ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

মানুষ নিরাপদ বোধ করুক

  • সেনা কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা
শেয়ার
মানুষ নিরাপদ বোধ করুক

সরকার পরিবর্তনের পর সারা দেশেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে দেখা যায়। জুলাই-আগস্টে দেশের অনেক থানায় আক্রমণ হয়। অনেক থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ।

এ অবস্থায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা বর্তমান সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থিতিশীলতা বিনষ্টের মতো কর্মকাণ্ড ঘটেছে। শিল্পাঞ্চলগুলোতে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগামী দুই মাসের জন্য রাজধানীসহ সারা দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার।
সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে গত ১৯ জুলাই দিবাগত রাতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করেছিল তৎকালীন সরকার। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখনো সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে এই বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মানুষ যাতে নিরাপত্তাবোধ নিয়ে জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অতীতে এটিও লক্ষ করা গেছে যে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে দল-মত-নির্বিশেষে দেশের জনগণ অধিক নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা বোধ করেছে।

গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।  প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারা অনুযায়ী, সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়ে তাঁদের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।

তবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালন করবেন। সেনা কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার কারণে এখন থেকে সিআরপিসি অনুযায়ী তাঁরা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ার পর রাজধানীসহ সারা দেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানের গতি বেড়েছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন থানা ও পুলিশ স্থাপনা থেকে গত সোমবার রাত পর্যন্ত লুট হওয়া ১৫৫টি অস্ত্র উদ্ধার এবং ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে। রাজধানীজুড়ে ট্রাফিক পুলিশকেও অধিকতর সক্রিয় হতে দেখা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গণমাধ্যমকে বলেছেন, মানুষ যাতে নিরাপদ বোধ করে এবং জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে, সে জন্য সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা, যাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আছে, তাঁদের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হবে না। কাজেই সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে ভুল বোঝার কোনো অবকাশ নেই। সাংবিধানিক নিয়মরীতি মেনেই বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেবে সেনাবাহিনী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, দেশের স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অতীতেও জাতীয় সংকটে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীকে এই ক্ষমতা দেওয়ার নজির আছে। তবে সেনাবাহিনীকে বিচারিক এই ক্ষমতা বা ফৌজদারি কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো সতর্কভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত, নিষ্ঠাবান ও দক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সবাইকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। সেনা কর্মকর্তারা বিচারিক ক্ষমতা পাওয়ায় দেশের মানুষ নিরাপদ বোধ করুকএটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ব্যাংক খাতে গতিশীলতা প্রয়োজন

    সংকটে ব্যবসা-শিল্প-বিনিয়োগ
শেয়ার
ব্যাংক খাতে গতিশীলতা প্রয়োজন

দেশের অর্থনীতিতে এক সংকটময় পরিস্থিতি বিদ্যমান। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ডলার সংকট, বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ নানা কারণে উদ্যোক্তারা এক ধরনের আস্থাহীনতায় রয়েছেন।

তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির দুর্বলতা, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, স্বচ্ছতার ঘাটতিসহ নানা কারণে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরছে না। ফলে ধুঁকছে শিল্প আর মন্দা কাটছে না অর্থনীতির।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনতে প্রচেষ্টা চালালেও বাস্তবায়ন দুর্বলতায় এর সুফল মিলছে না।

এর ফলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের লুটপাট আর ভুল নীতির বলি হওয়া ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসমাজ আজও পরিত্রাণ পায়নি। আশা করা হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, শৃঙ্খলা ফিরবে আর্থিক খাতে। কিন্তু গত ১১ মাসেও ওই আশার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো পুরনো বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বেসরকারি কিছু ব্যাংকের পর্ষদ বদল, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মন্দার কবলে পড়া অর্থনীতির জন্য যে রকমের নীতি সহায়তা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা, সেগুলোরও বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হতে পারছে না। বিনিয়োগ বাড়ছে না। কর্মসংস্থান বাড়ছে না।
উল্টো অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। মোটা লোকসানে পড়ে ব্যাংকে খেলাপিও হয়ে পড়ছেন অনেকে।

