<p>সুগারবিট হচ্ছে মুলার মতো দেখতে এক ধরনের সবজি, যা চিনি উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৭৪৭ সালে জার্মান কেমিস্ট এড্রিয়াস সিগিসমান্ড মারগ্রাফ প্রথম সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদন করেন। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ফ্রান্সে সুগারবিট থেকে চিনি তৈরির কল স্থাপিত হয়। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ রকম চিনিকল স্থাপন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ চিনি সুগারবিট থেকে উৎপাদন করা হয়।<br /> এটি মূলত শীতপ্রধান দেশের ফসল হলেও বর্তমানে উদ্ভাবিত জাতগুলো উষ্ণ অঞ্চলেও চাষ করা হয়। সুগারবিট উৎপাদনে শীর্ষ দেশ রাশিয়া। এ ছাড়া ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, তুরস্ক, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, মিসর, চীন ও যুক্তরাজ্যেও প্রচুর পরিমাণে সুগারবিট চাষ করা হয়। বাংলাদেশে ২০১১-১২ অর্থবছরে সুগারবিট চাষাবাদ প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের বেশ কয়েকটি চিনিকলের নিজস্ব খামারে সুগারবিট চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিট সুগার মিলস লিমিটেড ২০১৬ সাল থেকে সুগারবিট চাষ করে নানা দিক পরীক্ষা করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে চরাঞ্চল, লোনাঞ্চল, খরাঞ্চল, অনুর্বর, পতিত তিন লাখ হেক্টর জমিতে সুগারবিট চাষ করে প্রায় ২৩ লাখ টন চিনি, ২৩ লাখ টন পশুখাদ্য, ২৩ লাখ টন জৈব সার এবং হাজার হাজার সিবিএম বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হবে বলে জানান গবেষকরা। দেশে চাষাবাদ উপযোগী ট্রপিক্যাল সুগারবিটের জাত ৯টি।<br /> আমাদের দেশে চিনি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে আখ। কিন্তু বর্তমানে আখ চাষের উপযোগী উঁচু ও মাঝারি-উঁচু জমিতে কলকারখানা ও ঘরবাড়ি নির্মাণসহ বহুবিধ ব্যবহারের কারণে প্রতিনিয়তই এর আবাদ কমে যাচ্ছে। ফলে চিনিকলগুলো আখের অভাবে উৎপাদনক্ষমতার অনেক কম চিনি উৎপাদন করছে। তাই বিকল্প কাঁচামাল হিসেবে সুগারবিটের কদর দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া আখের চেয়ে সুগারবিট চাষ বেশি লাভজনক। কেননা আখ ১৪ মাসের ফসল এবং ১০০ কেজি আখ থেকে চিনি হয় মাত্র ছয় কেজি এবং আখের ছোবড়াকে শুধু রান্নাঘরে জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে সুগারবিট মাত্র পাঁচ মাসের ফসল এবং ১০০ কেজি সুগারবিট থেকে চিনি হয় প্রায় ১৪ কেজি। সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদন করার পর এর পাল্প পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এর পাতাও সবুজ শাক, সবুজ সার ও পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।<br /> ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল<br /> [আরো জানতে পত্রপত্রিকায় সুগারবিট সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো।]</p>