ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

এই ধারা অব্যাহত থাকুক

  • বাণিজ্য ঘাটতি কমে বেড়েছে রপ্তানি আয়
শেয়ার
এই ধারা অব্যাহত থাকুক

চারদিকের অনেক খারাপ খবরের ভিড়ে সুখবর হচ্ছে, দেশে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় ৬.৭৮ শতাংশ বেড়েছে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্ট। এ সূচকের উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরু হয়েছে।

আমদানি কমায় পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে গত বুধবার ইপিবি রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে দেশের রপ্তানি আয় ৬.৭৮ শতাংশ বেড়ে ৩.৫২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এটি ছিল ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয় ৫.০৪ শতাংশ বেড়ে ১১.৩৭ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০.৮২ বিলিয়ন।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৭ মিলিয়ন ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৮২ শতাংশ। বিশ্ববাজারে আমাদের কৃষিপণ্যের চাহিদা ও সম্ভাবনা আছে।

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শাক-সবজি ও ফলমূলের চাহিদা রয়েছে। প্লাস্টিকপণ্য ২৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ের ২১ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৩২.৫০ শতাংশ বেশি। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয় ১৮.৫৯ শতাংশ বেড়ে ৮২ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের আয় ১৭.৭৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৬৭ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিশেষায়িত টেক্সটাইল সেক্টর ৩৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
রপ্তানি বহুমুখীকরণের প্রধান শর্ত পণ্য বৈচিত্র্যকরণ। আমাদের এখন রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে অপ্রচলিত পণ্যও সম্ভাবনাময় হতে পারে।

ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৬১ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।

রপ্তানির ক্ষেত্রে অপ্রচলিত পণ্যও সম্ভাবনাময় হতে পারে। বিশ্ববাজারে আমাদের কৃষিপণ্যের চাহিদা ও সম্ভাবনা আছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শাক-সবজি ও ফলমূলের চাহিদা রয়েছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে দেশে উৎপাদিত সিরামিক পণ্য। গত অর্থবছরে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প সামনে এগিয়ে গেছে মূলত নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেট বা অপ্রচলিত বাজারের ওপর নির্ভর করে।

বাংলাদেশ শুরু থেকেই বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল। এই প্রবৃদ্ধি আমাদের আশান্বিত করে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশ এগিয়ে চলেছেদেশপ্রেমিক যেকোনো মানুষের কাছে তা স্বস্তিকর, আনন্দদায়ক। রপ্তানি বহুমুখীকরণের প্রধান শর্ত পণ্য বৈচিত্র্যকরণ। আমাদের এখন রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প ও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মব সন্ত্রাস থামান

    আইনের প্রতি আস্থাহীনতা
শেয়ার
মব সন্ত্রাস থামান

সাম্প্রতিককালে দেশের নানা প্রান্তে যেভাবে মব সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে, তা শুধু ভয়াবহ নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের যৌথ ব্যর্থতার প্রকাশ। কুমিল্লার মুরাদনগরে মা, ছেলে ও মেয়েকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার রেশ না কাটতেই গাজীপুর, লালমনিরহাট, ঢাকা ও সিরাজগঞ্জে একের পর এক গণপিটুনির খবর এসেছে। এই নির্মম ঘটনাগুলোর পরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা হয়নি কিংবা দায়ীদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন এবং সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদার অভিমত থেকে স্পষ্ট হয় যে এই মব সন্ত্রাসের পেছনে রয়েছে সমাজের অস্থিরতা, আইনের প্রতি অবজ্ঞা এবং সরকারের সদিচ্ছার অভাব।

মুরাদনগরের ঘটনাটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, যেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের উপস্থিতিতে সালিসি বৈঠকের নামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহতদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ থাকলেও কাউকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান মব সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। ভুক্তভোগীরা আছে আতঙ্কে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা। সরকারের উপদেষ্টারা কয়েক মাস ধরে মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ মাসে ২৫৩টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৬৩ জন নিহত এবং ৩১২ জন আহত হয়েছে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা যথার্থই বলেছেন, মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তাঁর মতে, সরকার যদি কঠোর অবস্থানে থাকত, তাহলে এভাবে একের পর এক মব সৃষ্টি হতো না। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা, আইনের প্রতি আস্থাহীনতা, রাজনৈতিক বিরোধ, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থাসহ নানা কারণে গণপিটুনির ঘটনা বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে পেশাদার অপরাধী ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও মব তৈরি করছেন, যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কঠোর ও দ্রুত পদক্ষেপ অপরিহার্য।

জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। কোনো অবস্থায়ই মবের সঙ্গে জড়িতদের প্রশ্রয় প্রদান করা যাবে না কিংবা তাদের অপরাধকে লঘু হিসেবে উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করি। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ না হলে এই দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। রাষ্ট্র যদি এই ব্যর্থতা অব্যাহত রাখে, তাহলে আইনের শাসনের পরিবর্তে উন্মত্ততার শাসন সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবে। সে শাসনে কেউ নিরাপদ থাকবে না, নাগরিকত্বের মৌলিক নিশ্চয়তাও হারিয়ে যাবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জনপ্রত্যাশাকে মূল্য দিন

    নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা
শেয়ার
জনপ্রত্যাশাকে মূল্য দিন

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে বা রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এমন ঘোষণার পর দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে। মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে নির্বাচনী উৎসবকে উপভোগ করার জন্য। সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণযোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোও প্রার্থী বাছাই, জোট গঠনসহ নির্বাচনকে উপলক্ষ করে নানা রকম কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে।

কিন্তু একই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা বা অস্পষ্টতাও প্রবল হচ্ছে। এর কারণ নির্বাচনের সময়, সংস্কার, বিচার ও আরো কিছু বিষয় নিয়ে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভেদ বা মতভেদ ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।

গত শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন? কী নির্বাচন হবে? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অন্যদিকে কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দাবি করছে।

কোনো কোনো দল সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি করেছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, এমনকি উপদেষ্টা পরিষদও পুনর্গঠনের দাবি করছে কেউ কেউ। ফলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা এখনো একটি অনিশ্চিত বিষয়।

গত শুক্রবার রংপুরের জনসভায় জামায়াতের আমির বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু মৌলিক সংস্কার অপরিহার্য।

আমরা সেই সংস্কারের দাবিতে কথা বলেছি এবং এগুলো আদায় করব। ইনশাআল্লাহ, সুষ্ঠু নির্বাচনও আদায় করব। তিনি বলেন, কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আদলে নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে, আমরা আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। কোনো মাস্তানতন্ত্র বা কালো টাকার খেলা চলতে দেওয়া হবে না। প্রশাসনিক ক্যুও হতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করে আসছিল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে এমন ঘোষণা দিলে তারা তা মেনে নেয়। কিন্তু এখন সেই সময়ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হতাশা ও বিভেদ বাড়ছে।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বলছে, নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে অনির্বাচিত সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা চলছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলা তেমনই একটি অপচেষ্টা। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। ভোট ডাকাতির সুযোগ থাকবে না বলেই কেউ কেউ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনকে ভয় পায়। এসব কারণে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ক্রমেই বিভেদ বাড়ছে। একই সঙ্গে নির্বাচন নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উভয়েই জাতীয় স্বার্থে ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এক থাকার কথা বলেছেন।

গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রত্যাশা মানুষের ভোটাধিকার বা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। সেই প্রত্যাশা পূরণের পথেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অনির্দিষ্টকাল ধরে দেশ অনির্বাচিত সরকারের অধীনে থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মন্তব্য

বাড়ছে গণপিটুনি, ধর্ষণ ও হত্যা

    সহিংস সমাজ, অসহায় নারী ও শিশু
শেয়ার
বাড়ছে গণপিটুনি, ধর্ষণ ও হত্যা

বাংলাদেশ এক গভীর সামাজিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কালের কণ্ঠে বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রকাশিত তিনটি প্রতিবেদন আমাদের সমাজে সহিংসতা, বিচারহীনতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের এক নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে এক পরিবারকে পিটিয়ে হত্যা, দেশজুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিসংখ্যান এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সীমাবদ্ধতাসবকিছু মিলিয়ে স্পষ্ট হয়, বাংলাদেশের সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। এই পরিস্থিতি একটি সুসংহত ও মানবিক সমাজের জন্য অশনিসংকেত।

