দেশে ২০২৪ সালে বেশ কিছু বিখ্যাত ও গুণী মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিধ, ভাস্কর, ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্রকার, গীতিকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। এসব গুণীজনদের মৃত্যু হলেও রেখে যাওয়া কর্ম ও আদর্শের কারণে তাঁরা বেঁচে থাকবেন। এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন প্রায় ৮৬২ ছাত্র-জনতা।
যাঁদের হারিয়েছি
মোবারক আজাদ

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও খ্যাতিমান চিকিৎসক অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (৯৪) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৪ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লায় নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রোগ বিজ্ঞানে দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপক ছিলেন।
২০ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের বিমান ও পর্যটন এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ (৮৩) মারা গেছেন। উপদেষ্টা হাসান আরিফ একজন শীর্ষ আইনজীবী, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। তিনি ১৯৪১ সালের ১০ জুলাই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর, মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু (৯৩) রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ মার্চ মারা যান।
‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ অমর এই পঙক্তির রচয়িতা কবি হেলাল হাফিজ ১৩ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়েই মানুষের হৃদয়ে আসন করে নেন হেলাল হাফিজ। দ্রোহ ও প্রেমের এই কবির জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায়। নেত্রকোনা শহরে কেটেছে কবির শৈশব, কৈশোর ও প্রথম যৌবন।
ষাট ও সত্তরের দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হাসিনা মমতাজ (৭৯) ১৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান। হাসিনা মমতাজ ১০ মার্চ ১৯৪৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা (৭৫) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ জুন মারা যান। তিনি ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী (৮২) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ অক্টোবর মারা যান। মতিয়া চৌধুরীর জন্ম ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক মজিবর রহমান (৯৪) বার্ধক্যের কারণে ৫ অক্টোবর রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর জন্ম ১৯৩১ সালের ১ মার্চ।
নন্দিত অভিনেতা আহমেদ রুবেল (৫৬) ৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তিনি ১৯৬৮ সালের ৩ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর গ্রামে জন্ম নেন।
নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে বেড়ে ওঠা প্রায় শতবর্ষী কিংবদন্তি নেত্রী কুমুদিনী হাজং বার্ধক্যজনিত কারণে ২৩ মার্চ মারা যান। তাঁর ব্রিটিশ শাসনামলের ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহে ছিল অনন্য ভূমিকা। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসক ও জমিদারদের যুগপৎ শোষণের বিরুদ্ধে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীতযোদ্ধা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম মৃত্যুবরণ করেন ১৭ অক্টোবর। ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেটে সুজেয় শ্যামের জন্ম।
যে দাবাকে ধ্যান-জ্ঞান করেছিলেন, সেই দাবা খেলতে খেলতেই হার্ট অ্যাটাকে ৬ জুলাই মারা গেলেন গ্র্যান্ড মাস্টার জিয়াউর রহমান (৫০)। ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া জিয়া ২০০২ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড মাস্টার হওয়ার খেতাব অর্জন করেন।
২০২৪ সালের ১৩ মার্চ মারা যান প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ (৬৭)। অজানা এক অভিমানে আত্মহত্যা করেন এই গুণী সংগীতশিল্পী। সাদী মহম্মদের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে বেড়ে ওঠেন।
খ্যাতিমান লেখক, প্রাবন্ধিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক (৭৬) গত ২৫ জুলাই মারা যান। ড. মাহবুবুল হক আট বছর ধরে হৃদরোগ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালীতে জন্মগ্রহণ করেন।
২২ এপ্রিল আরেক অভিনেতা অলিউল হক রুমি মারা যান। ১৯৬৪ সালের ২৪ অক্টোবর বরগুনায় জন্মগ্রহণ করেন রুমি।
১১ ডিসেম্বর একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের অন্যতম রবীসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার (৭২) মারা যান। কয়েক বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন পাপিয়া সারোয়ার। পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম ১৯৫২ সালে বরিশালে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক অধ্যাপক আবদুল গফুর (৯৫) রাজধানীর একটি হাসপাতালে ২৭ সেপ্টেম্বর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ১৯২৯ সালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের খোর্দ্দদাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
জনপ্রিয় ব্যান্ডদল মাইলসের মেইন ভোকাল সংগীতশিল্পী ও সুরকার শাফিন আহমেদ (৬৩) যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ জুলাই মারা যান। শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তিনি ব্যান্ডদল মাইলসের বেজ গিটারিস্ট এবং প্রধান গায়ক ছিলেন।
বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান গত ৩১ অক্টোবর মারা যান। পাঁচ শরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এই অভিনেতা ১৯২৯ সালের ৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জের পারিল নওধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৬ নভেম্বর দেশের ১৮তম সাবেক প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম (৮১) মারা যান। ১৯৪৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি ফজলুল করিম।
গত ৫ ডিসেম্বর বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শিক্ষক আবু জাফর ইন্তেকাল করেন। আবু জাফর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
সম্পর্কিত খবর

