ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ আগস্ট ২০২৫
১১ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ আগস্ট ২০২৫
১১ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

মহাচ্যালেঞ্জে পোশাক খাত

মাসুদ রুমী
মাসুদ রুমী
শেয়ার
মহাচ্যালেঞ্জে পোশাক খাত

দেশের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্প আবারও মহাচ্যালেঞ্জের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপে টলমল করছে বিদেশি ক্রেতার আস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা এ মহাচ্যালেঞ্জে ফেলেছে দেশের তৈরি পোশাক খাতকে।

এদিকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার বাণিজ্য আলোচনার তৃতীয় ও শেষ দিন উভয় দেশ বেশ কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছে।

তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দুই পক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আন্ত মন্ত্রণালয় আলোচনা অব্যাহত রাখার।

শুল্ক আলোচনার এখনো সুরাহা না হলেও এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের কয়েকটি অর্ডার স্থগিত বা বিলম্বিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের তিনজন কারখানা মালিক ও ওয়ালমার্টের এক সাপ্লায়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ওয়ালমার্টের জন্য প্রায় ১০ লাখ পিস সাঁতারের প্যান্টের অর্ডার স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার অর্ডারটি স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া আরো কিছু প্রতিষ্ঠান বাড়তি শুল্কের ভাগ নিতে চাপ দিচ্ছে।

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বৃহত্তম।

দেশটিতে সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার বা ১৮ শতাংশের বেশি পোশাক রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা বলছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে আগের প্রায় ১৬ শতাংশ ও নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্কসহ বেশির ভাগ বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫১ শতাংশ।

ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। এ কারণে নতুন শুল্ক নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক দেশের পোশাক খাতের জন্য একটি অশুভ বার্তা হলেও আমাদের বিশ্বাস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে আলোচনা হয়েছে এর মধ্যে একটি ইতিবাচক ফল আসবে।

যদি ৩৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকে, তাহলে সত্যিই টিকে থাকা কঠিন হবে। 

ক্রেতাদের থেকে কার্যাদেশ বাতিল বা বিলম্বিত ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ালমার্ট তাদের একটি সরবরাহকারীকে কার্যাদেশ বিলম্বিত করার কথা বললেও বাতিল করার কোনো ঘটনা জানা যায়নি।

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে এক নজিরবিহীন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কারণে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল না দিলে শুধু রপ্তানি নয়, দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি, কর্মসংস্থান ও সামাজিক স্থিতিশীলতাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আড়াই বিলিয়ন ডলার বাড়তি শুল্ক দিতে হবে বাংলাদেশকে : অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বনিম্ন শুল্ক ১৫.৫০ শতাংশ বিবেচনা করলে এই আমদানির মোট শুল্কের পরিমাণ হবে ১.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে আরোপ করা ৩৫ শতাংশ শুল্ক যদি গত বছরের শুল্কের সঙ্গে যোগ করা হয় তবে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩.৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ শুল্ক আলোচনায় সমঝোতা না হলে গত বছরের চেয়ে ২.৫৭ বিলিয়ন ডলার শুল্ক অতিরিক্ত দিতে হবে বাংলাদেশকে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল কালের কণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশি ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁদের জন্য অন্য দেশে গিয়ে উৎপাদন করা কঠিন। এর প্রধান কারণ হলোআমাদের অবকাঠামো, দক্ষ শ্রমিক ও তৈরি পোশাক খাত পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। নতুন শুল্ক কমিয়ে আনতে বাংলাদেশকে ত্বড়িত উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে হবে, যাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অভ্যন্তরীণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে, পণ্যের উদ্ভাবন করা অব্যাহত রেখে এবং নতুন বাজারে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফের আলোচনা : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, দুই দেশের প্রতিনিধিরা আবারও আলোচনায় বসবেন, সেটি ভার্চুয়ালি কিংবা সামনাসামনি উভয়ভাবেই হতে পারে। খুব শিগগিরই এসংক্রান্ত সময় ও তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এতে আরো বলা হয়, বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাণিজ্যসচিব এবং অতিরিক্ত সচিব ১২ জুলাই দেশে ফিরেছেন। প্রয়োজনে তাঁরা আবারও যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। তিন দিনের আলোচনার ভিত্তিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর অন্যতম কারণ এ দেশে তৈরি বেশির ভাগ পণ্যে চীনা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। তাই তিন দিনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শুল্কযুদ্ধের অংশ হিসেবে মার্কিন কর্মকর্তারা বাংলাদেশকে শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) সদস্য হওয়ায় পাল্টা শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্থানীয় শিল্প খাতে চীনা মালিকানার বৃদ্ধি এবং নীতিনির্ধারণ, মেধাস্বত্ব আইন ও শ্রম অধিকারের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কঠোর রুলস অব অরিজিনের (আরওও) প্রস্তাব করেছে। এতে মার্কিন বাজারে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশি পণ্যে ৪০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজন প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত হচ্ছে, দেশটি অন্য কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা বাড়তি শুল্ক আরোপ করলে বাংলাদেশকেও তা অনুসরণ করতে হবে। অন্যান্য কঠিন শর্তের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এমন সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় মতপার্থক্য দেখা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে যেসব দাবি এসেছে, তার মধ্যে আরো রয়েছেমার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করা, মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া এবং শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা কমানো। এ ছাড়া কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, গম, তুলা, এলএনজি, ভোজ্যতেল, যানবাহন, বোয়িং উড়োজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রস্তাবেও বাংলাদেশ সম্মতি দিয়েছে।

