ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭
বিজ্ঞান

পর্যায় সারণি

  • পর্যায় সারণির ওপর যার দখলদারি ভালো রসায়নে সে ভালো করবেই; এমনকি বড় হয়ে রসায়নে বড় ডিগ্রি নিতে গেলেও ঘুরে-ফিরে আসবে গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায়ের প্রসঙ্গ। সুতরাং শুরুতেই পর্যায় সারণি নিয়ে ধারণা পাকাপোক্ত হওয়া জরুরি। লিখেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
পর্যায় সারণি

একটা সময় ছিল যখন বিজ্ঞানীদের কাছে আবিষ্কার হওয়া মৌল ছিল সংখ্যায় একেবারেই কম। একজন একজন করে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন চিন্তার বিজ্ঞানীরা একে একে নতুন মৌল আবিষ্কার করতে শুরু করলেন। আবিষ্কার হওয়া মৌলের সংখ্যা যখন অর্ধশতের কাছাকাছি চলে যায়, বিজ্ঞানীদের কাছে মাথাব্যথার একটা কারণ হয়ে দাঁড়ায় প্রতিটি মৌলের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মগুলো মনে রাখার। লুথার মেয়ার, নিউল্যান্ড থেকে বিজ্ঞানী ম্যান্ডেলিভ সে সমস্যারই কিছুটা সমাধান করতে নেতার ভূমিকায় কাজে মনোযোগ দেন।

প্রথমে তাঁরা খেয়াল করলেন, এই মৌলগুলোর কয়েকটির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম একে অপরের সঙ্গে প্রায় মিলে যায়; তখন তাঁরা এই মৌলদের সংসার থেকে কিছু মৌলকে গুচ্ছ গুচ্ছ ভাগ করে শ্রেণিবিভাগ করতে শুরু করেন। নিউল্যান্ড আটটি করে নিয়ে অষ্টক তত্ত্ব, আবার ম্যান্ডেলিভ প্রথমে ভর নিয়ে একটা সারণি তৈরি করলেন। মৌলের এই সংসারটাকে সহজভাবে জানতে কিন্তু ম্যান্ডেলিভের এই কাজে কিছু ভুল বা সূত্রে ব্যতিক্রমী ধর্ম অনেকে খেয়াল করেন। প্রথমে ম্যান্ডেলিভ প্রতিবেশী বিজ্ঞানীদের এসব কথা কানে তোলেননি।

কিন্তু হেনরি মোসলে কিছুদিন পর যখন মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা আবিষ্কার করলেন, তখন ম্যান্ডেলিভ তাঁর কাজের খাতাটা একটু নেড়েচেড়ে দেখলেন। তিনি মৌলগুলোকে পারমাণবিক ভরের বদলে পারমাণবিক সংখ্যার ক্রম আকারে সাজান। তারপর তিনি আনন্দের সঙ্গে খেয়াল করেন। এবারে তাঁর সারণিতে সীমাবদ্ধতা নেই বললেই চলে।

তিনি আরো খেয়াল করলেন মৌলগুলোর ধর্মগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে আবর্তিত হয়। অর্থাৎ একবার একটি ধর্মের পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়ে শেষ, আবার পরবর্তী পর্যায় থেকে পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়ে শেষ। এবং পরবর্তী সময়ে আবারও একই কথার পুনরাবৃত্তি। পর্যায়ক্রমিক সেই পর্যায় থেকেই নাম হয় ‘পর্যায় সারণি’।

প্রত্যেক রসায়নবিদের কাছেই এ সারণি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ হুট করে একটা মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে জানতে এর বিকল্প নেই। প্রথম মৌল হাইড্রোজেন থেকে ২০তম মৌল Ca পর্যন্ত মনে রাখার একটা কৌশল দেখানো যাক—

সূত্রটা হলো ‘হিলিব’ নামের পৃথিবীর মানুষ আছে—সে মূলত বোকা না। আর ওই দিকে আসিফ তার আপুকে বোকা বলল। মজার এই লাইন মনে রাখলেই প্রথম ২০টা মৌল সহজে মনে রাখা যায়।

ম্যান্ডেলিভের পর্যায় সারণিতে মোট সাতটি পর্যায় ও ১৮টি গ্রুপ রয়েছে। ইলেকট্রনবিন্যাসের ওপর ভিত্তি করে গ্রুপ ও পর্যায়ে মৌলগুলোকে স্থান দেওয়া হয়েছে।

এ পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোর কক্ষপথ সংখ্যা পর্যায় সংখ্যার সমান।

প্রথম গ্রুপের মৌলগুলোকে বলা হয় ‘ক্ষার ধাতু’। দ্বিতীয় গ্রুপেরগুলো মৃত্ক্ষার ধাতু। ১৬ নম্বর গ্রুপের মৌলগুলোকে বলা হয় চালকোজেন। ১৭ নম্বরেরগুলো হ্যালোজেন। ১৮ নম্বর নিষ্ক্রিয় গ্যাস।

সাধারণ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ধাতুগুলো হ্যালোজেন, চালকোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। নিষ্কিয় গ্যাস বিক্রিয়া করে না। তাই এদের শূন্য গ্রুপ নাম দেওয়া হয়েছে। মানে যোজনী শূন্য।

পারমাণবিক আকার ছাড়া মৌলগুলোর পর্যায়ভিত্তিক সব ধর্মই একই পর্যায়ের বাঁ থেকে ডানে বৃদ্ধি পায়। আবার তা গ্রুপের ওপর থেকে নিচে হ্রাস পায়। তবে এত সুবিধা থাকার পরও বর্তমান পর্যায় সারণির কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে ঘোর এখনো কাটেনি। আছে H ও He-এর অবস্থান এবং ল্যান্থ্থানাইড ও অ্যাকটিনাইড সিরিজকে মূল পর্যায় সারণির বাইরে স্থান দেওয়া নিয়ে বিতর্ক। তবে সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করব আরেক দিন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