<p>জন্মের পরপরই নবজাতক শিশুদের পেটে গ্যাস জমতে পারে এবং তৎপরবর্তী বয়সী শিশুদের পেটেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। তবে বড়দের মতো শিশুদের গ্যাসের কারণ ও ধরন ভিন্ন। নবজাতক শিশুদের জন্য এটা এক অস্বস্তিকর অবস্থা এবং অবশ্যই অভিভাবকদের জন্য তো বটেই। এ সমস্যাটা ক্ষেত্রবিশেষে কারো কম, কারো বেশি। কারো আবার স্বল্পমেয়াদি, কারো বা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। তবে এ সমস্যা সাময়িক। কিছুদিন পর এমনিতেই এটা নিরাময় হয়ে যায়।</p> <p> </p> <p><strong>গ্যাসের কারণটা কী?</strong></p> <p>♦ আসলে পুরো কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে মনে করা হয় যে এটা হরমোনজনিত কারণ। যাকে বলা হয় ‘ইনফ্যান্টাইল কোলিক’।</p> <p>এ ছাড়া আরো অনেক কারণ রয়েছে; যেমন—</p> <p>♦ নবজাতক শিশুটির পাকস্থলীর গঠন প্রকৃতি থাকে দুর্বল। এ সময় তাদের হজমশক্তি কম থাকায় কিছুটা গ্যাস সৃষ্টি হয় বটে।</p> <p>♦ বাইরের বাজারজাত ফর্মুলা মিল্ক ও ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়ালে বোতলে অতিরিক্ত ফেনা বা বাতাস জমার কারণে শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি হয়।</p> <p>♦ শিশুর পেটে বাতাস ঢোকার ফলে পেট ফুলে যায় এবং পেটে কামড়ায় বা পেট ব্যথা করে বিধায় তারা অতিরিক্ত কান্না করে। বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলায় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।</p> <p>♦ মায়ের যদি বুকের দুধ বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয় বা যেসব বাচ্চা ফিডারে দুধ খায় এবং ফিডারের নিপলের ছিদ্র যদি মোটা হয় সে ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ও বেশি পরিমাণে দুধ বাচ্চার পেটে চলে যায়। পাশাপাশি অনেক পরিমাণে বাতাসও বাচ্চার পেটে প্রবেশ করে। ফলে শিশুর পেটে গ্যাসের উদ্রেক করে।</p> <p>♦ বিপরীতভাবে মায়ের বুকের দুধ কম আসলে বা ফিডারের নিপলের ছিদ্র যদি ছোট হয়, সে ক্ষেত্রে খুব ধীরগতিতে ও কম পরিমাণে দুধ আসার কারণে বাচ্চার পেটে অধিক বাতাস প্রবেশ করে এবং গ্যাসের সৃষ্টি হয়।</p> <p>♦ এ ছাড়া মায়ের কিছ সমস্যার কারণেও শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। যেমন—মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, অতিরিক্ত শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ ইত্যাদি।</p> <p>♦ শিশুর ছয় মাস বয়সে বাড়তি খাবার শুরু করার সময়ও পেটে গ্যাস হতে পারে।</p> <p>♦ একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে বাইরের খাবার বা জুস ইত্যাদি যাতে সুক্রোজ বা ফ্রুকটোজ বেশি থাকে, এটার কারণেও পেটে গ্যাস হতে পারে, হজমে ব্যাঘাত হতে পারে।</p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <p>♦ অস্থিরতা, ক্ষুধামান্দ্য।</p> <p>♦ অতিরিক্ত কান্না করা।</p> <p>♦ অতিরিক্ত মোচড়ানো।</p> <p>♦ পেট ফোলা ও তলপেট শক্ত হওয়া।</p> <p>♦ অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগ।</p> <p> </p> <p><strong>প্রতিকার</strong></p> <p>♦ প্রথমেই বলতে হয় যে এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এটা একটা সাময়িক সমস্যা মাত্র। তবে তিন-চার মাস পরে সাধারণত এ সমস্যা আর থাকে না।</p> <p>♦ শিশুকে সঠিক পদ্ধতিতে দুধ খাওয়াতে হবে। অর্থাৎ শিশু ও মায়ের দুধ খাওয়ানোর অবস্থান ও সংযুক্তি সেটা ঠিকমতো হতে হবে। শিশুর মাথাটা একটু উঁচু রাখতে হবে। শিশুকে শুইয়ে দুধ না খাওয়ানোই ভালো। এতে পেটে বেশি বাতাস ঢুকে এ সমস্যা করতে পারে।</p> <p>♦ শিশুকে সব সময় বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। বাজারের ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো ঠিক নয়। কারণ ফর্মুলা মিল্কে সাধারণত কিছু উপাদান সংযুক্ত থাকে, যা নবজাতকের গ্যাসের উদ্রেক করে।</p> <p>♦ ফিডারে দুধ না খাওয়ানোই ভালো। কারণ ফিডারের মাধ্যমে শিশুর পেটে সবচেয়ে বেশি বাতাস ঢোকে।</p> <p>♦ দুধ খাওয়ার পরে শিশুকে সোজা করে কাঁধে নিয়ে পাঁচ মিনিট হাত দিয়ে পিঠ চাপড়ে দেওয়া ভালো। অর্থাৎ ঢেকুর তোলানো, যেটাকে বলা হয় ‘বারপিং’। এতে অতিরিক্ত গ্যাসটা বের হয়ে যায়, বাচ্চা আরাম পায়।</p> <p>♦ শিশুর শরীর ও পেটে ম্যাসাজ করলেও কিছুটা উপকার পাওয়া যেতে পারে। যেমন—শিশুকে কিছুক্ষণ উপুড় করে শুইয়ে রাখা। শিশুর পেটে আলতো করে আঙুল দিয়ে ওপর দিক থেকে নিচের দিকে টেনে টেনে বাতাস বের করে দেওয়া যেতে পারে। এতে গ্যাস বের হয়ে যাবে অনেকটাই।</p> <p>♦ শিশুর শরীর হালকা গরম পানি দিয়ে মুছিয়ে দিলে বা গোসল করিয়ে দিলে গ্যাস বের হওয়াটা ত্বরান্বিত হয়।</p> <p>♦ মায়ের যেসব খাবারে গ্যাস হয়, সেসব খাবার পরিহার বা নিয়ন্ত্রিতভাবে গ্রহণ করা উচিত। যেমন—অতিরিক্ত শর্করা বা বাদাম বা ডালজাতীয় খাবার, দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার, অতিরিক্ত মসলাদার খাবার পরিহার করে চলা ভালো।</p> <p>  </p> <p>লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ</p> <p>পরিচালক, ডক্টরস পয়েন্ট স্পেশালাইজড হসপিটাল, খুলনা</p>