্তের জন্য দুদকে আসা অভিযোগ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
এই উপজেলার দায়রা ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে মো. জব্বর আলী ওরফে রুক্কু মিয়া দালাল আইনে (মামলা নং-১২/৭২) গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সাধারণ ক্ষমার সুযোগে ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ১৯৯৬ সালে মুক্তিবার্তার লাল বইতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন খোরশেদ আলমের যোগসাজশে।
মুরাদনগর উপজেলার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম। এই উপজেলার প্রায় দুই শ ব্যক্তিকে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তিনি জানান, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার কাছে যুদ্ধের পরের অস্ত্র জমা দেওয়ার রসিদ, ফ্রিডম ফাইটার সনদ, প্রধান সেনাপতি ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদ থাকতে হয়। কিন্তু এসব কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও শুধু মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. খোরশেদ আলমের দেওয়া সনদেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন যাঁরা তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
সহজলভ্য জাল সনদ : সাময়িক সনদ উত্তোলনের জন্য নির্দিষ্ট ফরমে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে লোকবল সংকটের অজুহাতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই সনদ প্রাপ্তি দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ে। ফলে এই সনদও জাল ও নকল হয়ে হাতে হাতে চলে গেছে।
গত ২২ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও সচিবের স্বাক্ষর জাল করা সাময়িক সনদসহ হাতেনাতে ধরা পড়েন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মো. হাফিজ উদ্দিন। তাঁর বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকইল উপজেলার চপরা গ্রামে। তাঁর কাছে প্রধানমন্ত্রী প্রতিস্বাক্ষরিত বামুস সনদটিও ছিল নকল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের জেরার মুখে তিনি জানান, সাময়িক সনদটি তিনি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী নেজামউদ্দিনের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সংগ্রহ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের (প্রধানমন্ত্রী প্রতিস্বাক্ষরিত) সনদটি সংগ্রহ করেছেন ৩০ হাজার টাকা দিয়ে। নিজ গ্রামের সহযোগী হাবিবুর রহমান (তিনিও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তাঁর ভাতা বন্ধ করা হয়েছে) এনামুল হক নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সেটি সংগ্রহ করে দিয়েছেন। জাল সনদ জমা দিয়ে ২০১১ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা ভোগ করে আসছেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মো. হাফিজ উদ্দিন। আনসার গেজেটে বাবার নাম ও ঠিকানা ভুল হয়েছে দাবি করে তিনি সম্প্রতি তা সংশোধনের আবেদন করলে তাঁকে শুনানির জন্য ডাকা হয়। তখন তাঁর জাল সনদ ধরা পড়লে মন্ত্রী তাঁকে তাত্ক্ষণিকভাবে জেলে পাঠান।
এর আগে গত ২৬ জুলাই জাল সনদসহ আরেকজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে জেলে পাঠান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। বাগেরহাটের নওয়াপাড়ার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন ভাতা পাওয়ার জন্য মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়ে একটি ফাইল জমা দেন। মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত বামুস সনদকে চ্যালেঞ্জ করে কোথায় তিনি যুদ্ধ করেছেন, কার সঙ্গে, কত নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন এসব প্রশ্ন করলে সঠিক জবাব দিতে না পারায় তাঁকে জেলে পাঠান।
বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, যাঁরা একাধিক সাময়িক সনদ সংগ্রহ করেছেন। আবার অনেকে মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ সংগ্রহ করতে এসে টাকা দিয়ে ভুয়া সনদ নিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার একজন মুক্তিযোদ্ধা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। দীর্ঘসূত্রতায় ব্যাপক সময় লাগে এটা জানার পর তাঁরা চার-পাঁচ বছর আগে কয়েকজন মিলে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ঢাকায় পাঠান। তিনি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে সাত হাজার টাকা করে দাবি করে। সে মতো টাকা দিয়ে সনদ সংগ্রহ করেন তাঁরা। পরে দেখা যায় ওই সনদ জাল।
