<p>রাখাইন বাংলাদেশে বসবাসরত একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যারা আঠারো শতকের শেষে (১৭৮৪ সালের অক্টোবর মাসে) আরাকান থেকে বাংলাদেশে এসে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও পটুয়াখালীতে বসতি স্থাপন করে। আদি ব্রাহ্মীলিপিতে প্রথম লিখিত আকারে পালি ভাষায় ‘আরাখা’ অর্থাৎ রক্ষ বা রক্ষিতা অথবা রক্ষক শব্দ থেকে রাখাইন শব্দটির উৎপত্তি। আর্য বংশোদ্ভূত রাখাইনদের প্রাচীন বাসস্থান ছিল মগধ রাজ্য। পরে মগধ থেকে আরাকানে এসে বসতি স্থাপন করে। পরিচিতি পায় মগধী বা মগ নামে।</p> <p>রাখাইনদের মুখমণ্ডল গোলাকার, নাক প্রশস্ত এবং চ্যাপ্টা, চুলের রং কালো, পুরুষের মুখে দাড়ি কম। তারা মাঝারি আকৃতির এবং বেশ শক্তিশালী ও কর্মঠ। গায়ের রং উজ্জ্বল ফরসা। বেশির ভাগই দেখতে সুন্দর। বিশেষ করে মেয়ে ও শিশুরা দেখতে খুবই সুন্দর।</p> <p>রাখাইন মেয়েরা লুঙ্গি ও ব্লাউজ এবং পুরুষরা লুঙ্গি ও ফতুয়া পরে। রাখাইন পুরুষ-মহিলা উভয়েই অলংকার পরতে ভালোবাসে। বাঙালিদের মতোই তারা মাছভাত খায়। এ ছাড়া গোমাংস, মহিষ, ছাগল, শূকর তাদের প্রিয় খাবার। তারা নিজেদের তৈরি মদ পান করে। রাখাইন ভাষায় এই মদকে ‘আরা’ বলা হয়।</p> <p>রাখাইনরা মূলত কৃষিনির্ভর। তারা ধান এবং নানা রকমের শাক-সবজি উৎপাদন করে। বর্তমানে ব্যবসা ও আধুনিকতার ছোঁয়া তাদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে এনেছে বিশাল পরিবর্তন। চাকরিক্ষেত্রে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ কোটা।</p> <p>রাখাইনদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। তাদের ভাষা আঞ্চলিকভাবে ‘র‌্যামরা’ ও ‘মারৌও’ নামে পরিচিত। তারা নিজেদের মধ্যে এ ভাষায় কথা বলে। শিক্ষার হার বর্তমানে সন্তোষজনক। রাখাইনদের রয়েছে নিজেদের ভাষার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাদের ভাষার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বলে কিয়াং। সাধারণত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কিয়াংয়ে পাঠদান করে থাকে। তাদের সংস্কৃতিতে রয়েছে বিশেষ বৈচিত্র্য।</p> <p>রাখাইনরা রক্ষণশীল জাতি। তাদের রয়েছে নিজস্ব আচার-প্রথা। তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবগুলো হচ্ছে—প্রবারণা পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, জলকেলি (লেই খেখু), নববর্ষ প্রভৃতি।</p> <p>বর্তমানে বেশির ভাগ রাখাইনের বসবাস কক্সবাজার, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায়। এ ছাড়া রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়ও কিছু রাখাইন বাস করে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়ও রাখাইন সম্প্রদায়ের বসতি রয়েছে।</p> <p>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p>[আরো বিস্তারিত জানতে বাংলাপিডিয়া ও পত্রপত্রিকায় রাখাইন সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো]</p> <p> </p>