<p>বিশ্বের সব প্রান্তের বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের মগ্ন। তাঁদের প্রচেষ্টায় ঢালা হচ্ছে লাখ লাখ ডলার। লক্ষ্য একটাই, ছয় মাসের মধ্যে প্রতিষেধক আবিষ্কার করা। কিন্তু করোনাভাইরাস যে হারে ছড়াচ্ছে, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, তাতে ছয় মাস যেন থমকে থাকা দীর্ঘ সময়। তার পরও আশা ছাড়ছেন না বিজ্ঞানীরা।</p> <p>চীনজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের আক্রমণে দেশটিতে এরই মধ্যে ৮০০ জনের বেশি মারা গেছে। সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আরো ২৪টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত করা হয়েছে।</p> <p>যেকোনো প্রতিষেধক আবিষ্কারে যেখানে বছরের পর বছর লেগে যায়, সেখানে করোনাভাইরাস ঠেকাতে ছয় মাসের দুঃসাধ্য পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের জ্যেষ্ঠ গবেষক কেইথ চ্যাপেল বলেন, ‘পরিস্থিতির চাপটা খুব বেশি এবং আমাদের ওপর অনেক চাপ কাজ করছে।’ তবে বিশ্বের আরো অনেক বিজ্ঞানী এ কাজে হাত লাগিয়েছেন, সেটা জেনে ‘কিছুটা সান্ত্বনা’ অনুভব করছেন তিনি। কারণ তাঁর আশা, এত সব বিজ্ঞানীর মধ্যে কেউ একজন ঠিকই সফল হবেন।</p> <p>করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের বিশ্বজনীন চেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে কোলিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ারডনেস ইনোভেশন (সিইপিআই)। পশ্চিম আফ্রিকার এবোলা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে জৈব-প্রযুক্তিবিষয়ক ব্যয়বহুল গবেষণায় অর্থায়নের লক্ষ্যে এ সংস্থার উদয়। সংস্থাটি এবার করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে বিশ্বব্যাপী চারটি গবেষণায় অকাতরে অর্থ ঢালছে। প্রতিষেধক আবিষ্কারের লক্ষ্যে আরো কেউ গবেষণায় আগ্রহী হলে সেখানেও অর্থায়নে প্রস্তুত তারা।</p> <p>সিইপিআইর প্রধান নির্বাহী রিচার্ড হ্যাচেট জানান, আগামী চার মাসের মধ্যে প্রতিষেধক আবিষ্কার করে সেটা ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে পরীক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা।</p> <p>ছয় মাসের মধ্যে প্রতিষেধক আবিষ্কারের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, ও সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়া ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নিয়ে। তাঁদের লক্ষ্যমাত্রা ২০ মাস। উপদ্রুত চীনেও চলছে জোর প্রচেষ্টা।</p> <p>প্রতিষেধক আবিষ্কার হলেও এর কার্যকারিতা পরীক্ষা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে, এমনটা মনে করেন সিঙ্গাপুরের ডিউক-এইউএস মেডিক্যাল স্কুলের নতুন ধরনের সংক্রামক রোগবিষয়ক প্রগ্রামের ডেপুটি পরিচালক ওই ইং ইওং। তিনি জানান, করোনাভাইরাসে বিস্তৃতি ক্রমাগত বাড়তে থাকলে মানুষ নতুন প্রতিষেধক গ্রহণ করার ঝুঁকি নিতে রাজি হবে। কিন্তু সংক্রমণের হার কমে এলে তখন মানুষ আর ঝুঁকি নিতে চাইবে না। সুতরাং নতুন প্রতিষেধক আবিষ্কারের পর ওই সময়ের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে, ওই প্রতিষেধক কাজে লাগিয়ে সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা কতখানি।</p> <p>প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগেই যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তা সত্ত্বেও গবেষণা চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন সিঙ্গাপুরের জৈব-প্রযুক্তিবিষয়ক কম্পানি একিউমেন রিসার্চ ল্যাবরেটরিজের পরিচালক ওং সিউ হোয়া। তিনি বলেন, ‘আমার মতে, প্রতিষেধকের গুরুত্ব থাকবেই। এখন না লাগলেও পরবর্তী সময়ের জন্য সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’</p> <p>এখন যেহেতু করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক নেই, আপাতত চিকিৎসকদের অনেকে রেট্রোভাইরালরোধী ওষুধ এবং সাধারণ ঠাণ্ডা জ্বরের ওষুধ প্রয়োগ করছেন। তবে তাতে কতটা কাজ হচ্ছে, সে বিচার করা আপাতত সম্ভব হয়নি।</p> <p>সূত্র : এএফপি।</p>