ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

  • বিষাক্ত বর্জ্যে নদীতে মাছের মড়ক
শেয়ার
কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

নদীদূষণ কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। শিল্প-কারখানার কিছু মালিক দেশের আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। নীতি-নৈতিকতা, বিবেক বা দায়িত্ববোধের পরিচয়ও তাঁরা দেন না। গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ফুলজোড় নদীতে দুটি কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ফেলায় নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে।

এ কারণে নদীর প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছসহ সব জলজ প্রাণী মরে গেছে। নদীতে গোসল করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষজন। পানি খেয়ে মারা যাচ্ছে গবাদি পশু।

জানা যায়, দুই শতাধিক মৎস্য চাষি ফুলজোড় নদীর রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা থেকে নলকা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার অংশে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন।

মৎস্য চাষিদের মতে, এখানে দুই হাজারের বেশি খাঁচা ছিল এবং প্রতি খাঁচায় ৩০ থেকে ৪০ মণ করে মাছ ছিল। তাঁদের অভিযোগ, চার দিন আগে নদীর উজানে বগুড়ার শেরপুরে অবস্থিত মজুমদার ফুড প্রডাক্টস এবং এসআর কেমিক্যাল কারখানার বর্জ্য অতিরিক্ত পরিমাণে নদীতে ফেলায় পানি বিষাক্ত হয়ে নীল রং ধারণ করে এবং ২৫ কিলোমিটার এলাকায় সব মাছ মরে যায়। শুধু মাছ নয়, অন্যান্য জলজ প্রাণীও মরে ভেসে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে কিছুদিন নদীর পানি ব্যবহার না করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মৎস্য চাষিদের দাবি, তাঁদের প্রায় ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেকে ঋণের অর্থে মাছ চাষ করেছিলেন। তাঁরা এখন পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিরা গত বুধবার অভিযুক্ত দুটি কারখানার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা ফুলজোড় নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করেছেন।
প্রাথমিক তদন্তে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার প্রমাণও মিলেছে। তিনি জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে অবগত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

নদী রক্ষায় দেশে অনেক আইন রয়েছে। উচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন। নদী রক্ষায় কমিশন রয়েছে। দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে। তার পরও নদীর ওপর অত্যাচারের কোনো কমতি নেই। নদীর পার দখল করে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বন্ধ করা হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলন করে নদীভাঙন ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। শিল্প-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ফেলে নদীর পানি বিষাক্ত করা হচ্ছে। তাহলে এত আইন ও এত সংস্থার নজরদারি কোথায়? আমরা চাই, ফুলজোড় নদীর দূষণের বিষয়টি তদন্ত করে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

অডিও টেপের সত্যতা নির্ধারণ

    হাসিনাই গুলি চালানোর নির্দেশদাতা
শেয়ার
অডিও টেপের সত্যতা নির্ধারণ

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থান দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই পুলিশকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিবিসি আইয়ের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও আলোচিত ঘটনাগুলোর একটির ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে এবং এর সত্যতা যাচাইয়ে বিভিন্ন প্রমাণ (ছবি, ভিডিও, ড্রোন ভিডিও, অডিও রেকর্ড, গণমাধ্যম কাটিং, ফুটেজ ও সাক্ষাৎকার) ব্যবহার করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য ফাঁস হওয়া অডিও টেপটি নকল নয়, যা বিবিসির গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

বিবিসির প্র্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ধারণার চেয়েও অনেক বেশি, অর্থাৎ মোট ৫২ জন আন্দোলনকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন, যা আগে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিবিসির যাচাই করা রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধেপ্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘তাঁরা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাঁদের (আন্দোলনকারী) পাবেন, তাঁরা গুলি করবেন। এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি ‌‘নির্দেশেরসবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বলে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মন্তব্য করেছেন।

এই কল রেকর্ডটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা উদ্ধার করেছেন এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এটিকেট্রেলার মাত্র, অনেক কিছু এখনো বাকি বলে মন্তব্য করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম জানিয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেআনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হলে বিচারের সময় এই ফোনালাপ সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও রয়েছেন। মামলাটিসুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের সত্যানুসন্ধান প্রতিবেদনেও গত বছরের জুলাই ও আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ছাত্র আন্দোলন মোকাবেলায় অভিযান পরিচালনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। এই প্রতিবেদনগুলো বিচারিক প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এক নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

এই গুরুতর অভিযোগগুলো বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। যদি প্রমাণিত হয় যে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সরাসরি প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তবে তা দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই ধরনের ঘটনার নিরপেক্ষ স্বচ্ছ তদন্ত এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দেশের জনগণের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যতে ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে অত্যন্ত জরুরি।

মন্তব্য

প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ

    ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন
শেয়ার
প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ

অবশেষে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে যে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে বা রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে এবং জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়েছে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানতে চান, নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল আছে কি না। তিনি বলেন, যদি নতুন নিয়োগ করতে হয়, তবে নিয়োগপ্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করে দিন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। প্রতিদিন ট্রেনিং হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঈদুল আজহার আগের দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা কখনো কখনো ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়ে আসছিলেন। আর বিএনপি ও তাদের সমমনা দল এবং বাম দলগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল।