ব্যাংকিং খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা কঠোর করা হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ কমার বদলে উল্টো বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, মহামারি-পরবর্তী আর্থিক চাপে অনেকেই অনিচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়েছেন, এখন আইনি জটিলতায় তাঁদের আরো বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এদিকে বড় ঋণের সহায়তায় কমিটি গঠনের সাড়ে পাঁচ মাসেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। সময় চলে যাচ্ছে যাচাই-বাছাইয়ে। দীর্ঘসূত্রতার ফলে বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঙ্ক্ষিত সহায়তা না পেয়ে আরো রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা ছয় মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের আইন শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব নীতিমালা প্রণয়ন করছে, তা ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য কতটা সহায়ক তার একটা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা প্রয়োজন এবং দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা দরকার।

বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ক্রমেই গতি হারাচ্ছে তা দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিবেদনে উঠে আসছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ। অথচ গত জানুয়ারিতেও বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৪.১ শতাংশ। দেশের স্বার্থে অর্থনীতির এই পশ্চাদগতি ঠেকাতে হবে। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হোক

    গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ
শেয়ার
ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হোক

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। অথচ বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ধারাবাহিকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কঠোর কতৃত্ববাদী দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটলেও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রশ্নটি অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে, যা শুধু দুঃখজনক নয়, চরম উদ্বেগজনকও।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত তিনটি প্রতিবেদন দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং এর ওপর অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের মূল চেতনার অন্যতম ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, অথচ আজ সেই অভ্যুত্থানের একজন ছাত্রনেতা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর মতো ব্যক্তি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করছেন, হুমকি দিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের বক্তব্য একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার মুখে যেমন অগ্রহণযোগ্য, তেমনি তা রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চরম অবমাননা।

সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বিভিন্ন পেশাজীবী ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিরা এই হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

তাঁদের মতে, কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে গণমাধ্যমকে হুমকি দেওয়া শুধু অশোভন নয়, এটি অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এতে পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, যা মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে।

জুলাই বিপ্লবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার। সাংবাদিকরা সেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এই বিশ্বাসে যে একটি স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর গণমাধ্যম তার স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পারবে।

কিন্তু এখন সেই চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী আচরণ দেখা যাচ্ছে। মিডিয়ার কোনো প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি থাকলে তার জন্য দেশের প্রচলিত আইন ও প্রতিষ্ঠান যেমন আদালত কিংবা প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। আইনের বাইরে গিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া শুধু নীতিহীনতা নয়, এটি সরাসরি ফ্যাসিবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুজিবুর রহমান এবং লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহর মতো বিশিষ্টজনরা জোর দিয়ে বলেছেন যে গণমাধ্যমকে নির্দিষ্ট করে হুমকি দেওয়া অগ্রহণযোগ্য এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে এটি একটি বড় বাধা। যখন বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ বা আমলারা ব্যর্থ হন, তখন সমাজের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে গণমাধ্যম।

সেই গণমাধ্যমকে নিশানা বানানো কোনোভাবেই কাম্য নয়।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাজনীতিবিদদের পরিণত ও পরিমিত ভাষা চর্চার অভ্যাস থাকা জরুরি। তাঁদের মনে রাখা উচিত, গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থেকে যাবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পথ হারাবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।

মন্তব্য

শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিন

    সংকটে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি
শেয়ার
শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিন

 

যেকোনো দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে বিনিয়োগ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ নিয়ে গভীর সংকটে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মব সন্ত্রাস, প্রশাসনিক দুর্বলতা, মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ সুদহারের কারণে দেশে যেমন বিদেশি বিনিয়োগ কমছে, তেমনি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দেশি উদ্যোক্তারাও। বিদ্যমান শিল্পগুলোও ধুঁকছে।

উৎপাদন কমছে, লোকসান বাড়ছে। ফলে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা বন্ধ হওয়ার পথে। এর ফলে কর্মসংস্থান কমছে এবং বাড়ছে বেকারত্ব।