তবে আলোচনায় কিছু স্পর্শকাতর শর্তে বাংলাদেশ আপত্তি তুলেছে। যেমন-যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বাংলাদেশকেও তা মেনে চলতে হবে কিংবা যেসব মার্কিন পণ্যকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে, সেগুলো অন্য কোনো দেশকে না দেওয়ার শর্ত। এসব বিষয় বাংলাদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয় বলেই জানানো হয়েছে।

বাড়তি শুল্কের খরচ ভাগ করে নিতে মার্কিন ক্রেতাদের চাপ : বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মার্কিন ক্রেতারা নতুন অর্ডার নিয়ে আলোচনা প্রায় স্থগিত করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে এরই মধ্যে যেসব পণ্যের চালান পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে, সেগুলোর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ হলে বাড়তি খরচের একাংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ভাগ করে নিতে বলছেন তাঁরা।

বিশেষ করে যেসব পণ্যের অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে কিন্তু এখনো পাঠানো হয়নি, সেগুলোর খরচ ভাগাভাগি নিয়ে ক্রেতারা নতুন করে আলোচনা শুরু করায় এই উদ্বেগ আরো বেড়েছে।

অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেডের মোট রপ্তানির ২০ শতাংশের বেশি যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক খান বাবলু গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের সভা হয়েছে। তারা পাইপলাইনে থাকা অর্ডারে ট্যারিফের কারণে বাড়তি টাকার একটি অংশ বহন করার জন্য আমাদের বলছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য পাইপলাইনে থাকা মোট ক্রয়াদেশের পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলারের মতো হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় রপ্তানিকারকরা : ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মঙ্গলবার পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছি, কিন্তু এখনো শিডিউল পাইনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের জন্য যাতে লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়, সে প্রস্তাব আমরা সরকারকে দেব। এ ছাড়া আমাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে সমাধানের উপায় নিয়েও আলোচনা করতে চাই।

ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক : চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ থাকলেও তারা আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, ভারতও সমঝোতায় গেছে। ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। তাদের ওপর যে শুল্ক ছিল, সেটা অর্ধেক থেকেও কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। বাংলাদেশের জন্য ২০ শতাংশ বা যদি তার কাছাকাছি শুল্ক না হয় সে ক্ষেত্রে একটা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকবে না দেশ।

আশাবাদী সরকারের নীতিনির্ধারকরা : তিন দিনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান আশাবাদী যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি ইতিবাচক অবস্থানে পৌঁছানো যাবে। তবে চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে সুনির্দিষ্ট করে কোনো কিছু বলা যাবে না।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

প্রধান বিচারপতি

জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচারব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচারব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলেছে
সৈয়দ রেফাত আহমেদ

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচারব্যবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে।

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বিচার বিলম্বিত ও ব্যয়বহুল হলে আইনও অসম্মানিত হয়। সে জন্য বিচারপ্রার্থীদের জন্য আইনি সহায়তা বাড়ানোর আহবান জানান তিনি।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ন্যাশনাল কনফারেন্স অন এডিআর : রোল অব ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড কমিটিস ইন ইমপ্লিমেন্টিং নিউ লেজিসলেশন শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

রাজধানীর একটি হোটেলে এর আয়োজন করে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) ও ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন (এনএলএএসও)।

