<p style="text-align: justify;">আট বছরের শিশু নিষাদের হঠাৎ জ্বর। কিছুতেই এ জ্বর যায় না। এরপর পুরো শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যায়। শরীরের যেখানে ব্যথা, সেখানেই নীল হয়ে যাচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">নোয়াখালীর সদর হাসপাতালে পরীক্ষার পর নিষাদের শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত হয়। ভালো চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন।<br /> বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যালের শিশু রক্ত রোগ ও ক্যান্সার বিভাগে নিষাদের চিকিৎসার প্রথম ধাপ শেষে দ্বিতীয় ধাপের চিকিৎসা চলছে।</p> <p style="text-align: justify;">ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারাহ দীবা বলেন, নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে গেলে নিষাদ সুস্থ হয়ে উঠবে।</p> <p style="text-align: justify;">শুধু নোয়াখালীর নিষাদই নয়, ঢাকা মেডিক্যালের শিশু রক্ত রোগ ও ক্যান্সার বিভাগে বর্তমানে ওর মতো ৩০ জন শিশুর ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে। তাদের নিয়মিত পরীক্ষাসহ কেমোথেরাপি ও অন্যান্য সেবা বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারাহ দীবা বলেন, বেশির ভাগ ক্যান্সারের রোগীর চিকিৎসা অভিভাবকরা চালিয়ে যেতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিক্যালে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র রোগীদের জন্য নিয়মিত পরীক্ষাসহ কেমোথেরাপি বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জোহরা জামিলা খান বলেন, যেকোনো বয়সেই শিশুর ক্যান্সার হতে পারে। তবে রক্তের ক্যান্সার সাধারণত এক বছর বয়সের পর থেকে হয়। এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের এটি বেশি হয়। এ জন্য শরীর ব্যথা, ফোলা বা ফোলা ভাব, অনেক দিন ধরে জ্বর, মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরানো, হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া, ক্লান্তি ও স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ঘাম, হঠাৎ রক্তপাত এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">অধ্যাপক জোহরা জামিলা বলেন, রক্তের ক্যান্সার মূলত কেমোথেরাপিতে ভালো হয়ে যায়।</p> <p style="text-align: justify;">কিন্তু মাংসপেশি, অস্থি বা মস্তিষ্কের ক্যান্সার (যা টিউমার হিসেবে পরিচিত) হলে সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির দরকার হয়। তখন ঢাকাকেন্দ্রিক হাসপাতাল ছাড়া উপায় থাকে না।<br /> বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর অন্তত তিন লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। সাধারণত লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যান্সার বেশি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের এক-তৃতীয়াংশই লিউকেমিয়া। এসব শিশুকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে চিকিৎসা দিতে পারলে ৮০ শতাংশ সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের অভাব ও ব্যয়বহুল হওয়ায় ৯০ শতাংশ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু মারা যায়। </p> <p style="text-align: justify;">মিটফোর্ডে ওষুধ, কেমো সবই বিনা মূল্যে</p> <p style="text-align: justify;">রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু রোগীদের ওষুধ, কেমোথেরাপি ও পরীক্ষার সুযোগ বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গরিবদের অগ্রাধিকার রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আলিয়া শারমিন বলেন, শিশুর ক্যান্সার শনাক্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ মিলিয়ে প্রথম মাসেই রোগীর পেছনে এক লাখ টাকার দরকার হয়। পরীক্ষা করতেই ৬০ হাজার টাকার মতো লাগে। ওষুধে যায় ৪০ হাজার টাকা। দেখা যায়, অনেক রোগী টাকার অভাবে মাঝপথে এসে হাল ছেড়ে দেয়। ক্যান্সার রোগে আধা চিকিৎসা বলে কোনো কথা নেই, পুরোপুরি চিকিৎসা করাতে হয়। </p> <p style="text-align: justify;">ডা. আলিয়া শারমিন বলেন, ‘রক্তের ক্যান্সারে আড়াই থেকে তিন বছরে যত ওষুধ লাগে, এর মধ্যে অনেক ওষুধ বিনা মূল্যে দিয়ে থাকি। হাসপাতালে কিছু ওষুধের সরবরাহ কম থাকে। এগুলো বিভিন্ন ওষুধ কম্পানি থেকে কিনে অর্ধেক মূল্যে দিয়ে থাকি। এ ছাড়া কেমোথেরাপির যে ওষুধ লাগে, কমবেশি সব ওষুধ দেওয়া হয়। লিউকেমিয়ার দরিদ্র রোগীর সিটিস্ক্যান ও রক্তের পরীক্ষাগুলো বিনা মূল্যে করা দেওয়া হয়। দরিদ্র রোগীরা যাতে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে, এ জন্য এই ব্যবস্থা।’</p> <p style="text-align: justify;">ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মারুফ রেজা কবির বলেন, ব্লাড ক্যান্সারের রোগীর একটি বড় ধরনের ঝুঁকি হচ্ছে সংক্রমণ। রোগীর স্বজন যারা রোগীকে সেবা দিয়ে থাকেন, তাঁরা যথাসম্ভব রোগীর কাছ থেকে দূরে থাকলে ভালো। কারণ তাঁরাই হলো সংক্রমণের সোর্স। তাঁরা রোগীর চিকিৎসায় সহায়তা করবেন, ব্যস, এটুকু করলেই চলবে।</p>