<p>অগ্রণী ব্যাংক পদ্মা সেতু তৈরিতে এককভাবে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১.৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছে ব্যাংকটি। নিজস্ব রপ্তানি এবং প্রবাস আয় (রেমিট্যান্স) থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়েই ব্যাংকটি এই অর্থ সরবরাহ করে যাচ্ছে।</p> <p>ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল সংকট হলে তারাও বৈদেশিক মুদ্রা দেবে পদ্মা সেতুর জন্য। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক একাই এই অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করতে পারায় দেশের রিজার্ভে কোনো প্রভাব পড়েনি। অবশিষ্ট বৈদেশিক মুদ্রাও রাষ্ট্রায়ত্ত এই বাণিজ্যিক ব্যাংকটি সরবরাহ করবে বলে জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।</p> <p>পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় ৩.৫৬ বিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ৩১ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৯ টাকা ধরে)। তার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন হবে ২.৪ বিলিয়ন ডলার। বাকিটা স্থানীয় মুদ্রায় দেওয়া হচ্ছে।</p> <p>গত মঙ্গলবার এ নিয়ে কালের কণ্ঠ কথা বলে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ১.২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাল্পনিক অভিযোগ এনে তারা ঋণ প্রত্যাহার করে। চ্যালেঞ্জ সামনে এলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহস করে উদ্যোগ নিলেন নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার। অগ্রণী ব্যাংকও উৎসাহের সঙ্গে এই প্রকল্পের পুরো বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের দায়িত্ব নিল।</p> <p>শামস-উল ইসলাম বলেন, অগ্রণী ব্যাংক পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। সেতুটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্য অংশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করবে।</p> <p>সেতু বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানকে ধন্যবাদ দেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি। তিনি বলেন, ‘এই তিনজন ব্যক্তিত্ব পদ্মা সেতুতে হিসাব খোলা থেকে শুরু করে বৈদেশিক মুদ্রা জোগান দেওয়ার ব্যবস্থাটি আমাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গ্রহণ করেছিলেন। একই সঙ্গে বর্তমান সেতু বিভাগের সচিব, গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। তাঁদের সবাইকে অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ। ’</p> <p>২০১২ সালে পদ্মা সেতুর হিসাব খোলা হয়। সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে ডলার সরবরাহ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত মোট ডলার সরবরাহ করা হয়েছে ১.৪ বিলিয়ন ডলার। আরো অন্তত এক বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করতে হবে এই প্রকল্পে।</p> <p>শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর কমার্স ব্যাংক ও হাবিব ব্যাংক দুটি মিলিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের নামকরণ করেন তিনি। আমরা অগ্রণী নামের সার্থকতা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছি পদ্মা সেতুতে এককভাবে ডলার সরবরাহ করে। ’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমরা যে শুধু মুনাফা করব সেটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। সরকারি ব্যাংকের মালিক কিন্তু জনগণ। আমি মনে করি, এই কাজের মাধ্যমে আমরা জনগণকে তাদের প্রাপ্য ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) দিচ্ছি। বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে আমাদের আর্থিক মুনাফার পাশাপাশি সামাজিক মুনাফাও অর্জন করতে হবে। লাভের পাশাপাশি সামাজিক যে দায়বদ্ধতা সেটাও কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে। এই দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এই কাজটি করেছি। ’</p> <p>হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণকাজেও আর্থিক সহায়তা করেছে অগ্রণী ব্যাংক। ১৫টি বিদ্যুেকন্দ্রে অর্থায়ন করেছে ব্যাংকটি। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকায় অগ্রণী ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ভূমিকা রাখছে। নারী উদ্যোক্তা ও তাঁদের ক্ষমতায়নে জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকটি। কৃষিঋণ সহজলভ্য করার কারণেই আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে দেশ।</p> <p>অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও বলেন, “দেশ এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্সের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার জন্য ২০১০ সাল থেকে জামানতবিহীন একক ডিজিট সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। বিদেশে গিয়ে কর্মীরা যাতে সহজে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন এ জন্য বিভিন্ন দেশে আমরা রেমিট্যান্স হাউসের ব্যবস্থা করেছি। করোনাকালে বিদেশফেরতদের জন্য জামানতবিহীন নতুন একটি ঋণ চালু করেছি ‘প্রবাসীদের ঘরে ফেরা ঋণ’। যার সুদের হার মাত্র ৭ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংক এ দেশের গণমানুষের ব্যাংক হিসেবে যেন যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখতের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদসহ ১১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চলছে অগ্রণী ব্যাংক। ”</p> <p>অগ্রণী ব্যাংকের এমডি জানান, সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে সব সময় প্রথম। গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ে সরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম এবং সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। এজেন্ট ব্যাংকিং, ওবিইউ, ইসলামী ইউন্ডো প্রচলনসহ বিভিন্ন সূচকে সরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম। ২০১৯-২০ সালে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূল্যায়নে প্রথম হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এ ছাড়া সিএসএমই ও কৃষিঋণ প্রণোদনা খাতে অগ্রণী ব্যাংক সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এগিয়ে থাকায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র পায়।</p> <p><strong>এক ট্রিলিয়ন ক্লাবে অগ্রণী ব্যাংক</strong></p> <p>করোনার সময় প্রবাস আয়ের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে আরো ১ শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা দেয় অগ্রণী ব্যাংক। যার ফলে ব্যাংকটির রেমিট্যান্স প্রায় ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমনতের পরিমাণও এক লাখ কোটি টাকা বেড়ে সোনালী ও ইসলামী ব্যাংকের পর অগ্রণী ব্যাংক এক ট্রিলিয়ন ক্লাবের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে।</p> <p>বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে সিঙ্গাপুরে অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউসের রেমিট্যান্স অ্যাপ প্রচলন করা হয়। এটাও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে বলে জানান ব্যাংকটির এমডি। পরে এই অ্যাপটি সিঙ্গাপুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিম্পেক পদক পায়।</p> <p><strong>দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক হতে চায় অগ্রণী</strong></p> <p>ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক হতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। এরপর আমাদের লক্ষ্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এক নম্বর ব্যাংক হওয়া। আমাদের সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন হচ্ছে। তা শেষ হলে ডিজিটাল কার্যক্রমে আরো এগিয়ে যেতে পারব। তখন সব কাজ আরো সহজ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ই-অগ্রণী অ্যাপের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই অ্যাকাউন্ট খোলার কাজটি করতে পারছেন গ্রাহক। ’</p> <p>প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার চালু করেন বর্তমান এমডি। ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু কর্নারের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করার সরকারি নির্দেশনা জারি হয়।</p>