আসল সনদে আগ্রহ নেই : অনেক মুক্তিযোদ্ধা জাল সনদ সংগ্রহ করে নিজেদের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়েছেন। এ উদাহরণ চোখের সামনে থাকায় অনেকে আসল সনদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান জানান, ২০০৯ সাল থেকে ইস্যু করা তিন হাজারের অধিক সনদ মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। আবেদনকারীরা নিতে আসছেন না। আবেদনকারীদের মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। সচিবের ধারণা, এঁরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নাও হতে পারেন। এখন সনদ বিতরণের সময়ও মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত প্রমাণপত্র নিয়ে আসতে বলার কারণেই হয়তো এঁরা আর আসছেন না। একেকজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে দুই-তিনটি করে সনদ থাকার বিষয়টি তাঁর কানে এসেছে বলেও তিনি জানান।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পর এবার ভুয়া সন্তান : বর্তমান চাকরির দুর্মূল্যের বাজারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩০ শতাংশ চাকরি কোটা। স্বাধীনতার পর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের যে ৩০ শতাংশ কোটা ছিল তা-ই সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সেজে সহজে চাকরি লাভের আশায় মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ সংগ্রহের প্রবণতা বেড়ে গেছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে পুলিশের চাকরি নেওয়া সিরাজগঞ্জের ১৯ জন পুলিশ কনস্টেবলকে গত ৮ আগস্ট আটক করে দুদক। ২০১২ সালে তাঁরা চাকরি নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় চাকরির জন্য টাকার বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে দেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সহিদুর রেজা। গ্রেপ্তার হওয়াদের পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জনপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে এই সনদ দেওয়া হয়েছে বলে পরিবারগুলো অভিযোগ করেছে।
সম্প্রতি কারারক্ষী পদে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ ধরা পড়ে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব এম এ হান্নান জানান, কিছুদিন আগে কারা অধিদপ্তর থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়া ২০ জনের একটি তালিকা যাচাই-বাছাই করতে পাঠানো হয়। যাচাই করে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও সচিবের স্বাক্ষর জাল করে মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ দিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন সাতজন। চাকরি বাতিল করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কারা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যরা চাকরি নিচ্ছেন বলে এখন প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবীদের এক-তৃতীয়াংশই ভুয়া : সরকার ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কর্মচারীদের অবসরের সময়সীমা ৬০ বছর নির্ধারণ করে। এরপর অন্যদের চেয়ে এক বছর বেশি চাকরির সুযোগ নিতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংগ্রহের হিড়িক পড়ে যায়। এর মধ্যে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংগ্রহ করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের আগস্ট পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন।
সরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে সনদ সংগ্রহ করেছেন। যাচাই-বাছাইয়ে ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় কিছু কিছু সনদ বাতিল করা হয়। এ পর্যন্ত ২৩৫ জনের সনদ বাতিল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে দুদকের তদন্তে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারের পাঁচ সচিবের সনদ বাতিল করে অবসরে পাঠানো হয়। শুধু গত অর্থবছরে সনদ বাতিল হয়েছে ৩৫ জনের।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরিতে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেছেন, তাঁদের সনদের এক-তৃতীয়াংশই ত্রুটিপূর্ণ। মুক্তিযোদ্ধা দাবি সঠিক না হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাঁদের প্রত্যয়ন করেনি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চাকরিজীবীদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রত্যয়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা থেকে ৭৯৭টি প্রস্তাব আসে। তদন্ত শেষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সঠিক বলে ৪৭১ জনকে প্রত্যয়ন করা হয়। ২৯৪ জনের আবেদন সঠিক নয় বলে জানানো হয়। সঠিক না হওয়ার এই হার এক বছরের মোট আবেদনের ৩৬.৮৮ শতাংশ।
