<article> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশে বহু কিসিমের গণতন্ত্রপ্রেমিক মানুষ আছে। এক শ্রেণির প্রেমিক আছে, যাদের গণতন্ত্রপ্রেমের তীব্রতা দেখলে পশ্চিমা গণতন্ত্রপ্রেমিকরাও লজ্জা পায়। বাংলাদেশি গণতন্ত্রপ্রেমিকদের ভালোবাসার কাছে পশ্চিমাদের গণতন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা নস্যি। তার পরও দেশে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে কেন বিরামহীন বিতর্ক? বাংলাদেশের গণতন্ত্র আসলে কত দূর যেতে পারবে? বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিতর্ক ও এর সম্ভাবনা নিয়ে কিছু বিষয়ের অবতারণা করতে চাই।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এক. বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিধানকে পদদলিত করে কয়েকজন একের পর এক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন কিংবা পুতুল রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাউকে বসিয়ে দিয়েছেন। আবার সেই পুতুল রাষ্ট্রপতিকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপসারণ করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লিখেছেন, পিস্তল ঠেকিয়ে সায়েমের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন জিয়া। ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গভবনে একই নাটক পুনরায় মঞ্চস্থ হয়। বিচারপতি সায়েম তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে ‘At Bangabhaban: Last Phase’ গ্রন্থে লিখেছেন, “রাত ১১টায় বুটের শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। সেনাপ্রধান জিয়া অস্ত্রশস্ত্রসহ বঙ্গভবনে আমার শয়নকক্ষে প্রবেশ করেন। জিয়াউর রহমান আমার বিছানায় তাঁর বুটসহ পা তুলে দিয়ে বলেন, সাইন ইট।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">তাঁর এক হাতে ছিল স্টিক, অন্য হাতে রিভলবার। আমি কাগজটা পড়লাম। আমার পদত্যাগপত্র, যাতে লেখা ‘অসুস্থতার কারণে আমি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলাম’। আমি জিয়াউর রহমানের দিকে তাকালাম। ততক্ষণে আট-দশ জন অস্ত্রধারী আমার বিছানার চারপাশে অস্ত্র উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">জিয়া আবার আমার বিছানায় পা তুলে আমার বুকের সামনে অস্ত্র উঁচিয়ে বললেন, সাইন ইট। আমি কোনোমতে সই করে বাঁচলাম।”</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/05.May/14-05-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="347" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/05.May/14-05-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" width="400" />এরপর ওই বছরই গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ইতিহাসে অশ্রুত ‘হ্যাঁ, না ভোট’ আয়োজন করে সেনাপ্রধান একই সঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধানও হয়ে যান। রাষ্ট্রপতি হওয়ার এই অসাংবিধানিক ও জবরদস্তিমূলক প্রক্রিয়া এবং ওই রাষ্ট্রপতির শাসনকেও এক শ্রেণির রাজনীতিক, সুধী ও বুদ্ধিজীবী গণতন্ত্র বলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। কেউ কেউ আবার এক ধাপ এগিয়ে তাঁকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা আখ্যা দেন। এমন মানসিকতাকে ধারণ করে আদৌ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কিংবা গণতন্ত্রকে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কি?</p> <p style="text-align: justify;">দুই. স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনে চার হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। এর মধ্যে স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন। বাকি চার হাজার ৬৭৫ দিন কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। অন্তত দুইবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। ছয় দফা ঘোষণা করে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ার ঝুঁকি নিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের বছরের পর বছর তাঁর সাহচর্য থেকে বঞ্চিত করেছেন। কারাবাসের মেয়াদ ও পৌনঃপুনিকতার কারণে সন্তানের কাছে পিতা হিসেবে অচিন হয়েছেন। এসবই করেছেন বাঙালি জাতির প্রতি অতল ভালোবাসা ও তাদের জন্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য।</p> <p style="text-align: justify;">রাষ্ট্রের স্থপতি, তাঁর স্ত্রী, শিশুপুত্রসহ সকল পুত্র, পুত্রবধূ, ভ্রাতাসহ পরিবারের ২২ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। খুনি মোশতাক দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করেন। মোশতাক মাত্র ৮৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। মোশতাকের অপসারণের পর অধ্যাদেশ বাতিল করা যেত। কিন্তু জিয়া সেই অধ্যাদেশ বাতিল দূরে থাক, প্রথমে তিনি অধ্যাদেশকে সংসদের আইন এবং তারপর সভ্যতা ও মানবতাবিরোধী এই আইনকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। খুনিদের বাঁচাতে সভ্যতা ও মানবাধিকারবিরোধী আইনকে সংবিধানে সংযোজন করে জিয়া আইনের শাসন ও সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত বিচার পাওয়ার অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করেছেন।