অনুষ্ঠানে সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় ধারণা করা হয়েছিল, প্রধান বিচারপতির মূল দায়িত্ব হবে আইনের সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা প্রদান ও প্রক্রিয়াগত জটিলতায় মনোযোগী হওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় যে প্রবল পরিবর্তন নিয়ে আসে, তা আমাদের ন্যায়বিচার প্রদানের অগ্রাধিকার ও সেটির পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।

শুরু থেকেই স্পষ্ট হয়েছিলএ রাজনৈতিক রূপান্তর বিচারব্যবস্থার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই গত এক বছরে আইনগত সহায়তা খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ছাত্র আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে, বৈধতা আসে আস্থা থেকে। আর বিচার বিভাগ আস্থা অর্জন করতে পারবে কেবল তখনই, যখন এটি আরো স্বাধীন, দক্ষ ও মানবিক হবে।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, আইনজীবী সমাজ ও নাগরিক সমাজ একত্রে কাজ করলে একটি জনগণকেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।

মন্তব্য

ওএমএসের ট্রাকের সামনে ক্রেতার ভিড়

শেয়ার
ওএমএসের ট্রাকের সামনে ক্রেতার ভিড়
একটু কম দামে পণ্য কিনতে ওএমএসের ট্রাকের সামনে ক্রেতার ভিড়। গতকাল রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকা থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
মঈন খান

ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে
আব্দুল মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পর থেকেই ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। দেশের মানুষ ফেব্রুয়ারিতে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই শ্রদ্ধা জানানো হয়।

ড. মঈন খান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোট দেওয়ার প্রত্যাশা পূরণ হবে। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল দেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরে পেতে পারে। তাঁদের পছন্দমতো ৩০০ জন প্রতিনিধি বাছাইয়ের একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন।

ড. মঈন খান আরো বলেন, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি মুক্তিযুদ্ধের দুটি মূল লক্ষ্য।

বিএনপি এই লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো ভোট। শেখ হাসিনার মতো বন্দুকের গুলি নয়, ব্যালটের মাধ্যমেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। ২০০৯ সালে জন্ম নেওয়া তরুণরাও আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুগ্ম সম্পাদক নূর আহমেদ প্রমুখ।

মন্তব্য

সম্পর্কে নতুন গতির আশা পাকিস্তানের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
শেয়ার
সম্পর্কে নতুন গতির আশা পাকিস্তানের

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন গতি আসবে বলে আশা করছে পাকিস্তান। গত রবিবার রাতে বাংলাদেশ সফর শেষে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক বার্তায় সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন। তিনি লিখেছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই সফর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার করবে, আরো সফর বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়বে।

ইসহাক দার লিখেছেন, সপ্তাহান্তে তিনি বাংলাদেশে ৩৬ ঘণ্টার একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ সফর শেষ করেছেন।

সফরে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা, বুদ্ধিজীবী, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাবিদ, নাগরিকসমাজ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক ও মতবিনিময় করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা প্রসঙ্গে ইসহাক দার লিখেছেন, দুই দেশের মধ্যে বিস্তৃত ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় উভয় পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পূর্ণ মিল ছিল।

আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন। আলোচনায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়, বিশেষ করে সার্ক পুনরুজ্জীবনের বিষয়টি ছিল।

ইসহাক দার গত রবিবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দাবি করেছিলেন, ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত ইস্যু দুবার সমাধান হয়েছে। তবে আলাদা ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, আমি অবশ্যই একমত না।

বৈঠকের দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জোরালো ভিত্তি প্রতিষ্ঠা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ১৯৭১ সালে জেনোসাইডের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা, অবিভাজিত সম্পদ বণ্টন, ১৯৭০ সালে বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা স্থানান্তর এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের ঐতিহাসিক দাবিগুলো দ্রুত সুরাহা করার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসহাক দারের ঢাকা সফর ও আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তাতে স্থান পায় ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত ইস্যু। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অতীতে বিভিন্ন সময় পাকিস্তান ১৯৭১ সালের ইস্যু সুরাহা হয়ে গেছে বলে যে দাবি করে আসছিল, এবারের সফরেও তার ধারাবাহিকতা ছিল।

 

নলেজ করিডর চালুর ঘোষণা

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তান-বাংলাদেশ নলেজ করিডর চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এর আওতায় আগামী পাঁচ বছর ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পাকিস্তানে পড়ালেখার জন্য বৃত্তি পাবে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ১০০ জন সরকারি কর্মকর্তা পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষা নেবেন।

এ ছাড়া পাকিস্তান কারিগরি সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির কোটা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ২৫-এ উন্নীত করা হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