উট বা উষ্ট্র কুঁজবিশিষ্ট একটি চতুষ্পদ প্রাণী। এদের মরুভূমির জাহাজ বলা হয়। ইংরেজিতে একে বলে Camel। সারা বিশ্বে উটের Bactrian camel বা Mongolian camel, Dromedary বা Arabian camel ও Wild Bactrian camel—এই তিনটি প্রজাতি বিদ্যমান।
উট
- [পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ের ‘সুন্দরবনের প্রাণী’ প্রবন্ধে উটের উল্লেখ আছে]
অন্যান্য

একটি পূর্ণবয়স্ক উটের ওজন ৪৫০ থেকে ৬৫০ কেজি অবধি হয়। উটের পায়ের উচ্চতা প্রায় দুই মিটার। প্রতিটি পায়ের পাতায় চর্বি ও নমনীয় ফাইবারের পুরু আস্তরণ থাকে, যা লোম দিয়ে ঢাকা থাকে।
উটের গলা শুধু লম্বাই নয়, বাঁকানোও। মরুভূমিতে কম উচ্চতার বেশির ভাগ কাঁটা ঝোপ হয়। খাওয়ার মতো পাতা, যা পাওয়া যায় তা বেশ লম্বা উচ্চতার গাছগুলোতে। এই লম্বা উচ্চতায় থাকা পাতা খাওয়ার কারণেই উটের গলা অভিযোজিত হয়ে লম্বা হয়েছে।
উটের কুঁজে খাবার ও পানি জমা থাকে। প্রচণ্ড গরমে খাবার ও পানির অভাব পূরণ করে এই কুঁজ।
মরুভূমিবাসী মানুষ গরু-ছাগলের বদলে উট পালন করে। উট তাদের মালপত্র বহন করে, গাড়ি টানে। গৃহপালিত উটের মাংস ও দুধ খাওয়া যায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে উট পালন করা হচ্ছে। গৃহপালিত উট বিভিন্ন ধরনের ঘাস, খৈল, ভুসি, খড় ইত্যাদি খায়।
উটের চর্মরোগ ও জ্বর হয়। তবে প্রধান শত্রু কৃমি। ছয় মাস পর পর ভ্যাকসিন দিলে কৃমি দমন হয়।
মা উট প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি দুধ দেয়। উট প্রথমবার একটি বাচ্চা দেয়। দ্বিতীয়বার থেকে দুই থেকে তিনটি করে বাচ্চা দেয়। একটি উট সারা জীবনে ১৫ থেকে ২০টি বাচ্চা দিতে পারে। অনুকূল পরিবেশে একটি উট ৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল
[আরো বিস্তারিত জানতে পত্রপত্রিকায় উট সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো]
সম্পর্কিত খবর

ছোট পাখি, ছোট পাখি... সর্বনাশ হয়ে গেছে

শেখ হাসান, চিফ ফটো জার্নালিস্ট, কালের কণ্ঠ
দুপুর একটা দশ কিংবা পনেরো মিনিট হবে, হঠাৎ খবর এলো একটা জেট বিমান ক্র্যাশ করেছে। হ্যাঁ, ততক্ষণে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। আমাদের ছোট ছোট পাখিগুলো আগুনে ঝলসে ছটফট করছে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি বিল্ডিংয়ে আগুন ধরেছে।
ফেরার পথে এক ছাত্র অনুরোধ করলো “ভাইয়া, আমাদের বাংলাদেশ মেডিকেলে নামিয়ে দিতে পারবেন?” রাজি হয়ে গেলাম। তখন আরেকটি ছেলেও সঙ্গে এলো। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ে হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিই।
অনুলিখন: অলকানন্দা রায়

কখন কী ঘটল

জুলাই ২১, ২০২৫
দুপুর ১টা ৬ মিনিট : বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার থেকে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজিআই নিয়ে উড্ডয়ন করেন।
দুপুর ১টা ১২ মিনিট : মধ্যাকাশে বিমানটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। পাইলটের সর্বাত্মক চেষ্টার পরও বিমানটি উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, বিমানটির সামনের অংশ সরাসরি দোতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় আঘাত করে।
দুপুর ১টা ৪০ (আনুমানিক) : উত্তরা, টঙ্গী, পল্লবী, কুর্মিটোলা, মিরপুর, পূর্বাচল ফায়ার স্টেশনের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে।
দুপুর ২টা ১৫ (আনুমানিক) : ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকার্যক্রম শুরু করে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশ।
বিকেল ৩টা ১০ (আনুমানিক) : পাইলটসহ মোট ৫ জনকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বিকেল ৪টা : প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ২২ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়।
বিকেল ৫টা : আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, পাইলট লে. মো. তৌকির ইসলাম মারা গেছেন। তখন পর্যন্ত ১৯জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়, ১৭১জন আহত ব্যক্তি ৮টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রাত ৯টা ১০ মিনিট : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধারকার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে।
জুলাই ২২, ২০২৫
রাত ২টা : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করে।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিট : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে যান শিক্ষা ও আইন উপদেষ্টা । শিক্ষার্থীরা গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ করে।
দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট : জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২৭ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। চিকিৎসাগ্রহনকারী আহতদের সংখ্যা কমে ৭৮জনে নেমে এসেছে বলে জানান। ৬জনের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি, ২০জনের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিকেল ৩টা : প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিকটস্থ উত্তরা সেক্টর ১২তে অবস্থিত সিটি কর্পোরেশন কবরস্থানে দূর্ঘটনায় নিহতের দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিকেল ৪টা : দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে বাবা-মা বা অভিভাবকের ফোন নম্বর সংযুক্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ব্লাড গ্রুপও সংযুক্ত করতে বলা হয়।
এস এম তাহমিদ