জালিয়াতচক্র ধরার চেষ্টা নেই : চাকরি ছাড়াও নিয়োগ কিংবা ভর্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা নাতি-নাতনি কোটায় যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের সনদ যাচাই-বাছাইয়ের জন্যও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আসে। এই সনদ যাচাই-বাছাই করতে গিয়েও অনেকে ভুয়া হিসেবে ধরা পড়েন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সনদ প্রত্যয়ন না করার মধ্যেই দায়িত্ব শেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়ন করা হয়নি তাঁদের সনদ কিংবা গেজেট বাতিলের তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না।
যাঁদের সনদ বাতিল করা হয় সেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব নির্দেশ আমলে নেওয়া হচ্ছে না। ব্যতিক্রম শুধু ১৯ পুলিশ কনস্টেবল ও সাত কারারক্ষীর ঘটনা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদের জন্য ইতিমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে যেত মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ তৈরি কিংবা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জালিয়াতচক্র। এভাবে পুলিশি তত্রতার মাধ্যমে জালিয়াতচক্রের মূলোৎপাটন সম্ভব। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই লক্ষ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ বলেন, এখন মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটা নেওয়ার জন্য প্রতারক ধরনের কিছু লোক এসেছে। এমনকি কিছু রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান বলেছেন, ‘২০১৪ সালের পর থেকে কোনো ভুয়া ব্যক্তির হাতে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সনদ যাচ্ছে না। আর এখন থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে কোনো ভুয়া ব্যক্তি ধরা পড়েলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভুয়া সনদ, মন্ত্রণালয়েই জালিয়াতচক্র কিন্তু শনাক্ত হয় না : মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব এমদাদ হোসেন মতিন জানান, মুক্তিবার্তার লাল বইয়ের তালিকা অনুসারে ৪৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে বামুস সনদ দেওয়া হয়েছে বলে সংসদে রেজিস্টার সংরক্ষিত আছে। কিন্তু তা নকল হয়ে এখন ৮০-৯০ হাজার জনের কাছে এই সনদ চলে গেছে বলে তাঁর ধারণা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যদের চাকরির প্রত্যয়নের জন্য যে কাগজপত্র জমা হচ্ছে তাতে প্রায় প্রতিদিনই এক-দুটি ভুয়া সনদ ধরা পড়ছে।
জানা যায়, বামুস সনদ যাঁদের কাছে রয়েছে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাময়িক সনদ ও গেজেটভুক্তির ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় না। এই সুযোগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি জালিয়াতচক্র অর্থের বিনিময়ে ভুয়া ব্যক্তিদের হাতে মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ তুলে দিয়েছে, তাঁদের গেজেটভুক্ত করেছে। ২০১২ সালের দিকে একটি তদন্তে পাঁচ শতাধিক ভুয়া ব্যক্তিকে মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেওয়া হয়েছে ও গেজেটভুক্ত করা হয়েছে বলে ধরা পড়লেও এই চক্রকে চিহ্নিত করা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমদাদ হোসেন মতিন জানান, তাঁরা বারবার অনুরোধ জানালেও রহস্যজনক কারণে ওই জালিয়াতচক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদে বামুস সনদের যে রেজিস্টার রয়েছে তা ফটোকপি করে এক সেট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়। একসময় দেখা যায়, সংসদের কাছে প্রত্যয়নের জন্য যেসব সনদ আসছে তার ক্রমিক নম্বর অনুসারে রেজিস্টারের তথ্যের সঙ্গে ব্যক্তির তথ্য মিলছে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংসদের একটি প্রতিনিধিদল বামুস সনদের মূল রেজিস্টার নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখতে পায়, সেখানে যে রেজিস্টার রয়েছে তাতে অনেক পৃষ্ঠার সঙ্গে মূল রেজিস্টারের পৃষ্ঠা মিলছে না। জালিয়াতচক্র মন্ত্রণালয়ে রক্ষিত রেজিস্টারের বিভিন্ন পৃষ্ঠা বদলে সনদ নম্বরের বিপরীতে ভুয়া ব্যক্তিদের নাম ঢুকিয়ে রেখেছে এবং সে অনুসারে মন্ত্রণালয় থেকে প্রকৃত সাময়িক সনদ দিয়েছে এবং গেজেটভুক্ত করে ফেলেছে। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আগেই সাময়িক সনদ নিয়ে থাকলে তাঁর নামে দ্বিতীয় আরেকটি সাময়িক সনদ ইস্যু হয়ে গেছে। ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তাঁর সনদ নিয়ে যেমন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতাসহ রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা, পোষ্যদের চাকরি ও ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা সুবিধা পাচ্ছেন, একই বামুস সনদ নম্বরের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।