সড়ক নৌপথে ডাকাতিতে নিহত ১২
- সেভ দ্য রোডের তথ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২৪ সালে সড়কপথে ৯৬টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে ডাকাতদলের হামলায় ১৫৫ জন আহত এবং একজন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে নৌপথে ১৬১টি ডাকাতির ঘটনায় সর্বশেষ খুন হওয়া সাতজনসহ ১১ জন নিহত হয়েছে। ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সোমবার এই তথ্য জানান সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা।
শান্তা ফারজানা বলেন, সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো সত্ত্বেও সড়কে প্রতি তিন কিলোমিটার অন্তর পুলিশ বুথ বা ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন না করা, হাইওয়ে পুলিশসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পুলিশ-প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে।
সেভ দ্য রোডের মহাসচিব বলেন, নৌপথে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার সুযোগে অন্যান্য বছরের তুলনায় বিদায়ি বছরে ডাকাতি বেড়েছে। নৌপথে ১৬১টি ডাকাতির ঘটনায় সর্বশেষ খুন হওয়া সাতজনসহ ১১ জন নিহত হয়েছে। রেলপথে মহাখালীতে দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া ইটপাটকেলে ৫৩ জন আহত হয়েছে।

জনপ্রশাসন
বঞ্চিতের নামে পদোন্নতি নিয়েছেন দুর্নীতিবাজরাও
উবায়দুল্লাহ বাদল

বিদায়ি ২০২৪ সালের শুরুতেই একতরফা জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও বছরের মাঝপথেই শুরু হয় প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়। সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে প্রশাসনে শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়।
রাজনৈতিক ‘তকমা’ দিয়ে যাঁদের দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল, তাঁদের ভাগ্য খুলে যায় প্রশাসনের এই সুনামিতে।
এসব ঘটনার মধ্যেই গঠন করা হয় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সেখানেও শুরু হয় প্রশাসনিক সুনামি।
এরই মধ্যে গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা রহস্যজনক। আগুনে পুড়ে ছাই হয় চার-পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ। তবে কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে এ বছরই। চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। সরকারি চাকুরেদের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রদান প্রতিবছর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেই আজ শেষ হচ্ছে ২০২৪ সাল।

‘স্বতন্ত্র-স্বাধীন’ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়
মেহেদী হাসান পিয়াস

তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংস্কারের পথে রয়েছে দেশ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে এর মধ্যেই দাবি উঠেছে সংসদ নির্বাচনের। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ বিচার বিভাগও হাঁটছে সংস্কারের পথে। একটি স্বতন্ত্র-স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় যা করণীয়, তা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঘোষণা করেছেন স্বাধীন বিচার বিভাগের রূপরেখা। সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে সংবিধানে ফিরে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অসদাচরণের তদন্ত ও অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল, যা স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন, আদালতের রায় : প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো।
স্বতন্ত্র-স্বাধীন বিচার বিভাগে প্রধান বিচারপতির
রূপরেখা : ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সুপ্রিম কোর্ট ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পক্ষে মতামত জানালে ওই দিনই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। একই দিন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১০ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। ওই দিন রাতেই সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরদিন তিনি শপথ নেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পরদিন আপিল বিভাগে চার বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচার বিভাগের দায়িত্ব নিয়েই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ‘প্রকৃত স্বাধীন বিচার বিভাগ’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। গত ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রীকরণের গুরুত্ব তুলে ধরে বিচার বিভাগ সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করেন। এরপর বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রয়োজনীয় আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার, স্বতন্ত্র ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি ও শৃঙ্খলায় আচরণবিধি প্রণয়ন এবং উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়নের পদক্ষেপ নেন।
১২ বিচারপতিকে সরিয়ে দেওয়া : ১৬ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দোসর’ বিচারপতিদের পদত্যাগ ও অপসারণের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ওই দিনই হাইকোর্টের ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
রায়ের পর তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল : স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রশ্নে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি একটি মাইলফলক রায়। এই সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরে আসে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাত বছর আগে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। পরে এ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। এই আবেদন নিষ্পত্তি করে গত ২০ অক্টোবর সাত বছর আগে দেওয়া রায়ই বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

আলোচনার কেন্দ্রে শহীদ আবু সাঈদ
রফিকুল ইসলাম, রংপুর

২০২৪ সালের বিদায়ঘণ্টা বাজছে। দুয়ারে কড়া নাড়ছে ২০২৫ সাল। বিশ্বজুড়ে প্রস্তুতি চলছে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার। বিদায়ি বছরটি দেশে-বিদেশে নানা কারণে আলোচিত।
কোটা সংস্কার আন্দোলন তখনো দাবানলে পরিণত হয়নি। তবে ধীরে ধীরে বেগবান হচ্ছিল আন্দোলন। সেই আন্দলোনের স্ফুলিঙ্গ ঠেকাতে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের চাপ বাড়ছিল, চাপ ছিল প্রশাসনেরও।
১৪, ১৫ ও ১৬ জুলাই। ঢাকার কর্মসূচির সঙ্গে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন। প্রতিহত করতে স্থানীয় আওয়ামি লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাধা দিয়ে পার্ক মোড়ে অবস্থান নেন।
কেন আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হলো এ নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে রংপুর। পুলিশি বাধা, গ্রেপ্তার, হয়রানির ভয় তুচ্ছ করে বৃষ্টিতে ভিজে রংপুরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মিছিল বের করে সৃষ্টি করেন প্রতিবাদের নতুন ইতিহাস। শেখ হাসিনার পতনের এই আন্দোলনের বড় দিকপাল হয়ে ওঠেন আবু সাঈদ।