গত রবিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন বাংলাদেশের অর্থনীতির এই সংকটময় দিক তুলে ধরেছে।

একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মব সন্ত্রাসের কারণে বিনিয়োগ তলানিতে পৌঁছানো, অন্যদিকে বস্ত্রশিল্পের ওপর নতুন করের বোঝা চাপিয়ে খাতটিকে সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই দুটি বিষয়ই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে।

গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিল্প-কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বিদেশি ও দেশি উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্যোবিদায়ি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ ৯১ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট এবং ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে দেশি বিনিয়োগও স্থবির হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে না পারলে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ক্রমে আরো খারাপ হবে।

বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)মন্তব্য, তুলা আমদানিতে নতুন করে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা দেশের বস্ত্রশিল্পের জন্য কফিনে শেষ পেরেক হিসেবে কাজ করবে। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এবং অন্য নেতারা এটিকে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের নীলনকশা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যার উদ্দেশ্য দেশটির শিল্পকে শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পকে রুগ্ণ করে দেওয়া। তাঁদের মতে, ১৮ শতাংশ সুদের ব্যাংকঋণ এবং ৫০ শতাংশ কার্যকর করের বোঝা নিয়ে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের পক্ষে কারখানা চালু রাখা অসম্ভব।

এটি কেবল দেশের বস্ত্রশিল্পের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং এই খাতে জড়িত লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানকেও হুমকির মুখে ফেলছে। যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের বস্ত্রশিল্পকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ক্রমাগত কমানো হচ্ছে, যা দেশের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাকে খর্ব করছে।

বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের উচিত অতি দ্রুত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো। একই সঙ্গে বস্ত্রশিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর সমস্যাগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। অযৌক্তিক কর আরোপ প্রত্যাহার এবং শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়ন না করা হলে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হোক

    রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে
শেয়ার
ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হোক

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয় বা অনিশ্চয়তা যেমন বাড়ছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান বা পরস্পরকে দোষারোপ করার প্রবণতাও ক্রমে বাড়ছে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল চাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠিত হোক। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হোক। নির্বাচিত সংসদ বড় ধরনের সংস্কারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিক।

অন্যদিকে কয়েকটি দল বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে। কেবল গণহত্যার বিচার ও সংস্কারের পরই নির্বাচন হতে পারে। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচন করতে হবে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে। এসব প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কেবলই বাড়ছে।
এতে নিকট ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিতে চরম সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

বেকারত্ব অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চূড়ান্ত খারাপের দিকে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় দেশে যখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি এবং নির্বাচিত সরকারের অধীনে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে, তখন রাজনীতিতে যেন দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করে আসছিল এবং কর্মসূচি দিতে শুরু করেছিল।
এমন পরিস্থিতিতে গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ধারণা দেন যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করা দলগুলো কিছুটা হতাশ হলেও প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসে ফেব্রুয়ারিকে মেনে নেয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সেই ঘোষণায় অসন্তোষ প্রকাশ করে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত শনিবার ফেনীতে এক সমাবেশে বলেছেন, ফ্যাসিজম তৈরির পথ বন্ধ করতে হলে পিআর পদ্ধতিকে বেছে নিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। গত শনিবার বগুড়ায় এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগে গণহত্যার বিচার, সংস্কার, তারপর নির্বাচন। অন্যদিকে শনিবার কেরানীগঞ্জের এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, কিছু দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ পিআর পদ্ধতি বোঝেন না। তাঁরা এ পদ্ধতিতে কখনো ভোট দেননি। যারা পিআর নির্বাচনের কথা বলে, তাদের ভোট নেই। নির্বাচন হলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

রাজনীতি অস্থিতিশীল বা সংঘাতময় হোক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অর্থনীতির স্বার্থে এবং মানুষের দুর্ভোগ কমাতে অনির্বাচিত সরকারের মেয়াদ আর দীর্ঘায়িত করা উচিত হবে না। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দেওয়াটাই সবচেয়ে যৌক্তিক হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