<p>বক্ষব্যাধি কথার সরল অর্থ হচ্ছে বুকের রোগ। মানুষের বুকে যত রকমের রোগ হতে পারে তার সবই বক্ষব্যাধির অন্তর্ভুক্ত। বুকে রয়েছে দুটি ফুসফুস ও একটি হার্ট। এর সঙ্গে দুটি ফুসফুসের মাঝে যে স্থান রয়েছে সেটাকে বলা হয় মিডিয়াস্টিনাম। সেখানে কিছু রক্তনালি ও কিছু লিম্ফনোড আছে। মূলত ফুসফুস, হার্ট ও মিডিয়াস্টিনামের রোগগুলোকে বুকের রোগ বলা হয়।</p> <p> </p> <p><strong>বুকে কী কী রোগ হতে পারে</strong></p> <p>বুকের কমন রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসনালির রোগ যেমন অ্যাজমা ও সিওপিডি। যেকোনো এলাকায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ অ্যাজমায় ভুগে থাকে। তবে সিওপিডির হার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। কারণ এর পেছনে বিভিন্ন ফ্যাক্টর থাকে। বয়স চল্লিশের পর সাধারণত এই রোগ দেখা যায়। বিশেষ করে ধূমপায়ীদের বেশি হয়। এ ছাড়া টিউবারকুলোসিস বা টিবি, ফুসফুসের ক্যান্সার, লিম্ফোমা, বুকে পানি জমা, কার্ডিয়াক ফেইলিওর, কফ, কাশি, ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্ট।</p> <p> </p> <p><strong>চিকিৎসা</strong></p> <p>একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের কাছে রোগীদের শ্বাসকষ্ট সমস্যা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। প্রশ্ন দেখা দেয়, এটা ফুসফুসের রোগ, নাকি হৃদরোগ? এটা রোগীর বয়স, ইতিহাস, ইসিজি, বুকের এক্স-রে, ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করলেই সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। অ্যাজমা বা সিওপিডির কারণে যে কাশি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং হার্ট ফেইলিওরের কারণে যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তার চিকিৎসা সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। একজন দক্ষ চিকিৎসক এটা নির্ণয় করে পৃথক চিকিৎসা করতে পারেন।</p> <p> </p> <p><strong>দেশেই উন্নত চিকিৎসা</strong></p> <p>অনেকেরই হয়তো ধারণা, আমাদের দেশে বক্ষব্যাধির উন্নত বিশ্বের মতো আধুনিক চিকিৎসা হয় না। ধারণাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। সব দেশেরই চিকিৎসা পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। সবাই যে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন সেটা বলাও সমীচীন নয়। যাঁদের সুযোগ আছে তাঁরা ইচ্ছা করলে বক্ষব্যাধির উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞরা অ্যাজমা, সিওপিডি, টিউবারকুলোসিস, ফুসফুসের ক্যান্সার, ফুসফুসে পানি জমা, ইম্পেফাইসেমা যেটিই হোক না কেন, তার সুচিকিৎসা দিচ্ছেন। এই চিকিৎসার মান বিশ্বের বড় হাসপাতালগুলোর চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।</p> <p> </p> <p><strong>জটিল অপারেশনও দেশেই</strong></p> <p>বুকের কিছু অসুখ শুধু ওষুধে ভালো হয় না। এর জন্য প্রয়োজন হয় অস্ত্রোপচারের। বক্ষব্যাধির দক্ষ সার্জনরা ফুসফুস ও খাদ্যনালির জটিল অপারেশন খুব সফলতার সঙ্গে করছেন। ফুসফুস ক্যান্সার লেভেল দুই, এমনকি থ্রি স্টেজে পর্যন্ত গেলেও সে অপারেশনগুলো এখন দেশেই সফলতার সঙ্গে করা সম্ভব।</p> <p>আধুনিক কিছু পরীক্ষা যেমন ফাইবার অপটিক ব্রংকোস্কপি বা এফওবির (বক্ষব্যাধি হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন হয়) দ্বারা ক্যান্সার নির্ণয় করা অনেকটা সহজ এখন। এতে অনেক আগেই ক্যান্সার নির্ণয় করা যায় এবং অপারেশন করে রোগীকে সুস্থ করা যায়। অন্যদিকে রয়েছে ভিডিও অ্যাসিস্টেক থোরাকোস্পিক সার্জারি, যা অনেকটা ল্যাপারোস্কোপিক যন্ত্রের মতো। এটি দিয়ে একটা ছোট্ট ছিদ্র করে বুকের ভেতরে ঢুকে ছোট ছোট অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে প্লুরাল ডিজিজগুলো অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে।</p> <p>মোট কথা, আধুনিক বিশ্বের উন্নত বক্ষব্যাধি রোগের চিকিৎসা ও অপারেশনগুলো এখন বাংলাদেশেই হচ্ছে। জনগণের চাহিদার তুলনায় হয়তো সংখ্যায় বেশি নয়; কিন্তু মানের দিক দিয়ে উন্নত বিশ্বের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় বলে আমরা মনে করি।</p>