মুরাদনগরের কড়ইবাড়ী গ্রামে মা, ছেলে ও মেয়েকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি কোনো একক অপরাধ নয়, এটি সামাজিক প্রতিশোধ, গণপিটুনির সংস্কৃতি এবং স্থানীয় ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির মিলিত রূপ। মাদক, মোবাইল ফোন চুরি এবং পুরনো শত্রুতার জেরে একসঙ্গে তিনজন মানুষকে হত্যা করাএটি কেবল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যর্থতা নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধের চরম বিপর্যয়। ঘটনা-পরবর্তী অবস্থানও কম ভয়াবহ নয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযুক্ত, অথচ তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত ১৭৯ জন গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন, যা এ ধরনের বিচারহীনতার প্রবণতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধিকেই তুলে ধরে।

পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ মন্তব্য করেছেন। গত ৯ দিনে ২৪ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং গত ছয় মাসে এক হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৪৮১ জন ধর্ষণ এবং ১৭ জন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার।

মাদরাসাগুলোতেও শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরে এই সমস্যার গভীরতাকে প্রকাশ করে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৯ হাজার ১০০টি মামলা হয়েছে, যা গত বছরের মাসিক গড় মামলার সংখ্যা (১,৪৬৪) থেকে যথেষ্ট বেশি। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মী ও মহিলা পরিষদের মতো সংগঠনগুলো বলছে, পত্রিকায় সব ঘটনার খবর হয় না, বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ। যখন ধর্ষণের মতো অপরাধের জন্য মানবাধিকারকর্মী হয়েও শারমীন মুরশিদ মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে মত দেন, তখন বোঝা যায় পরিস্থিতির ভয়াবহতা কতটুকু।

সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর যথাযথ দায়িত্ব পালনের অভাব এবং রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আঁতাত এই অপরাধগুলোকে উৎসাহিত করছে।

অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ও বিচার দ্রুত নিশ্চিত না হলে সাধারণ মানুষের আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়বে, যা সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত হানবে। গণপিটুনি, ধর্ষণ ও নারী-শিশু হত্যা প্রতিরোধে একটি সমন্বিত ও কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। একই সঙ্গে শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা ও মানবিক মূল্যবোধ পুনর্গঠনে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ জোরদার করতে হবে।

মন্তব্য

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

    চালের বাজার অস্থির
শেয়ার
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

দেশে চালের প্রধান জোগান আসে বোরো ধান থেকে। বোরো ধান উত্তোলন মাত্র শেষ হয়েছে। এ সময়ে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অথচ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে চালের দাম।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, চালের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। রাজধানীর খুচরা বাজারে চিকন চালের (মিনিকেট) দাম কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি ও মোটা চালও কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। দাম বেড়েছে চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলায়ও।
চট্টগ্রামে ৫০ কেজি চালের বস্তায় দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। শুধু চাল নয়, বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দামও। কয়েক দিনে সবজির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কোনো কোনো সবজির দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
বেড়েছে পেঁয়াজ, আলু, মুরগিসহ আরো কিছু পণ্যের দাম।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, কিছু মিলার ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাজার অস্থির করার জন্য মূলত দায়ী। অভিযোগ আছে, কিছু মিলার হঠাৎ করে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। কিছু মোকাম মালিক চালের সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য, দাম বাড়িয়ে অধিক লাভে চাল সরবরাহ করা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের উপযুক্ত নজরদারির অভাবে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে বাজার আরো অস্থির হবে। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা যায়, খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল মানভেদে প্রতি কেজি ৮২ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ঈদের আগে ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। ব্রি-২৮ ও পাইজাম চাল কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের মেসার্স মান্নান রাইস এজেন্সির মালিক আব্দুল মান্নান তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, এই ভরা মৌসুমে মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর মিনিকেট চাল কেজিতে ১৪ টাকা বেশি। এক বছরে মোটা চাল ব্রি-২৮ প্রতি কেজিতে আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

চালের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরীর প্রেস ক্লাব চত্বরে ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’—এই স্লোগান নিয়ে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ। বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. জাহাঙ্গীর আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বোরো মৌসুম শেষে চালের দাম বেশি থাকার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। মূলত সরকারের ব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণেই দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশে ধান-চালসহ পণ্য মজুদের সুনির্দিষ্ট আইন আছে। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যারাই মজুদ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে চাল আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। মিলার, ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। ভোক্তাদের স্বার্থ ও অধিকার নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যাবে না।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