<p>অপরিণত অবস্থায় অর্থাৎ স্বল্প ওজন বা ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে হার্টে ত্রুটি বেশি পরিমাণে দেখা যায়। জন্মের পরই এই সমস্যা ধরা পড়ে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন-</p> <p>এই সমস্যা সামান্য বা খুব মারাত্মক রকমেরও হতে পারে। গর্ভকালীন অবস্থায় শিশুর রক্তসঞ্চালন মায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকার কারণে হার্টের মারাত্মক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও সচরাচর ওই সময়ে শিশুর বিপদ ঘটে না। কিন্তু জন্মের পরপরই যখন শিশুর হার্ট স্বাধীনভাবে কাজ করতে যায় কিংবা শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদযন্ত্রের বৃদ্ধি ঘটে, তখন এসব ত্রুটি জটিলতা বাড়ায়। </p> <p><strong>কারণ</strong></p> <p>এখনো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগের কারণ অজানা রয়ে গেছে। এই অসুখ কদাচিৎ বংশগত কারণে দেখা দিতে পারে। আবার গর্ভাবস্থায় মা জার্মান হাম (রুবেলা), ডায়াবেটিস, এসএলই ইত্যাদি রোগে ভুগলে বা নির্দিষ্ট কিছু ক্ষতিকর ওষুধ সেবন করলে শিশুর হার্টে জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।</p> <p><strong>ধরন</strong></p> <p>হার্টের জন্মগত রোগগুলো মূলত দুই শ্রেণির হয়ে থাকে—</p> <p><strong>সায়ানোটিক </strong></p> <p>এই গ্রুপের রোগে শিশুর ঠোঁট, জিভ বা নখের সাদা অংশ নীলচে হয়ে যায়। নীল বর্ণ সব সময় থাকবে, তা অবশ্য নয়। সাধারণত শিশু কেঁদে উঠলে নীল বর্ণ বেশি স্পষ্ট হয়। এ ছাড়া শিশু অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। কখনো খিঁচুনি দেখা যায়। সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজের শিশুকে ‘ব্লু বেবি’ বলা হয়ে থাকে।</p> <p><strong>এসায়ানোটিক </strong></p> <p>খুব জটিল অবস্থা ছাড়া এসায়ানোটিক কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের বাচ্চার এই নীল বর্ণ ভাব থাকে না। শিশু ঘন ঘন সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত থাকে। এই গ্রুপের অসুখের মধ্যে ভিএসডি, এএসডি ও পিডিএ প্রধান। এসায়ানোটিক গ্রুপের অসুখে হার্টের প্রকোষ্ঠের মধ্যে ফুটো থেকে যায়।</p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <p>হার্টের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুররা অন্যান্য শিশুর তুলনায় বুকের দুধ কম টানে। একনাগাড়ে টানতে পারে না। একটু টেনেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঘুমিয়ে যায়, কিন্তু যেহেতু পেট ভরে না, তাই অল্প সময়ের মধ্যেই জেগে উঠে কাঁদতে থাকে এবং দিনভর এ রকম চলতে থাকে।</p> <p>অত্যধিক ঘামে, বিশেষ করে কপাল। এর সঙ্গে দ্রুত হৃদস্পন্দন, দ্রুত শ্বাস, কখনো কখনো শ্বাসকষ্টের শব্দ শোনা যায়। সর্বোপরি শিশু ঠিকমতো বাড়ে না।</p> <p><strong>পরীক্ষা-নিরীক্ষা</strong></p> <p>বুকের এক্স-রে, ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি করিয়ে রোগ নির্ণয় করা যায়।</p> <p><strong>করণীয়</strong></p> <p>জন্মের পরপরই নবজাতককে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। কেননা শিশুর জন্মগত এই হৃদরোগ যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে, ততই ভালো। হার্টের জন্মগত রোগগুলোর মধ্যে কিছু রোগ চিকিৎসার সাহায্যে সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব।</p> <p> </p> <p><em>লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ</em></p> <p><em>চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল</em></p>