<p>জলাতঙ্ক হলো ভাইরাসজনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ। এই রোগ সাধারণত প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। রেবিজ ভাইরাস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাসের জন্য এই রোগ হয়। এই রোগ প্রথমে গৃহপালিত প্রাণী ও বন্য প্রাণীদের সংক্রমিত করে। মানুষ এই প্রাণীগুলোর বা এদের লালার সংস্পর্শে এলে বা এই প্রাণীগুলো যদি মানুষকে কামড়ায় অথবা আঁচড় দেয় তাহলে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। জলাতঙ্ক রোগ অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই দেখা গেছে।</p> <p>মানুষ সাধারণত কুকুরের কামড়ের মাধ্যমে বেশি আক্রান্ত হয়। অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বিড়াল, বাদুড়, ভোঁদড়, শিয়াল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।</p> <p>রেবিজ ভাইরাসের সুপ্তাবস্থা কামড়ের স্থানের ওপর ভিত্তি করে ২ থেকে ১৬ সপ্তাহ বা আরো বেশি হতে পারে। জলাতঙ্ক হলে প্রথম দিকে অনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ যেমন—জ্বর, ক্ষুধামান্দ্য, কামড় স্থানের অনুভূতিতে পরিবর্তন যেমন—চিনচিন, ঝিনঝিন ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়। কয়েক দিন পর থেকে তন্দ্রা, কনফিউশন, অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা, লালারসের ক্ষরণ বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ঢোক গেলার সময় ডায়াফ্রাম, রেসপিরেটরি মাসল ও কণ্ঠনালির তীব্র ব্যথাযুক্ত সংকোচন হয়। বিশেষ করে পানি পানের চেষ্টা করলে কণ্ঠনালিতে তীব্র ব্যথা হয়। ফলে রোগীর মধ্যে পানভীতি তৈরি হয়। এ অবস্থার জন্য বাংলায় এই রোগকে জলাতঙ্ক নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়া রোগীর ডিলিউশন, হ্যালুসিনেশন ও পাগলামি, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়ানোর অক্ষমতা, চেতনাশূন্যতা দেখা দেয়। জলাতঙ্ক রোগের জন্য প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় অর্ধ লাখ লোক মারা যায়।</p> <p>এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো টিকা নেওয়া। এই ভাইরাসের অনেক রকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে। তবে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন (HDCV)। অন্যান্য টিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন ইত্যাদি।</p>