‘থাকব না আর এই দেশে’

সহকারী অধ্যাপক এ এফ এম ইউসুফ ও শিক্ষক শামীমা শাম্মী—মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক দুজনই। বাবা-মায়ের স্কুলেরই ছাত্র তাঁদের দুই সন্তান। সপ্তম শ্রেণিতে পুত্র সায়ান ইউসুফ আর তৃতীয় শ্রেণিতে ছোট্ট ফারিসা। সোমবারের ট্রাজেডিতে নিজেদের ১৪ বছর বয়সী পুত্র সন্তানকে হারালো এই শিক্ষক দম্পতি।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের পাল বাড়ির বাসিন্দা তাঁরা। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে ভাড়া বাসায় থাকতেন শিক্ষক দম্পতি। সন্তান হারানোর শোকে হতবিহ্বল বাবা ইউসুফ তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বারবার তিনি একটা কথাই বলছিলেন, ‘আমরা এই দেশে থাকব না।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তাঁদের গ্রামের বাড়ি বশিকপুর পাল বাড়িতে গেলে সায়ানের দাদি কামরুন নাহারের আর্তনাদ শোনা যায়। তিনি আর্তনাদ করে বলতে থাকেন, ‘ও বাবু, আমার সোনামনি কই, ওরে মাগো, আমার সোনামনি কই?’ এর একটু পরেই [দুপুর পৌনে ১টার দিকে] গাড়িতে করে সায়ানের মরদেহ আসে বাড়ির সামনে। গাড়ির শব্দ শুনেই কামরুন কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসেন। এ সময় কয়েকজন প্রতিবেশি তাঁকে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। তাদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে যেতে যান গাড়ির কাছে।
১০ মিনিট পর আরেকটি গাড়ি এসে থামে এই বাড়ির সামনে। সেই গাড়ি থেকে নেমে আসেন সায়ানের বাবা ইউসুফও। বন্ধু ও স্বজনদের জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন কিছুক্ষণ। তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি তো কারো ক্ষতি করি নাই। আমার ছেলে মেধাবী ছিল। ক্লাসে সে প্রথম হতো। এত সুন্দর, এত স্মার্ট ছিল। আমার ছেলেরে আমি সবসময় আইনস্টাইন বলে ডাকতাম। কখনো দুষ্টামি করেও মিথ্যা কথা বলি নাই। আমার সঙ্গে কেন এমন হলো!’
সায়ানের চাচা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঝলসানো শরীর ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিজেই বের হয়ে আসে সায়ান। পরে তার বাবা-মা তাকে শনাক্ত করে। সেই প্রথম বের হয়ে এসেছে ভিডিওতে দেখেছি।’
জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সায়ান। মাইলস্টোনে ইউসুফের সহকর্মী রায়হানা আক্তার। তিনি রসায়নের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘ইউসুফ স্যারের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে আমেরিকায় পাঠাবে পড়াশোনার জন্য। আমেরিকায় সায়ানের এক মামা থাকেন। সেখানেই ছেলেকে পাঠানোর কথা। কিন্তু সব শেষ! সহকর্মী হিসেবে আমরা তাঁর শোকে মর্মাহত।’
জানা গেছে, ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে ঈদ করতে এসেছিল সায়ান। আবারও কোনো এক ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে আসার কথা ছিল। তার আগেই সায়ান এসেছে লাশ হয়ে।
সোমবারের ট্রাজেডিতে প্রাণ হারায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আরেক শিক্ষার্থী—পার্বতীনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের রহিমবক্স হাজী বাড়ির আব্দুস সামাদের ছেলে আফনান ফায়াজ। মাইলস্টোনে সায়ানেরই ক্লাসমেট ছিল ফায়াজ। গতকাল সকালে ঢাকায় দাফন করা হয় ফায়াজের মরদেহ।
ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল

‘আম্মু, রাত্রে তুমি থাকবা না আমার কাছে?’

জুলেখা বেগম, নিহত আব্দুল্লাহ ছামীমের মা
দুপুরে কেউ একজন ফোন করছিল, ‘আপনার ছেলে বিমান দুর্ঘটনায় আহত হইছে। তাড়াতাড়ি আসেন।’ আমি গেছি। দৌড়াইয়া গেছি।
পরে হাসপাতালে নিলাম। ভর্তি করাইল। বাবায় কইছে ‘আমারে একটু পানি দাও আম্মু। আমারে পানি দিলে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি।
[মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত আব্দুল্লাহ ছামীম। বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএম খালি মাঝিকান্দি গ্রামে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জুলাই রাত ১১টার দিকে মারা যায় সে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে ছামীম ছোট। বাবাহারা তিন সন্তানকে নিয়ে রাজধানী উত্তরা দিয়াবাড়ি খালপাড় এলাকায় থাকেন মা জুলেখা বেগম।]
পিন্টু রঞ্জন অর্ক