এমন অবস্থায় গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার বরাতে বলা হয়েছিল, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। এর ২৬ দিন পর গতকাল রাত ৮টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অগ্রগতি জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আর তাতেই প্রকাশ পায়, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা রয়েছে।

এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দ্রুতই নির্বাচনের পালে হাওয়া লাগবে। গত সোমবার সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আয়োজন করবে।

অবশ্য কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এখনো বলা হচ্ছে, আগে বিচার ও সংস্কার, পরে নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সংগত কারণেই মানুষের মনে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দ্বিধা-সন্দেহ কাজ করছিল। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ ব্রিফিংয়ের পর সেই সন্দেহ অনেকটাই কেটে গেছে।

আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন। দেড় দশক ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষ আগামী ফেব্রুয়ারিতে উৎসবের পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

 

মন্তব্য

আলোচনা জোরদার করুন

    মার্কিন শুল্কারোপে রপ্তানি বিপর্যয়ের শঙ্কা
শেয়ার
আলোচনা জোরদার করুন

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চশুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চশুল্কই আরোপ করা হবে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

শুল্ক কার্যকর হতে এখনো প্রায় তিন সপ্তাহ সময় আছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, উভয় দেশের জন্য লাভজনক একটি শুল্কচুক্তি সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক।

আর তার প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি ছিল তৈরি পোশাক।  নতুন করে শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির কী হবে, সেটি নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
অন্যদিকে এ খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামে প্রথমে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হলেও সমঝোতার মাধ্যমে তাদের শুল্ক করা হয়েছে ২০ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের চেয়ে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এটি বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেবে এবং রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন করে ৩৫ শতাংশ যুক্ত হলে মোট শুল্ক ৫০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।
এটি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও। তাই এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমঝোতায় আসা অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে বাড়তি শুল্কের প্রভাব হবে ভয়াবহ। পণ্য রপ্তানি কমে যাবে। যেসব কারখানার মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশ বা তার বেশি যুক্তরাষ্ট্রে যায়, সেসব প্রতিষ্ঠান বেশি বিপদে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিকল্প বাজার খোঁজার দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে কেবল তৈরি পোশাকে নির্ভরশীল না থেকে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। পণ্য উৎপাদনে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ওপরও জোর দিতে হবে। প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা দ্রুততর করতে হবে এবং বেশি করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা আরো জোরদার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান রপ্তানি খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর সহযোগী শিল্পগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে রপ্তানি কমার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

মন্তব্য

মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রয়োজন

    গণমাধ্যমকে হুমকি কেন
শেয়ার
মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রয়োজন

আজকের দিনে রাষ্ট্র গঠন ও গণতন্ত্রচর্চায় গণমাধ্যম এবং বাকস্বাধীনতার অপরিসীম গুরুত্ব নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। ক্লাসিক ধারণা অনুসারে এককথায় বলা যায়, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, আর গণতন্ত্রের প্রধান ভিত্তিগুলোর একটি হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আর এই মত প্রকাশের স্বাধীনতাই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নিয়ামক। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে গণমাধ্যম প্রকাশ্য হুমকির মধ্যে পড়ছে, যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গঠন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চেতনাগতভাবে আহত করছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার এক জটিল ও উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই আন্দোলনেরই কিছু নেতা, বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন বলে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যথার্থই বলেছেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো ভিন্নমত।

তাঁর মতে, কেউ কারো সঙ্গে একমত না হলেও মত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত থাকতে হবে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী প্রশাসনিক স্থবিরতা ও মব কালচার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, গণমাধ্যমও এর শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও গণমাধ্যমের প্রতি হুমকিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য আইনসম্মত পথ খোলা আছে, কিন্তু হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।

এ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ কামনা করে দেওয়া স্মারকলিপি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, দেশ এখন মব সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি, যা থেকে মিডিয়াও রক্ষা পাচ্ছে না। এমনকি মার্কিন সিনেটর শেখ রহমানের অভিজ্ঞতাও প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যেখানে স্বাধীনভাবে খবর প্রকাশ করা কঠিন।

আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর ধরে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করেছে, যার পরিণতি সবাই জানে। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, ৫ আগস্টের আগে যে মিডিয়াগুলো পতিত সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছিল, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও তারা লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।

এনসিপি একটি নতুন এবং তারুণ্যে ভরা দল। তাদের মধ্যে ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। সেসবের সমালোচনা তাদের নিজেদের সংশোধন ও বিকাশের জন্যই অপরিহার্য। এই ইতিবাচক দিকটিকে আরো শক্তিশালী করতে হলে তাদের সমালোচনার প্রতি সহনশীল হতে হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা না গেলে সত্যের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের বীর যোদ্ধাদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা একটি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য লড়াই করেছিলেন, যেখানে গণমাধ্যম নির্ভয়ে সত্য কথা বলতে পারবে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