<p style="text-align:justify">এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৩ দপ্তর ও সংস্থাকে আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এসব দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাদের পদত্যাগের আহবান জানিয়েছে তারা।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রব্যমূল্য কমানোর আলটিমেটাম" height="240" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/12/1723407163-2990dbdbd247df9a41c2461cdcd605c5.jpg" style="float:left" width="400" />গতকাল রবিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময়সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা এ আলটিমেটাম দেন।</p> <p style="text-align:justify">জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকিসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ মতবিনিময়সভার আয়োজন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">সভায় বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আমরা এত দিন নানা ধরনের অন্যায়, অনিয়মের সঙ্গে ছিলাম। এখন আমাদের শপথ করতে হবে—আমরা আর দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অন্যায়, সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, দখলদারি করব না। এটা আমাদের মনে ধারণ করতে হবে। এরপর রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">তা না হলে আমাদের এত আত্মত্যাগ বৃথা হয়ে যাবে।’ এ সময় তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো প্রতিটি সেবা খাতের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার আহবান জানান।<br /> শিক্ষার্থীদের বাজার মনিটরিং কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থাপনার অনিয়ম ও অবৈধ সিন্ডিকেটের নথিপত্র ছাত্রদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এগুলো শিক্ষার্থীরা বিশ্লেষণ করবে।</p> <p style="text-align:justify">ফেসবুকে ভুয়া জিনিস ঘুরছে। শিক্ষার্থীদের সেসব জিনিস নজরদারি করতে হবে। সবাই পাশে দাঁড়ালে যে বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম সেটা নির্মাণ সম্ভব হবে।’</p> <p style="text-align:justify">বাজার সিন্ডিকেটের হোতা করপোরেট গ্রুপ উল্লেখ করে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘যেখানে হাত দিচ্ছি, সেখানেই অনিয়ম দেখছি। অনেকের সামনে মিডিয়া ক্যামেরা নিয়ে গেছি। এর পরও অনেক অনিয়ম বন্ধ করতে পারিনি। আমরা তোমাদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করতে চাই। তোমরা যেখানে হাত দেবে, সেখানে সোনা ফলবে।’</p> <p style="text-align:justify">মহাপরিচালক আরো বলেন, চাঁদাবাজি কমলেও পণ্যের দাম কমছে না। সেটাও দেখতে হবে। শ্যামবাজার থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত তিনটি পয়েন্টে চাঁদাবাজি হয়; সেটি বন্ধ করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় মতবিনিময়সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণা) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বাজার নিয়ন্ত্রণে যেসব সুপারিশ</strong></p> <p style="text-align:justify">বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। <br /> সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে : <br /> ১. ছাত্র-জনতা টিম করে প্রতিটি শহর, জেলা, উপজেলা, পাড়া, মহল্লায় বাজার মনিটর করতে হবে। তবে তারা কাউকে জরিমানা করতে পারবে না। আইন নিজের হাতে তোলা যাবে না। <br /> ২. প্রতিটি জেলা-উপজেলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতবিনিময়সভার আয়োজন করা। <br /> ৩. প্রত্যেক বিক্রেতার নিত্যপণ্য ক্রয়ের রসিদ রাখা। <br /> ৪. প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা টাঙানো। <br /> ৫. কেউ বাজার, রাস্তা, দোকান দখল করে ব্যবসা করলে তাকে উত্খাত করা। <br /> ৬. রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ ও প্রতিরোধ করা। <br /> ৭. প্রতিটি এলাকাভিত্তিক মূল্যতালিকা দেওয়া, যাতে কেউ বেশি দাম নিতে না পারে। <br /> ৮. ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জনবল বাড়ানো। <br /> ৯. দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা।</p> <p style="text-align:justify"><strong>মধ্যরাতে মনিটরিং</strong></p> <p style="text-align:justify">কাঁচাবাজারগুলো চাঁদাবাজমুক্ত ও ‘অতি মুনাফালোভীদের’ সতর্ক করতে এবং অতিরিক্ত মূল্য রোধে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারগুলোতে নিয়মিত মনিটরিংয়ে নামছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কাঁচাবাজার মনিটর করে শিক্ষার্থীরা। </p> <p style="text-align:justify">তারা বিক্রেতাদের সতর্ক করে বলে, যে দামে বিক্রি করা উচিত তার চেয়ে বেশি দাম নিয়ে যেন বাজার অস্থিতিশীল না করেন। এ সময় চালান কপিতে অসংগতি ও পাইকারি ক্রেতাদের মেমো না দেওয়ায় সতর্ক করা হয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে বলেও জানায় শিক্ষার্থীরা।</p> <p style="text-align:justify">কারওয়ান বাজারে প্রবেশের পর কাঁচামালভর্তি ট্রাকের চালান কপি পেলেও তাতে ক্রয়মূল্য না থাকায় আড়ত মালিককে সতর্ক করে শিক্ষার্থীরা। তবে আড়ত মালিকরা বলেছেন, গ্রাম থেকে কাঁচামাল কেনার সময় মেমো থাকে না। তবে এখন থেকে মেমো রাখার ব্যবস্থা করা হবে। গ্রাম থেকে ৩০ টাকায় কেনা পণ্য কারওয়ান বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন আড়ত মালিকরা। আবার পাইকারি ক্রেতাদের মেমো দিচ্ছেন না তাঁরা।</p> <p style="text-align:justify">শিক্ষার্থীরা বলছে, তারা চাচ্ছে আড়তদার একটি মেমো দেবেন, সে অনুযায়ী খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পর্যবেক্ষণ করবে। আড়ত মালিককে সতর্ক করার পর ভোক্তা অধিকারকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা বলে, এরই মধ্যে কারওয়ান বাজারের অনেক ফাঁকফোকর তাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। চাঁদাবজিসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ রোধে তারা মাঠে থাকবে।</p> <p style="text-align:justify">ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ চাঁদাবাজি করাসহ হিডেন চার্জ যাতে নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।</p>