</p> <p style="text-align: justify;">বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও জাতীয় চার নেতা হত্যার ঘটনায় ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যে অনুসন্ধান কমিশন গঠিত হয়। ব্রিটিশ এমপি ও আইনবিদ স্যার টমাস উইলিয়ামসের নেতৃত্বে কমিশনের অন্য সদস্যরা ছিলেন আয়ারল্যান্ড সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী শন ম্যাকব্রাইড, ব্রিটিশ এমপি ও আইনবিদ জেফরি টমাস এবং ব্রিটিশ আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশবাদী আইনবিদ অবরি রোজ। বাংলাদেশে আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ করায় চার ব্রিটিশ আইনবিদ মিলে এই কমিশন গঠন করেছিলেন। তবে অনুসন্ধানের কাজে এই কমিশনকে বাংলাদেশে আসতে ভিসা দেয়নি জিয়াউর রহমানের সরকার। কমিশন বাধ্য হয়ে দেশে-বিদেশে প্রকাশিত নানা বিবৃতি-বক্তব্য, নথিসহ প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে। কমিশন ওই সব তথ্যের ভিত্তিতেই ‘শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি : প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অব দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যুক্তরাজ্যের অনুসন্ধান কমিশন সার্বিক বিবেচনার পর তিনটি সিদ্ধান্তে পৌঁছায়—ক. এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে আইন ও বিচার প্রক্রিয়াকে যথাযথভাবে এগোতে দেওয়া হয়নি। খ. বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে সরকারই দায়ী। গ. হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রক্রিয়ার বাধাগুলো দূর করতে হবে এবং সেই সঙ্গে আইন ও বিচার প্রক্রিয়াকে তার নিজ ধারায় অগ্রসর হতে দিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">আইনের শাসন, মানবাধিকার ও বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চালু করেছিলেন, তাকেও গণতন্ত্র মনে করেন কিছু রাজনীতিক ও সুধী। শুধু জিয়া নন, জিয়ার পরে যাঁরা বিএনপির রাজনীতি করছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন, তাঁরাও রাষ্ট্রের স্থপতিকে সপরিবারে হত্যা সমর্থন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করতে ইনডেমনিটি আইন বাতিলসংক্রান্ত আইন পাসের বিরুদ্ধে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করে বিএনপি-জামায়াত। ইনডেমনিটি বাতিল আইনকে চ্যালেঞ্জ করে খুনি রশিদ মামলা করলে বিএনপির মন্ত্রী কোরবান আলী রশিদের আইনজীবী নিযুক্ত হন। আর এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রয়াত আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন খুনিদের দায়মুক্তি আইনকে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মত দেন। খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতামতের সারকথা হলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা অসাংবিধানিক নয়। নিম্ন আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় প্রকাশের দিন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত হরতাল আহবান করেছিল।</p> <p style="text-align: justify;">২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর তাদের পাঁচ বছরের শাসনকালে এক দিনের জন্যও মামলার শুনানি হয়নি। কৌশলে শুনানি আটকে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। যে রাজনীতি রাষ্ট্রের স্থপতি, নারী ও শিশু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধকারী আইনকে বৈধ মনে করে, সেই রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য কতটা উপযোগী?</p> <p style="text-align: justify;">তিন. আমরা মননে, চিন্তা-চেতনায় ও অনুশীলনে ব্যক্তি পর্যায়ে ও দলীয়ভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করি কি? নিজের পছন্দের মানুষ দুর্নীতি-অপরাধ করলে, তার বিরুদ্ধে মামলা হলে আমরা দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীর পক্ষ নিই। সরকারের নির্বাহী বিভাগের পাশাপাশি বিচার বিভাগকেও প্রশ্নবিদ্ধ করি। উদাহরণস্বরূপ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে তাতে কারা জড়িত। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার না চাইলে কাদের কথায় সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পুলিশের আইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই হামলা পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত হয়েছিলেন? কাদের কথায় ও কেন মামলার আলামত নষ্ট করা হয়েছিল? কাদের কথায় জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল? কাদের কথায় বিচারপতি জয়নুল আবেদীন গ্রেনেড হামলায় ভারত জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন? কাদের কথায় জঙ্গিদের ন াম পরিবর্তন করে রাতারাতি পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল? খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিচারের সমসাময়িক সময়ে ভারতে রাহুল গান্ধী, পাকিস্তানে ইমরান খান এবং যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের বিচার চলমান। ইতালির চারবারের প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি বিচারে কয়েকবার জেল খেটেছেন। ব্রাজিলের লুলা ডি সিলভা দুই দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিচারের রায়ে ৫৮০ দিন জেল খেটেছেন। নির্বাচনে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাক গান হে দুর্নীতির কারণে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন এবং তাঁকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি দুর্নীতির মামলায় জেল খেটেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ১০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। দুর্নীতির একটি মামলার তদন্তে সহযোগিতা না করায় তাঁকে ১৫ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ৭০ বছর বয়সে জেলে যেতে হয়েছিল মিস্টার জুমাকে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কয়েকটি মামলার মধ্যে একটিতে ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট প্রতারণার অভিযোগে দুই বছর তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা ক্ষমতায় থাকার সময় চালে ভর্তুকির একটি দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট জিনাইন আনেজ প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উত্খাতের দায়ে ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন। কোথাও কি রায়ের পর আদালতে জুতা মিছিল হয়েছে? প্রকাশ্যে বিচারককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে? বিচারে দণ্ডিত ও সাজাভোগ করা এসব রাজনীতিবিদ কি নির্বাচন বর্জনের রাজনীতি করেছেন? এমন মানসিকতা কি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?</p> <p style="text-align: justify;">চার. গণতন্ত্রের জন্য দেশপ্রেমিক মানুষ দরকার। বাংলাদেশের একটি বিরাটসংখ্যক মানুষের না আছে দেশপ্রেম, না আছে মানুষ হওয়ার প্রধান শর্ত মনুষ্যত্ব। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন পিজি হাসপাতালের রক্ত সংরক্ষণাগার এবং নতুন মহিলা ওয়ার্ডের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলেন, “আপনাদের কাছে বলতে গেলে বলতে হয়, আমি যেন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমি যেদিকে চাই সেদিকে ‘মানুষ’ খুব কম দেখি।” যার দেশপ্রেম আছে সে কি দুর্নীতি করতে পারে? অর্থ পাচারকারীরা কি ‘মানুষ’? দেশপ্রেমের ছিটেফোঁটা থাকলেও কি সে এই দরিদ্র দেশের অর্থ পাচার করতে পারত? দেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার মতো হলে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে—এমন প্রত্যাশা করে যারা উল্লসিত হয়, তারা কি দেশপ্রেমিক? দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যারা লবিং করে, তারা কি দেশপ্রেমিক? একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দোসরদের সঙ্গে যারা মৈত্রী স্থাপন করে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার বানায়, তারা কি দেশপ্রেমিক?</p> <p style="text-align: justify;">পাঁচ. গণতন্ত্রের দাবিতে ডান ও বাম জোট বেঁধেছে। সাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্র কখনো হাত ধরাধরি করে চলতে পারে না। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে—এমন কোনো দেশে পশ্চিমা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং একদা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">ছয়. নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কতটা ভয়ংকর হতে পারে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কিভাবে ধ্বংস করতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাকিস্তানের তত্ত্বাধায়ক ‘কাকার সরকার’। বাংলাদেশেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক ক্ষমতা ছিনতাই, বিরাজনৈতিকীকরণ ও নির্বাচনে কোনো বিশেষ দলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচিত সরকার দুর্নীতিতে পর পর পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। আত্মঘাতী হামলা এবং ৬৩ জেলায় একযোগে শত শত বোমা হামলাসহ জঙ্গিবাদের নজিরবিহীন বিস্তার হয়েছে। বিরোধীদের ওপর হামলা-মামলা ফুলেফেঁপে উঠেছে। তার পরও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিকল্প অনুসন্ধান না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একের পর এক নির্বাচন বর্জন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উপযোগী কি?</p> <p style="text-align: justify;">আমাদের বিদ্যমান দলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ব্যক্তি পর্যায়ে গণতন্ত্রচর্চা প্রায় অনুপস্থিত। অন্যদিকে সামন্তবাদী স্বার্থতন্ত্র প্রবলভাবে বিরাজমান। গণতন্ত্রের জন্য যাঁরা নিত্য হাহাকার করছেন, তাঁরা ভেবে দেখবেন এমন পরিবেশে বাংলাদেশে গণতন্ত্র কত দূর যেতে পারবে?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>লেখক :</strong> অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p style="text-align: justify;">zhossain1965@gmail.com</p> </article>