<p>নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হতে বাকি ছিল আধা ঘণ্টা। আগে থেকেই অধ্যক্ষকে ১৪ লাখ ও ১০ লাখ টাকা দেওয়া দুই প্রার্থীর সঙ্গে আলাদাভাবে শর্ত ছিল দুজনরেই দুই প্রক্সি প্রার্থী ছাড়া কেউ অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু পরীক্ষায় ১৬ জন প্রার্থী অংশ নেওয়ায় বাধে বিপত্তি। এ অবস্থায় ঘুষ নেওয়ার ঘটনা ফাঁস হলে স্থানীয় এক প্রার্থীর লোকজন ও গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে ঘুষ ফেরত দেওয়ার দাবি ওঠে। এ সময় পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সদস্যরা ছাড়াও ডিজির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাসহ অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে। পরে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়।</p> <p>আজ শুক্রবার (১০ মে) সকালে এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায়। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এক পর্যায়ে তিনি পুলিশ প্রহরায় মাদরাসা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।</p> <figure class="image" style="float:left"><img alt="মানুষ" height="373" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Nahid/Untitled-8.jpg" width="621" /> <figcaption>ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হলে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে</figcaption> </figure> <p>খবর পেয়ে আজ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসা চত্বরে গ্রামবাসী বিক্ষোভ করছে। অনেকে মিলে অধ্যক্ষ মো. আবদুল মান্নানকে কক্ষে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। গ্রামবাসী তাকে ঘুষখোর বলে অভিহিত করে বিচারের দাবিতে বাইরে থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। অন্যদিকে মাদরাসা পরিচালনা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. মতিউর রহমান মতিসহ অন্য সদস্যরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া চেষ্টা করছেন। নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীরা ভীতসন্ত্রস্থ অবস্থায় মাদরাসার বিভিন্ন কক্ষে অবস্থান করছিলেন।</p> <p>মাদরাসার বারান্দায় কথা হয় ঈশ্বরগঞ্জ থানার এসআই আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, অধ্যক্ষের অনুরোধে তিনি মাদরাসায় এসেছেন। পরিচালনা কমিটির সদস্য ছাড়াও গ্রামের লোকজনের মুখ থেকে টাকা লেনদেনের কথা শুনেছেন তিনি।</p> <p>জানা যায়, গত ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর একটি পত্রিকায় কম্পিউটার কাম অফিস সহকারী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন পেয়ে যাচাই-বাছাই করে ১৬ জনকে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় মাদরাসাতেই ছিল নিয়োগ পরীক্ষা। এর মধ্যে মাসুম বিল্লাহ মামুন ও মঞ্জুরুল হক নামে দুই প্রার্থী দেখতে পান অধ্যক্ষের সঙ্গে শর্ত মতে এত জন প্রার্থী আসার কথা নয়। এ ঘটনা নিয়ে দুজনই অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে ঘটনা জানতে চেয়ে প্রতিবাদ করলে পুরো ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।</p> <p>এ সময় প্রকাশ্যে সবার সামনে মামুন জানান, তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম ও পরিচালনা কমিটির সদস্য এরশাদুল হকের মাধ্যমে অধ্যক্ষের হাতে ১০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন এক বছর আগে। অপর দিকে মঞ্জুরুর হক জানান, তিনি কমিটির লোকজনের কাছে ১৪ লাখ টাকা দিয়েছেন চাকরি পাওয়ার আশায়। দুজনের ভিন্ন সময়ে দেওয়া এ ঘুষের ঘটনায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।</p> <p>এ সময় কয়েকজন চাকরি প্রার্থী বলেন, তারা এডমিট কার্ড হাতে পেয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। কিন্তু মাদরাসায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।</p> <p>পানান গ্রামের বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান এর আগেও টাকার বিনিময়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এবারও একই কায়দায় কম্পিউটার কাম অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ঘুষ বাণিজ্যের কথা জানাজানি হয়ে পড়ায় গ্রামের মানুষ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।’</p> <p>পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. মতিউর রহমান জানান, অধ্যক্ষ টাকা লেনদেন করেছেন কিনা তা তিনি জানেন না। তবে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীকে শান্ত করতে তিনি নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। পরবর্তী সময় কমিটির সদস্যরা সভায় বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।</p> <p>পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. এরশাদুল হক জানান, তিনি নিজে অধ্যক্ষের কিশোরগঞ্জ শহরের বাসার গিয়ে নিজ হাতে ১০ লাখ টাকা তুলে দিয়ে এসেছেন।</p> <p>এলাকার ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানান, টাকাগুলো হস্তান্তরের সময় তিনি ওই সময় উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>পুলিশ পাহারায় মাদরাসা ত্যাগ করার সময় চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. আবদুল মান্নান টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এ সময় প্রার্থীর হয়ে যে দুইজন টাকা দিয়েছেন তারা তো আপনার সামনেই টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন- এমন প্রশ্ন করলে তিনি অসুস্থতার ভান করে দ্রুত মাদরাসা ত্যাগ করেন।</p>