যেকোনো একটি বিষয়ে প্রতিবেদন রচনা করো : ১০
ক) তোমার স্কুল পাঠাগার জরিপ করে প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি প্রতিবেদন লেখো।
ক) ‘খাদ্যে ভেজালের কারণ ও প্রতিকার’ শিরোনামে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি করো।
৬। প্রবন্ধ রচনা (যেকোনো একটি) ২০
ক) বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকার
খ) কম্পিউটার : বিজ্ঞানের বিস্ময়
গ) জাতি গঠনের নারী সমাজের ভূমিকা
মডেল টেস্টের উত্তর
১। (ক) বাংলা নববর্ষ/ পহেলা বৈশাখ
পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালির এক অনন্য ও অন্যতম জাতীয় উৎসব। নববর্ষ মানেই পুরনো, জীর্ণ এক অস্তিত্বকে বিদায় দিয়ে সতেজ, সজীব নবীন এক জীবনের মধ্যে প্রবেশ করার আনন্দানুভূতি। এর ঐতিহ্য সুপ্রাচীন ও গৌরবমণ্ডিত। অবশ্য কালের যাত্রাপথ ধরে এর উদ্যাপন রীতিতে পালাবদল ঘটে তা বিভিন্ন মাত্রিকতা অর্জন করেছে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের ধারণা তৈরি হয়। এ উৎসব বাঙালির জাতীয় জীবনে আরো গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, আজকের বাংলাদেশ যে স্বাধীন হতে পেরেছে, তার পেছনে নববর্ষের প্রেরণাও সক্রিয় ছিল। কারণ ক্ষীণদৃষ্টি, ধর্মান্ধ পাকিস্তানিরা বাঙালির প্রাণের এ উৎসব উদ্যাপনে যে বাধা দিয়েছিল তা ন্যক্কারজনক বলে এর প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল তারা। বাংলা নববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে তুলে ধরেছে। এ স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয় তাদের দীর্ঘদিনের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তাই স্বাধীন বাংলাদেশে নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই দিনটি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। ব্যবসায়ী মহলে হালখাতা ও মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নানা ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী, মেলার আসর, সংগীতানুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনাসভা ও বক্তৃতা-ভাষণ ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এ উৎসব সর্বজনীন অর্থাৎ বাংলার হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতির। বাংলাদেশে বসবাসকারী উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা দীন-দরিদ্র কৃষক থেকে শুরু করে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণের উৎসব এটি। পহেলা বৈশাখে গ্রাম-নগর-নির্বিশেষে বাংলার সব মানুষ নববর্ষের উৎসবে যোগ দেয়। পরস্পরের বাড়িতে যাওয়া-আসা, শুভেচ্ছা-বিনিময়, খাওয়াদাওয়া, নানা রকম খেলাধুলা ও আনন্দ-উৎসব মেলা প্রদর্শনী মিলে সারা বছরের অন্যান্য দিন থেকে পহেলা বৈশাখ দিনটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও গৌরবমণ্ডিত হয়ে ওঠে। তবে একসময় যে গ্রামবাংলা পহেলা বৈশাখের আনন্দানুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র ছিল, অর্থনৈতিক কারণে তা অনেকটাই নগরকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত নাগরিকের বুর্জোয়া বিলাস ও ফ্যাশনের একটি বড় অংশে এ আনন্দ-উৎসব কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। পহেলা বৈশাখকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে বৃহত্তর জনজীবনের অর্থাৎ শ্রমজীবী মানুষের অন্তর সত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। ধর্মীয় সংকীর্ণতার বৃত্ত অতিক্রম করে বছরের প্রথম দিনটি যে আমাদের জাতীয় চেতনার ধারক হয়ে উঠেছে, তা মনে রেখে নববর্ষের মাধ্যমে সচেতনভাবে নতুন মাত্রিকতা যোগ করতে হবে।
১। (খ) মর্ত্য প্রীতি
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে মানুষের মৃত্যু। এ চরম সত্য জানার পরও মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা প্রবল। এ আকাঙ্ক্ষা শুধু ভোগের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, সৌন্দর্যবোধের পরম আনন্দ তাকে প্রবল ও পরিপূর্ণভাবে আকর্ষণ করে পৃথিবীর প্রতি। মহান স্রষ্টা এই পৃথিবীর প্রকৃতি রাজ্যে যে অফুরন্ত, বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন তার রূপ ও সৌন্দর্যে মোহিত হয় প্রতিটি মানুষের হৃদয়-মন। জল, স্থল, অন্তরীক্ষের এই অপার, রহস্যময় সৌন্দর্য ছেড়ে অবধারিত, অনিবার্য মৃত্যুকে মানুষ কামনা করে না। মানবজীবনের জন্ম-মৃত্যু এই অধ্যায়ের মাঝে যে স্বল্প সময়টুকু, তার মধ্যেই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ব্যথা-বেদনা, বিরহ-মিলন জড়িয়ে আছে। মৃত্যু, জীবনের অমোঘ বিধান। এর হাত থেকে কেউ রক্ষা পায়নি, পাবেও না। তাই মানুষ দৈহিক মৃত্যুকে মেনে নিয়ে আত্মার অমরত্ব প্রার্থনা করে। মানুষ বিশ্বাস করে দেহ-নশ্বর, কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর। তাই সৃষ্টিশীল মানুষ তার সৃষ্ট কর্মের মাধ্যমে এ জগৎ-সংসারে মানুষের হৃদয় বেঁচে থাকতে চায়, অমরত্ব পেতে চায়। এই বিশ্ব-প্রকৃতির উদ্ভিদরাজি, প্রাণিকূল, পাহাড়-পর্বত, আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-তারা, নদী-সাগর, মরুর দেশ, তুষার দেশ, ঝর্ণাধারা, ফুল-ফলের বাগান, ছায়াবীথি প্রকৃতির এই রহস্যময় সৌন্দর্যগুলো মানুষকে আবেগে আপ্লুত করে। বসন্তে কোকিলের কুহুতান, বর্ষার প্রকৃতির স্নিগ্ধ শ্যামল রূপ মানুষের মনে স্বপ্ন জাগায়। এ কারণে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে মানুষের মন মৃত্যুর পরপারে যেতে চায় না। মৃত্যুর পরে তো এ পৃথিবীর রূপ দুই চোখ ভরে, মন ভরে দেখা যাবে না। তাই মানুষের চিরন্তন বাসনা—
‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’
(প্রাণ—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
২। (ক) ‘ক’ উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১৭ সালের এসএসসি
পরীক্ষর্থী ভাই-বোনদের বিদায় সংবর্ধনা
হে বিদায়ী,
‘ছায়া-সুনিবিড় শান্তির নীড়’—এর সবুজ প্রাঙ্গণে আজ তোমাদের বিদায়ের রাগিণী বেজে উঠেছে। শীতের রিক্ততার বার্তা আমাদের সবার প্রাণে ছড়িয়ে পড়েছে; জানান দিচ্ছে—তোমরা চলে যাচ্ছ। বিদায়ের এই লগ্নে তোমাদের জন্য রইল আমাদের শুভেচ্ছা।
হে অভিযাত্রিক,
আলোকিত মানুষ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তোমরা এসেছিলে এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এই দীর্ঘ ১০ বছরে তোমাদের যা অর্জন, তা নিয়ে তোমরা এক উচ্চতর শিক্ষাজীবনের সন্ধানে যাত্রা করছ। তোমাদের এই অভিযাত্রার সব প্রতিবন্ধকতা তোমরা যেন সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করে জীবনযুদ্ধে সফলকাম হয়ে সুকীর্তির স্বাক্ষর রাখতে পারো, সে জন্য আমাদের শুভ কামনা থাকল।
হে অগ্রজ,
অনেক বছর আমরা তোমাদের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে থেকে পেয়েছি উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সার্বক্ষণিক সহযোগিতা। এ প্রতিষ্ঠানের মেধা ও মননের বহুমাত্রিক সৃজন-উৎসবে আমরা একই সঙ্গে মেতে উঠেছিলাম। আজ এই বিদায় বেলায় সেই সোনালি দিনগুলোর কথা মনে করে আমরা বেদনার সঙ্গে গভীর কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছি।
হে আলোক সন্ধানী,
আমরা জানি, তোমাদের এই বিদায় শুধু শিক্ষাজীবনের এক অধ্যায় থেকে আরেক অধ্যায়ে অনুপ্রবেশের ধাপ মাত্র। তাই যাবার বেলায় কবি গুরুর ভাষায় গভীর আবেগে ‘যেতে আমি দিব না তোমায়’—এ কথা উচ্চারণ না করে বরং সমবেত কণ্ঠে বলতে চাই—‘যাও গো এবার যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাও’—যেন তোমাদের সন্ধানী আলোকে আমরাও আলোকিত মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারি।
হে নতুনের সন্ধানী,
আজকের এই মহতী বিদায় অনুষ্ঠানে আমাদের প্রার্থনা, সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত ও সাফল্যের ধারায় পরিপূর্ণ হোক তোমাদের জীবন। আর উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা—তোমাদের আদর্শকে যেন জীবনে গ্রহণ করে বরণীয় হতে পারি। তোমাদের সঙ্গে চলতে গিয়ে মনের অজান্তে আমরা যেসব ভুল করেছি, আশা করি তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। পরিশেষে, তোমাদের সুস্থ, সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায়—
তারিখ : ২৯ নভেম্বর ২০১৭
তোমাদের গুণমুগ্ধ
দশম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী,
‘ক’ উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা।
২। (খ) তারিখ : ২৯ নভেম্বর ২০১৭
প্রধান শিক্ষক
‘ক’ উচ্চ বিদ্যালয়
ঢাকা-১২০৬
বিষয় : ছাত্রকল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্যের আবেদন
মহোদয়,
আমি আপনার স্কুলের দশম শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। পাঁচ বছর ধরে আমি এ স্কুলে পড়ালেখা করছি। গত বার্ষিক পরীক্ষায়ও আমি প্রথম স্থান অধিকার করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু সম্প্রতি আর্থিক অনটনে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আমার বাবা একজন সামান্য কেরানি। কয়েক মাস ধরে তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে শয্যাশায়ী। তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ দরকার। এ বিপদে সাহায্য করবে এ রকম আত্মীয়-স্বজনও তেমন নেই। ভাই-বোনের লেখাপড়া, ভরণ-পোষণ, বাবার চিকিৎসার ব্যয়—সব মিলিয়ে আমাদের পরিবারের অবস্থা বিপন্ন। তাই নিরুপায় হয়ে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। পারিবারিক দুরবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ এবং ছাত্রকল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক কিছু সাহায্য প্রদান করলে বিশেষভাবে উপকৃত হব; না হয় আমার পড়ালেখা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে আমার জীবনে নেমে আসবে গভীর অন্ধকার।
অতএব বিনীত প্রার্থনা, আমাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ এবং দরিদ্র তহবিল থেকে এককালীন কিছু অর্থ অনুদানের ব্যবস্থা করে বাধিত করবেন।
বিনীত—
মো. সাকিব আহমেদ
দশম শ্রেণি
রোল ৩
‘ক’ উচ্চ বিদ্যালয়
রচনামূলক মডেল টেস্টের উত্তরের বাকি অংশ পরবর্তী সংখ্যায় ছাপা হবে