রাজধানীর সবচেয়ে কাছের শিল্পশহর গাজীপুরকে বলা হয় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। অতীতে এসব আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে আসছেন। আসন্ন নির্বাচনেও সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। তফসিল ঘোষণার পরপরই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন।
গাজীপুরে ফুরফুরে আওয়ামী লীগ, আতঙ্কে বিএনপি
শরীফ আহমেদ শামীম, গাজীপুর

গাজীপুর-১
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর মহানগরীর ১-১৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর-১ আসনের মোট ভোটারসংখ্যা ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৫৪৫। ১৯৭৯ সালের নির্বাচন ছাড়া আর কোনো নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ইতিহাস নেই। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী বিজয়ী হন।
গাজীপুর-২
এ আসনে ভোটারসংখ্যা সাত লাখ ৪৮ হাজার ১৪১। নানামুখী উন্নয়ন এবং মজবুত সাংগঠনিক ভিত্তির কারণে গাজীপুর শহর ও টঙ্গী নিয়ে গঠিত গাজীপুর-২ আসনে ভোটের মাঠে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের জাহিদ আহসান রাসেল। নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সালাহউদ্দিন সরকার শুধু নতুন মুখই নন, এলাকা ও নিজ দলেও অপরিচিত। এ কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থীর কারণে রাসেলের চতুর্থ বিজয় প্রায় নিশ্চিত বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এখানে সাংগঠনিকভাবেও আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। বাবা আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপি থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন রাসেল। ২০০৮ ও ২০১৪ সালেও তিনি বিজয়ী হন। এবারও মনোনয়ন পেয়ে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন রাসেল। অন্যদিকে এ আসনে প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক মান্নান এ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হন। পরবর্তী সময়ের নির্বাচনগুলোতে বিএনপি এ আসনে বিজয়ী হতে না পারলেও ২০১৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক মান্নান। তিনি প্রার্থী হতে না পারলেও ছেলে মঞ্জুরুল করিম রনী বাবার ইমেজ ও পরিচিতির কারণে মনোনয়ন পাচ্ছেন—এ রকম ধারণা ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন পান জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকার। নিজ দল ও এলাকায়ই তিনি ততটা পরিচিত নন। পোস্টার-লিফলেটের প্রচারণায়ও তিনি পিছিয়ে।
গাজীপুর-৩
গাজীপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি বলা হয় গাজীপুর-৩ আসনকে। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এ আসনে টানা পাঁচবার নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী। বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর পরিবর্তে এবার শ্রীপুর উপজেলা ও সদর উপজেলার ভাওয়াল গড়, মির্জাপুর ও পিরুজালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে দল মনোনয়ন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজকে। তিনি শ্রীপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। শ্রীপুরে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। চার লাখ ৩৬ হাজার ভোটারের এ আসনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী। এলাকায় তাঁর পরিচিতি নেই বললেই চলে। বিএনপির একটি বড় অংশ তাঁর মনোনয়ন নিয়ে অখুশি। এরই মধ্যে তাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও দুই যুগ্ম সম্পাদক গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গাজীপুর-৪
কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদকন্যা সিমিন হোসেন রিমি। এবারও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাবেক প্রভাবশালী নেতা প্রয়াত হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান। দুজনই এলাকায় সমানতালে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। কাপাসিয়ার মানুষ তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের প্রতি দুর্বল। এ কারণে তাঁর মেয়ে রিমি নির্বাচনী দৌড়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও নেতাকর্মীদের একটি অংশ এখনো রয়েছে দূরে। রিয়াজুল হান্নানও বাবার ইমেজ নিয়ে প্রার্থী হয়ে এরই মধ্যে ভালো অবস্থান তৈরি করেছেন।
গাজীপুর-৫
কালীগঞ্জ উপজেলা, সদর উপজেলার বারিয়া ইউনিয়ন ও গাজীপুর-মহানগরীর পুবাইল এলাকার চারটি ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর-৫ আসন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি ১৯৯৬ সালে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য এবং ২০০৮ সালে বিএনপির ফজলুল হক মিলনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালেও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মাঠে রয়েছেন। সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ করেছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ফজলুল হক মিলনও শক্তিশালী প্রার্থী। গত বুধবার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় পুলিশ নাশকতার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আবার মহাজোটের মিত্র জাতীয় পার্টি এ আসনে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি রাহেলা পারভীন শিশিরকে মনোনয়ন দিয়েছে। মিলন কারাগারে থাকায় ফুরফুরে অবস্থানে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী চুমকি।
সম্পর্কিত খবর